আলিপুর চিড়িয়াখানা
কলকাতার অভিজাত আলিপুর এলাকায় অবস্থিত, ৪৫ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, আলিপুর জুওলোজিক্যাল গার্ডেন অথবা আলিপুর চিড়িয়াখানা, ঔপনিবেশিক যুগ থেকে রয়েছে। এই চিড়িয়াখানা ওয়েলস-এর রাজপুত্র সপ্তম এডওয়ার্ড দ্বারা প্রবর্তিত হয়েছিল। এমনকি কয়েক দশক আগে এই চিড়িয়াখানা কলকাতার গর্ব ছিল এবং এটি একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য ছিল, যেখানে বার্ষিক গননা অনুযায়ী ২০ লাখ দর্শক আসত এবং বড়দিন ও নতুন বছরের সময় এই দর্শক সংখ্যা ১০ গুন বেড়ে যেত। আলিপুর চিড়িয়াখানা বিরল প্রাণীদের ‘বন্দী প্রজননে’ বিশেষজ্ঞ।
বিরল এবং সাধারণ প্রাণী উভয়ের আধিক্য ছাড়াও, এই চিড়িয়াখানায় একটি সরীসৃপ ঘর, ক্যালকাটা আ্যকোরিয়াম এবং শিশুদের জন্য আরও একটি পৃথক চিড়িয়াখানা ছিল। এই চিড়িয়াখানার সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রাণীগুলি ছিল আফ্রিকান সিংহ, রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, চিতা বাঘ, ভারতের শ্রেষ্ঠ এক শৃঙ্গ গণ্ডার, জিরাফ, জেব্রা, জলহস্তী, ভারতীয় হাতি, উট এবং জায়ান্ট এলান্ড। এই চিড়িয়াখানায় এছাড়াও একটি পক্ষিশালা ছিল যেখানে কিছু বিরল প্রজাতির পাখি; যেমন – আমেরিকার কাকাতুয়া প্রজাতির বড় তোতা, কনুর, টুরাকস, লরি,লরিকিটস, হর্নবিলস্ এবং বিভিন্ন অ-উড়ন্ত প্রজাতির পাখি, যেমন – ফিসান্টস, উটপাখি এবং এমু দেখা যেত।
এখানে উপস্থিত বড় জলাশয়টি শীতকালে পরিযায়ী পাখিদের জন্য একটি আশ্রয়স্থল ছিল, যা বন্য প্রাণী এবং পক্ষি ফটোগ্রাফারদের জন্য একটি লোভনীয় দৃশ্য হিসাবে প্রমানিত। এটি অদ্বৈত-এর একটি আশ্রয়স্থল, যা হল ২৫০ বছর বয়সী আলবাড্রার একটি দৈত্য কচ্ছপ। কিংবদন্তি আছে যে এই কচ্ছপটি সিসিলির লর্ড ক্লাইভের একটি ব্যক্তিগত সমষ্টি এবং ব্রিটিশ নাবিকগণদের মাধ্যমে ১৮৭৫ সালে, এটি আলিপুর চিড়িয়াখানায় এসে পৌঁছায়।
কিন্তু এগুলি হাজার হাজার বছর আগের কথা। আলিপুর চিড়িয়াখানার বর্তমান ভগ্নাবশেষ, যা একদা প্রাচীনতম এবং ভারতের বৃহত্তম প্রথাগত জুওলোজিক্যাল পার্ক ছিল, বর্তমানে পর্যাপ্তরূপে প্রতিপালিত হয় না। এই চিড়িয়াখানার বসবাসকারীদের জীবনযাত্রার অবস্থা কুখ্যাত দক্ষিণ আমেরিকান কারাগারের বন্দীদের চেয়েও অনেক বেশী খারাপ। হাস্যকর ভাবে, যেই চিড়িয়াখানা একদা পশুদের “বন্দী প্রজনন” বিশিষ্টতার জন্য বিখ্যাত ছিল সেই চিড়িয়াখানার প্রাণীদের মৃত্যুর হার ক্রমশ বেড়ে চলেছে। চেক প্রজাতন্ত্র থেকে আমদানি করা দুটি লাল ক্যাঙ্গারু সম্প্রতি মারা গেছে এবং চিড়িয়াখানার কর্মকর্তারা এটা দাবী করছে যে, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যায় এদের মৃত্যু ঘটেছে।
এই পশু মৃত্যুর ঘটনায় পেটা (পি.ই.টি.এ) অসন্তুষ্ট হয়েছেন এবং অযোগ্যতার দরুন এই চিড়িয়াখানা বন্ধ করার আদেশ দিয়েছেন। গত বছরেও একটি লাল ক্যাঙ্গারুর মৃত্যুকে অনুসরণ করে এই আদেশ দেওয়া হয়েছে। একটি সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী জানা গেছে যে, আলিপুর চিড়িয়াখানায় প্রাণীদের মোট মৃতের সংখ্যা ৬৭ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তার মধ্যে পাখি হল ৩০-টি ও সরীসৃপ ২০-টি এবং দুটি নবজাত মারমোসেট, ২০১১ সালের আগস্ট মাসে গড় মৃত্যুর হার হয়ে দাঁড়িয়েছিল ৮ মাসে ৮-টি।
বিগত ১৮ মাসে মোট ৪-টি শিম্পাঞ্জির মৃত্যু ঘটেছে। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ দ্বারা জানা গেছে যে, এই সময় সিংহ এবং বাঘেরও মৃত্যু ঘটেছে। চিড়িয়াখানার এক কর্মকর্তা বলেছেন যে “হতে পারে মৃত্যুর সংখ্যা বেশী কিন্তু অধিকাংশ মৃত্যুই বয়স সংক্রান্ত এবং অত্যন্ত স্বাভাবিক”। চিড়িয়াখানার পরিচালক শ্রীমান এম.সিংঘাল-এর একটি প্রাতিষ্ঠানিক রিপোর্ট এখনও মুলতুবী রয়েছে।
উচ্চহারে প্রাণী মৃত্যুর অনেক কারন আছে কিন্তু বেশিরভাগই ক্ষত বা সংক্রমণের কারনে হয়েছে। প্রথমত, চিড়িয়াখানার প্রাণীগুলি একটি অত্যন্ত অপরিচ্ছন্ন এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বাস করে। এমনকি তাদের যে খাবার এবং জল সরবরাহ করা হয় তা অত্যন্ত খারাপ মানের। সঠিক খাদ্য এবং পানীয় জল এবং অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপনের জন্য এখানকার প্রাণীদের মধ্যে প্রায়শই সংক্রমণ ঘটে। এমনকি পশুচিকিৎসকের কোন চিহ্ন পর্যন্ত সেখানে নেই। এই সব কারনেই চিড়িয়াখানার স্বাস্থ্য পরিকাঠামো শোচনীয় হয়ে গেছে। দ্বিতীয়ত, চিড়িয়াখানার রক্ষণাবেক্ষণ দল প্রাণীদের জন্য সামান্য সহানুভূতিও প্রদর্শন করেনা এবং বাস্তবে পশুদের আচরণ বোঝার কোন জ্ঞানও তাদের নেই। লাল ক্যাঙ্গারুর মৃত্যু, চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের অবহেলার একটি উদাহরণ।
কারণ – চিড়িয়াখানা রক্ষণাবেক্ষণ দলের কোন সদস্যদেরই ক্যাঙ্গারু প্রতিপালন করার যথাযথ প্রশিক্ষণ নেই। তৃতীয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণটি অবশ্যই হল জায়গার সমস্যা। বেশিরভাগ লোহার এই খাঁচাগুলি ঔপনিবেশিক যুগের। বাঘ ও সিংহরা এই গুহার মধ্যে ঢুকতে বাধা পায়, যার অর্থ হল এদের চেয়ে ছোট আকারের চিতাবাঘেরা এখানে ঢুকতে পারে।
২০০৯ সালে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের একটি বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, “একটি বড় চিড়িয়াখানায় ৭৫-টি প্রজাতির ৭৫০-টি পশুদের জন্য ৭৫ হেক্টর জমি থাকতে হবে বা গড়ে প্রত্যেক প্রাণীর জন্য ০.১ হেক্টর জমি থাকতে হবে”। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, আলিপুর চিড়িয়াখানা প্রাণী প্রতি শুধুমাত্র ০.০১৩ হেক্টর স্থান প্রদান করতে পারে, যা নির্ধারিত স্থানের কেবলমাত্র এক দশমাংশ। একটি আদর্শ আকারের চিড়িয়াখানা হিসাবে এই চিড়িয়াখানার স্থান সমস্যা কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ (সি.জেড.এ) স্থান নির্ণায়ক নীতির এক সরাসরি অবমাননা। সি.জেড.এ. স্থান নির্ণায়ক নীতির মতে নির্ধারিত স্থান পূরণ করতে আলিপুর চিড়িয়াখানা ১৪,০০০ বর্গ মিটার দ্বারা পিছিয়ে আছে।
এছাড়াও, প্রাণীদের গৃহসুলভ অনুভূতি প্রদান করতে প্রাণী পরিবেষ্টনী পৃথক বিশ্রামের এলাকা, আশ্রয়কেন্দ্র, পানীয় জলের কেন্দ্র দ্বারা সজ্জিত করা উচিত, কিন্তু বাস্তবে বিশেষ করে বাঘ এবং সিংহের জন্য প্রদিত নিম্নমানের পরিবেষ্টন প্রাণীদের ওঠা বসার জন্য একদমই যথেষ্ট নয়। এই স্থান মানসিক সমস্যা বৃদ্ধি করে বিশেষ করে মাংসাশী প্রাণীদের মধ্যে, বিশেষজ্ঞরা যাকে বলে অপরিবর্তনীয় আচরণ।
এছাড়াও, ফুর্তিবাজ, অসংবেদনশীল এবং অধিকাংশই মত্ত দর্শকরা চিড়িয়াখানায় তাদের এস.এল.আর. ক্যামেরা নিয়ে এসে মূর্খ মনোভাবের সঙ্গে রূক্ষভাবে পশুদের গোপনীয়তা ভঙ্গ করে, ফলস্বরূপ পশুরা আরও বেশী অন্তর্মুখী হয়ে পড়ে, বিশেষ করে মাংসাশী পশুরা। আলিপুর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ উপলব্ধি করেছেন যে, এই সময় এক সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তাই, তারা ঘোষণা করেছেন যে চিড়িয়াখানায় প্রাণী গ্রহণের এই নতুন প্রকল্পে এক উৎসাহব্যঞ্জক প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজন। এই প্রকল্পে বলা হয়েছে যে, দত্তক নেওয়া প্রাণীদের এই চিড়িয়াখানায় রাখা হবে কিন্তু দত্তক নেওয়া পিতামাতাকেই এই প্রাণী কল্যান ও দেখাশোনার সকল দায়িত্ব নিতে হবে।
অবশ্যই প্রাণীর মালিক হওয়ায় অন্যান্য খরচ ছাড়াও দত্তক নেওয়া পিতামাতাকে বার্ষিক একটি বড় রকমের অর্থ দিতে হবে। এই প্রকল্পের অধীনে কিছু দিন আগে একটি জাগুয়ারকে দত্তক নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সচেতন বন্যপ্রাণী কর্মী সংস্থা যেমন সি.জেড.এ – এই একটি ব্যাপারে একমত যে আলিপুর চিড়িয়াখানা অত্যন্ত জনাকীর্ণ, একটি চিড়িয়াখানার জন্য প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রচন্ড রকমের অভাব রয়েছে এবং তাই সি.জেড.এ-র নিয়ম অনুযায়ী পুরাতন প্রাণী পরিবেষ্টন ভেঙে নতুন ভাবে চিড়িয়াখানার সম্পূর্ণ পুনর্গঠন করা খুবই প্রয়োজন। সরকার আলিপুর চিড়িয়াখানা থেকে কিছু পশুদের স্থানান্তর করে ভগবানপুরে একটি উপগ্রহ চিড়িয়াখানা তৈরির উপর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছেন।
আলিপুর চিড়িয়াখানা, যা একদা ভারতের বৃহত্তম ও প্রাচীনতম প্রথাগত রাজ্য জুওলোজিক্যাল পার্ক, যা “বন্দী প্রজননের” বিশেষজ্ঞ ছিল, তা কলকাতার জন্য আজ একটি লজ্জার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতীতের সেই গৌরবময় ঐতিহ্যবাহী চিড়িয়াখানা পুনঃস্থাপনে সরকার এবং সি. জেড.এ. এবং অন্যান্য মিত্র সংস্থার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত, কারণ এক সময়ের এই জনপ্রিয় চিড়িয়াখানা অযোগ্যতার কারনে ধ্বংস হয়ে যেতে দেখা সত্যিই এক দুঃখজনক ব্যাপার হবে।
বিরল এবং সাধারণ প্রাণী উভয়ের আধিক্য ছাড়াও, এই চিড়িয়াখানায় একটি সরীসৃপ ঘর, ক্যালকাটা আ্যকোরিয়াম এবং শিশুদের জন্য আরও একটি পৃথক চিড়িয়াখানা ছিল। এই চিড়িয়াখানার সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রাণীগুলি ছিল আফ্রিকান সিংহ, রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, চিতা বাঘ, ভারতের শ্রেষ্ঠ এক শৃঙ্গ গণ্ডার, জিরাফ, জেব্রা, জলহস্তী, ভারতীয় হাতি, উট এবং জায়ান্ট এলান্ড। এই চিড়িয়াখানায় এছাড়াও একটি পক্ষিশালা ছিল যেখানে কিছু বিরল প্রজাতির পাখি; যেমন – আমেরিকার কাকাতুয়া প্রজাতির বড় তোতা, কনুর, টুরাকস, লরি,লরিকিটস, হর্নবিলস্ এবং বিভিন্ন অ-উড়ন্ত প্রজাতির পাখি, যেমন – ফিসান্টস, উটপাখি এবং এমু দেখা যেত।
এখানে উপস্থিত বড় জলাশয়টি শীতকালে পরিযায়ী পাখিদের জন্য একটি আশ্রয়স্থল ছিল, যা বন্য প্রাণী এবং পক্ষি ফটোগ্রাফারদের জন্য একটি লোভনীয় দৃশ্য হিসাবে প্রমানিত। এটি অদ্বৈত-এর একটি আশ্রয়স্থল, যা হল ২৫০ বছর বয়সী আলবাড্রার একটি দৈত্য কচ্ছপ। কিংবদন্তি আছে যে এই কচ্ছপটি সিসিলির লর্ড ক্লাইভের একটি ব্যক্তিগত সমষ্টি এবং ব্রিটিশ নাবিকগণদের মাধ্যমে ১৮৭৫ সালে, এটি আলিপুর চিড়িয়াখানায় এসে পৌঁছায়।
কিন্তু এগুলি হাজার হাজার বছর আগের কথা। আলিপুর চিড়িয়াখানার বর্তমান ভগ্নাবশেষ, যা একদা প্রাচীনতম এবং ভারতের বৃহত্তম প্রথাগত জুওলোজিক্যাল পার্ক ছিল, বর্তমানে পর্যাপ্তরূপে প্রতিপালিত হয় না। এই চিড়িয়াখানার বসবাসকারীদের জীবনযাত্রার অবস্থা কুখ্যাত দক্ষিণ আমেরিকান কারাগারের বন্দীদের চেয়েও অনেক বেশী খারাপ। হাস্যকর ভাবে, যেই চিড়িয়াখানা একদা পশুদের “বন্দী প্রজনন” বিশিষ্টতার জন্য বিখ্যাত ছিল সেই চিড়িয়াখানার প্রাণীদের মৃত্যুর হার ক্রমশ বেড়ে চলেছে। চেক প্রজাতন্ত্র থেকে আমদানি করা দুটি লাল ক্যাঙ্গারু সম্প্রতি মারা গেছে এবং চিড়িয়াখানার কর্মকর্তারা এটা দাবী করছে যে, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যায় এদের মৃত্যু ঘটেছে।
এই পশু মৃত্যুর ঘটনায় পেটা (পি.ই.টি.এ) অসন্তুষ্ট হয়েছেন এবং অযোগ্যতার দরুন এই চিড়িয়াখানা বন্ধ করার আদেশ দিয়েছেন। গত বছরেও একটি লাল ক্যাঙ্গারুর মৃত্যুকে অনুসরণ করে এই আদেশ দেওয়া হয়েছে। একটি সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী জানা গেছে যে, আলিপুর চিড়িয়াখানায় প্রাণীদের মোট মৃতের সংখ্যা ৬৭ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তার মধ্যে পাখি হল ৩০-টি ও সরীসৃপ ২০-টি এবং দুটি নবজাত মারমোসেট, ২০১১ সালের আগস্ট মাসে গড় মৃত্যুর হার হয়ে দাঁড়িয়েছিল ৮ মাসে ৮-টি।
বিগত ১৮ মাসে মোট ৪-টি শিম্পাঞ্জির মৃত্যু ঘটেছে। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ দ্বারা জানা গেছে যে, এই সময় সিংহ এবং বাঘেরও মৃত্যু ঘটেছে। চিড়িয়াখানার এক কর্মকর্তা বলেছেন যে “হতে পারে মৃত্যুর সংখ্যা বেশী কিন্তু অধিকাংশ মৃত্যুই বয়স সংক্রান্ত এবং অত্যন্ত স্বাভাবিক”। চিড়িয়াখানার পরিচালক শ্রীমান এম.সিংঘাল-এর একটি প্রাতিষ্ঠানিক রিপোর্ট এখনও মুলতুবী রয়েছে।
উচ্চহারে প্রাণী মৃত্যুর অনেক কারন আছে কিন্তু বেশিরভাগই ক্ষত বা সংক্রমণের কারনে হয়েছে। প্রথমত, চিড়িয়াখানার প্রাণীগুলি একটি অত্যন্ত অপরিচ্ছন্ন এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বাস করে। এমনকি তাদের যে খাবার এবং জল সরবরাহ করা হয় তা অত্যন্ত খারাপ মানের। সঠিক খাদ্য এবং পানীয় জল এবং অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপনের জন্য এখানকার প্রাণীদের মধ্যে প্রায়শই সংক্রমণ ঘটে। এমনকি পশুচিকিৎসকের কোন চিহ্ন পর্যন্ত সেখানে নেই। এই সব কারনেই চিড়িয়াখানার স্বাস্থ্য পরিকাঠামো শোচনীয় হয়ে গেছে। দ্বিতীয়ত, চিড়িয়াখানার রক্ষণাবেক্ষণ দল প্রাণীদের জন্য সামান্য সহানুভূতিও প্রদর্শন করেনা এবং বাস্তবে পশুদের আচরণ বোঝার কোন জ্ঞানও তাদের নেই। লাল ক্যাঙ্গারুর মৃত্যু, চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের অবহেলার একটি উদাহরণ।
কারণ – চিড়িয়াখানা রক্ষণাবেক্ষণ দলের কোন সদস্যদেরই ক্যাঙ্গারু প্রতিপালন করার যথাযথ প্রশিক্ষণ নেই। তৃতীয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণটি অবশ্যই হল জায়গার সমস্যা। বেশিরভাগ লোহার এই খাঁচাগুলি ঔপনিবেশিক যুগের। বাঘ ও সিংহরা এই গুহার মধ্যে ঢুকতে বাধা পায়, যার অর্থ হল এদের চেয়ে ছোট আকারের চিতাবাঘেরা এখানে ঢুকতে পারে।
২০০৯ সালে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের একটি বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, “একটি বড় চিড়িয়াখানায় ৭৫-টি প্রজাতির ৭৫০-টি পশুদের জন্য ৭৫ হেক্টর জমি থাকতে হবে বা গড়ে প্রত্যেক প্রাণীর জন্য ০.১ হেক্টর জমি থাকতে হবে”। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, আলিপুর চিড়িয়াখানা প্রাণী প্রতি শুধুমাত্র ০.০১৩ হেক্টর স্থান প্রদান করতে পারে, যা নির্ধারিত স্থানের কেবলমাত্র এক দশমাংশ। একটি আদর্শ আকারের চিড়িয়াখানা হিসাবে এই চিড়িয়াখানার স্থান সমস্যা কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ (সি.জেড.এ) স্থান নির্ণায়ক নীতির এক সরাসরি অবমাননা। সি.জেড.এ. স্থান নির্ণায়ক নীতির মতে নির্ধারিত স্থান পূরণ করতে আলিপুর চিড়িয়াখানা ১৪,০০০ বর্গ মিটার দ্বারা পিছিয়ে আছে।
এছাড়াও, প্রাণীদের গৃহসুলভ অনুভূতি প্রদান করতে প্রাণী পরিবেষ্টনী পৃথক বিশ্রামের এলাকা, আশ্রয়কেন্দ্র, পানীয় জলের কেন্দ্র দ্বারা সজ্জিত করা উচিত, কিন্তু বাস্তবে বিশেষ করে বাঘ এবং সিংহের জন্য প্রদিত নিম্নমানের পরিবেষ্টন প্রাণীদের ওঠা বসার জন্য একদমই যথেষ্ট নয়। এই স্থান মানসিক সমস্যা বৃদ্ধি করে বিশেষ করে মাংসাশী প্রাণীদের মধ্যে, বিশেষজ্ঞরা যাকে বলে অপরিবর্তনীয় আচরণ।
এছাড়াও, ফুর্তিবাজ, অসংবেদনশীল এবং অধিকাংশই মত্ত দর্শকরা চিড়িয়াখানায় তাদের এস.এল.আর. ক্যামেরা নিয়ে এসে মূর্খ মনোভাবের সঙ্গে রূক্ষভাবে পশুদের গোপনীয়তা ভঙ্গ করে, ফলস্বরূপ পশুরা আরও বেশী অন্তর্মুখী হয়ে পড়ে, বিশেষ করে মাংসাশী পশুরা। আলিপুর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ উপলব্ধি করেছেন যে, এই সময় এক সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তাই, তারা ঘোষণা করেছেন যে চিড়িয়াখানায় প্রাণী গ্রহণের এই নতুন প্রকল্পে এক উৎসাহব্যঞ্জক প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজন। এই প্রকল্পে বলা হয়েছে যে, দত্তক নেওয়া প্রাণীদের এই চিড়িয়াখানায় রাখা হবে কিন্তু দত্তক নেওয়া পিতামাতাকেই এই প্রাণী কল্যান ও দেখাশোনার সকল দায়িত্ব নিতে হবে।
অবশ্যই প্রাণীর মালিক হওয়ায় অন্যান্য খরচ ছাড়াও দত্তক নেওয়া পিতামাতাকে বার্ষিক একটি বড় রকমের অর্থ দিতে হবে। এই প্রকল্পের অধীনে কিছু দিন আগে একটি জাগুয়ারকে দত্তক নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সচেতন বন্যপ্রাণী কর্মী সংস্থা যেমন সি.জেড.এ – এই একটি ব্যাপারে একমত যে আলিপুর চিড়িয়াখানা অত্যন্ত জনাকীর্ণ, একটি চিড়িয়াখানার জন্য প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রচন্ড রকমের অভাব রয়েছে এবং তাই সি.জেড.এ-র নিয়ম অনুযায়ী পুরাতন প্রাণী পরিবেষ্টন ভেঙে নতুন ভাবে চিড়িয়াখানার সম্পূর্ণ পুনর্গঠন করা খুবই প্রয়োজন। সরকার আলিপুর চিড়িয়াখানা থেকে কিছু পশুদের স্থানান্তর করে ভগবানপুরে একটি উপগ্রহ চিড়িয়াখানা তৈরির উপর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছেন।
আলিপুর চিড়িয়াখানা, যা একদা ভারতের বৃহত্তম ও প্রাচীনতম প্রথাগত রাজ্য জুওলোজিক্যাল পার্ক, যা “বন্দী প্রজননের” বিশেষজ্ঞ ছিল, তা কলকাতার জন্য আজ একটি লজ্জার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতীতের সেই গৌরবময় ঐতিহ্যবাহী চিড়িয়াখানা পুনঃস্থাপনে সরকার এবং সি. জেড.এ. এবং অন্যান্য মিত্র সংস্থার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত, কারণ এক সময়ের এই জনপ্রিয় চিড়িয়াখানা অযোগ্যতার কারনে ধ্বংস হয়ে যেতে দেখা সত্যিই এক দুঃখজনক ব্যাপার হবে।