হাওড়া ব্রিজের স্থাপত্য ও ইতিহাস
কলকাতায় ব্রিটিশ স্থাপত্য কর্মের আরেকটি শক্তিশালী অনুস্মারক বা স্মৃতিচিহ্ন হল হুগলী নদী (কলকাতায় গঙ্গা নামে পরিচিত)-র প্রস্থ জুড়ে প্রসারিত হাওড়া ব্রিজ - ইস্পাতের একটি দৈত্যকার প্রসারণ যা দুটি যমজ শহর হাওড়া ও কলকাতা (সেই সময় ক্যালকাটা নামে সুপরিচিত ছিল)- কে সংযুক্ত করেছে। একজন ভ্রমণার্থী, যদি কলকাতা ভ্রমণের মাধ্যমে শহরটিকে অনুসন্ধানের পরিকল্পনা করেন তবে হাওড়া ব্রীজটি অতিক্রম করার সময় অবশ্যম্ভাবীরূপে কিছুক্ষণের জন্য বিহ্বল হয়ে পড়বেন। তবে, কলকাতা নিউ ইয়র্ক নয় আর এখানে আপনি আপনার ব্যস্ততাহীন ব্রুকলিন ব্রীজে স্বস্তিতে ছবি তোলার কথা আশা করতে পারেন না।
আপনি 705 মিটার দীর্ঘ ব্রীজটি হেঁটে চলার পরিকল্পনা করলে, বিশ্বের এই ব্যস্ততম সেতুটির উপর দিয়ে আপনার চলার পথে আপনি এত ব্যস্ত হয়ে পড়বেন, যে এখানে থামার জন্য ও দেখার জন্য কেবল কয়েকটি মুহুর্তই পাবেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বর্মিদের সম্মুখে মিত্র বাহিনীকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য বিট্রিশদের দ্বারা এই সেতুটি নির্মিত হয়েছিল। অনেক সূত্র দাবি করে যে, হাওড়া ব্রিজ ঊনবিংশ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল। তারা আসলে, 1874 সালে স্যার ব্র্যাডফোর্ড লেসলি-র দ্বারা নির্মিত পন্টুন সেতুর কথা উল্লেখ করেছেন। হাওড়া ব্রিজটি দীর্ঘ সাত বছর ধরে কাজ চলার পর, 1942 সালে সম্পূর্ণ হয় এবং 1943 সালে এটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়। ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত সেতুগুলির মধ্যে হাওড়া ব্রিজ গণ্য হয়। এটি সেই সময়ের একটি স্থাপত্যের বিস্ময়। নির্মাণের সময়ে, এই সেতুটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম খিলানের উপর স্থাপিত সেতু ছিল।
কখনও কেউ কলকাতায় ভ্রমণে গেলে, অবশ্যই হাওড়া ব্রিজ পরিদর্শনের একটি সফর নিশ্চিত করবেন; দেখে বিস্ময় বোধ করবেন যে ‘কোনওরকম নাট ও বোল্ট ছাড়াই’ 82 মিটার উচ্চতার সঙ্গে 705 মিটার দীর্ঘ জুড়ে, দৈনিক 150,000 যানবাহন ও 4,000,000 পথচারীদের ওজন বহন করে কিভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। হাওড়া ব্রিজ হল একটি নিলম্বিত ধরনের সুষম খিলানের উপর স্থাপিত (ক্যান্টিলিভার) সেতু। এটির 1500 ফুট কেন্দ্রীয় ব্যাপ্তি রয়েছে। এটির নিলম্বিত বা ঝুলন্ত ব্যাপ্তি (স্প্যান) হল 564 ফুট। যে কোনও স্থাপত্যের কৃতিত্ব তার নকশা এবং শক্তির উপর বিচার করা হয়।
এই উভয় ক্ষেত্রেই হাওড়া ব্রিজ উচ্চ সাফল্যাঙ্ক পায়। উল্লেখিত রূপে, সেতুটি ট্রাফিক, যানবাহন, পথচারী এবং এমনকি গবাদি পশুর এক বিশাল প্রবাহকে সামাল দেয়। পাকা রাস্তার দু’ধারে, উভয়দিকে 15-ফুট বিস্তৃত ফুটপাত রয়েছে, যেগুলি পথচারীদের ভিড়ে পূর্ণ থাকে। 1993 সালের আগে পর্যন্ত, এই সেতুর উপর দিয়ে ট্রামও চলাচল করত।
হাওড়া ব্রিজটি, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামানুসারে রবীন্দ্র সেতু নামকরণ করা হয়। তবে, প্রাত্যাহিক বাক্যালাপে সেতুটির হাওড়া ব্রিজ নামটিই উল্লেখ হয়ে আসছে। হাওড়া ব্রিজ যদিও কলকাতার একটি প্রতীক, তবে এটি হুগলী নদীতে বিস্তৃত একমাত্র সেতু না। হুগলী নদীতে বিস্তৃত, কলকাতা ও হাওড়াকে সংযুক্তকারী দ্বিতীয় সেতুটি – এক অন্যতম রজ্জু স্থিত (ক্যাবেল-স্টেড) সেতু। 823 মিটার দীর্ঘ, বিদ্যাসাগর সেতু নামে অভিহিত এই টোল সেতুটি সহজেই ভারতের দীর্ঘতম রজ্জু স্থিত (ক্যাবেল-স্টেড) হিসাবে অবস্থিত রয়েছে এবং বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় আশিটি সেতুর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে।
হাওড়া ব্রিজ কলকাতার সঙ্গে সমার্থক হয়ে চলে আসছে। অনেক বিখ্যাত বলিউড (হিন্দি) চলচ্চিত্রে হাওড়া ব্রিজকে প্রদর্শিত করা হয়েছে। এমনকি, এই একই নামের একটি বিখ্যাত হিন্দি ছায়াছবি বা সিনেমাও রয়েছে। রুডইয়ার্ড কিপলিং-এর “দ্য সিটি অফ ড্রেডফুল নাইট" বা “ভয়ঙ্কর রাত্রির শহর"-এ হাওড়া ব্রিজের উল্লেখযোগ্য উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন বর্ণনা খুঁজে পাওয়া যায়।
দুর্ভাগ্যবশত, সেতুটি ভারতের সবচেয়ে এক অন্যতম জনবহুল ও অপরিচ্ছন্ন হয়ে ওঠা শহরের সর্বনাশ ভোগ করছে। এই সেতুটির সৌন্দর্য্য শুধুমাত্র পানের পিক ও পাখির মলের দাগেই নষ্ট হয় নি, বরঞ্চ এটির যথেষ্ট ক্ষয়ও হয়েছে। রাত্রিতে সেতুটির একটি সফরের যাওয়ার চেষ্টা করুন, দিনের বেলায় যদি যান, তাহলে আপনি কিছুক্ষণের জন্য অপেক্ষা ও দাঁড়াবার মতো সময় পাবেন না। রাত্রিবেলার আলোকিত দৃশ্য নিশ্চয়ই আপনাকে কলকাতার জাগরুতির দিকে ঠেলে দেবে। দিনের গোলমালের বিনিময়ে রাতের নীরব জাজ্জ্বল্যমান হুগলী ভিন্ন প্রকৃতির। সান্ধ্যকালীন বাতাস, দিনের স্বেদ ও পরিশ্রান্ততা থেকে নিষ্কৃতি বা নিস্তারের গন্ধ বয়ে নিয়ে আসে।
আপনি 705 মিটার দীর্ঘ ব্রীজটি হেঁটে চলার পরিকল্পনা করলে, বিশ্বের এই ব্যস্ততম সেতুটির উপর দিয়ে আপনার চলার পথে আপনি এত ব্যস্ত হয়ে পড়বেন, যে এখানে থামার জন্য ও দেখার জন্য কেবল কয়েকটি মুহুর্তই পাবেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বর্মিদের সম্মুখে মিত্র বাহিনীকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য বিট্রিশদের দ্বারা এই সেতুটি নির্মিত হয়েছিল। অনেক সূত্র দাবি করে যে, হাওড়া ব্রিজ ঊনবিংশ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল। তারা আসলে, 1874 সালে স্যার ব্র্যাডফোর্ড লেসলি-র দ্বারা নির্মিত পন্টুন সেতুর কথা উল্লেখ করেছেন। হাওড়া ব্রিজটি দীর্ঘ সাত বছর ধরে কাজ চলার পর, 1942 সালে সম্পূর্ণ হয় এবং 1943 সালে এটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়। ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত সেতুগুলির মধ্যে হাওড়া ব্রিজ গণ্য হয়। এটি সেই সময়ের একটি স্থাপত্যের বিস্ময়। নির্মাণের সময়ে, এই সেতুটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম খিলানের উপর স্থাপিত সেতু ছিল।
কখনও কেউ কলকাতায় ভ্রমণে গেলে, অবশ্যই হাওড়া ব্রিজ পরিদর্শনের একটি সফর নিশ্চিত করবেন; দেখে বিস্ময় বোধ করবেন যে ‘কোনওরকম নাট ও বোল্ট ছাড়াই’ 82 মিটার উচ্চতার সঙ্গে 705 মিটার দীর্ঘ জুড়ে, দৈনিক 150,000 যানবাহন ও 4,000,000 পথচারীদের ওজন বহন করে কিভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। হাওড়া ব্রিজ হল একটি নিলম্বিত ধরনের সুষম খিলানের উপর স্থাপিত (ক্যান্টিলিভার) সেতু। এটির 1500 ফুট কেন্দ্রীয় ব্যাপ্তি রয়েছে। এটির নিলম্বিত বা ঝুলন্ত ব্যাপ্তি (স্প্যান) হল 564 ফুট। যে কোনও স্থাপত্যের কৃতিত্ব তার নকশা এবং শক্তির উপর বিচার করা হয়।
এই উভয় ক্ষেত্রেই হাওড়া ব্রিজ উচ্চ সাফল্যাঙ্ক পায়। উল্লেখিত রূপে, সেতুটি ট্রাফিক, যানবাহন, পথচারী এবং এমনকি গবাদি পশুর এক বিশাল প্রবাহকে সামাল দেয়। পাকা রাস্তার দু’ধারে, উভয়দিকে 15-ফুট বিস্তৃত ফুটপাত রয়েছে, যেগুলি পথচারীদের ভিড়ে পূর্ণ থাকে। 1993 সালের আগে পর্যন্ত, এই সেতুর উপর দিয়ে ট্রামও চলাচল করত।
হাওড়া ব্রিজটি, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামানুসারে রবীন্দ্র সেতু নামকরণ করা হয়। তবে, প্রাত্যাহিক বাক্যালাপে সেতুটির হাওড়া ব্রিজ নামটিই উল্লেখ হয়ে আসছে। হাওড়া ব্রিজ যদিও কলকাতার একটি প্রতীক, তবে এটি হুগলী নদীতে বিস্তৃত একমাত্র সেতু না। হুগলী নদীতে বিস্তৃত, কলকাতা ও হাওড়াকে সংযুক্তকারী দ্বিতীয় সেতুটি – এক অন্যতম রজ্জু স্থিত (ক্যাবেল-স্টেড) সেতু। 823 মিটার দীর্ঘ, বিদ্যাসাগর সেতু নামে অভিহিত এই টোল সেতুটি সহজেই ভারতের দীর্ঘতম রজ্জু স্থিত (ক্যাবেল-স্টেড) হিসাবে অবস্থিত রয়েছে এবং বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় আশিটি সেতুর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে।
হাওড়া ব্রিজ কলকাতার সঙ্গে সমার্থক হয়ে চলে আসছে। অনেক বিখ্যাত বলিউড (হিন্দি) চলচ্চিত্রে হাওড়া ব্রিজকে প্রদর্শিত করা হয়েছে। এমনকি, এই একই নামের একটি বিখ্যাত হিন্দি ছায়াছবি বা সিনেমাও রয়েছে। রুডইয়ার্ড কিপলিং-এর “দ্য সিটি অফ ড্রেডফুল নাইট" বা “ভয়ঙ্কর রাত্রির শহর"-এ হাওড়া ব্রিজের উল্লেখযোগ্য উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন বর্ণনা খুঁজে পাওয়া যায়।
দুর্ভাগ্যবশত, সেতুটি ভারতের সবচেয়ে এক অন্যতম জনবহুল ও অপরিচ্ছন্ন হয়ে ওঠা শহরের সর্বনাশ ভোগ করছে। এই সেতুটির সৌন্দর্য্য শুধুমাত্র পানের পিক ও পাখির মলের দাগেই নষ্ট হয় নি, বরঞ্চ এটির যথেষ্ট ক্ষয়ও হয়েছে। রাত্রিতে সেতুটির একটি সফরের যাওয়ার চেষ্টা করুন, দিনের বেলায় যদি যান, তাহলে আপনি কিছুক্ষণের জন্য অপেক্ষা ও দাঁড়াবার মতো সময় পাবেন না। রাত্রিবেলার আলোকিত দৃশ্য নিশ্চয়ই আপনাকে কলকাতার জাগরুতির দিকে ঠেলে দেবে। দিনের গোলমালের বিনিময়ে রাতের নীরব জাজ্জ্বল্যমান হুগলী ভিন্ন প্রকৃতির। সান্ধ্যকালীন বাতাস, দিনের স্বেদ ও পরিশ্রান্ততা থেকে নিষ্কৃতি বা নিস্তারের গন্ধ বয়ে নিয়ে আসে।
nice photograph.. =)