চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ কিভাবে হয়

সূর্য ও চন্দ্র গহণের ব্যাখ্যা অনেকটা বিজ্ঞানের মত। আলোর সামনে কোন পদার্থ থাকলে তার ঠিক বিপরীত দিকে ছায়া পড়ে। সূর্যের আলোর সামনে অবস্থিত পৃথিবীর একটি ছায়া প্রতিনিয়ত মহাশূন্যে পড়ছে। সে ছায়া যখন চন্দ্রের উপর পড়ে তখন চন্দ্র গ্রহণ হয়। চন্দ্র, পৃথিবী ও সূর্য একই সরল রেখার হলে চন্দ্র গ্রহন হয়। সকল পূর্ণিমা তিথিতেই চন্দ্র সূর্যের বিপরীত দিকে ও পৃথিবীর পশ্চাতে এক সরল রেখায় থাকে। তবে বছরে প্রত্যেক মাসে পূর্ণিমা তিথিতে চন্দ্র গ্রহন হয় না কেন?

সৌরজগৎ সহ সূর্যের সঞ্চার বৃত্তের দুই স্থানের সঙ্গে সূর্যের আকর্ষন দ্বারা পরিচালিত পৃথিবীর সূর্য প্রদক্ষিন কক্ষের দুই স্থান স্পর্শিত হয়ে যেমন শারদ বিষুব ও বাসন্তী বিষুব সৃষ্টি হয়েছে । ঠিক তেমনি উপবৃত্ত পৃথিবী কক্ষের দুই স্থান ও চন্দ্রের উপবৃত্ত কক্ষ পরিধির প্রান্তদ্বয়ে সম্পাত সংগঠিত হয়েছে । এই সম্পাতকে ভাগবতে রাহু নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে । রাহুতে উপস্থিতির সময় যদি চন্দ্রের পূর্ণিমা হয়, তবে পৃথিবীর ছায়া চন্দ্রের উপর পড়ে গ্রহণ ঘটায় । রাহু দ্বারা আড়ষ্ট না হলে পৃথিবীর ছায়া চন্দ্রকে আচ্ছাদিত করতে পারে না ।

সূর্যগ্রহণ

তাই বছরে সকল পূর্ণিমা তিথিতে চন্দ্রগ্রহন হয় না। বছরে চন্দ্র গ্রহন নাও হতে পারে আবার তিনটি পর্যন্ত হতে পারে, তবে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ বছরে একাধিক হয় না। পৃথিবীর ছায়ার মধ্যে চন্দ্রের যত অংশ প্রবিষ্ট হয় তত অংশই গ্রস্ত হয় একে আংশিক গ্রহন বলা হয় । ভাগবতে রাহুকে ছায়া গ্রহ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে । সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্র গ্রহণে রাহুর যথেষ্ট প্রভাব আছে । সূর্য গ্রহণের ক্ষেত্রে রাহু আড়ষ্ট চন্দ্র সূর্যকে আচ্ছাদিত করে এবং চন্দ্র নিক্ষিপ্ত ছায়াটি পৃথিবীর কোনো অংশের উপর দিয়ে যায় । চন্দ্র গ্রহণের ক্ষেত্রে রাহু আড়ষ্ট চন্দ্র পৃথিবী নিক্ষিপ্ত ছায়াতে প্রবেশ করে ।

অমাবস্যা হলেই সূর্য গ্রহণ বা পূর্ণিমা হলেই চন্দ্র গ্রহণ ঘটে না । গ্রহণ ঘটানোর জন্য চন্দ্রের রাহু আড়ষ্ট হওয়া চাই । সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ কুদরতী নিদর্শন । সূর্য গ্রহণের সময় কোনকিছু করা বা না করা নিয়ে গর্ভবতী মহিলাদের কি কোন বিধি-নিষেধ রয়েছে? সূর্য বা চন্দ্র গ্রহণের সময় গর্ভবতী মহিলারা মুরগী, মাছ ইত্যাদি কাটলে, সন্তানের হাত-পা কাটা হয় এ ধরনের কথা বলা বা বিশ্বাস করা কুসংস্কার ও ভ্রান্ত ধারণা ।

বস্তুত সূর্য গ্রহণের সময় গর্ভবতী মহিলাদের বা কারো জন্যই জাগতিক কোন কাজ করা বা না করা নিয়ে কোনরকম বিধি-নিষেধ নেই । এ ব্যাপারে যা প্রচলিত আছে, তা কেবলই কুসংস্কার ও ভ্রান্ত বিশ্বাস ।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url