স্বল্প খরচে ঘর সাজানোর টিপস
ঘর সাজানো মানেই খরচ, এই ধারণা একদমই ভুল। অল্প ব্যয়েও রুচিমধুরভাবে সাজিয়ে নেয়া যায় নিজের ফ্ল্যাট বা ছোট ঘরখানা। কিভাবে সেটাই জানানো হলো। ঘরের আব্রম্ন রৰার জন্য প্রথমেই দরকার পর্দা। হ্যান্ডলুমের দোকান থেকে সাদা মোটা তাঁতের কাপড় কিনে, তাই দিয়ে তৈরি হলো লম্বা পর্দা। পেলমেট বানাতে খরচ অনেক। সেজন্য সাধারণ অ্যালুমিনিয়াম রডের রিং দিয়ে সাজানো হলো পর্দা। আগুনের বিয়ের আগের সম্পত্তি একটি বঙ্ ডিভান ছিল বাড়িতেই।
তার ওপর এমব্রয়ডারি করা অফ-হোয়াইট চাদর বিছিয়ে করা হয় বসার আয়োজন। বসার আরাম আর রঙের বৈপরীত্যের জন্য রাখা হলো রঙচঙে কয়েকটি কুশন। ঘরের একমাত্র বেতের চেয়ারটিও সাদা রঙ করে রাখা হয় একপাশে। এবার বই রাখার আয়োজন। কয়েকটি ছুটির দিনে ঘুরে ঘুরে পুরনো আসবাবের দোকানে অবশেষে পেয়ে গেল মনের মতো একটি বুক র্যাক আর লোহার খোলা শেলফ। সাদা রং করে শেলফটি রাখা হলো বাঁদিকের দেয়াল ঘেঁষে। র্যাকটি অবশ্য এতটাই বড় ছিল পুরোটাই জায়গা হয়নি একদিকের দেয়ালে।
দু ফুটের মতো কেটে ফেলে রাখা হয় আলাদা করে। ঘরের ডানদিকের দেয়ালজুড়ে রাখা হয় কাঠের খোলা বুক র্যাক। এটিও পুরনো আসবাবের দোকান থেকে কেনা। এগুলো দামে সসত্মা শুধু একটু পালিশ করে নিলেই হলো। এইসব দোকানে নিয়মিত খোঁজ রাখলে পছন্দমতো জিনিস সসত্মায় পেতে সাধারণত অসুবিধা হয় না।
র্যাকগুলো ভর্তি করে ফেলা হয় বই সাজিয়ে। বাঁদিকের তাকে বিশেষ দর্শনীয়ভাবে রাখা হয় সুন্দর পোস্টার। আর একদম উপরের তাকে লতানো গাছ; কাঠের হাতি। আর রঙিন পট রেখে তৈরি করা হয় কালার কনট্রাস্ট। ডানদিকের কাঠের তাকে বই-এর সঙ্গে থাকল আরও অনেক টুকিটাকি-মিউজিক সিস্টেম, সবুজ গাছ, কলমদানি ইত্যাদি। লোহার শেল্ফের কাটা অংশটি রাখা হয় দরজার পাশে। তার একদম ওপরের তাঁকে স্পিকার আর মাঝখানে ঝোলানো সুতোর কাজ করা মনিপুরী ল্যাম্প যা ঘরের সজ্জায় যোগ করে এক নতুন মাত্রা। মেঝেতে বিছিয়ে দেয়া হয় মরচে ও কালো রঙের কম্বিনেশনের শতরঞ্জি।
বসার ঘরের পর এবার খাওয়ার ঘরের পালা। আগুনের ফ্রিজটি উজ্জ্বল নীল রঙের। তাই তারা ঘরে সাদার বৈপরীত্যে রাখে সাদা ও নীল রঙের সমন্বয়। ডাইনিং কাচের টেবিলের মাঝখানে-নানারঙের ফুলের ফুলদানি। সঙ্গে মানানসই নীল রঙের বাটিকের কাজ করা কুশনকভার ও কাচের ন্যাপকিন হোল্ডারে ন্যাপকিন।
গাছ রাখার ছোট টুলটি ঢাকা হলো নীল বর্ডার দেয়া সাদা কাপড়ে। নীল-সাদা আর গাছের সবুজ মিলিয়ে এমন এক ধরনের নরম ঔজ্জ্বল্য সৃষ্টি হয়েছে যে, ঘরে ঢোকা মাত্রই মন ভরে ওঠে এক সি্নগ্ধ আবেশে।
সর্বশেষে বলে রাখা ভাল ডাইনিং টেবিলটি, ফুলদানি, ন্যাপকিন হোল্ডার-ফুল_সবই কিনেছিল খুব সসত্মায়। ওদের এক বন্ধুর কাছ থেকে। বিদেশ যাওয়ার সময় সে বিক্রি করে। কাজেই সব মিলিয়ে তাদের বড়জোর খরচ হয়েছে বিশ হাজারের মতো। অর্থাৎ মাত্র এই টাকাতেই চোখজুড়ানো, মনভোলানো ঘরের সাজ শেষ।ঘর যদি ছোট হয়, তাহলে পর্দা, বিছানার চাদর, আসবাব- সবই হাল্কা কিংবা সাদাঘেঁষা রঙের কিনতে চেষ্টা করবেন। তাহলে তুলনায় ঘরটি বড় দেখাবে। দেয়ালে থাকুক ক্রিম বা অফ-হোয়াইট রং।
হাল্কা রঙের বিপরীতে কুশন, ন্যাপকিন, কলমদানি, পোস্টার, ইত্যাদিতে উজ্জ্বল রঙের ছোঁয়া থাকলে ঘর সাজানোয় বৈচিত্র্য আসে। কেনা জিনিস দিয়েই ঘর সাজাতে হবে, তার কিন্তু কোনও মানে নেই। বেড়াতে গিয়ে কুড়িয়ে আনা ঝিনুক, শাঁখ, নানা রঙের পাথর, পাইনের মোচা_এসবও ঘর সাজানোয় অনায়াসে ব্যবহার করা যায়। ঘর যত ছোটই হোক না কেন, অনত্মত একটি-দু'টি গাছ রাখার চেষ্টা করবেন। কারণ গাছের সবুজ রঙ চোখকে আরাম দেয়।
বাড়ির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বসার ঘরটি সাজানোর সময় বিশেষ কিছু পরামর্শ মেনে চলুন। ভাড়া বাসায় যেহেতু জায়গার সঙ্কট, তাই সেই কথাটাও মাথায় রাখতে হবে। আর যদি নিজের তৈরি বাসা বা নিজের মনের মতো ফ্ল্যাট হয়, তাহলে মনে রাখবেন বসার ঘরটা যেন হয় দক্ষিণ–পূর্ব দিকে। তাতে শীতে যেমন পর্যাপ্ত রোদ পাবেন তেমন গরমের সময় বিকেলের পর দক্ষিণের খোলা হাওয়া এসে প্রাণ জুড়াবে আপনার।
* ঘরটি কেমন সেটা মাথায় রেখে তবেই ঘরের আসবাবপত্র নির্বাচন করুন। বড় ঘর হলে সোফা, সেন্টার টেবিল, কর্নার, ল্যাম্প, ঝাড়বাতি, কার্পেট দিয়ে ঘরকে সাজাতে পারেন। আর ঘরটা যদি হয় ছোট, সেক্ষেত্রে ছোট ছোট আসবাবপত্র নির্বাচন করুন।
* বসার আর খাওয়ার ঘর একসাথে হয়, তাহলে নিজের মতো করেই দুটির মাঝে একটু পার্টিশন দিয়ে নিতে পারেন। এখানে বুক শেলফ বা কেবিনেট ব্যবহার করতে পারেন পার্টিশন হিসেবে।
* ঠিক রঙ ঠিক জায়গায় ব্যবহার করলে সহজেই বেড়ে যাবে আপনার বসার ঘরের সৌন্দর্য। উজ্জ্বল এবং হালকা রঙে ঘর সাজালে ঘর যে বড় দেখায় সেটা নিশ্চয়ই আপনার অজানা নয়। ঘরে পর্যাপ্ত আলোর প্রবেশ না থাকলে কখনোই দেয়ালে গাঢ় রঙ করাবেন না। ঘর আরও অন্ধকার দেখাবে।
* ঘরে একটি রঙিন ও উজ্জ্বল ভাব আনার জন্যে কনট্রাস্ট কুশন কভার অথবা পর্দা ব্যবহার করতে পারেন। যদি আপনার ফ্ল্যাট ছোট হয় তাহলে দরজা জানালায় বেশি ভারী পর্দা ব্যবহার না করাই ভালো।
* এখন অনেকে মেঝে নিয়ে নানা রকম এক্সপেরিমেন্ট করতে পছন্দ করেন। দেয়ালের রঙ, ফার্নিচার, পর্দা, সোফা কভারের মতো মেঝে কিন্তু বার বার বদলানো সম্ভব নয়। তাই প্রথমেই জেনে নিন আপনার পছন্দ কোন ধরনের মেঝে।
* বসার ঘরের রঙ নষ্ট হয়নি কিন্তু দীর্ঘদিন এক রঙ দেখতে দেখতে একঘেয়ে লাগলে অনেক টাকা খরচ করে রঙ করানোর চেয়ে কয়েকটি ভালো ভালো পোষ্টার কিনে লাগিয়ে নিন।
* বসার ঘরে নতুনত্ব আনতে সোফার কভারগুলো পরিবর্তন করে নিতে পারেন।
* সোফার টেবিল স্টিলের বা কাচের 'ওয়াটার পন্ড' দিয়ে সাজান। সোফার পাশে কর্নার টেবিলে ফুলদানি বা ইনডোর গাছ রাখুন। সেন্টার টেবিলে রাখতে পারেন বাঁশ, বেত বা মাটির শোপিস।
* ঘরের কর্নারে পটারিতে বড় গাছ, অন্য কর্নারে টেবিল ল্যাম্প, শতরঞ্জি, দেয়ালে আলোকচিত্র এবং নকশিকাঁথার ওয়ালমেট ঝুলিয়ে দিন।
* আলোর ব্যবহার ঘরের সৌন্দর্য পুরোপুরি বদলে দিতে পারে।
* ড্রইং রুমের দেয়ালে কিছুটা অংশে কাঁচ বসিয়ে দিতে পারেন। এতে বাড়তি আলো পাবেন।
* ড্রইংরুমের একপাশের দেয়ালটুকু পুরোটা কাঁচ দিয়ে তৈরি করতে পারেন।
* বসার ঘরে লাইটগুলোকে এমনভাবে ব্যবহার করুন যাতে ঘর গরম না হয়ে ওঠে।
* খুব শক্তিশালী হ্যালোজেন বাতি ঘরে না রাখাই ভাল।
* ঘরে নান্দনিক সৌন্দর্য আনতে ব্যবহার করতে পারেন স্পট লাইট। এই লাইটকে আপনি আপনার ইচ্ছে মতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
* চাইলে কোনো মাটির মটকা, বেতের ঝুড়ি অথবা বাঁশের খোলের মধ্যে রাখতে পারেন আলোর ব্যবস্থা। এতে ঘরের লাইটিংয়ে বৈচিত্র আসবে।
* যেহেতু এটা ড্রইং রুম, তাই শুধু টি টেবিলের অংশটুকু ছাড়া বাকিটুকু অন্ধকার থাকলেও কোন সমস্যা নেই। উপরে একটা ঝাড় বাতি থাকলেই সে অংশটুকু অন্ধকার হয়ে থাকবে।
* দেয়ালগুলো আলোকময় করতে দেয়াল ঝুলিয়ে কিছু বাতি সেট করতে পারেন। আর রুমের সেখানে বাতি আছে সেই জায়গাগুলোতেই কেবলমাত্র ছবি ঝুলান। সে ক্ষেত্রে বাতি বসানোর আগেই দেখে নিন কোথায় কোথায় ছবি ঝোলাবেন।
* একটি বড় কিংবা অনেকগুলো ছোট ছোট রট আয়রনের মোমবাতির স্ট্যান্ড রাখুন ঘরে। এগুলো একদিকে ঘরের সৌন্দর্য বাড়াবে অপর পক্ষে লোডশেডিংয়ে কাজে দেবে। তবে বাতিগুলো যেন অবশ্যই দেয়াল থেকে দূরে থাকে। নইলে কালি পড়ে যাবে।
* বসার ঘরে রঙিন বাতি না দেয়াই ভাল। যদি ঘরে কোন কস্টিউম কর্নার থাকে (অ্যাকুরিয়াম, ফোয়ারা কিংবা কৃত্রিম গাছের বাগান) সেখানে রঙিন বাতি ব্যবহার করা যেতে পারে।
* বাতির উপরে অবশ্যই শেড দিয়ে দিন। এটাই এখন স্টাইল। নইলে খুব খারাপ দেখাবে।
* ঘরের মাঝখানের টেবিলটির উপরই ছোট কোনও ফ্লাওয়ার ভাস রেখে ফুল সাজাতে পারেন।
* কাপড় আর বাঁশের কঞ্চি দিয়ে চমৎকার ল্যাম্প স্ট্যান্ড বানানো যায়। এ ধরনের ল্যাম্প স্ট্যান্ড একদিকে যেমন আপনার ঘরের শোভা বাড়াবে তেমনি আপনার নান্দনিকতাও ফুটিয়ে তুলবে।
* পেইন্টিংস, পরিবারের কোনও ছবি আপনার বসার ঘরের দেয়ালে রাখতে পারেন এবং সেই ধরনের কোনও কিছু দেয়ালে রাখলে তা ওয়াল হ্যাংগিং কোনও স্পট লাইট দিয়ে হাইলাইট করলে ভাল দেখাবে।
অ্যাপার্টমেন্ট অথবা বাড়ির প্রবেশপথে একটি বড় ফ্লাওয়ার ভাসের ওপর ছোট একটি পাত্রে কিছু ফুল রেখে দিলে, অতিথির কাছে শুরুতেই একটি ভালোলাগা বোধ সৃষ্টি হবে। পাত্রটিতে কিছু ছোট পাথর অথবা পানি দিয়েও রাখা যেতে পারে। এরপর ঘরে প্রবেশ। বসার ঘরের কিছু কর্নারে ইকেবানা সাজিয়ে রেখেও পরিবেশ বদলে ফেলা যায়। ইকেবানা ধারণার আগমন জাপান থেকে।
তাদের সংস্কৃতিতে স্বল্প পরিসরে স্বল্প আয়োজনে সতেজতার প্রতীক ফুলকে উপস্থাপন করাই ক্ষুদ্র অর্থে ইকেবানা। এর বেশকিছু দার্শনিক ধারণাও রয়েছে। তবে নান্দনিকতাকে কাজে লাগিয়ে নূ্যনতম খরচে ফুল সাজানোর একটি শৈল্পিক উপায় হতে পারে এটি। এর জন্য আপনাকে নানা ধরনের মাটির অথবা ধাতব পাত্র ব্যবহার করতে হতে পারে। নানা ধরনের পাথর এবং সবুজ পাতার উপস্থিতি খুব সহজেই আপনার আবাসকে প্রাকৃতিক শোভামণ্ডিত করবে।
পুরো ঘর ফুলে ছেয়ে ফেলতে হবে, বিষয়টি এমন নয়। হাঁটা-চলার পথ অথবা বিভিন্ন কর্নারকে কেন্দ্র করেই এই শিল্পকর্ম চলতে পারে। ডাইনিংয়ের পাশে ওয়াশিং এরিয়া, এখানেও সাজাতে পারেন ফুল। একটি ফুলের পাপড়িকে পানিতে ভাসিয়ে রাখলেও মনে সতেজতা আসে। যেখানে পানির উপস্থিতি, সেখানেই একটি ইকেবানা রেখে দিতে পারেন।
তার ওপর এমব্রয়ডারি করা অফ-হোয়াইট চাদর বিছিয়ে করা হয় বসার আয়োজন। বসার আরাম আর রঙের বৈপরীত্যের জন্য রাখা হলো রঙচঙে কয়েকটি কুশন। ঘরের একমাত্র বেতের চেয়ারটিও সাদা রঙ করে রাখা হয় একপাশে। এবার বই রাখার আয়োজন। কয়েকটি ছুটির দিনে ঘুরে ঘুরে পুরনো আসবাবের দোকানে অবশেষে পেয়ে গেল মনের মতো একটি বুক র্যাক আর লোহার খোলা শেলফ। সাদা রং করে শেলফটি রাখা হলো বাঁদিকের দেয়াল ঘেঁষে। র্যাকটি অবশ্য এতটাই বড় ছিল পুরোটাই জায়গা হয়নি একদিকের দেয়ালে।
দু ফুটের মতো কেটে ফেলে রাখা হয় আলাদা করে। ঘরের ডানদিকের দেয়ালজুড়ে রাখা হয় কাঠের খোলা বুক র্যাক। এটিও পুরনো আসবাবের দোকান থেকে কেনা। এগুলো দামে সসত্মা শুধু একটু পালিশ করে নিলেই হলো। এইসব দোকানে নিয়মিত খোঁজ রাখলে পছন্দমতো জিনিস সসত্মায় পেতে সাধারণত অসুবিধা হয় না।
র্যাকগুলো ভর্তি করে ফেলা হয় বই সাজিয়ে। বাঁদিকের তাকে বিশেষ দর্শনীয়ভাবে রাখা হয় সুন্দর পোস্টার। আর একদম উপরের তাকে লতানো গাছ; কাঠের হাতি। আর রঙিন পট রেখে তৈরি করা হয় কালার কনট্রাস্ট। ডানদিকের কাঠের তাকে বই-এর সঙ্গে থাকল আরও অনেক টুকিটাকি-মিউজিক সিস্টেম, সবুজ গাছ, কলমদানি ইত্যাদি। লোহার শেল্ফের কাটা অংশটি রাখা হয় দরজার পাশে। তার একদম ওপরের তাঁকে স্পিকার আর মাঝখানে ঝোলানো সুতোর কাজ করা মনিপুরী ল্যাম্প যা ঘরের সজ্জায় যোগ করে এক নতুন মাত্রা। মেঝেতে বিছিয়ে দেয়া হয় মরচে ও কালো রঙের কম্বিনেশনের শতরঞ্জি।
বসার ঘরের পর এবার খাওয়ার ঘরের পালা। আগুনের ফ্রিজটি উজ্জ্বল নীল রঙের। তাই তারা ঘরে সাদার বৈপরীত্যে রাখে সাদা ও নীল রঙের সমন্বয়। ডাইনিং কাচের টেবিলের মাঝখানে-নানারঙের ফুলের ফুলদানি। সঙ্গে মানানসই নীল রঙের বাটিকের কাজ করা কুশনকভার ও কাচের ন্যাপকিন হোল্ডারে ন্যাপকিন।
গাছ রাখার ছোট টুলটি ঢাকা হলো নীল বর্ডার দেয়া সাদা কাপড়ে। নীল-সাদা আর গাছের সবুজ মিলিয়ে এমন এক ধরনের নরম ঔজ্জ্বল্য সৃষ্টি হয়েছে যে, ঘরে ঢোকা মাত্রই মন ভরে ওঠে এক সি্নগ্ধ আবেশে।
সর্বশেষে বলে রাখা ভাল ডাইনিং টেবিলটি, ফুলদানি, ন্যাপকিন হোল্ডার-ফুল_সবই কিনেছিল খুব সসত্মায়। ওদের এক বন্ধুর কাছ থেকে। বিদেশ যাওয়ার সময় সে বিক্রি করে। কাজেই সব মিলিয়ে তাদের বড়জোর খরচ হয়েছে বিশ হাজারের মতো। অর্থাৎ মাত্র এই টাকাতেই চোখজুড়ানো, মনভোলানো ঘরের সাজ শেষ।ঘর যদি ছোট হয়, তাহলে পর্দা, বিছানার চাদর, আসবাব- সবই হাল্কা কিংবা সাদাঘেঁষা রঙের কিনতে চেষ্টা করবেন। তাহলে তুলনায় ঘরটি বড় দেখাবে। দেয়ালে থাকুক ক্রিম বা অফ-হোয়াইট রং।
হাল্কা রঙের বিপরীতে কুশন, ন্যাপকিন, কলমদানি, পোস্টার, ইত্যাদিতে উজ্জ্বল রঙের ছোঁয়া থাকলে ঘর সাজানোয় বৈচিত্র্য আসে। কেনা জিনিস দিয়েই ঘর সাজাতে হবে, তার কিন্তু কোনও মানে নেই। বেড়াতে গিয়ে কুড়িয়ে আনা ঝিনুক, শাঁখ, নানা রঙের পাথর, পাইনের মোচা_এসবও ঘর সাজানোয় অনায়াসে ব্যবহার করা যায়। ঘর যত ছোটই হোক না কেন, অনত্মত একটি-দু'টি গাছ রাখার চেষ্টা করবেন। কারণ গাছের সবুজ রঙ চোখকে আরাম দেয়।
বাড়ির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বসার ঘরটি সাজানোর সময় বিশেষ কিছু পরামর্শ মেনে চলুন। ভাড়া বাসায় যেহেতু জায়গার সঙ্কট, তাই সেই কথাটাও মাথায় রাখতে হবে। আর যদি নিজের তৈরি বাসা বা নিজের মনের মতো ফ্ল্যাট হয়, তাহলে মনে রাখবেন বসার ঘরটা যেন হয় দক্ষিণ–পূর্ব দিকে। তাতে শীতে যেমন পর্যাপ্ত রোদ পাবেন তেমন গরমের সময় বিকেলের পর দক্ষিণের খোলা হাওয়া এসে প্রাণ জুড়াবে আপনার।
* ঘরটি কেমন সেটা মাথায় রেখে তবেই ঘরের আসবাবপত্র নির্বাচন করুন। বড় ঘর হলে সোফা, সেন্টার টেবিল, কর্নার, ল্যাম্প, ঝাড়বাতি, কার্পেট দিয়ে ঘরকে সাজাতে পারেন। আর ঘরটা যদি হয় ছোট, সেক্ষেত্রে ছোট ছোট আসবাবপত্র নির্বাচন করুন।
* বসার আর খাওয়ার ঘর একসাথে হয়, তাহলে নিজের মতো করেই দুটির মাঝে একটু পার্টিশন দিয়ে নিতে পারেন। এখানে বুক শেলফ বা কেবিনেট ব্যবহার করতে পারেন পার্টিশন হিসেবে।
* ঠিক রঙ ঠিক জায়গায় ব্যবহার করলে সহজেই বেড়ে যাবে আপনার বসার ঘরের সৌন্দর্য। উজ্জ্বল এবং হালকা রঙে ঘর সাজালে ঘর যে বড় দেখায় সেটা নিশ্চয়ই আপনার অজানা নয়। ঘরে পর্যাপ্ত আলোর প্রবেশ না থাকলে কখনোই দেয়ালে গাঢ় রঙ করাবেন না। ঘর আরও অন্ধকার দেখাবে।
* ঘরে একটি রঙিন ও উজ্জ্বল ভাব আনার জন্যে কনট্রাস্ট কুশন কভার অথবা পর্দা ব্যবহার করতে পারেন। যদি আপনার ফ্ল্যাট ছোট হয় তাহলে দরজা জানালায় বেশি ভারী পর্দা ব্যবহার না করাই ভালো।
* এখন অনেকে মেঝে নিয়ে নানা রকম এক্সপেরিমেন্ট করতে পছন্দ করেন। দেয়ালের রঙ, ফার্নিচার, পর্দা, সোফা কভারের মতো মেঝে কিন্তু বার বার বদলানো সম্ভব নয়। তাই প্রথমেই জেনে নিন আপনার পছন্দ কোন ধরনের মেঝে।
* বসার ঘরের রঙ নষ্ট হয়নি কিন্তু দীর্ঘদিন এক রঙ দেখতে দেখতে একঘেয়ে লাগলে অনেক টাকা খরচ করে রঙ করানোর চেয়ে কয়েকটি ভালো ভালো পোষ্টার কিনে লাগিয়ে নিন।
* বসার ঘরে নতুনত্ব আনতে সোফার কভারগুলো পরিবর্তন করে নিতে পারেন।
* সোফার টেবিল স্টিলের বা কাচের 'ওয়াটার পন্ড' দিয়ে সাজান। সোফার পাশে কর্নার টেবিলে ফুলদানি বা ইনডোর গাছ রাখুন। সেন্টার টেবিলে রাখতে পারেন বাঁশ, বেত বা মাটির শোপিস।
* ঘরের কর্নারে পটারিতে বড় গাছ, অন্য কর্নারে টেবিল ল্যাম্প, শতরঞ্জি, দেয়ালে আলোকচিত্র এবং নকশিকাঁথার ওয়ালমেট ঝুলিয়ে দিন।
* আলোর ব্যবহার ঘরের সৌন্দর্য পুরোপুরি বদলে দিতে পারে।
* ড্রইং রুমের দেয়ালে কিছুটা অংশে কাঁচ বসিয়ে দিতে পারেন। এতে বাড়তি আলো পাবেন।
* ড্রইংরুমের একপাশের দেয়ালটুকু পুরোটা কাঁচ দিয়ে তৈরি করতে পারেন।
* বসার ঘরে লাইটগুলোকে এমনভাবে ব্যবহার করুন যাতে ঘর গরম না হয়ে ওঠে।
* খুব শক্তিশালী হ্যালোজেন বাতি ঘরে না রাখাই ভাল।
* ঘরে নান্দনিক সৌন্দর্য আনতে ব্যবহার করতে পারেন স্পট লাইট। এই লাইটকে আপনি আপনার ইচ্ছে মতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
* চাইলে কোনো মাটির মটকা, বেতের ঝুড়ি অথবা বাঁশের খোলের মধ্যে রাখতে পারেন আলোর ব্যবস্থা। এতে ঘরের লাইটিংয়ে বৈচিত্র আসবে।
* যেহেতু এটা ড্রইং রুম, তাই শুধু টি টেবিলের অংশটুকু ছাড়া বাকিটুকু অন্ধকার থাকলেও কোন সমস্যা নেই। উপরে একটা ঝাড় বাতি থাকলেই সে অংশটুকু অন্ধকার হয়ে থাকবে।
* দেয়ালগুলো আলোকময় করতে দেয়াল ঝুলিয়ে কিছু বাতি সেট করতে পারেন। আর রুমের সেখানে বাতি আছে সেই জায়গাগুলোতেই কেবলমাত্র ছবি ঝুলান। সে ক্ষেত্রে বাতি বসানোর আগেই দেখে নিন কোথায় কোথায় ছবি ঝোলাবেন।
* একটি বড় কিংবা অনেকগুলো ছোট ছোট রট আয়রনের মোমবাতির স্ট্যান্ড রাখুন ঘরে। এগুলো একদিকে ঘরের সৌন্দর্য বাড়াবে অপর পক্ষে লোডশেডিংয়ে কাজে দেবে। তবে বাতিগুলো যেন অবশ্যই দেয়াল থেকে দূরে থাকে। নইলে কালি পড়ে যাবে।
* বসার ঘরে রঙিন বাতি না দেয়াই ভাল। যদি ঘরে কোন কস্টিউম কর্নার থাকে (অ্যাকুরিয়াম, ফোয়ারা কিংবা কৃত্রিম গাছের বাগান) সেখানে রঙিন বাতি ব্যবহার করা যেতে পারে।
* বাতির উপরে অবশ্যই শেড দিয়ে দিন। এটাই এখন স্টাইল। নইলে খুব খারাপ দেখাবে।
* ঘরের মাঝখানের টেবিলটির উপরই ছোট কোনও ফ্লাওয়ার ভাস রেখে ফুল সাজাতে পারেন।
* কাপড় আর বাঁশের কঞ্চি দিয়ে চমৎকার ল্যাম্প স্ট্যান্ড বানানো যায়। এ ধরনের ল্যাম্প স্ট্যান্ড একদিকে যেমন আপনার ঘরের শোভা বাড়াবে তেমনি আপনার নান্দনিকতাও ফুটিয়ে তুলবে।
* পেইন্টিংস, পরিবারের কোনও ছবি আপনার বসার ঘরের দেয়ালে রাখতে পারেন এবং সেই ধরনের কোনও কিছু দেয়ালে রাখলে তা ওয়াল হ্যাংগিং কোনও স্পট লাইট দিয়ে হাইলাইট করলে ভাল দেখাবে।
অ্যাপার্টমেন্ট অথবা বাড়ির প্রবেশপথে একটি বড় ফ্লাওয়ার ভাসের ওপর ছোট একটি পাত্রে কিছু ফুল রেখে দিলে, অতিথির কাছে শুরুতেই একটি ভালোলাগা বোধ সৃষ্টি হবে। পাত্রটিতে কিছু ছোট পাথর অথবা পানি দিয়েও রাখা যেতে পারে। এরপর ঘরে প্রবেশ। বসার ঘরের কিছু কর্নারে ইকেবানা সাজিয়ে রেখেও পরিবেশ বদলে ফেলা যায়। ইকেবানা ধারণার আগমন জাপান থেকে।
তাদের সংস্কৃতিতে স্বল্প পরিসরে স্বল্প আয়োজনে সতেজতার প্রতীক ফুলকে উপস্থাপন করাই ক্ষুদ্র অর্থে ইকেবানা। এর বেশকিছু দার্শনিক ধারণাও রয়েছে। তবে নান্দনিকতাকে কাজে লাগিয়ে নূ্যনতম খরচে ফুল সাজানোর একটি শৈল্পিক উপায় হতে পারে এটি। এর জন্য আপনাকে নানা ধরনের মাটির অথবা ধাতব পাত্র ব্যবহার করতে হতে পারে। নানা ধরনের পাথর এবং সবুজ পাতার উপস্থিতি খুব সহজেই আপনার আবাসকে প্রাকৃতিক শোভামণ্ডিত করবে।
পুরো ঘর ফুলে ছেয়ে ফেলতে হবে, বিষয়টি এমন নয়। হাঁটা-চলার পথ অথবা বিভিন্ন কর্নারকে কেন্দ্র করেই এই শিল্পকর্ম চলতে পারে। ডাইনিংয়ের পাশে ওয়াশিং এরিয়া, এখানেও সাজাতে পারেন ফুল। একটি ফুলের পাপড়িকে পানিতে ভাসিয়ে রাখলেও মনে সতেজতা আসে। যেখানে পানির উপস্থিতি, সেখানেই একটি ইকেবানা রেখে দিতে পারেন।