বিয়ের গয়না

যতই সাজুন আর শাড়ি পরুন, গয়না ছাড়া কি বউ সাজ পূর্ণ হয়? এক সময় বিয়ের গয়না মানেই ছিল গা ভর্তি ভারী স্বর্ণালংকার। যুগ পরিবর্তনের সাথে সাথে গয়নার ফ্যাশন ট্রেন্ডেও লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। তাই ঐতিহ্যবাহী ভারী গয়নার বদলে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন হালকা নকশার ট্রেন্ডী গয়না। বিয়ের গয়না শুধু সাজগোজের উপকরণ নয়। এটা মায়ের বাড়ির আশীর্বাদ বা শ্বশুড়বাড়ির উপহার।

আগে বিয়ের গয়না মানেই ছিল সোনার গয়না। সোনার আকাশ ছোঁয়া দাম আর ফ্যাশন পরিবর্তনের কারণে বিয়ের গয়নায় জায়গা করে নিয়েছে রূপা, গোল্ড প্লেটেড গয়না, পাথরের গয়না, মুক্তো এমকি হীরাও। তবে সোনার গয়নার আবেদন কমেনি এতটুকুও। এখনও বাঙালি বধু মানেই সোনার গয়নায় মোড়া। তবে আগের মত শুধু হলুদ আর সাদা সোনার গয়নার বাইরে এখন গোলাপি সোনা বা রোজ গোল্ড বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

সোনার গয়নাঃ

পেটানো খাঁটি গিনি সোনার বদলে এসেছে কিছুটা হালকা ডিজাইনের সোনার সাথে পাথর, পুঁতি, কুন্দন বা মুক্তার মিশেলে তৈরি গয়না। আপনার বিয়ের শাড়ির কালারের সাথে মিলিয়ে স্টোন বা পুঁতি বসিয়ে নিতে পারেন। এখনকার ট্রেন্ড সেটাই। এছাড়াও পোশাকের সাথে মিলিয়ে গোল্ডের গয়নায় মিনা করিয়ে নিতে পারেন। ব্যবহার করতে পারেন রুবি, পান্না, টোপাজের মত দামি পাথর। রোজ গোল্ডের সাথে মুক্তা সুন্দর মানাবে। আপনার মায়ের বা দাদীর ট্রেডিশনাল গয়না গুলোকে পাথর, পুঁতি বসিয়ে বানিয়ে ফেলুন হাল ফ্যাশনের। সোনার গয়না কিনতে পারেন বায়তুল মোকাররম, নিউমার্কেট, বসুন্ধরা সিটি, রাইফেল স্কয়ার বা গুলশান পিংক সিটি থেকে। রেডিমেড কিনতে পারেন বা নিজের পছন্দ অনুযায়ী বানিয়ে নিন। তবে হাতে সময় থাকা চাই ২ সপ্তাহ থেকে একমাস। ১৮ ক্যারেটের সোনার ভরি-৪০ হাজার ৫০০ টাকা, ২১ ক্যারেট-৪৭ হাজার টাকা, ২২ ক্যারেট ভরি প্রতি-৫০ হাজার টাকা।

হীরার গয়নাঃ

সোনা যেমন ঐতিহ্য, হীরা তেমনি আভিজাত্যের প্রতীক। আগে শুধু উচ্চবিত্তের নাগালে থাকলেও এখন মধ্যবিত্তের হাতের সীমানায় চলে এসেছে হীরা। পুরো সেট না হোক দুই একটা হীরার গয়না তো থাকা চাইই চাই। আমাদের দেশে দুই ধরনের হীরা পাওয়া যায়, বোম্বে কাট আর বেলজিয়াম কাট। বোম্বে কাট দামে সস্তা হওয়ায় এর চাহিদাও বেশি। হীরার গয়না পাবেন ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড, ডায়ামন্ড গ্যালারী, ডায়াগোল্ড, অলংকার নিকেতন, নিউ জরোয়া হাউস এই দোকান গুলোতে। হীরের নাকফুল ২৫০০-১৫০০০ টাকা, কানের দুল ২০০০০-৫০০০০টাকা, আংটি ২০০০০-৪০০০০ টাকা, নেকলেস ৩০০০০- ১লাখ টাকা। দেড়-আড়াই লাখ টাকায় পাবেন হালকা ডিজাইনের সেট। বেলজিয়াম কাটের ক্ষেত্রে সেটের দাম পড়বে ৩-৫ লক্ষ টাকা। হীরের গয়না বেশি মানাবে শিফন বা জর্জেটের হালকা কাজের আধুনিক শাড়ি বা লেহেঙ্গার সাথে। এনগেজমেন্ট বা বউভাতে হীরের গয়না বেশি মানানসই।



রুপোর গয়নাঃ

বিয়েতে প্রচলিত রুপার গয়নার চল না থাকলেও রুপোর উপর গোল্ড প্লেটেড করে নিতে পারেন। বিশেষ করে কিছু গয়না যা পরে আর তেমন পরা হবে না সেগুলো রুপো দিয়ে বানাতে পারেন। যেমন নথ, টিকলি, টায়রা, ঝাপ্টা বা নূপুর। অনেকেই আজকাল হলুদে ফুলের গয়নার পাশাপাশি বা পরিবর্তে ব্যবহার করছেন রুপোর গয়না। রুপার ভরি বর্তমানে ১২০০-১৪০০ টাকা। রূপার গয়নার রিসেল ভ্যালূ আছে। বিয়ের পরে যেসব গয়না পরা হয় না সেগুলো বিক্রি করতে পারেন বা বানিয়ে নিতে পারেন অন্য কিছু।

গোল্ড প্লেটেডঃ

গোল্ড প্লেটেড গয়নার জনপ্রিয়তা বাড়ছে ক্রমশই। স্বর্ণের উর্ধগতির কারণে অনেকেই ঝুঁকছেন গোল্ড প্লেটেড গয়নার দিকে। বিয়ের সব গয়নার বানাতে পারেন সিটি গোল্ড / ইমিটেসন বা গোল্ড প্লেটেড ম্যাটেরিয়াল দিয়ে। কপার বা অ্যান্টিক কালারের গোল্ড প্লেটেড গয়না এখন বেশ চলছে। পাথর, পুঁতি, মুক্তা মানাবে এক সাথে। সেটের দাম পড়বে ১২০০০-৩০০০০টাকা। এসব গয়না পাবেন গাউসিয়া, নিউমার্কেট, বসুন্ধরা সিটিতে।

কোন শাড়িতে কোন গয়নাঃ

কাতান, বেনারসি, জামদানি, মসলিন এসব দেশি শাড়ির সাথে ট্রেডিশনাল সোনার গয়না বেশি মানাবে। সিফন, জর্জেট, নেট শাড়ির সাথে ভালো মানাবে পাথর, পুঁতি বা হীরার গয়না। গয়নায় জমকালো ভারী কাজ থাকলে কিছুটা হালকা কাজের শাড়ি বেছে নিন। এতে গয়নার সৌন্দর্য বেশি ফুটে উঠবে।

কী কী গয়না চাইঃ

গয়না এমন হওয়া চাই যা বিয়ের পর শুধু সিন্দুকে বন্দী হয়ে থাকবে না। তাই এখন সিতা হার, মুকুট, তাজের দেখা পাওয়া যায় কম। একটি সিতা হারের বদলে আলাদাভাবে ২-৩ টি হার পরতে পারেন। মাথায় পরতে পারেন টিকলির পাশাপাশি টায়রা। এখন এক লহর ছাড়াও ২-৫ লহরের টায়রাও পরছেন অনেকে পুরো মাথা জুড়ে। একপাশে ব্যাংস কাট রাখলে অন্য পাশে পরতে পারেন ঝাপ্টা। মুখ জুড়ে বড় নথের পাশাপাশি চলছে ছোট নথও। কানের ঝুমকা বা কানপাশার সাথে অনেকেই পরছেন টানা। এক্ষেত্রে স্বচ্ছ ওড়না পড়ুন। হাতে সোনার বালা বা চুড়ের সাথে শাড়ির রঙ মিলিয়ে পড়ুন গোল্ড প্লেটেড স্টোন, পুঁতি আর ঝালর লাগানো চুড়ি। বাজুতে অনেকেই পরছেন বাজুবন্ধ। চাইলে কোমড়ে পড়তে পারেন বিছা। বিশেষ করে হলুদে কোমড়ে রূপোর বিছে বেশ ভালো লাগবে। আজকাল পায়ে ভারী নকশার নূপুর চলছে বেশ। বেনী বা খোঁপায় জড়িয়ে নিতে পারেন রূপো বা গোল্ড প্লেটেড মালা।
Next Post Previous Post
1 Comments
  • Leif Hagen
    Leif Hagen ১৯ ডিসেম্বর, ২০১১ এ ৮:৩৪ AM

    Such beautiful and exotic jewelry - quite a different style from over here I think.

Add Comment
comment url