চালের পায়েস রান্নার পদ্ধতি, রেসিপি
আমরা বেশ কিছু খাবারের নাম নিয়ে কমন কিছু ভুল করি. তার মধ্যে একটা হলো, পায়েস, ক্ষীর আর ফিরনি নিয়ে. অনেকেই এদের মধ্যে পার্থক্য জানি না. আমি বেশ অনেকদিন আগে আমার ব্লগে প্রথম এটার পার্থক্য গুলো লিখি ,তবে সেটা ইংলিশে লেখা. এখন যেহেতু বাংলায় লিখছি, তাই মনে হলো এ ব্যাপারে আবার লিখি. পায়েস, ফিরনি, ক্ষীরের উপাদান প্রায় একি হলেও স্বাদ এবং টেক্সচারে এদের মধ্যে রয়েছে বেশ পার্থক্য.
ক্ষীর: দুধের অনুপাত চালের থেকে অনেক বেশি এবং দুধ কে জ্বাল দিয়ে অনেক টানিয়ে ঘন করে ফেলা হয়. দুধ ছাড়া ক্ষীর হবে না. অনেক সময় চাল বা অন্য কোন কিছু ছাড়াই দুধ টানিয়ে ক্ষীর করা হয়. যেমন ক্ষিরসা. যতদুর জানি, ক্ষিরসা শব্দটি হিন্দি বা উর্দু ক্ষীর সা মানে ক্ষীরের মতো থেকে এসেছে.
ছোট বেলায় ক্ষীরের পুতুল পড়েছেন? নাম থেকেও কিন্তু বোঝা যায় ক্ষীর নরম কিন্তু প্রায় সলিড ফর্মের থাকবে. ক্ষীরের পুর দিয়ে পাটিসাপটা, ক্ষীর পুলি সহ অনেক পিঠা করা হয়.
পায়েস: পায়েসে গোটা চাল ব্যাবহার করা হয়. দুধ জ্বাল দিয়ে ক্ষীরের মতো অত ঘন করার দরকার নেই. এটি ক্ষীরের মতো প্রায় সলিড নয়. ঘন কিন্তু থকথকে হবে না.
ফিরনি: ফিরনি নওয়াবদের রসুইঘরের শাহী ডেসার্টের একটি. ফিরনি তে ব্যাবহার করা হয় ভাংগা সুগন্ধি চাল আর জাফরান, কেওড়া, বাদাম, কিশমিশ সহ নানা শাহী উপাদান এর বৈশিষ্ট. এই ভাংগা চাল থেকে বের হওয়া স্টার্চই ফিরনির ঘনত্বের উৎস.
যাই হোক, আজকে পায়েসের রেসিপি দিচ্ছি. দুধের পায়েস. একটা কথা বলি,পায়েস রান্নার একটা সাধারন রুল হলো, ১ লিটার দুধে ১ মুঠো চাল. এক মুঠো মানে প্রায় ১/৪ ভাগ কাপ চাল. এর থেকে কিছু বেশিও নেয়া যায়, কিন্তু ১ লিটার দুধে ১/২ কাপ এর বেশি চাল নিলে সেটা প্রায় দুধ ভাত ধরনের হয়.
আমার এক বন্ধুর ৫ লিটার দুধে মাত্র দু মুঠো চাল দিয়ে পায়েস করতেন. আহহহহহহহ! কি স্বাদ! হ্যা, সব সময় এত দুধ দিয়ে এত অল্প পরিমানে পায়েস করা সম্ভব হয় না. কিন্তু সেটার একটা টেক্নিক আছে. চাল আগেই এত অল্প দুধে সিদ্ধ করা হয় না কারন সিদ্ধ হয়ে আসল কন্সিস্টেন্সিতে আসার আগেই সেটা টেনে যাবে. এই জন্য অনেকেই আগে চালটাকে আলাদা সিদ্ধ করে খুব ঘন দুধে জ্বাল দিয়ে, চিনি যোগ করে করে. যাক, সেই রেসিপি না হয় পরে কখনো দেয়া যাবে. আজকে বেসিক পায়েসের রেসিপি দেই.
শীতে ঘন দুধের খেজুরের রসের সুগন্ধে মৌ মৌ পায়েস কার না পছন্দ! কিন্তু এই পায়েস রাধতে গিয়ে কত মানুষের কত মন খারাপ. দুধ ফেটে গেল কেন? গুড়ের সুন্দর গন্ধ টা আসছে না. চাল গুলো ঠান্ডা হবার পর কেমন শক্ত আর তাকিয়ে তাকিয়ে আছে যেন! আমি অনেক রেসিপি দেখেছি,যেখানে দুধের সাথে গুড় জ্বাল দেয়ার কথা রয়েছে!
আর ইউ কিডিং মি? একটা রেসিপি কেউ লিখলে দায়িত্বের সাথে লেখা উচিত. দুধ আর গুড় গরম অবস্থায় জ্বাল দিলে ফেটে যাবার চান্স ৯৯.৯৯%.
এখন সেই খাটি গুড় কই? আর কমার্শিয়ালি করা গুড়ে এখন সোডা দেয়া ছাড়াও অনেক কেমিক্যাল ইউজ করা হয়. খাটি গুড় বলে বিক্রি করা গুড়েও নিদেন পক্ষে সোডা দেয়া থাকবে. এই গুড় গরম দুধে দেয়ার সাথে সাথে ফাটবে না তো কি! সমাধান পরে দিচ্ছি. এখন আসি আরেকটা ইস্যু নিয়ে. গুড়ের সুন্দর গন্ধ পাই না কেন?
আমি যত রেসিপি দেখেছি, সব যায়গায় গুড়ের পায়েস এ এলাচ, দারচিনি, তেজপাতা দেয়া!! এই গরম মশলার কারনে খেজুর গুড়ের সুন্দর গন্ধ টাই থাকে না. ঘন দুধের গুড়ের পায়েস এর উপাদান খুব সামান্য. দুধ,চাল আর ভাল মানের গুড়. চাইলে কেউ নারকেল দেই. এই তো. এর বেশি আর কিছুই না. প্লিজ নো গরম মশলা. তারপর দেখুন গুড় কেমন করে চারদিকে মৌ মৌ সুগন্ধে ভরে রাখে.
এখন প্রসেস এ আসি. দুইভাবে করা যায়.প্রথমে গুড় আর চাল একসাথে জ্বাল দেয়া হয়. চাল সিদ্ধ হয়ে নরম আর ঘন হয়ে আসার পর, ঠান্ডা হয়ে হালকা গরম থাকতে, হালকা গরম খুব ঘন দুধ মেশানো হয়. অথবা প্রথমে দুধে চাল জ্বাল দেয়া হয়. সিদ্ধ হয়ে ঘন হওয়ার পর ঠান্ডা করে হালকা গরম থাকতে, হালকা গরম ঘন করা জ্বাল দেয়া গুড় মিশিয়ে. আমি শেষের পদ্ধতি তে করেছি.
গরম দুধে কখনো গুড় দিবেন না. দুধ ফেটে যাবে. আবার দুধ হালকা গরম কিন্তু গুড় আগুন গরম, তাতেও কিন্তু দুধ ফেটে যাবে. দুটোই কুসুম গরম থাকবে.
উপকরণ:
৩ কাপ চাল
দেড় কেজি দুধ
১ কাপ খেজুর গুড়
২ কাপ পানি
১ কাপ নারকেল কোড়া
প্রনালী:
১. চাল ধুয়ে ১ ঘন্টা ভিজিয়ে পানি ঝরিয়ে নিন. দুধ আর চাল একসাথে সিদ্ধ হতে দিন. প্রথমে মাঝারি আচে. প্রথম দিকে ঘন ঘন নাড়িয়ে দিবেন, আর না হলে নিচে চাল লেগে যেতে পারে. বলক আসলে জ্বাল মাঝারি থেকে কম আচে দিয়ে জ্বাল দিতে থাকুন. মাঝে মাঝে নেড়ে দিবেন. উপরে সরের মত পড়বে, দুধে মিলিয়ে দিন.
২. চাল সিদ্ধ হয়ে গেলে হ্যান্ড ব্লেন্ডার বা ডাল ঘুটুনি দিয়ে অল্প একটু ঘুটে দিন. পায়েস বেশ ঘন হয়ে আসলে চুলা বন্ধ করে দিন. একদম থকথকে ঘন না, কিন্তু বেশ ঘন, যাতে গুড় মিশালে পায়েস এর পারফেক্ট কন্সিসটেন্সি টা আসে, সেটা আন্দাজ করেই.
৩. দুধ আর চাল জ্বাল দেবার সময়, ১ কাপ খেজুর গুড় দেড় কাপ পানিতে জ্বাল দিয়ে অর্ধেক মানে ৩/৪ ভাগ কাপ করে ফেলুন. ঠান্ডা হতে দিন.
৪. দুধ আর চাল হালকা গরম থাকতে নারকেল কোড়া দিন. এখন ঠান্ডা হওয়া হালকা গরম গুড় বা রুম টেম্পেরেচারের গুড় আস্তে আস্তে মিশিয়ে নিন. গুড় মেশানোর পর আপনি যেমন কন্সিসটেন্সির পায়েস খেতে চান, তার থেকে একটু পাতলা থাকবে, কারন ঠান্ডা হলে এটা ঘন হয়ে জমে যাবে. ঠান্ডা হবার পর গুড়ের রংটাও পায়েসে সুন্দর আসবে. মজা করে খান.
ক্ষীর: দুধের অনুপাত চালের থেকে অনেক বেশি এবং দুধ কে জ্বাল দিয়ে অনেক টানিয়ে ঘন করে ফেলা হয়. দুধ ছাড়া ক্ষীর হবে না. অনেক সময় চাল বা অন্য কোন কিছু ছাড়াই দুধ টানিয়ে ক্ষীর করা হয়. যেমন ক্ষিরসা. যতদুর জানি, ক্ষিরসা শব্দটি হিন্দি বা উর্দু ক্ষীর সা মানে ক্ষীরের মতো থেকে এসেছে.
ছোট বেলায় ক্ষীরের পুতুল পড়েছেন? নাম থেকেও কিন্তু বোঝা যায় ক্ষীর নরম কিন্তু প্রায় সলিড ফর্মের থাকবে. ক্ষীরের পুর দিয়ে পাটিসাপটা, ক্ষীর পুলি সহ অনেক পিঠা করা হয়.
পায়েস: পায়েসে গোটা চাল ব্যাবহার করা হয়. দুধ জ্বাল দিয়ে ক্ষীরের মতো অত ঘন করার দরকার নেই. এটি ক্ষীরের মতো প্রায় সলিড নয়. ঘন কিন্তু থকথকে হবে না.
ফিরনি: ফিরনি নওয়াবদের রসুইঘরের শাহী ডেসার্টের একটি. ফিরনি তে ব্যাবহার করা হয় ভাংগা সুগন্ধি চাল আর জাফরান, কেওড়া, বাদাম, কিশমিশ সহ নানা শাহী উপাদান এর বৈশিষ্ট. এই ভাংগা চাল থেকে বের হওয়া স্টার্চই ফিরনির ঘনত্বের উৎস.
যাই হোক, আজকে পায়েসের রেসিপি দিচ্ছি. দুধের পায়েস. একটা কথা বলি,পায়েস রান্নার একটা সাধারন রুল হলো, ১ লিটার দুধে ১ মুঠো চাল. এক মুঠো মানে প্রায় ১/৪ ভাগ কাপ চাল. এর থেকে কিছু বেশিও নেয়া যায়, কিন্তু ১ লিটার দুধে ১/২ কাপ এর বেশি চাল নিলে সেটা প্রায় দুধ ভাত ধরনের হয়.
আমার এক বন্ধুর ৫ লিটার দুধে মাত্র দু মুঠো চাল দিয়ে পায়েস করতেন. আহহহহহহহ! কি স্বাদ! হ্যা, সব সময় এত দুধ দিয়ে এত অল্প পরিমানে পায়েস করা সম্ভব হয় না. কিন্তু সেটার একটা টেক্নিক আছে. চাল আগেই এত অল্প দুধে সিদ্ধ করা হয় না কারন সিদ্ধ হয়ে আসল কন্সিস্টেন্সিতে আসার আগেই সেটা টেনে যাবে. এই জন্য অনেকেই আগে চালটাকে আলাদা সিদ্ধ করে খুব ঘন দুধে জ্বাল দিয়ে, চিনি যোগ করে করে. যাক, সেই রেসিপি না হয় পরে কখনো দেয়া যাবে. আজকে বেসিক পায়েসের রেসিপি দেই.
শীতে ঘন দুধের খেজুরের রসের সুগন্ধে মৌ মৌ পায়েস কার না পছন্দ! কিন্তু এই পায়েস রাধতে গিয়ে কত মানুষের কত মন খারাপ. দুধ ফেটে গেল কেন? গুড়ের সুন্দর গন্ধ টা আসছে না. চাল গুলো ঠান্ডা হবার পর কেমন শক্ত আর তাকিয়ে তাকিয়ে আছে যেন! আমি অনেক রেসিপি দেখেছি,যেখানে দুধের সাথে গুড় জ্বাল দেয়ার কথা রয়েছে!
আর ইউ কিডিং মি? একটা রেসিপি কেউ লিখলে দায়িত্বের সাথে লেখা উচিত. দুধ আর গুড় গরম অবস্থায় জ্বাল দিলে ফেটে যাবার চান্স ৯৯.৯৯%.
এখন সেই খাটি গুড় কই? আর কমার্শিয়ালি করা গুড়ে এখন সোডা দেয়া ছাড়াও অনেক কেমিক্যাল ইউজ করা হয়. খাটি গুড় বলে বিক্রি করা গুড়েও নিদেন পক্ষে সোডা দেয়া থাকবে. এই গুড় গরম দুধে দেয়ার সাথে সাথে ফাটবে না তো কি! সমাধান পরে দিচ্ছি. এখন আসি আরেকটা ইস্যু নিয়ে. গুড়ের সুন্দর গন্ধ পাই না কেন?
আমি যত রেসিপি দেখেছি, সব যায়গায় গুড়ের পায়েস এ এলাচ, দারচিনি, তেজপাতা দেয়া!! এই গরম মশলার কারনে খেজুর গুড়ের সুন্দর গন্ধ টাই থাকে না. ঘন দুধের গুড়ের পায়েস এর উপাদান খুব সামান্য. দুধ,চাল আর ভাল মানের গুড়. চাইলে কেউ নারকেল দেই. এই তো. এর বেশি আর কিছুই না. প্লিজ নো গরম মশলা. তারপর দেখুন গুড় কেমন করে চারদিকে মৌ মৌ সুগন্ধে ভরে রাখে.
এখন প্রসেস এ আসি. দুইভাবে করা যায়.প্রথমে গুড় আর চাল একসাথে জ্বাল দেয়া হয়. চাল সিদ্ধ হয়ে নরম আর ঘন হয়ে আসার পর, ঠান্ডা হয়ে হালকা গরম থাকতে, হালকা গরম খুব ঘন দুধ মেশানো হয়. অথবা প্রথমে দুধে চাল জ্বাল দেয়া হয়. সিদ্ধ হয়ে ঘন হওয়ার পর ঠান্ডা করে হালকা গরম থাকতে, হালকা গরম ঘন করা জ্বাল দেয়া গুড় মিশিয়ে. আমি শেষের পদ্ধতি তে করেছি.
গরম দুধে কখনো গুড় দিবেন না. দুধ ফেটে যাবে. আবার দুধ হালকা গরম কিন্তু গুড় আগুন গরম, তাতেও কিন্তু দুধ ফেটে যাবে. দুটোই কুসুম গরম থাকবে.
উপকরণ:
৩ কাপ চাল
দেড় কেজি দুধ
১ কাপ খেজুর গুড়
২ কাপ পানি
১ কাপ নারকেল কোড়া
প্রনালী:
১. চাল ধুয়ে ১ ঘন্টা ভিজিয়ে পানি ঝরিয়ে নিন. দুধ আর চাল একসাথে সিদ্ধ হতে দিন. প্রথমে মাঝারি আচে. প্রথম দিকে ঘন ঘন নাড়িয়ে দিবেন, আর না হলে নিচে চাল লেগে যেতে পারে. বলক আসলে জ্বাল মাঝারি থেকে কম আচে দিয়ে জ্বাল দিতে থাকুন. মাঝে মাঝে নেড়ে দিবেন. উপরে সরের মত পড়বে, দুধে মিলিয়ে দিন.
২. চাল সিদ্ধ হয়ে গেলে হ্যান্ড ব্লেন্ডার বা ডাল ঘুটুনি দিয়ে অল্প একটু ঘুটে দিন. পায়েস বেশ ঘন হয়ে আসলে চুলা বন্ধ করে দিন. একদম থকথকে ঘন না, কিন্তু বেশ ঘন, যাতে গুড় মিশালে পায়েস এর পারফেক্ট কন্সিসটেন্সি টা আসে, সেটা আন্দাজ করেই.
৩. দুধ আর চাল জ্বাল দেবার সময়, ১ কাপ খেজুর গুড় দেড় কাপ পানিতে জ্বাল দিয়ে অর্ধেক মানে ৩/৪ ভাগ কাপ করে ফেলুন. ঠান্ডা হতে দিন.
৪. দুধ আর চাল হালকা গরম থাকতে নারকেল কোড়া দিন. এখন ঠান্ডা হওয়া হালকা গরম গুড় বা রুম টেম্পেরেচারের গুড় আস্তে আস্তে মিশিয়ে নিন. গুড় মেশানোর পর আপনি যেমন কন্সিসটেন্সির পায়েস খেতে চান, তার থেকে একটু পাতলা থাকবে, কারন ঠান্ডা হলে এটা ঘন হয়ে জমে যাবে. ঠান্ডা হবার পর গুড়ের রংটাও পায়েসে সুন্দর আসবে. মজা করে খান.