শরতের কাশ ফুল

ঘাসের আগায় শিশিরের রেখা পড়ছে কি? ভাদ্র কেটে আশ্বিন এল বলে! বাড়ির কাছের নদীর জলে উপুড় হয়ে চুম্বন করল কি পুজো এল-পুজো এল আকাশ? ভোরের মাটিতে শিউলি ঝরে পড়ল বলে পদ্মেরা মাথা তুলছে, কাশ দল দোল দিচ্ছে মনের বনের আনাচ-কানাচ। স্কুলফেরত খুদেদের দাপাদাপি কাশের বনে। কাশফুল মাথায় দিয়ে গ্রামের সেই কিশোরী যেন এই পৃথিবীর সবথেকে সুখী মানবী! অচিন নদীতে নৌকো ভাসিয়ে দু’পারের কাশের জঙ্গল পেরিয়ে অজানা পথ পাড়ি দেয় যে মাঝি।

Kash Flower

শরৎ এলেই সাদা কাশফুলে ছেয়ে যায় গ্রামবাংলার প্রান্তর। তবে এই কাশফুল দেখতে নগরবাসীকে দূরে যেতে হয় না। শরতে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকেই এখন ছুটছেন এসব কাশবনে। বিকেল ঘনাতেই জমজমাট হয়ে উঠছে ফাঁকা এলাকাগুলো।

কাশফুলের জন্মস্থান বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্থান, শ্রীলংকা, নেপাল, ভূটান, মালদ্বীপে। ঘাসজাতীয়, আখ বা ইক্ষুর আত্মীয়। আমাদের দেশে শরৎ মানেই কাশ আর শিউলি ফুল। নদী তীরবর্তী স্থান কাশ জন্মানোর আদর্শ স্থান হলেও এখন প্রায় সব জায়গাতেই জন্মাতে দেখা যায়। বর্ষার বৃষ্টি বা বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর কাশের ঘাস জন্মে আর শরতে ফোঁটে শুভ্র, সাদা ফুল। কাশ খুব দ্রুত জন্মে নিজেদের একটা কলোনী তৈরি করে, যা কাশবন নামেই আমাদের কাছে পরিচিত। ঢাকায় আফতাব নগর, দিয়াবাড়িতে আছে কাশবন।

কাশ যেহেতু আখ এর আত্মীয় সেহেতু আখের কিছুটা গুণ এর মধ্যেও আছে। কাশ ঘাসের গোড়ার দিকের অংশ মিষ্টি স্বাদের। ফিলিপাইনে এর মূলের রস ডাইইউরেটিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মূলের রস বা জ্যুস জ্বর সারাতে পারে। এছাড়া মূলের রসের সংকোচক, উপশমকারী, শীতলকারক, বিরেচক, সবলকারক গুণ রয়েছে। ব্যথা কমাতে কান্ডের শাঁসের গরম সেঁক উপকারী।

পাশ্চাত্যে কাশফুল নেই। সেখানে কাশের মতো দেখতে আছে। এই ঘাসগুলো হঠাৎ দেখে মনে হবে আমাদের দেশি কাশফুল। আসলে তা নয়। এরা অন্য গণের বাসিন্দা। এদের স্বভাব বৈশিষ্ট্য ও ভিন্ন। কাশের তুলনায় এই ফুলগুলো বেশ ঘন। ফুল সাদা বা ক্রিম কালার। হাইব্রিড জাত আছে গোলাপি, নীল ফুলের।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url