ইকেবানা - জাপানিজ এই শব্দের অর্থ হল ফুলের শিল্প

ফুলকে শুধু বাগানে ফুটে থাকলে চলে না। গৃহের ছোট্ট পরিসরে ফুলদানি বা পিন হোল্ডারের মাধ্যমে সাজিয়ে রেখে মানুষ তার বন্দনা করে। এই ফুল বন্দনার কত যে অভিনব কলা-কৌশল আছে তার অনেক কিছুই আমাদের অজানা। সে রকম একটি কৌশল ইকেবানা। ইকেবানা দেখলে আপনার মনে হবে আসলেই ফুলকে আরও মোহনীয় করে সাজানোতে মানুষের চিন্তার অন্ত নেই। ফুল ডালের আকৃতি কেমন হলে আরও সুন্দর হবে, কি পাত্রে রাখা হলে আরও মোহনীয় দেখাবে, কেমন করে রাখা হবে, তার ধরন-ধারণাই বা কি হবে, কতগুলো ফুল নেওয়া হলে মানানসই হবে, অন্যদিকে ফুলের অপচয় না করে কীভাবে সাজানো যায়- এর উত্তর খুঁজতেই যেন অনন্য শিল্প ইকেবানার সৃষ্টি।

ইকেবানা এক ধরনের জাপানি সনাতনী ফুল সাজানো পদ্ধতি। ৫শ’ বছর আগে জাপানে এ পদ্ধতির সূচনা হয়েছিল। মূলত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর কৌশল থেকেই ইকেবানার উদ্ভব। জাপানিজ ভাষায় ইকে অর্থ জীবন্ত ও বানা অর্থ ফুল। তাই ইকেবানা বলতে যেনতেনভাবে ফুলকে ফুলদানিতে রেখে দেওয়াই বুঝায় না বরং ফুলদানিতে তাকে জীবন্তভাবে তুলে ধরাই ইকেবানা তা বলে দেয়। ১৫ শতকের মাঝামাঝি সময়ে জাপানে ইকেবানা একটি শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা আরও প্রসারিত হয়ে বর্তমানে একটি শিল্পরীতিতে পরিণত হয়েছে, বিশ্বব্যাপী হয়েছে সমাদৃত।



ইকেবানা যেহেতু ফুলের সৌন্দর্যকে জীবন্তভাবে ফুলদানিতে উপস্থাপন করে, তাই এটি তৈরিতে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম মানা হয়। যেমন- এতে সাধারণত ব্যবহার করা হয় সতেজ ফুল, পাতা, ঘাস, গাছের চিকন ডাল ইত্যাদি। এর বেশ কিছু প্রকারভেদ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে মেরিবানা নামের পদ্ধতি। এটি সাধারণত ছড়ানো একটি ট্রে বা পাত্রের মধ্যে তাজা ফুল, ডাল, ঘাস, পাতা দিয়ে সাজানো হয়।

এ ছাড়া সুইবান, কেনযান নামের পদ্ধতিগুলোরও কদর রয়েছে। বলা হয়ে থাকে, ইকেবানা মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়। মানুষের মনে ভালোবাসার ব্যাপ্তি ঘটায়। বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ বলে এখানে প্রায় সারা বছরই কোনো না কোনো ফুল ফোঁটে। আর বসস্তে তো প্রকৃতি ফুল দিয়েই মোড়া থাকে দুইমাস। আমাদের দেশীয় অপরূপ ফুলগুলোর সৌন্দর্যকে ইকেবানার মাধ্যমে কাজে লাগাতে পারলে এটি শিল্পের চমৎকার একটি মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url