অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্বের নামকরা প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টদের অনেকেই পড়েছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্বনেতাদের মধ্যে বিল ক্লিনটন, ডেভিড ক্যামেরুন, মনমোহন সিং, বেনজির ভুট্টো, ইমরান খান, অং সান সু চিসহ ৩০ জন এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়েছেন। ব্রিটেনে ২০১০ সালে হাউস অব লর্ডসের ১৪০ জন সদস্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। এখানকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ৪৭ জন।

হ্যাঁ পাঠক অবশ্যই বুঝতে কষ্ট হচ্ছেনা, বলছি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সঠিক তারিখ জানা যায়নি। তবে অনুমান করা হয় ১১ শতাব্দীর প্রথম থেকেই অক্সফোর্ডে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব ছিল। তবে ১১৬৭ সালে রাজা ২য় হেনরি ইংরেজ ছাত্রদের প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ফলে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে।

প্রথমদিকে ভাড়া করা হল অথবা চার্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস নেয়া হত। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মতত্ত্ব, আইন, চিকিৎসাবিজ্ঞান ও দর্শন বিভাগ ছিল। ১৩৫৫ সালে রাজার এক আদেশবলে বিশ্ববিদ্যালয়কে অক্সফোর্ড শহরে স্থান দেওয়া হয়। ১৯শ শতাব্দীতে বিশ্ববিদ্যালযটির কলেবর বৃদ্ধি করা হয়। ১৮৮৭ সালে প্রথম মহিলা কলেজ লেডি মার্গারেট হল প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০ শতকে বিজ্ঞানের গুরুত্ব বৃদ্ধি করা হয় ও নতুন বিভাগ খোলা হয়।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রয়েছে ৩৮টি কলেজ। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সবচেয়ে পুরোনো তিনটি কলেজ হচ্ছে ‘ইউনিভার্সিটি কলেজ’, ‘বেলিওল কলেজ’ ও ‘মার্টন কলেজ’। এগুলো ত্রয়োদশ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত। সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন সেন্ট ক্যাথারিনস কলেজে, সংখ্যা ৭৮৮। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কলেজে গ্রন্থাগারের সংখ্যা প্রায় ১০০।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এখন প্রায় ২১ হাজার। এঁদের মধ্যে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী ১১ হাজার ৭২৩ এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে নয় হাজার ৩২৭। বিশ্বের ১৪০টি দেশের প্রায় আট হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী সেখানে পড়াশোনা করেন। গত বছর টাইমস গুড ইউনিভার্সিটি গাইডে বলা হয়েছে, এক দশক ধরে ব্রিটেনে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে অক্সফোর্ড। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গ্রন্থাগার ‘বডলিয়েন লাইব্রেরি ব্রিটেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রন্থাগার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট খরচের ২৩ শতাংশ জোগান দেয় ‘হায়ার এডুকেশন ফান্ডিং কাউন্সিল ফর ইংল্যান্ড’। শিক্ষার্থীদের বেতন ও ফি থেকে আসে ১৫ শতাংশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা ও বিনিয়োগ থেকে আসে আয়ের ২১ শতাংশ। বাকি প্রায় ৪১ শতাংশ আয় আসে বাইরের গবেষণা ও অনুদান থেকে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অক্সফোর্ড শহর। এর অলিগলিতে একেকটি কলেজ, শ্রেণীকক্ষ ও ছাত্রাবাস। মেধাবী শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখর থাকে ওই এলাকা। শহরটির জীবনযাত্রার ব্যয় লন্ডনের চেয়ে বেশি। জিনিসপত্রের দামও বেশি। এর কারণ পর্যটকদের ভিড়।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url