সরস্বতী পূজা - বিদ্যা ও সংগীতের দেবীর পূজা কেন করা হয়?
বাগ্দেবী সরস্বতী হলেন জ্ঞান, সংগীত, শিল্পকলা, বুদ্ধি ও বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী হিন্দু দেবী। তিনি সরস্বতী-লক্ষ্মী-পার্বতী এই ত্রিদেবীর অন্যতম। দেবী সরস্বতীর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ঋগ্বেদে। বৈদিক যুগ থেকে আধুনিক যুগ পযন্ত তিনি হিন্দুধর্মের একজন গুরুত্বপূর্ণ দেবী। হিন্দুরা বসন্তপঞ্চমী (মাঘ মাসের শুক্লাপঞ্চমী তিথি) তিথিতে সরস্বতী পূজা করে। এই দিন ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের হাতেখড়ি হয়। বৌদ্ধ এবং পশ্চিম ও মধ্য ভারতে জৈনরাও সরস্বতীর পূজা করেন। জ্ঞান, সংগীত ও শিল্পকলার দেবী হিসেবে ভারতের বাইরে জাপান, ভিয়েতনাম, বালি (ইন্দোনেশিয়া) ও মায়ানমারেও সরস্বতী পূজার চল আছে।
ধ্যানমন্ত্রে বর্ণিত মূর্তিকল্পটিতে দেবী সরস্বতীকে শ্বেতবর্ণা, শ্বেত পদ্মে আসীনা, মুক্তার হারে ভুষিতা,পদ্মলোচনা ও বীণাপুস্তকধারিণী এক দিব্য নারীমূর্তিরূপে কল্পনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে,ওঁ তরুণশকলমিন্দোর্বিভ্রতী শুভ্রকান্তিঃ কুচভরনমিতাঙ্গী সন্নিষণ্ণা সিতাব্জে। নিজকরকমলোদ্যল্লেখনীপুস্তকশ্রীঃ সকলবিভবসিদ্ধৈ পাতু বাগ্দেবতা নঃ। অর্থাৎ, “চন্দ্রের নূতন কলাধারিণী, শুভ্রকান্তি, কুচভরনমিতাঙ্গী, শ্বেত পদ্মাসনে (উত্তমরূপে) আসীনা, হস্তে ধৃত লেখনী ও পুস্তকের দ্বারা শোভমানা বাগ্দেবী সকল বিভবপ্রাপ্তির জন্য আমাদিগকে রক্ষা করুন।
আবার পদ্মপুরাণ-এ উল্লিখিত সরস্বতীস্তোত্রম্-এ বর্ণিত হয়েছে, শ্বেতপদ্মাসনা দেবী শ্বেতপুষ্পোপশোভিতা।শ্বেতাম্বরধরা নিত্যা শ্বেতগন্ধানুলেপনা। শ্বেতাক্ষসূত্রহস্তা চ শ্বেতচন্দনচর্চিতা। শ্বেতবীণাধরা শুভ্রা শ্বেতালঙ্কারভূষিতা। অর্থাৎ দেবী সরস্বতী আদ্যন্তবিহীনা, শ্বেতপদ্মে আসীনা, শ্বেতপুষ্পে শোভিতা, শ্বেতবস্ত্র-পরিহিতা এবং শ্বেতগন্ধে অনুলিপ্তা। অধিকন্ত তাঁহার হস্তে শ্বেত রুদ্রাক্ষের মালা; তিনি শ্বেতচন্দনে চর্চিতা, শ্বেতবীণাধারিণী, শুভ্রবর্ণা এবং শ্বেত অলঙ্কারে ভূষিতা। ধ্যান বা স্তোত্রবন্দনায় উল্লেখ না থাকলেও সরস্বতী ক্ষেত্রভেদে দ্বিভূজা অথবা চতুর্ভূজা এবং মরালবাহনা অথবা ময়ূরবাহনা। উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে সাধারণত ময়ূরবাহনা চতুর্ভূজা সরস্বতী পূজিত হন। ইনি অক্ষমালা, কমণ্ডলু, বীণা ও বেদপুস্তকধারিণী।বাংলা তথা পূর্বভারতে সরস্বতী দ্বিভূজা ও রাজহংসের পৃষ্ঠে আসীনা।
অপরদিকে বিভিন্ন শাস্ত্রগন্থ অনুসারে মা সরস্বতী দেবী সাদা বসনে সজ্জ্বিত, মনের সকল মলিনতা দূর করে পুজো করতে হয়। পুজোর দিন ছাত্রছাত্রীরা সকালে পুজোর অঞ্জলি দেওয়ার জন্য সববেত হন। পুজোর পরদিন পুনরায় পুজোর পর চিড়ে ও দই মিশ্রিত করে দধিকরম্ব বা দধিকর্মা নিবেদন করা হয়। সন্ধ্যায় আরাধনা ও প্রসাদ বিতরণের মাধ্যমে মায়ের পুজো সম্পন্ন করেন। সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। এ তো গেল ভক্তিরসের দিক, এবার যাব উৎসের সন্ধানে।
সরস্বতী কি দেবী? তিনি কি নদী? ভৌগোলিক দিক থেকে নিশ্চিতভাবেই বলা যাবে কি সরস্বতী নদী শতদ্রু ও যমুনা নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত ছিল ? অনুমান করা যায় যে বৈদিক সরস্বতী (আঞ্চলিক নাম সরসুতী) হরিয়ানার থানেশ্বর অঞ্চলে প্রবাহিত। ঋগ্বেদে বলা হয়েছে সপ্তথি সরস্বতী নদীগুলির মাতা (সিন্ধুমাতা) একসাথে দুগ্ধ ও স্রোতস্বিনীদের নিয়ে বিপুল গর্জনে তীব্র স্রোতে প্রভূত জলধারায় স্ফীত হয়ে প্রবাহিত। ঋগ্বেদে দুই ধরনের সরস্বতীর উল্লেখ আছে। একটি ত্রিলোক্য ব্যাপিনী সূর্যাগ্নি, অন্যটি নদী। সরস্ ধাতু তদুত্তরে অস্থর্থে বতু এবং স্ত্রী লিঙ্গে ঈপ্ প্রত্যয় যোগে নিষ্পন্ন হয়েছে সরস্বতী-এ মত স্বামী নির্মলানন্দের। আলোকময়ী বলে সর্বশুক্লা।
সরস+বতী=সরস্বতী অর্থ জ্যোতিময়ী। ঋগ্বেদে এবং যর্জুবেদে অনেকবার ইড়া,ভারতী, সরস্বতীকে একসঙ্গে দেখা যায়। বেদের মন্ত্রগুলো পর্যালোচনায় প্রতীতী জন্মে যে, সরস্বতী মূলত সূর্যাগ্নি। দেবীভাগবতে সরস্বতী জ্যোতিরূপা। ভৃগুপনিষদে জ্যোতির্ময়ী সরস্বতী ও জলময়ী সরস্বতীর সমীকরণ করা হয়েছে। এই উপনিষদে জলে জ্যোতি প্রতিষ্ঠিত, জ্যোতিতে জল প্রতিষ্ঠিত। ঋগ্বেদে ইন্দ্রের সঙ্গে সরস্বতীর সম্পর্ক যেমন ঘনিষ্ঠ তেমনি ঘনিষ্ঠ মরুদ ও অশ্বিনীদ্বয়ের সঙ্গে। সরস্বতী কখনো ইন্দ্রের পত্নী আবার কখনো শত্রু,কখনো-বা ইন্দ্রের চিকিৎসক। শুক্ল যজুর্বেদে তিনি চিকিৎসক রুপে রুদ্র অশ্বিদ্বয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ততা। সরস্বতীর রোগ নিরাময় শক্তির কথা প্রবর্তী সময়েও জনশ্রুতিতে ঋগ্বেদে সরস্বতী সিন্দু ও তার পাঁচটি উপনদী নিয়ে সপ্তসিন্ধুর বারংবার উল্লেখ আর্যভূমিতে এদের অপরিসীম গুরুত্ব প্রমাণ করে।
অম্বিতমে নদীতমে দেবীতমে সরস্বতী নদী হিসাবে সরস্বতীকে। সম্ভবত সরস্বতী নদীর তীরেই বৈদিক এবং ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির উদ্ভব। তাই হয়তো শিক্ষার সঙ্গে সরস্বতীর অচ্ছেদ্য বন্ধন এবং এর জন্যই পৌরাণিক যুগে সরস্বতী বিদ্যার দেবী হয়ে উঠেছেন। সরস্বতীর আর-এক নাম ভারতী। তিনি ব্রাহ্মণ বাক্ নামে পরিচিতা। দেবী সরস্বতীর সঙ্গে নদী সরস্বতীর এই একাত্মতা সম্পর্কে নানা মুনির নানা মত থাকলেও সরস্বতীকে ব্রহ্মার মানসকন্যা হিসাবে কল্পনা করা হয়।
সরস্বতীর বাহন হাঁস ছাড়াও মেষ আর বরাহকে পাওয়া যায়। প্রত্নতাত্ত্বিক এন এস ভট্টসারি একটি লেখায় বলেছেন, একসময় ইন্দ্রের শরীরের শক্তি চলে যাওয়ার ফলে তিনি মেষ আকৃতি গ্রহণ করেন। সেসময় ইন্দ্রের চিকিৎসার দায়িত্ব ছিল স্বর্গের অশ্বিনীদ্বয়ের উপর এবং সেবা-শুশ্রুষার ভার ছিল সরস্বতীর হাতে। সংগীত ও নৃত্যপ্রেমী ইন্দ্র সরস্বতীর গানবাজনা ও সেবায় সুস্থ হওয়ার পর তাকে মেষটি দান করেন।
উত্তর ভারত, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, নেপাল ও বাংলাদেশে সরস্বতী পূজা উপলক্ষ্যে বিশেষ উৎসাহ উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হয়। শ্রীপঞ্চমীর দিন অতি প্রত্যুষে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ছাত্রছাত্রীদের গৃহ ও সর্বজনীন পূজামণ্ডপে দেবী সরস্বতীর পূজা করা হয়। ধর্মপ্রাণ হিন্দু পরিবারে এই দিন শিশুদের হাতেখড়ি, ব্রাহ্মণভোজন ও পিতৃতরপণের প্রথাও প্রচলিত। পূজার দিন সন্ধ্যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সর্বজনীন পূজামণ্ডপগুলিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও আয়োজিত হয়।
পূজার পরের দিনটি শীতলষষ্ঠী নামে পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গে কোনো কোনো হিন্দু পরিবারে সরস্বতী পূজার পরদিন অরন্ধন পালনের প্রথা রয়েছে। সরস্বতী পূজা, উভয়লোকের দেবতা, গন্ধর্ কিন্নর, ঋষি, মহর্ষি, রাজা-প্রজা সবাই শ্রদ্ধার সাথে করে আসছে।
ধ্যানমন্ত্রে বর্ণিত মূর্তিকল্পটিতে দেবী সরস্বতীকে শ্বেতবর্ণা, শ্বেত পদ্মে আসীনা, মুক্তার হারে ভুষিতা,পদ্মলোচনা ও বীণাপুস্তকধারিণী এক দিব্য নারীমূর্তিরূপে কল্পনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে,ওঁ তরুণশকলমিন্দোর্বিভ্রতী শুভ্রকান্তিঃ কুচভরনমিতাঙ্গী সন্নিষণ্ণা সিতাব্জে। নিজকরকমলোদ্যল্লেখনীপুস্তকশ্রীঃ সকলবিভবসিদ্ধৈ পাতু বাগ্দেবতা নঃ। অর্থাৎ, “চন্দ্রের নূতন কলাধারিণী, শুভ্রকান্তি, কুচভরনমিতাঙ্গী, শ্বেত পদ্মাসনে (উত্তমরূপে) আসীনা, হস্তে ধৃত লেখনী ও পুস্তকের দ্বারা শোভমানা বাগ্দেবী সকল বিভবপ্রাপ্তির জন্য আমাদিগকে রক্ষা করুন।
আবার পদ্মপুরাণ-এ উল্লিখিত সরস্বতীস্তোত্রম্-এ বর্ণিত হয়েছে, শ্বেতপদ্মাসনা দেবী শ্বেতপুষ্পোপশোভিতা।শ্বেতাম্বরধরা নিত্যা শ্বেতগন্ধানুলেপনা। শ্বেতাক্ষসূত্রহস্তা চ শ্বেতচন্দনচর্চিতা। শ্বেতবীণাধরা শুভ্রা শ্বেতালঙ্কারভূষিতা। অর্থাৎ দেবী সরস্বতী আদ্যন্তবিহীনা, শ্বেতপদ্মে আসীনা, শ্বেতপুষ্পে শোভিতা, শ্বেতবস্ত্র-পরিহিতা এবং শ্বেতগন্ধে অনুলিপ্তা। অধিকন্ত তাঁহার হস্তে শ্বেত রুদ্রাক্ষের মালা; তিনি শ্বেতচন্দনে চর্চিতা, শ্বেতবীণাধারিণী, শুভ্রবর্ণা এবং শ্বেত অলঙ্কারে ভূষিতা। ধ্যান বা স্তোত্রবন্দনায় উল্লেখ না থাকলেও সরস্বতী ক্ষেত্রভেদে দ্বিভূজা অথবা চতুর্ভূজা এবং মরালবাহনা অথবা ময়ূরবাহনা। উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে সাধারণত ময়ূরবাহনা চতুর্ভূজা সরস্বতী পূজিত হন। ইনি অক্ষমালা, কমণ্ডলু, বীণা ও বেদপুস্তকধারিণী।বাংলা তথা পূর্বভারতে সরস্বতী দ্বিভূজা ও রাজহংসের পৃষ্ঠে আসীনা।
অপরদিকে বিভিন্ন শাস্ত্রগন্থ অনুসারে মা সরস্বতী দেবী সাদা বসনে সজ্জ্বিত, মনের সকল মলিনতা দূর করে পুজো করতে হয়। পুজোর দিন ছাত্রছাত্রীরা সকালে পুজোর অঞ্জলি দেওয়ার জন্য সববেত হন। পুজোর পরদিন পুনরায় পুজোর পর চিড়ে ও দই মিশ্রিত করে দধিকরম্ব বা দধিকর্মা নিবেদন করা হয়। সন্ধ্যায় আরাধনা ও প্রসাদ বিতরণের মাধ্যমে মায়ের পুজো সম্পন্ন করেন। সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। এ তো গেল ভক্তিরসের দিক, এবার যাব উৎসের সন্ধানে।
সরস্বতী কি দেবী? তিনি কি নদী? ভৌগোলিক দিক থেকে নিশ্চিতভাবেই বলা যাবে কি সরস্বতী নদী শতদ্রু ও যমুনা নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত ছিল ? অনুমান করা যায় যে বৈদিক সরস্বতী (আঞ্চলিক নাম সরসুতী) হরিয়ানার থানেশ্বর অঞ্চলে প্রবাহিত। ঋগ্বেদে বলা হয়েছে সপ্তথি সরস্বতী নদীগুলির মাতা (সিন্ধুমাতা) একসাথে দুগ্ধ ও স্রোতস্বিনীদের নিয়ে বিপুল গর্জনে তীব্র স্রোতে প্রভূত জলধারায় স্ফীত হয়ে প্রবাহিত। ঋগ্বেদে দুই ধরনের সরস্বতীর উল্লেখ আছে। একটি ত্রিলোক্য ব্যাপিনী সূর্যাগ্নি, অন্যটি নদী। সরস্ ধাতু তদুত্তরে অস্থর্থে বতু এবং স্ত্রী লিঙ্গে ঈপ্ প্রত্যয় যোগে নিষ্পন্ন হয়েছে সরস্বতী-এ মত স্বামী নির্মলানন্দের। আলোকময়ী বলে সর্বশুক্লা।
সরস+বতী=সরস্বতী অর্থ জ্যোতিময়ী। ঋগ্বেদে এবং যর্জুবেদে অনেকবার ইড়া,ভারতী, সরস্বতীকে একসঙ্গে দেখা যায়। বেদের মন্ত্রগুলো পর্যালোচনায় প্রতীতী জন্মে যে, সরস্বতী মূলত সূর্যাগ্নি। দেবীভাগবতে সরস্বতী জ্যোতিরূপা। ভৃগুপনিষদে জ্যোতির্ময়ী সরস্বতী ও জলময়ী সরস্বতীর সমীকরণ করা হয়েছে। এই উপনিষদে জলে জ্যোতি প্রতিষ্ঠিত, জ্যোতিতে জল প্রতিষ্ঠিত। ঋগ্বেদে ইন্দ্রের সঙ্গে সরস্বতীর সম্পর্ক যেমন ঘনিষ্ঠ তেমনি ঘনিষ্ঠ মরুদ ও অশ্বিনীদ্বয়ের সঙ্গে। সরস্বতী কখনো ইন্দ্রের পত্নী আবার কখনো শত্রু,কখনো-বা ইন্দ্রের চিকিৎসক। শুক্ল যজুর্বেদে তিনি চিকিৎসক রুপে রুদ্র অশ্বিদ্বয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ততা। সরস্বতীর রোগ নিরাময় শক্তির কথা প্রবর্তী সময়েও জনশ্রুতিতে ঋগ্বেদে সরস্বতী সিন্দু ও তার পাঁচটি উপনদী নিয়ে সপ্তসিন্ধুর বারংবার উল্লেখ আর্যভূমিতে এদের অপরিসীম গুরুত্ব প্রমাণ করে।
অম্বিতমে নদীতমে দেবীতমে সরস্বতী নদী হিসাবে সরস্বতীকে। সম্ভবত সরস্বতী নদীর তীরেই বৈদিক এবং ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির উদ্ভব। তাই হয়তো শিক্ষার সঙ্গে সরস্বতীর অচ্ছেদ্য বন্ধন এবং এর জন্যই পৌরাণিক যুগে সরস্বতী বিদ্যার দেবী হয়ে উঠেছেন। সরস্বতীর আর-এক নাম ভারতী। তিনি ব্রাহ্মণ বাক্ নামে পরিচিতা। দেবী সরস্বতীর সঙ্গে নদী সরস্বতীর এই একাত্মতা সম্পর্কে নানা মুনির নানা মত থাকলেও সরস্বতীকে ব্রহ্মার মানসকন্যা হিসাবে কল্পনা করা হয়।
সরস্বতীর বাহন হাঁস ছাড়াও মেষ আর বরাহকে পাওয়া যায়। প্রত্নতাত্ত্বিক এন এস ভট্টসারি একটি লেখায় বলেছেন, একসময় ইন্দ্রের শরীরের শক্তি চলে যাওয়ার ফলে তিনি মেষ আকৃতি গ্রহণ করেন। সেসময় ইন্দ্রের চিকিৎসার দায়িত্ব ছিল স্বর্গের অশ্বিনীদ্বয়ের উপর এবং সেবা-শুশ্রুষার ভার ছিল সরস্বতীর হাতে। সংগীত ও নৃত্যপ্রেমী ইন্দ্র সরস্বতীর গানবাজনা ও সেবায় সুস্থ হওয়ার পর তাকে মেষটি দান করেন।
উত্তর ভারত, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, নেপাল ও বাংলাদেশে সরস্বতী পূজা উপলক্ষ্যে বিশেষ উৎসাহ উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হয়। শ্রীপঞ্চমীর দিন অতি প্রত্যুষে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ছাত্রছাত্রীদের গৃহ ও সর্বজনীন পূজামণ্ডপে দেবী সরস্বতীর পূজা করা হয়। ধর্মপ্রাণ হিন্দু পরিবারে এই দিন শিশুদের হাতেখড়ি, ব্রাহ্মণভোজন ও পিতৃতরপণের প্রথাও প্রচলিত। পূজার দিন সন্ধ্যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সর্বজনীন পূজামণ্ডপগুলিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও আয়োজিত হয়।
পূজার পরের দিনটি শীতলষষ্ঠী নামে পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গে কোনো কোনো হিন্দু পরিবারে সরস্বতী পূজার পরদিন অরন্ধন পালনের প্রথা রয়েছে। সরস্বতী পূজা, উভয়লোকের দেবতা, গন্ধর্ কিন্নর, ঋষি, মহর্ষি, রাজা-প্রজা সবাই শ্রদ্ধার সাথে করে আসছে।