বিড়লা তারামন্ডল

বিড়লা তারামন্ডল হল এশিয়ার সবচেয়ে বৃহত্তম তারামন্ডল। বিস্ময়কর স্থাপত্যের মহীয়ান পসরা সাজিয়ে কলকাতা তার বাস্তবিক সত্ত্বায় বিকশিত হয়েছে – তাজমহলের ন্যায় দেখতে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, কুতুব মিনারকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া শহীদ মিনার এবং তারপর হচ্ছে বিড়লা প্ন্যানেটেরিয়াম। বিড়লা তারামণ্ডল, ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের সাঁচী বৌদ্ধস্তূপ ও টাস্কান স্থাপত্যের একটি মিশ্রণের মতো দেখায়।

বহু দূর থেকে দৃশ্যমান সূ্র্যের আলোয় আলোকিত নিরাভরণ সাদা গম্বুজটি, সাঁচী বৌদ্ধস্তূপের গম্বুজের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তারামণ্ডলের পরিধি জুড়ে আবন্টিত শক্তিশালী স্তম্ভগুলি একটি ক্ষুদ্র কলোসিয়ামের কথা আপনাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এম.পি.বিড়লা প্ন্যানেটেরিয়াম নামটি, তারামন্ডলের মেটোপের উপর তিনটি ভাষায় লেখা রয়েছে - গৃহীত আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরাজী, রাজ্যিক ভাষা বাংলা এবং রাষ্ট্রীয় ভাষা হিন্দি।

বিড়লা শিক্ষা ট্রাস্টের পৃষ্ঠপোষকতায় বিড়লা তারামণ্ডল, 2-রা জুলাই, 1963 সালে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়। প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদান করেছিলেন।



কলকাতার বিড়লা তারামন্ডল হল এশিয়ার সবচেয়ে বৃহত্তম এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তারামন্ডল বা প্ন্যানেটেরিয়াম। তার বিশ্ব সারিতে স্হান বিপূল জনগণকে আকর্ষিত করে। সাধারণভাবেই, জ্যোতির্বিদ উৎসাহীরা কোনও চমৎকার কিছু ঘটার আশা নিয়ে এই জায়গায় ভিড় করে – যেমন সেটা হতে পারে, এক অসাধারণ 4D প্রদর্শনী।

একজন মহিলা মাইক্রোফোন নিয়ে গ্রহমন্ডলী এবং মহাবিশ্বের বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে আপনাকে পরিচিত করে তোলে। প্রদর্শনীর পর, সভাগৃহের পথ বরাবর হেঁটে চলুন যেখানে বিখ্যাত জ্যোতির্বিদদের আবক্ষ মূর্তি এবং মহাকাশ যান-এর বিভিন্ন চিত্র রয়েছ। এটি শিশুদের জন্য একটি মহান অভিজ্ঞতা। প্রাপ্তবয়স্কের জন্য, এই স্থান পরিদর্শন করা মানে 80-র দশকে ঘোরাফেরার অভিজ্ঞতা গ্রহণের ন্যায়। সংযুক্ত বিষয় হিসাবে রয়েছে বাইরে ফেরিওয়ালাদের দ্বারা বিক্রিত মশালাদার ঝালমুড়ি এবং তারামন্ডলটি থেকে মাত্র কয়েকটি ব্লক দূরেই রয়েছে বিখ্যাত ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, যেটি অবশ্যই পরিদর্শনমূলক।

কলকাতার অনেক অহংকারের মধ্যে নিজের স্থান পাকা করে নিয়েছে বিড়লা তারামণ্ডল। কলকাতা ময়দানের ঠিক মুখোমুখি ভিক্টরিয়ার ঠিক সামনে এক একর জায়গা জুড়ে সুবিশাল এই আকর্ষণীয় তারামণ্ডল ।এই তারামণ্ডল গঠনের মূল উৎসাহদাতা হিসাবে একজনের নাম উচ্চারণ না করলেই নয়, তিনি হলেন প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ডা.বিধানচন্দ্র রায় ।তাঁরই আগ্রহে এই জমিটি মাত্র এক টাকায় রাজ্যসরকার লিজ দিয়েছিলেন বিড়লা কর্তৃপক্ষকে ।ডাক্তার রায়এর ইচ্ছে ছিলো, পশ্চিমবঙ্গ তথা কলকাতার মানুষকে মহাকাশ বিজ্ঞান সম্পর্কে আগ্রহী করে তোলা।

বিড়লা তারামণ্ডলের প্রাক্তন কিউরেটর প্রয়াত ড. রমাতোষ সরকারের একটি একান্ত সাক্ষাৎকার থেকেই ড.বিধান রায়ের সাহায্যের কথা জানতে পারা যায়।
যদিও তারামণ্ডলের উদ্বোধন ড.বিধান রায় দেখে যেতে পারেন নি ।অন্তত দুঃখজনক ঘটনা যে উদ্বোধনের মাত্র কয়েকমাস আগেই তিনি মারা যান । পৃথিবীতে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় চারশো টি তারামণ্ডল আছে ।এর মধ্যে ভারতেও আছে ২৬-২৭ টি। বিড়লা তারামণ্ডলটি অনেক কারণেই বিশেষ উল্লেখযোগ্য ।ভারতবর্ষের মধ্যে এটিই প্রথম তারামণ্ডল ।এর আয়তন আজকেও গোটা বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম । এর আয়তন হচ্ছে ২৩মিটার ।

সম্পূর্ণ শীততাপ নিয়ন্ত্রিত, বিশেষ গদি লাগানো ৫৮০টি চেয়ার আছে দর্শকদের জন্য ।চেয়ারগুলির এমনিই গঠন যে সম্পূর্ণ পিছন দিকে হেলান দিয়ে আকাশের অবস্থানটি সুনিপুন ভাবে দর্শকের দৃষ্টিপথে ধরা পড়ে । জার্মানি থেকে নিয়ে আসা এই যন্ত্রের সাহায্যে বোতাম টিপে সঠিক সময় নির্ধারণ করে কলকাতার বিড়লা তারামণ্ডলে বসেই দর্শক মুহূর্তে পৌঁছে যান যে কোনো দেশের যে কোনো রাতের আকাশের নিচে । মানুষের মহাকাশ নিয়ে জানার আগ্রহ সেই প্রাচীন কাল থেকেই । কোপার্নিকাস, গ্যালিলিওর মত বিজ্ঞানীরা জীবনের অর্ধেক সময় ব্যয় করেছেন এই মহাকাশকে জানতে ।

শুধু বিশালতায় নয়, অজানা আকর্ষণে কৌতুহলী মানুষ বারবার ছুটে গেছে মহাকাশ অভিযানে । সাধারণ মানুষের জন্য তাঁরা অর্জন করে এনেছেন বিভিন্ন আকর্ষণীয় তথ্য ।মানুষের এই আগ্রহের কারণেই বিনা খরচে বেশ কয়েক বছর ধরেই বিড়লা তারামণ্ডলে সপ্তাহে একদিন করে শুরু হয়েছে এক বছরের মহাকাশবিদ্যা নিয়ে একটি কোর্স । অনেক চেনা-অচেনা নাম না জানা গাছপালা আর ফোয়ারা দিয়ে বেষ্টিত এই বিড়লা তারামণ্ডলের বাড়িটির আকারও এতই অভিনব যে, দর্শনার্থীদের কাছে এটি একটি আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান ।বিড়লা কর্তৃপক্ষ খুব সুন্দর ভাবে এটিকে রক্ষণাবেক্ষন করে চলেছে ।

প্রতিদিন দুপুর থেকে রাত্রি পর্যন্ত অনেকগুলো প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রয়েছে এখানে । যেহেতু ভারত বিভিন্ন ভাষাভাষীর দেশ তাই এখানে ইংরেজী ও হিন্দিতে ভাষ্য পাঠেরও ব্যবস্থা আছে । হলের ভিতরে মৃদু সুরে ধ্বনিত হয় সংগীত । ভিতরের জোরালো আলো নিভে গিয়ে গোলাকার ডোমটিতে জ্বলে ওঠে নীলাভ আলো ।একে একে রাতের আকাশে ফুটে ওঠে নক্ষত্র, গ্রহরাজি। দর্শক আসনে মানুষ তখন পৌঁছে যায় সম্পূর্ণ অপরিচিত এক জগতে। জাইসইউনিভার্সাল প্ল্যানেটোরিয়াম প্রজেক্টরটি যখন ঘুরবে তখন মনে হবে যেন আকাশটা দর্শকের হাতের মুঠোয়, আর গ্রহ নক্ষত্ররা ভীষণ কাছের ।

কিছুকাল আগেই বিড়লা তারামণ্ডলটি নাম পরিবর্তিত হয়ে এম. পি.বিড়লা তারামণ্ডল হয়েছে । বর্তমানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এবং পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে কোথাও কোথাও তারামণ্ডল নির্মিত হলেও নিঃসন্দেহে কলকাতার এই সুপ্রাচীন তারামণ্ডলটি কলকাতার গর্বের বস্তু ।প্রতিদিন প্রায় দুহাজার দর্শক আসেন এখানে । আলো, শব্দ আর গ্রহ-নক্ষত্রের হাত ধরাধরি করে খেলা দেখবেন বলে ।তারা নিমেষে হারিয়ে যেতে চান নীলাকাশে গ্রহ নক্ষত্রের ভিড়ে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url