স্পঞ্জ রসগোল্লা তৈরির পদ্ধতি ও রেসিপি

রসগোল্লা বানাবো ঘরে! আমরা অনেকেই এটা চিন্তাও করতে পারিনা। কিন্তু আপনি যদি জানেন এটা বানানো কতোটা সহজ তাহলে মিষ্টির দোকানে যাওয়ার আগে একবার হলেও ভাববেন। বিশেষ করে বাচ্চাদের কথা চিন্তা করে।

রসগোল্লা খেতে সবাই ভালোবাসেন এটা বলাই বাহুল্য। আজকাল অনেকেই বাড়িতে রসগোল্লা তৈরি করে থাকেন, রেসিপি অনেকেই জানেন। কিন্তু একটু লক্ষ্য করে দেখুন, বাড়িতে তৈরি বেশিরভাগ রসগোল্লাই কেমন যেন চ্যাপ্টা হয়ে যায় নিখুঁত গোল না হয়ে। কী সেই রহস্য? সে রহস্যের পর্দা উন্মোচন করতেই আমাদের এই বিশেষ লেখা। দেয়া হলো রসগোল্লা তৈরির সব চাইতে সহজ সেই সিক্রেট রেসিপি, যেটায় আপনার তৈরি রসগোল্লা হবে মিষ্টির দোকানের চাইতেও ভালো ও মজাদার। তাহলে জেনে নিই রসগোল্লা বানানোর সহজ রেসিপি

উপকরন:

ছানা-১ লিটার দুধের
ময়দা-১ কাপের ৪ ভাগের সামান্য কম বা ওই কাপের গলা কাপ
বেকিং সোডা- আধা চিমটি
চিনি- ২ কাপ
পানি - ১ কাপ
এলাচ বিচি গুড়া - ২ টা

প্রনালীঃ

প্রথমে ২ কাপ চিনি ও পানি ১ কাপ একটা ছড়ানো কিন্তু কিছু গভীর তলার পাতিলে নিয়ে জ্বাল দিবে নেড়ে নেড়ে, এই সিরাটা এমন হবে যে তর্জনি আঙ্গুল আর বুড়ো আঙ্গুলে সিরা নিয়ে আঙ্গুল সরিয়ে নিলে একটা সুতার মতো সিরা হবে দুই আঙ্গুলের মাঝে। এক তার সিরা বলে।

ছানা হাতের তালুতে ভালো করে ঘষে ঘষে মসৃন করে মাখবে, ১০-১৫ মিনিট, হাতে তেল আসলে আর দরকার নাই। এবার ময়দায় বেকিং সোডা দিয়ে ভালো করে মিশাও, এখন এই ময়দার মিক্স ও ১ চা চামচ চিনি দিয়ে মসৃন করে মাখানো ছানায় ভালো করে মিশাও, এবার ১০-১২ টা বা কম করে ছানা ভাগ করে ফাটা বিহীন বল করো যদি এলাচ বিচি গুড়া দাও তবে বলের ভেতর অল্প করে দিয়ে বল করবে, প্রয়োজনে সামান্য ঘি হাতে নিয়ে বল করতে পারো মসৃনতার জন্য।

বল গুলো বলক তোলা সিরাতে ছেড়ে দাও, জ্বাল কম থাকতে পারে বা একটু বেশী থাকতে পারে তবে খেয়াল রাখো যেনো সিরার বলক থাকবে ও বলক এর ফেনা গুলো মিষ্টি গুলোকে ঢেকে রাখবে, ঢাকনা দিবে না, মিষ্টি আস্তে আস্তে ফুলতে থাকবে হাল্কা করে নেড়ে মিষ্টি গুলো মাঝামাঝি রাখার চেষ্টা করবে ৫ মিনিট পর বা মিষ্টি ডাবল পরিমানে ফুলে উঠলে এক কাপ ফুটানো গরম পানি দিবে। ১০ মিনিট পর মিষ্টি উল্টে দেবে ও আধা কাপ ফুটানো গরম পানি দিবে,আবার ৫ মিনিট পর আধা কাপ বা সিরাটা বেশী ঘন না হয় এর জন্য গরম পানি আধা কাপের মতো বা তার বেশী পানি প্রয়োজনে ঢালবে।

মিষ্টি হতে ১৫-২০ মিনিট লাগবে, ১৫ মিনিটে ১ টা মিষ্টি তুলে মাঝে ভাগ করে যদি দেখো হয়ে গেছে তাহলে নামিয়ে ফেলবে। তবে নামানোর আগে সিরা যেনো ঘন না হয় নরমাল রসগোল্লার যেমন সিরা হয় তেমন রাখবে, সামান্য ঘন কিন্তু আঠালো হবে না।

চুলা থেকে নামিয়ে ঢাকনা দিয়ে পাতিলের মিষ্টি ঠান্ডা হতে দেবে। ২-৩ ঘন্টা বা একটু বেশী সময় পর সার্ভ করবে।

যদি রসগোল্লার মতো সফট করতে চাও তাহলে সিরাটা পাতলা রাখবে ২ কাপ চিনি ২ কাপ পানি দিয়ে চুলায় দিয়ে সামান্য ঘন হলে বলক আসা অবস্থায় মিষ্টি দিয়ে দিবে আর সিরা যেনো কমে না যায় তাই গরম পানি দিয়ে দিয়ে সিরাটা পাতলা রাখার চেষ্টা করবে।মানে আঠালো হতে দিবে না বা পানি বেশী টানবে না।

মিষ্টি জ্বাল দিতে দিতে বেশী ঘন করবে না মিষ্টি দেয়ার পর গরম পানি দিয়ে দিয়ে সিরাটা ঠিক রাখার চেষ্টা করবে। যদি নামানোর পর সিরা বেশী ঘন হয়ে যায় তাহলে ১ কাপ বা প্রোয়াজনমতো গরম পানি দিয়ে ১-২ মিনিট জ্বাল দিয়ে নামালে সিরা পাতলা হবে। সিরা বেশী ঘন হলে মিষ্টি শক্ত হয়ে যাবে যখন ঠান্ডা হবে।

স্পঞ্জ রসগোল্লা

ছানা তৈরী উপকরন

লিকুইড দুধ-১ লিটার
সিরকা/ ছেকে নেয়া লেবুর রস/ ছানার পানি (পুরোনো)- সিরকা ও লেবুর রস ২-৩ টেবিল চামচ সম পরিমান পানি দিয়ে মিশানো (লম্বা বড় লেবুর রস কখোনো বেশীও লাগতো পারে কারন সব লেবুতেই পর্যাপ্ত টক ভাব নাও থাকতে পারে)আর পুরোনো ছানার পানি যত লাগে ততটুকুই দিবে আধা কাপ করে একবারে ঢেলে ঢেলে।

প্রনালীঃ

১ লিটার লিকুইড দুধ নেড়ে নেড়ে জ্বাল দাও, বলক উঠলে নামিয়ে রাখো, ৫-১০ মিনিট পর আধা চা চামচ করে করে সিরকা/ লেবুর রস দিবে আর আস্তে করে নাড়বে, যখন সবুজ পানি বের হবে তখন আর সিরকা দিতে হবে না, তবে যদি আরো লাগে তাহলে আরো দিবে সবুজ পানি আসা পর্যন্ত। দুধ কিন্তু আর চুলায় দিবেনা। ছানা হলে ১৫-২০ মিনিট পর ছানা ছাকবে।

একটা পাতলা নরম সুতি কাপড় যেটাতে রং উঠার সম্ভাবনা নাই সেটা একটা ঝাঝরির উপর নিয়ে, নিচে একটা পাতিল রেখে ছানার পানি ঝরাও, এই পানিটা ১ লিটার বোতলে রেখে ফ্রিজে রেখে দিতে পারো পরের বার ছানা বানাতে পারবে এটা দিয়ে।

ছানার উপর কলের পানি ছেড়ে হাত দিয়ে নেড়ে নেড়ে ধুয়ে নাও তারপর পানি চেপে ফেলো, এভাবে দুবার করলে সিরকার বা লেবুর গন্ধ থাকবে না।

এবার ছানা সহ কাপড় উঠিয়ে হাত দিয়ে চেপে চেপে পানি ঝরাও তবে এমন চাপ দিবে না যাতে ছানা বের হয়ে আসে, তারপর নরমাল বাতাস বয় এমন জায়গায় ঝুলিয়ে দাও কাপড়টা ১ ঘন্টার জন্য, আমি বারান্দাতে ঝুলিয়ে রাখি এতে বার বার পানি চিপতে হয় না ও সুন্দর পানি ঝরে যায়।

১ ঘন্টা পর হাত দিয়ে চেপে বাড়তি পানি বের করে ছানা বের করে নাও, ছানা থেকে কিছুটা ছানা এক হাতের তালুতে নিয়ে আরেক হাতের আঙ্গুল দিয়ে ৩-৪ সেকেন্ড ঘষে যদি একটা বল বানাতে পারো তাহলে বুঝবে ছানা রেডি ব্যবহারের জন্য। আর যদি হাতের সাথে লেগে যেতে চায় বুঝবে আরো পানি ঝরবে সেক্ষেত্রে ফ্যানের বাতাসে হাত দিয়ে নেড়ে নেড়ে আধা ঘন্টা রাখবে( হাত দিয়ে বার বার না নাড়লে ছানা শুকনা হয়ে যাবে) খেয়াল রেখো ছানা যেনো সফট থাকে। আর ছানা বেশী শুকনা লাগলে আধা বা ১ চা চামচ পানি দিয়ে মাখিয়ে নিতে পারো।

এরকম আরো মজাদার মিষ্টির রেসিপি পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url