শিশির ভেজা শিউলি ফুল
ঘাসের আগায় শিশিরের রেখা পড়ছে। আশ্বিনের ডাক মানেই পুজোর ডাক! বাড়ির কাছের নদীর জলে উপুড় হয়ে চুম্বন করল কি পুজো এল-পুজো এল আকাশ?ভোরের মাটিতে শিউলি ঝরে পড়ছে। আজও সকালে হিমেল হাওয়ায় শিউলির সুবাস খুঁজে বেড়াই, এই সময় শিউলিতলা কেমন আলো করে থাকত, ভোরের শিশির মেখে সূর্যের কিরণ যখন তার উপর এসে পড়ত শিউলির তখন নববধূর বেশ। শিউলি গুলো চৌকো ফ্রেমে ধরা দিয়েছে বাড়ির জানলায়।
জানালার ধারে একটা শিউলি গাছ ছিল। ভোরের রাতে শিউলি ফুলের গন্ধে ভরে যেত সারাটা ঘর। ঝরে পড়া শিউলি ফুলের হালকা টুপটাপ শব্দ শোনা যেত সারাটা রাত ধরে। সেই টুপটাপ শব্দ শুনতে শুনতে এক সময় ষষ্ঠীর সকাল এসে পড়ত। ঠিক তখনই সারা ঘরে একটা মায়াবী আলো ছড়িয়ে পড়ত।
শিউলি ফুল দক্ষিণ এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব থাইল্যান্ড থেকে পশ্চিমে বাংলাদেশ, ভারত, উত্তরে নেপাল, ও পূর্বে পাকিস্তান পর্যন্ত এলাকা জুড়ে দেখতে পাওয়া যায়। এটি শেফালী নামেও পরিচিত। এই ফুল পশ্চিমবঙ্গের ও থাইল্যান্ডের কাঞ্চনাবুরি প্রদেশের রাষ্ট্রীয় ফুল। শিউলি গাছ নরম ধূসর ছাল বা বাকল বিশিষ্ট হয় এবং ১০ মিটারের মত লম্বা হয়।
গাছের পাতা গুলো ৬-৭ সেন্টিমিটার লম্বা ও সমান্তরাল প্রান্তের বিপরীতমুখী থাকে। সুগন্ধি জাতীয় এই ফুলে রয়েছে পাঁচ থেকে সাতটি সাদা বৃতি ও মাঝে লালচে-কমলা টিউবের মত বৃন্ত। এর ফল চ্যাপ্টা ও বাদামী হৃদপিণ্ডাকৃতির। ফলের ব্যাস ২ সেন্টিমিটার এবং এটি দুই ভাগে বিভক্ত। প্রতিটি ভাগে একটি করে বীজ থাকে।এই ফুল শরৎকালে ফোটে। এর ফুলগুলি রাতে ফোটে এবং সকালে ঝরে যায়। শরৎ ও হেমন্ত কালের শিশির ভেজা সকালে ঝরে থাকা শিউলি অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য তৈরি করে।
শিউলির আরেক নাম পারিজাত! হিন্দু পৌরাণিক কাহিনীতে অনেক বার এসেছে শিউলি ফুল বা পারিজাত এর কথা। বাংলা ভাষায় এই শিউলি ফুল নিয়ে অনেক কবিতা, কাব্য রয়েছে। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন শিউলি ফুল, শিউলি ফুল, কেমন ভুল, এমন ভুল। রাতের বায় কোন্ মায়ায় আনিল হায় বনছায়ায়, ভোরবেলায় বারে বারেই ফিরিবারে হলি ব্যাকুল। কেন রে তুই উন্মনা! নয়নে তোর হিমকণা। কোন্ ভাষায় চাস বিদায়, গন্ধ তোর কী জানায়
সঙ্গে হায় পলে পলেই দলে দলে যায় বকুল। শিউলি-কানন সাজায় তোমার শুভ্র ছুটির সাজি। শিশির-হাওয়া শিরশিরিয়ে কখন রাতারাতি।
আবার আমাদের জাতীয় কবি নজরুলও কম পছন্দ করেননা ফুলটিকে, তাইতো তিনি লিখেছেন আবার যেদিন শিউলি ফুটে ভ’রবে তোমার অঙ্গন, তুলতে সে-ফুল গাঁথতে মালা কাঁপবে তোমার কঙ্কণ কাঁদবে কুটীর-অঙ্গন! শিউলি ঢাকা মোর সমাধি প’ড়বে মনে, উঠবে কাঁদি! বুকের মালা ক’রবে জ্বালা চোখের জলে সেদিন বালা মুখের হাসি ঘুচবে বুঝবে সেদিন বুঝবে!
এছাড়াও আছে অনেক নাম না জানা, অজানা, বিখ্যাত, অখ্যাত কবির কবিতা। যা দেখে মনে হয় কবিরা শিউলি ফুলকে অন্য ফুলের চেয়ে আলাদা ভাবেই দেখেন ভোরের শিউলি ফুল সিক্ত দেহে ঝরে পড়ে ভোরের আলোয়ে লজ্জা পেয়ে? রজনীগন্ধার মদিরতা তার নেই, নেই গোলাপের বর্ণছটা । শতদলের শত পাপড়ির আভিজাত্য সে তো তার স্বপ্নের কল্পলোকেও অধরা । সুন্দর পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা হঠাৎ কি খেয়ালে একবিন্দু সৌন্দর্য ছুড়ে দিয়েছিল তার দিকে হয়েত বা তাচ্ছিল্য, অবহেলায় । বর্ণময় জগতের চাকচিক্যে তা লক্ষ করেনি কেউ তাই পূজার থালিতেও সে ব্রাত্য ।
ঈশান কোণে, নেই কালো মেঘ শাদা মেঘের ভেলা! সাদা বসন, শিউলি গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে! ভোরের আগে, কে যায়রে? শিউলি কুড়াতে! আঁচল ভরা, শিউলি ফুলে গাঁথবে মালা বসে!
শিউলি ফুটেছে আজ আমার আঙিনায় স্নিগ্ধ বাতাসে তার সৌরভ ছড়ায় শিশিরে ভেজা স্নিগ্ধ সকাল আনন্দরসে মনটা মাতাল। শিউলির মালা গাঁথব বলে
ভালবাসার ফুল যতনে রেখেছি তুলে আমার নয়ন-ভুলানো এলে, আমি কী হেরিলাম হূদয় মেলে শিউলিতলার পাশে পাশে ঝরা ফুলের রাশে রাশে শিশির-ভেজা ঘাসে ঘাসে অরুণরাঙা চরণ ফেলে নয়ন-ভুলানো এলে।
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘আশ্বিনে’ কবিতায় হৃদয়ের কথাই প্রকাশ করেন আকাশ আজিকে নির্মলতম নীল, উজ্জ্বল আজি চাঁপার বরণ আলো; সবুজে সোনায় ভূলোকে দ্যুলোকে মিল দূরে-চাওয়া মোর নয়নে লেগেছে ভালো। ঘাসে ঝ'রে-পড়া শিউলির সৌরভে মন-কেমনের বেদনা বাতাসে লাগে। মালতী বিতানে শালিকের কলরবে কাছ-ছাড়া পাওয়া ছুটির আভাস আগে।
জানালার ধারে একটা শিউলি গাছ ছিল। ভোরের রাতে শিউলি ফুলের গন্ধে ভরে যেত সারাটা ঘর। ঝরে পড়া শিউলি ফুলের হালকা টুপটাপ শব্দ শোনা যেত সারাটা রাত ধরে। সেই টুপটাপ শব্দ শুনতে শুনতে এক সময় ষষ্ঠীর সকাল এসে পড়ত। ঠিক তখনই সারা ঘরে একটা মায়াবী আলো ছড়িয়ে পড়ত।
শিউলি ফুল দক্ষিণ এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব থাইল্যান্ড থেকে পশ্চিমে বাংলাদেশ, ভারত, উত্তরে নেপাল, ও পূর্বে পাকিস্তান পর্যন্ত এলাকা জুড়ে দেখতে পাওয়া যায়। এটি শেফালী নামেও পরিচিত। এই ফুল পশ্চিমবঙ্গের ও থাইল্যান্ডের কাঞ্চনাবুরি প্রদেশের রাষ্ট্রীয় ফুল। শিউলি গাছ নরম ধূসর ছাল বা বাকল বিশিষ্ট হয় এবং ১০ মিটারের মত লম্বা হয়।
গাছের পাতা গুলো ৬-৭ সেন্টিমিটার লম্বা ও সমান্তরাল প্রান্তের বিপরীতমুখী থাকে। সুগন্ধি জাতীয় এই ফুলে রয়েছে পাঁচ থেকে সাতটি সাদা বৃতি ও মাঝে লালচে-কমলা টিউবের মত বৃন্ত। এর ফল চ্যাপ্টা ও বাদামী হৃদপিণ্ডাকৃতির। ফলের ব্যাস ২ সেন্টিমিটার এবং এটি দুই ভাগে বিভক্ত। প্রতিটি ভাগে একটি করে বীজ থাকে।এই ফুল শরৎকালে ফোটে। এর ফুলগুলি রাতে ফোটে এবং সকালে ঝরে যায়। শরৎ ও হেমন্ত কালের শিশির ভেজা সকালে ঝরে থাকা শিউলি অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য তৈরি করে।
শিউলির আরেক নাম পারিজাত! হিন্দু পৌরাণিক কাহিনীতে অনেক বার এসেছে শিউলি ফুল বা পারিজাত এর কথা। বাংলা ভাষায় এই শিউলি ফুল নিয়ে অনেক কবিতা, কাব্য রয়েছে। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন শিউলি ফুল, শিউলি ফুল, কেমন ভুল, এমন ভুল। রাতের বায় কোন্ মায়ায় আনিল হায় বনছায়ায়, ভোরবেলায় বারে বারেই ফিরিবারে হলি ব্যাকুল। কেন রে তুই উন্মনা! নয়নে তোর হিমকণা। কোন্ ভাষায় চাস বিদায়, গন্ধ তোর কী জানায়
সঙ্গে হায় পলে পলেই দলে দলে যায় বকুল। শিউলি-কানন সাজায় তোমার শুভ্র ছুটির সাজি। শিশির-হাওয়া শিরশিরিয়ে কখন রাতারাতি।
আবার আমাদের জাতীয় কবি নজরুলও কম পছন্দ করেননা ফুলটিকে, তাইতো তিনি লিখেছেন আবার যেদিন শিউলি ফুটে ভ’রবে তোমার অঙ্গন, তুলতে সে-ফুল গাঁথতে মালা কাঁপবে তোমার কঙ্কণ কাঁদবে কুটীর-অঙ্গন! শিউলি ঢাকা মোর সমাধি প’ড়বে মনে, উঠবে কাঁদি! বুকের মালা ক’রবে জ্বালা চোখের জলে সেদিন বালা মুখের হাসি ঘুচবে বুঝবে সেদিন বুঝবে!
এছাড়াও আছে অনেক নাম না জানা, অজানা, বিখ্যাত, অখ্যাত কবির কবিতা। যা দেখে মনে হয় কবিরা শিউলি ফুলকে অন্য ফুলের চেয়ে আলাদা ভাবেই দেখেন ভোরের শিউলি ফুল সিক্ত দেহে ঝরে পড়ে ভোরের আলোয়ে লজ্জা পেয়ে? রজনীগন্ধার মদিরতা তার নেই, নেই গোলাপের বর্ণছটা । শতদলের শত পাপড়ির আভিজাত্য সে তো তার স্বপ্নের কল্পলোকেও অধরা । সুন্দর পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা হঠাৎ কি খেয়ালে একবিন্দু সৌন্দর্য ছুড়ে দিয়েছিল তার দিকে হয়েত বা তাচ্ছিল্য, অবহেলায় । বর্ণময় জগতের চাকচিক্যে তা লক্ষ করেনি কেউ তাই পূজার থালিতেও সে ব্রাত্য ।
ঈশান কোণে, নেই কালো মেঘ শাদা মেঘের ভেলা! সাদা বসন, শিউলি গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে! ভোরের আগে, কে যায়রে? শিউলি কুড়াতে! আঁচল ভরা, শিউলি ফুলে গাঁথবে মালা বসে!
শিউলি ফুটেছে আজ আমার আঙিনায় স্নিগ্ধ বাতাসে তার সৌরভ ছড়ায় শিশিরে ভেজা স্নিগ্ধ সকাল আনন্দরসে মনটা মাতাল। শিউলির মালা গাঁথব বলে
ভালবাসার ফুল যতনে রেখেছি তুলে আমার নয়ন-ভুলানো এলে, আমি কী হেরিলাম হূদয় মেলে শিউলিতলার পাশে পাশে ঝরা ফুলের রাশে রাশে শিশির-ভেজা ঘাসে ঘাসে অরুণরাঙা চরণ ফেলে নয়ন-ভুলানো এলে।
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘আশ্বিনে’ কবিতায় হৃদয়ের কথাই প্রকাশ করেন আকাশ আজিকে নির্মলতম নীল, উজ্জ্বল আজি চাঁপার বরণ আলো; সবুজে সোনায় ভূলোকে দ্যুলোকে মিল দূরে-চাওয়া মোর নয়নে লেগেছে ভালো। ঘাসে ঝ'রে-পড়া শিউলির সৌরভে মন-কেমনের বেদনা বাতাসে লাগে। মালতী বিতানে শালিকের কলরবে কাছ-ছাড়া পাওয়া ছুটির আভাস আগে।