শুভ মহাসপ্তমী - নবপত্রিকা স্নান

দুর্গাপুজোর অন্যতম আচার নবপত্রিকা স্নান। সপ্তমীর সকালে হয় স্নান। নবপত্রিকার আক্ষরিক অর্থ 'নয়টি পাতা'। এগুলি হল কলা, কচু, হলুদ, জয়ন্তী, বেল, দাড়িম্ব, অশোক, মান ও ধান। একটি কলাগাছের সঙ্গে অপর আটটি গাছের পাতা বা ডাল বেঁধে দেওয়া হয়। অপরাজিতা লতা দিয়ে বাঁধা হয়। তার পরে লাল পাড়ওয়ালা সাদা শাড়ি জড়িয়ে তাকে ঘোমটাপরা বধূর রূপ দেওয়া হয়। সিঁদুর পরানো হয়। নবপত্রিকার প্রচলিত নাম 'কলাবউ' হলেও তিনি কারও বউ নন।

শাস্ত্র মতে নবপত্রিকা ন'জন দেবীর প্রতীক। কলা রূপে ব্রহ্মাণী, কচু রূপে কালিকা, হলুদ রূপে উমা, জয়ন্তী রূপে কার্তিকী, বেল রূপে শিবানী, দাড়িম রূপে রক্তদন্তিকা, অশোক রূপে শোকরহিতা, মান রূপে চামুণ্ডা এবং ধান রূপে লক্ষ্মী। শাস্ত্রানুসারে নবপত্রিকা হল নয় পাতায় বাস করা নবদুর্গা। দুর্গার ডানদিকে তথা গণেশের পাশে রাখা হয় নবপত্রিকাকে। কলাবউকে অনেকে গণেশ ঠাকুরের বউ মনে করলেও সেটা একেবারেই ভুল।

স্বপ্নে এমনটাই আদেশ ছিল বোধহয় তাঁর। সেই থেকেই কৃষ্ণনগরের চট্টোপাধ্যায় পরিবারে অপরাজিতা রঙের দেবী পুজোর প্রচলন। ভক্তের কাছে তিনি নীল দুর্গা। বনেদি বাড়ির আনাচে, কানাচের অভিজাত বৈভব, তাঁর রাজকীয় নীল রঙের গায়ে। এই দিনই তো দৃঢ়চরিত্রা এই বীরাঙ্গনা দেবী যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন মহিষাসুরের সঙ্গে। আসুরিক শক্তিকে নির্মূল করে, পৃথিবীকে দুর্গতি থেকে রক্ষা করেই তিনি হয়েছেন দুর্গতিনাশিনী দুর্গা। মর্তে তাঁর পুজো আরম্ভ করেন নীলকলেবর শ্রীকৃষ্ণ আবার অকালবোধনে ১০৮ টি নীল পদ্ম অর্পণ করেন শ্রীরামচন্দ্র। সর্বশক্তিময়ীর শক্তির রঙকে উপেক্ষা না করেই, লাল রঙ থাকলো আঁচলে আর কুঁচিতে।

মহাসপ্তমী

সপ্তমী তিথিতে মূলত নবপত্রিকা স্থাপন ও প্রতিষ্ঠা, মহাসপ্তমীবিহিত পূজা ও দেবী মহালক্ষ্মীর পূজা করা হয়। তবে সপ্তমী তিথির মূল পর্ব হল নবপত্রিকা স্থাপন ও প্রতিষ্ঠা।

নবপত্রিকা শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল নয়টি পাতার সমাহার। তবে মূলত নয়টি উদ্ভিদের সমাহারকে নবপত্রিকা বলে। বিল্ব (বেল), কদলী, কদম্ব(কচু), মানক(মানকচু), অশোক, জয়ন্তী, হরিদ্রা(হলুদ), ধান্য(ধান), দাড়িম্ব(ডালিম) এই নয়টি গাছকে একত্রে নবপত্রিকা বলা হয়। নবপত্রিকাকে মূলত দেবী মহালক্ষ্মী হিসেবে পূজা করা হয়। নবপত্রিকাকে গণেশের ডানপাশে স্থাপন করা হয়। তাই অনেকে মনে করে যে, কলা বউ হল গণেশের পত্নী। কিন্তু বাস্তবে এরুপ কিছুই নয়।

একটি সপত্র কলাগাছের সাথে বাকি আটটি গাছ একত্রিত করে বেলসহ শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে লাল কাপড় দ্বারা আচ্ছাদিত করে এক বধূর আকার দেওয়া হয়। যা মূলত দেবী দূর্গার এক বিশেষ অংশ মহালক্ষ্মীরুপে পূজিত হন। মহাসপ্তমীর দিন সকালে পুরোহিত নিজেই নবপত্রিকা নিয়ে নিকটস্থ কোনো জলাশয়ে গিয়ে শাস্ত্রবিধি অনুসারে নবপত্রিকার স্নান করান। এরপর মণ্ডপে এনে নবপত্রিকা প্রতিষ্ঠা ও স্থাপন করেন। নবপত্রিকা প্রবেশের পূর্বে পত্রিকার সম্মুখে দেবী চামুণ্ডার পূজা ও আবাহন করা হয়। এরপর নবপত্রিকার প্রবেশ ঘটে মণ্ডপে।

নবপত্রিকা প্রবেশের পর দর্পণে দেবীকে মহাস্নান করানো হয়। নবপত্রিকার নয় উদ্ভিদ আসলে দেবী দূর্গার নয়টি রুপের সমাহার। ধানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী লক্ষ্মী, কলাগাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী ব্রক্ষ্মাণী, কচুগাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী কালিকা, হরিদ্রার অধিষ্ঠাত্রী দেবী উমা, মানকের অধিষ্ঠাত্রী দেবী চামুণ্ডা, বিল্বের অধিষ্ঠাত্রী দেবী শিবা, অশোকের অধিষ্ঠাত্রী দেবী শোকরহিতা, দাড়িম্বের অধিষ্ঠাত্রী দেবী রক্তদন্তিকা, জয়ন্তীর অধিষ্ঠাত্রী দেবী কার্ত্তিকী।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url