রাগবি খেলার ইতিহাস

ইংল্যান্ডের রাগবি স্কুলের নামানুসারে রাগবি ফুটবলের নামকরণ করা হয়েছে। ১৭৫০ থেকে ১৮৫৯ সালের মধ্যে রাগবি স্কুলে বলকে হাতে ধরার অনুমতি প্রদান করা হলেও খেলোয়াড়দেরকে বল নিয়ে দৌঁড়ানোর অনুমতি দেয়া হতো না। প্রতিটি দলে খেলোয়াড় সংখ্যাও অনির্দিষ্ট ছিল। এমনকি শতাধিক ব্যক্তি খেলায় অংশ নিতে পারতেন। কখনো বা বিরাট ধরনের আঘাতের ঘটনা ঘটে যায়।

১৮৫৯ থেকে ১৮৬৫ সালের মধ্যে বল নিয়ে দৌঁড়ানোর প্রচলন শুরু হয়। জনশ্রুতি রয়েছে যে, ১৮২৩ সালের কোন একদিন উইলিয়াম ওয়েব এলিস নামীয় একজন সিনিয়র বালক সাধারণ পদ্ধতিতে বলকে লাথি না মেরে বল নিয়ে দৌঁড়েছিলেন। ১৮৪৫ সালে প্রথমবারের মতো রাগবি ফুটবলের জন্য আইন প্রণয়ন করা হয়। কোন কারণে খেলায় ফলাফল না আসলে ড্রপ গোলের প্রবর্তন করা হয়। দু'দলের মধ্যেকার খেলোয়াড়দের কেউ একজন গোল করতে ব্যর্থ হলে প্রতিপক্ষ বিজয়ী হবে।

রাগবি ফুটবল এক ধরনের দলগত ক্রীড়া যা বিশ্বের সর্বত্র কম-বেশী খেলা হয়ে থাকে। যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, ফ্রান্স, দক্ষিণ আফ্রিকা, আর্জেন্টিনা, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জসহ শতাধিক দেশের ক্রীড়াপ্রেমী জনগণ এতে অংশগ্রহণ করেন। এটি বিশ্বের প্রথমদিককার ডিম্বাকৃতির বল যা ফুটবলের ন্যায়। সচরাচর একে রাগবি নামেই অভিহিত করা হয়। দু'টি দল একে-অপরের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত
হয়ে সর্বাধিকসংখ্যক পয়েন্ট সংগ্রহের চেষ্টা চালায়। একজন খেলোয়াড় বল হাতে দৌড়ে যায় ও বলটিকে সহ-খেলোয়াড়ের কাছে দেয়ার উদ্দেশ্যে পেছনে দিতে হয়।
কিন্তু সম্মুখে দিতে গেলে লাথি মেরে দিতে হয়। খেলার নিয়ম-কানুন প্রবর্তন ও সুষ্ঠুভাবে খেলা পরিচালনার স্বার্থে ইন্টারন্যাশনাল রাগবি বোর্ড ১৮৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।

মাঠে দু'টি দল একে-অপরের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়। খেলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্যে একজন রেফারী পরিচালক হিসেবে রয়েছেন। মুদ্রা নিক্ষেপ বা টসের মাধ্যমে বলে লাথি মারার জন্য একটি দলকে নির্বাচিত করা হয়। প্রতি অর্ধে খেলার মধ্যমাঠ থেকে একজন খেলোয়াড় বলে লাথি মেরে খেলা শুরু করেন।
তবে লাথি মেরে বলকে অবশ্যই প্রতিপক্ষের এলাকায় ১০ মিটারের অধিক দূরত্ব অতিক্রমণ করাতে হয়। সচরাচর সাধারণ কৌশল হচ্ছে বলকে যতোটা উঁচুতে সম্ভব লাথি মেরে প্রতিপক্ষের উপর আধিপত্য বিস্তারের জন্য চেষ্টা চালানো। প্রত্যেক দলেই ১৫ জন খেলোয়াড় থাকে।



সাধারণতঃ ৮জন আক্রমণে ও ৭ জন রক্ষণাত্মক ভঙ্গীমায় খেলে থাকে। আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের জার্সি নম্বর ১ থেকে ৮ হয়ে থাকে এবং তারা প্লেয়ার নামে পরিচিত। অন্যদিকে রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের জার্সি নম্বর ৯ থেকে ১৫ হয় ও তারা ব্যাকলাইন নামে অভিহিত হন। বিশেষ প্রতিযোগিতায় সংরক্ষিত অতিরিক্ত খেলোয়াড়দেরও প্রতিযোগিতার নিয়ম-কানুনের উপর নির্ভর করে জার্সি নম্বর প্রদান করা হয়। বলের উভয় প্রান্ত কিছুটা তীক্ষ্ণ প্রকৃতির হয়। ফুটবল মাঠের ন্যায় রাগবি খেলার মাঠও চতুর্ভূজ আকৃতির। তবে, মাঠের দৈর্ঘ্য ১০০ মিটার (১০৯.৩৬ গজ) এবং প্রস্থ ৬৯ মিটারের (৭৫.৪৬) বেশী হতে পারবে না।

মাঠের উভয় অংশের শেষ প্রান্তে খুঁটি দিয়ে গোলপোস্ট তৈরী করা হয় যা ইংরেজি এইচ (H) অক্ষরের ন্যায়। এছাড়াও, ইন-গোল শিরোনামে একটি এলাকা রয়েছে। খেলোয়াড়েরা বলকে ইন-গোলে নেয়ার প্রাণান্তকর চেষ্টা চালায় এবং বলকে মাটিতে রাখে। কোন কারণে তা করতে পারলে ট্রাই নামে ফলাফলে অন্তর্ভূক্ত হয়। তারপর ট্রাই থেকে গোল করার চেষ্টা করে সফলকাম হলে গোল নামে অভিহিত হয়। গোল করার জন্যে বলকে লাথি মেরে এইচের অভ্যন্তরের উপরিভাগে প্রবেশ করায়। সচরাচর রক্ষণভাগের খেলোয়াড়গণ আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের তুলনায় উচ্চতায় বড় এবং শক্তিশালী হয়ে থাকেন।

কিন্তু আক্রমণভাগের খেলোয়াড়েরা দ্রুত দৌঁড়ে গোল করার চেষ্টা চালায়। গোল করার চেষ্টা কিংবা গোল করা থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে খেলোয়াড়গণ একে-অপরকে বাঁধা দেয়। কিন্তু রাগবি খেলায় বাঁধা দেয়ার অর্থ হচ্ছে বিপক্ষের খেলোয়াড়কে ধরে রাখা, নড়াচড়া করতে না দেয়া কিংবা মাটিতে ফেলে রাখা। এ ধরনের বাঁধা সচরাচর অন্যান্য খেলায় তেমন দেখা যায় না। একটি দল সর্বোচ্চ ৭জন অতিরিক্ত খেলোয়াড় রাখতে পারে।

লীগের ধরন কিংবা দেশভেদে এ নিয়মের ব্যতয় হতে পারে। অতিরিক্ত খেলোয়াড়গণ বেঞ্চে বসে থাকেন এবং আঘাতজনিত কিংবা অন্য কোন কারণে খেলোয়াড়ের মাঠ ত্যাগের ফলে শূন্যস্থান পূরণ করেন। সাধারণতঃ আঘাতগ্রস্ত খেলোয়াড় খেলা থেকে বিরত থাকলে তারা আর মাঠে প্রবেশ করেন না। কোন কারণে প্রবেশ করলেও তা ১৫ মিনিটের মধ্যে হতে হবে। খেলার সময়সীমা ৮০ মিনিট যা ৪০ মিনিট করে বিভাজ্য। কিন্তু মাঝখানে কোন বিরতি-পর্ব নেই।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url