ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
বাঙালীর হৃদয়ে বিদ্যাসাগর নামটি আজও অনন্য ও বিস্ময়কর ! চাল নেই, চুলো নেই, ধন কৌলিন্য নেই, মাসিক ছ-টাকা বেতনের সওদাগরী অফিসের এক কেরাণীর ছেলে প্রধানত সংস্কৃত শিক্ষার পুঁজি ও ইংরেজীর ব্যবহারিক জ্ঞান নিয়ে সমাজ, শিক্ষা, সংস্কৃতি আন্দোলনের শীর্ষে আরোহন করলেন, হিমালয় সদৃশ উন্নত মস্তক পুরুষ হিসেবে বাঙালী জাতির প্রকৃত জনকের মর্যাদা পেলেন এ এক বিরলতম ঘটনা। ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের ঘরের ছেলে শাস্ত্রীয় শিক্ষাকে সম্বল করে কি ভাবে শ্রেষ্ঠ মানবতাপ্রেমী, নিরীশ্বরবাদী ও যুক্তিবাদী সমাজ সংস্কারক হয়ে উঠলেন তা এখনও গবেষণার অপেক্ষায়। স্থিতাবস্থা ও অন্ধকারপন্থীদের নির্মম নিন্দা-মন্দ সত্বেও জীবিতকালেই বিদ্যাসাগরের ছবি বিক্রী হত।
বিদ্যাসাগরের বিজ্ঞান মনস্কতার অকাট্য প্রমাণ, ধর্ম সম্পর্কে তাঁর নিস্পৃহ মনোভাব। শ্রীরামকৃষ্ণ কোনও ভাবেই বিদ্যাসাগরের মুখ থেকে ঈশ্বর সম্বন্ধে কোনও স্থির বিশ্বাস বা ভক্তির একটি কথাও আদায় করতে পারেন নি। যতদূর জানা যায় তিনি কোনও ধর্মযাজকের কাছে ঘেঁষেণ নি, মন্দির যান নি, পুজো আর্চা জপতপও করতেন না। কিন্তু তিনি মানবতায় উদ্বুদ্ধ দয়ার সাগর। এত সব সত্বও স্বয়ং বিবেকানন্দ ভগিনী নিবেদিতাকে বলেছেন, শ্রীরামকৃষ্ণের পরেই তাঁর গুরু ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। পাঠ্য বিষয় দর্শন সম্পর্কে তাঁর উক্তি - কতগুলো কারণে সংস্কৃত কলেজে বেদান্ত ও সাংখ্য আমাদের পড়াতেই হয় কিন্তু সাংখ্য ও বেদান্ত যে ভ্রান্ত সে সম্পর্কে এখন আর বিশেষ মতভেদ নেই।
বিদ্যাসাগরের নামোল্লেখে আমাদের চেতনায় ঊনবিংশ শতকের বাঙালি সমাজের এক অনন্যসাধারণ ব্যক্তিপুরুষ ও তাঁর প্রতিভার কথা মনে পড়ে। তিনি তাঁর একক অস্তিত্বের প্রবলতা দিয়ে সমস্ত সমাজকে নাড়া দিয়েছিলেন এবং শুধু তাই নয়, ঊনবিংশ শতকের বাঙালি সমাজ যেন তার চরিত্রের প্রতিপক্ষ হিসেবেই বিরোধে, সংক্ষোভে ও আশ্লেষে বিশেষ তাৎপর্য পেয়েছিল। ঊনবিংশ শতাব্দীর সামাজিক নেতৃবৃন্দের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কম-লীর মধ্যে বিদ্যাসাগর শুধু উজ্জ্বলতমই নন, আর কারো ব্যক্তিত্বই সমগ্র সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে এত ব্যতিক্রম বলে মনে হয়নি।
তাঁর ব্যক্তিত্বের প্রবলতায় তিনি এত অভ্রংলিহ সুদূর, তাঁর সমাজের জন্য সহমর্মিতায়, আত্মীয়তাবোধে তিনি নিকট ও আপন। এক সময়ে মনে হয়েছে বিদ্যাসাগর যেন বাংলাদেশের জন্য নিয়তি নির্ধারিত পুরুষ। অথচ আজ একশ বছর পরের বাঙালি হিন্দু সমাজের দিকে তাকিয়ে মনে হয় না বিদ্যাসাগর কখনো এই সমাজের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। যে সমাজ তাঁর কাছে এতভাবে ঋণী সে সমাজে তিনি কেবল একটা বিগ্রহ হয়ে রইলেন, জাগ্রত ধর্ম হিসাবে তাঁর সামাজিক আদর্শে প্রাণপ্রতিষ্ঠা হল না। প্রতিভায় ভাস্বর, অপাপবিদ্ধ প্রবল চরিত্রের অধিকারী সমাজের অধিনায়ক বিদ্যাগাসরের দৃষ্টান্ত তাই আমাদের সমাজের ব্যক্তির ভূমিকা ও নেতৃত্বের তাৎপর্য সম্বন্ধে ভাবতে প্রলুব্ধ করে।
এই সমস্ত সাধারণ বৈশিষ্ট্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যাসাগরের নেতৃত্বের তাৎপর্য বিচার করলে আমরা দেখতে পাই, বিদ্যাসাগর রক্ষণশীল বিপ্লবাতঙ্ক দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে সংস্কার আন্দোলন শুরু করেননি। যদিচ তাঁর সংস্কার মূলত সামাজিক ধর্মীয় বা রাজনৈতিক নয়। প্রচলিত অর্থে ধর্মসংস্কারক তিনি নন রামমোহন ও অন্যান্য ধর্ম সংস্কারকের সঙ্গে এইখানে তাঁর তফাত। ডিরোজিও অনুপ্রাণিত ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী রাজনৈতিক চিন্তায় বিদ্যাসাগরের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিলেন যদিচ চারিত্রিক শুদ্ধি ও দার্ঢ্যে ইয়ং বেঙ্গলের সঙ্গে তুলনায় বিদ্যাসাগরের আত্মশ্লাঘা বোধ করার সংগত কারণ ছিল।
আসলে চরিত্রশক্তির জন্য বিদ্যাসাগর একটি প্রতীকে রূপান্তরিত হয়েছেন বাঙালিদের চেতনায়। বিদ্যাসাগরের তাৎপর্য বা সাফল্য সেখানেই সীমাবদ্ধ নয়। বিদ্যাসাগর জ্ঞান ও যুক্তিবিদ্যাকে শুধুমাত্র সভা-সমিতি ও পত্রিকার পরিসরে সীমাবদ্ধ না রেখে সামাজিক পরিবর্তনের বিস্তৃত ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছিলেন এবং জ্ঞানকে সমাজ-বিপ্লবের কর্মসূচিতে রূপান্তরিত করেছিলেন। বিদ্যাসাগরের সহযোগী ও সহকর্মী অন্যান্য সংস্কারপন্থির মধ্যে এবং বিরুদ্ধবাদী সমালোচকদের মধ্যেও বিদ্যাসাগরের প্রাধান্যের এটা একটা বড় কারণ। বিদ্যাসাগর অতএব শুধু শিক্ষার মাধ্যমে শুভবুদ্ধির উদ্বোধনের অপেক্ষায় না থেকে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করে আইন প্রণয়নকে সামাজিক মুক্তির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
বিদ্যাসাগরের বিজ্ঞান মনস্কতার অকাট্য প্রমাণ, ধর্ম সম্পর্কে তাঁর নিস্পৃহ মনোভাব। শ্রীরামকৃষ্ণ কোনও ভাবেই বিদ্যাসাগরের মুখ থেকে ঈশ্বর সম্বন্ধে কোনও স্থির বিশ্বাস বা ভক্তির একটি কথাও আদায় করতে পারেন নি। যতদূর জানা যায় তিনি কোনও ধর্মযাজকের কাছে ঘেঁষেণ নি, মন্দির যান নি, পুজো আর্চা জপতপও করতেন না। কিন্তু তিনি মানবতায় উদ্বুদ্ধ দয়ার সাগর। এত সব সত্বও স্বয়ং বিবেকানন্দ ভগিনী নিবেদিতাকে বলেছেন, শ্রীরামকৃষ্ণের পরেই তাঁর গুরু ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। পাঠ্য বিষয় দর্শন সম্পর্কে তাঁর উক্তি - কতগুলো কারণে সংস্কৃত কলেজে বেদান্ত ও সাংখ্য আমাদের পড়াতেই হয় কিন্তু সাংখ্য ও বেদান্ত যে ভ্রান্ত সে সম্পর্কে এখন আর বিশেষ মতভেদ নেই।
বিদ্যাসাগরের নামোল্লেখে আমাদের চেতনায় ঊনবিংশ শতকের বাঙালি সমাজের এক অনন্যসাধারণ ব্যক্তিপুরুষ ও তাঁর প্রতিভার কথা মনে পড়ে। তিনি তাঁর একক অস্তিত্বের প্রবলতা দিয়ে সমস্ত সমাজকে নাড়া দিয়েছিলেন এবং শুধু তাই নয়, ঊনবিংশ শতকের বাঙালি সমাজ যেন তার চরিত্রের প্রতিপক্ষ হিসেবেই বিরোধে, সংক্ষোভে ও আশ্লেষে বিশেষ তাৎপর্য পেয়েছিল। ঊনবিংশ শতাব্দীর সামাজিক নেতৃবৃন্দের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কম-লীর মধ্যে বিদ্যাসাগর শুধু উজ্জ্বলতমই নন, আর কারো ব্যক্তিত্বই সমগ্র সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে এত ব্যতিক্রম বলে মনে হয়নি।
তাঁর ব্যক্তিত্বের প্রবলতায় তিনি এত অভ্রংলিহ সুদূর, তাঁর সমাজের জন্য সহমর্মিতায়, আত্মীয়তাবোধে তিনি নিকট ও আপন। এক সময়ে মনে হয়েছে বিদ্যাসাগর যেন বাংলাদেশের জন্য নিয়তি নির্ধারিত পুরুষ। অথচ আজ একশ বছর পরের বাঙালি হিন্দু সমাজের দিকে তাকিয়ে মনে হয় না বিদ্যাসাগর কখনো এই সমাজের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। যে সমাজ তাঁর কাছে এতভাবে ঋণী সে সমাজে তিনি কেবল একটা বিগ্রহ হয়ে রইলেন, জাগ্রত ধর্ম হিসাবে তাঁর সামাজিক আদর্শে প্রাণপ্রতিষ্ঠা হল না। প্রতিভায় ভাস্বর, অপাপবিদ্ধ প্রবল চরিত্রের অধিকারী সমাজের অধিনায়ক বিদ্যাগাসরের দৃষ্টান্ত তাই আমাদের সমাজের ব্যক্তির ভূমিকা ও নেতৃত্বের তাৎপর্য সম্বন্ধে ভাবতে প্রলুব্ধ করে।
এই সমস্ত সাধারণ বৈশিষ্ট্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যাসাগরের নেতৃত্বের তাৎপর্য বিচার করলে আমরা দেখতে পাই, বিদ্যাসাগর রক্ষণশীল বিপ্লবাতঙ্ক দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে সংস্কার আন্দোলন শুরু করেননি। যদিচ তাঁর সংস্কার মূলত সামাজিক ধর্মীয় বা রাজনৈতিক নয়। প্রচলিত অর্থে ধর্মসংস্কারক তিনি নন রামমোহন ও অন্যান্য ধর্ম সংস্কারকের সঙ্গে এইখানে তাঁর তফাত। ডিরোজিও অনুপ্রাণিত ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী রাজনৈতিক চিন্তায় বিদ্যাসাগরের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিলেন যদিচ চারিত্রিক শুদ্ধি ও দার্ঢ্যে ইয়ং বেঙ্গলের সঙ্গে তুলনায় বিদ্যাসাগরের আত্মশ্লাঘা বোধ করার সংগত কারণ ছিল।
আসলে চরিত্রশক্তির জন্য বিদ্যাসাগর একটি প্রতীকে রূপান্তরিত হয়েছেন বাঙালিদের চেতনায়। বিদ্যাসাগরের তাৎপর্য বা সাফল্য সেখানেই সীমাবদ্ধ নয়। বিদ্যাসাগর জ্ঞান ও যুক্তিবিদ্যাকে শুধুমাত্র সভা-সমিতি ও পত্রিকার পরিসরে সীমাবদ্ধ না রেখে সামাজিক পরিবর্তনের বিস্তৃত ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছিলেন এবং জ্ঞানকে সমাজ-বিপ্লবের কর্মসূচিতে রূপান্তরিত করেছিলেন। বিদ্যাসাগরের সহযোগী ও সহকর্মী অন্যান্য সংস্কারপন্থির মধ্যে এবং বিরুদ্ধবাদী সমালোচকদের মধ্যেও বিদ্যাসাগরের প্রাধান্যের এটা একটা বড় কারণ। বিদ্যাসাগর অতএব শুধু শিক্ষার মাধ্যমে শুভবুদ্ধির উদ্বোধনের অপেক্ষায় না থেকে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করে আইন প্রণয়নকে সামাজিক মুক্তির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
Excellent image showing the contrast between old and new Calcutta, so good!!
That is a fine looking bridge, and an interesting post- thanks!
Chrissy
http://mancunianwave.blogspot.com/