রকি হ্যান্ডসাম মুভি রিভিউ

ফিল্মের প্রেক্ষাপট গোয়া৷ কবীর আহলাওয়াত (জন আব্রাহাম) একটি বন্ধকী দোকান চালায়৷ কালো পোশাক আর হুডেড জ্যাকেট পরে ঘুরে বেড়ায় গোটা গোয়া৷ কখনও কেউ তাকে হাসতে দেখেনি৷ কথা বলতেও খুব কম দেখা যায়৷ শুধু প্রতিবেশা নাওমির (দিয়া চালওয়াড়) প্রতি তার কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে৷ নাওমির মা অ্যানা (নাথালিয়া কউর) ড্রাগ মাফিয়ার চক্করে প্রাণ হারায়৷ তার শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ বিক্রি করে দেয় কেভিন (নিশিকান্ত কামাত ) আর তার ভাই লিউক (টেডি মৌর্য)৷ নায়োমিকে নিয়ে তারা কার্লা আন্টির (সুহাসিনী মুলে) কাছে রাখে৷

পরে তারও চোখ উপড়ে বিক্রি করবে বলে৷ ড্রাগ মাফিয়া মান্টোকে মেরে কেভিন আর লিউক হয়ে ওঠে গোয়ার এক নম্বর মাফিয়া৷ ক্রমে পুলিশ আর কবীর আবিষ্কার করে কেভিন আর লিউকের মূল ব্যবসা হল অর্গান ট্রেড৷ রীতিমতো র্যাকেট চালায় তারা৷ পুলিশ যথারীতি হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে কেভিন আর লিউককে৷ কিন্ত্ত যেহেতু ফিল্মের হিরোও আলাদাভাবে ভিলেনদের খুঁজতে থাকে তাই পুলিশ ফেল মেরে যায়৷ আর তারপরেই পরিত্রাতা রূপে হাজির হয় কবীর৷ ওয়ান ম্যান আর্মি৷ হাত, চাকু, বন্দুক কিছুই তাকে দাবিয়ে রাখতে পারে না৷ শেষ পর্যন্ত যা হওয়ার তাই হয়৷ মারামারি, গোলাগুলি চলার পর নায়োমিকে ফিরে পায় কবীর, আসলে যে ছিল সরকারি এজেন্ট৷

গল্পটা শুনে মাথা গুলিয়ে গেল? যারা ছবিটা দেখেছে তাদের কথা ভেবে অন্তত নিজেকে ভাগ্যবান মনে করুন৷ প্রথম অর্ধে জন মোটামুটি বিশ্রামেই ছিলেন৷ অভিনয়টা তিনি পারেন না৷ তাই সে চেষ্টাও করেননি৷ অ্যাকশনটা করতে পারেন৷ কিন্ত্ত কোনও অজানা কারণে তিনি ভায়োলেন্স বেছে নেননি৷ বিরতিতে স্ক্রিন অর্ধেক বয়ে যায় যেখানে ট্রানজিশন শট এ দেখা যায় দু'দিকে দুই জন আব্রাহাম একজন রকি আর অন্যজন হ্যান্ডসাম৷



দর্শকরা যাতে ভুল না বোঝেন সে জন্য শটটা মার্জ করিয়ে বোঝানো হয় দু'জনে আসলে একই ব্যক্তি৷ যখন থেকে জন মারপিট করতে শুরু করলেন, ততক্ষণে অর্ধেক দর্শক উঠে বেরিয়ে গিয়েছে৷ যারা আছে তাদের মধ্যে কেউ কেউ নিভৃতে সঙ্গীর সঙ্গে গল্প করছে, বাকিরা ঘুমোচ্ছে৷

ফলে হ্যান্ডসাম রকি কিনা, সে সাংঘাতিক নৃশংস স্পেশাল এজেন্ট কিনা কারও কিচ্ছু এসে গেল না৷ এবার আসা যাক বাকিদের কথায়৷ নিশিকান্ত কামাত৷ দৃশ্যম, মুম্বই মেরি জান, ফোর্স করার পর কেন যে তাঁর এই মতিভ্রম হল তা কেবল তিনিই বলতে পারবেন৷ তবে অভিনয়টা অবশ্য মন্দ করেননি৷ শ্রীতি হসন প্রথম দৃশ্যে এলেন, যথেষ্ট শরীর দেখালেন৷ নায়ককে মহান প্রেমিক, একাকী, নিঃসঙ্গ, প্রখর পুরুষ বোঝানোর জন্য তার স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করে মরেও গেলেন৷ ফিল্মে বাচ্চা থাকলে এমনিই ছবি হিট৷ বজরঙ্গি ভাইজান তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ৷ কিন্ত্ত দিয়া চালওয়াড়ও ছবি টানতে পারলো না৷

আরও একটু ওয়ার্কশপ, ট্রেনিং এর প্রয়োজন ছিল বোধহয়৷ শরদ কেলকার পুলিশ হয়ে কী করলেন, কেন করলেন কিছুই বোধা গেল না৷ এদের মধ্যে আনন্দ দিলেন কাজু প্যাট্রিক ট্যাং৷ তাঁর কাইনেটিক মার্শল আর্ট দেখে মন ভরে যায়৷ অ্যাকশনে অবশ্য নিন্দুকেরাও জনকে খারাপ বলতে পারবেন না৷ কিন্ত্ত সমস্যাটা হল যতক্ষণে তিনি ওয়ার্ম-আপ করে অ্যাকশন শুরু করলেন ততক্ষণে দর্শকদের যা ধৈর্য্যচ্যুতি হওয়ার হয়ে গিয়েছে৷

ফিল্মের গান বা মিউজিকও কোনও ছাপ ফেলতে পারে না৷ তাই সব শেষে জনকে অনুরোধ টাকাগুলো বাড়িতেই থাক না৷ কী দরকার এরকম ফিল্ম বানানোর? আর যদি বানানই তাহলে ভালো পরিচালক নিন৷ যিনি পুরো কাজটা করে দেবেন আর আপনি ক্ষীরটা খাবেন৷ যেমন মাদ্রাস ক্যাফে তে করে নিয়েছিলেন সুজিত সরকার৷
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url