রানী ভিক্টোরিয়া
ব্রিটিশ রাজপরিবারের ইতিহাস ১২শ’ বছরের। মাত্র আঠারো বছর বয়সে ইংল্যান্ডের সিংহাসনে বসেন ভিক্টোরিয়া। রানী ভিক্টোরিয়ার জন্ম ১৮১৯ সালের ২৪ মে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ভিক্টোরিয়ার মাতৃভাষা ইংরেজি ছিল না। তার মা ছিলেন এক জার্মান ডিউকের মেয়ে যিনি সব সময় জার্মান ভাষায় কথা বলতেন। ভিক্টোরিয়ার জন্মের পর ইংল্যান্ডে রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকারী নিয়ে জটিলতার অবসান ঘটে। ভিক্টোরিয়া ছিলেন রাজা জর্জের চতুর্থ সন্তান অ্যাডওয়ার্ডের একমাত্র মেয়ে।
কাকা চতুর্থ উইলিয়াম মারা যাওয়ার পর ১৮৩৭ সালে ভিক্টোরিয়া ইংল্যান্ডের রানী নির্বাচিত হন। অল্পবয়স্ক রানী ভিক্টোরিয়াকে সহায়তা করতে এগিয়ে এলেন ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী লর্ড মেলবোর্ন। ৫৮ বছর বয়সী বিপত্নীক মেলবোর্ন তখন দিনের ছয় ঘণ্টা রানী ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে উইন্সডোর ক্যাসেলে একান্তে সময় কাটাতেন। ১৮৩৭ সালের বসন্তে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল ভিক্টোরিয়া বিয়ে করছেন মেলবোর্নকে কিন্তু ভিক্টোরিয়া ব্যক্তিগত জার্নালে লিখেছেন মেলবোর্ন সৎ, বিশাল হৃদয়ের অধিকারী একজন মানুষ এবং খুব ভালো বন্ধুত্ব রয়েছে তাদের। তবে তাদের এই বন্ধুত্বে ফাটল ধরে যায় ১৮৩৯ সালে জার্মানি থেকে রানীর খুড়তুতো ভাই প্রিন্স আলবার্ট ইংল্যান্ডে বেড়াতে আসার পর। অল্প সময়েই রানী প্রেমে পড়ে যান জার্মান প্রিন্সের। ১৮৪০ সালের ফেব্র“য়ারিতে বিয়ে হয় দু’জনার।
১৮৩৯ সালে ইংল্যান্ডের হাউস অব কমন্সের সঙ্গে গোলমাল পাকিয়ে ১৮৪১ সালে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান লর্ড মেলবোর্ন। মেলবোর্ন ছিলেন গোঁড়াপন্থি। দেশের সামাজিক সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামানো রানীর কাজ নয়, এ কথাই সব সময় তিনি বোঝানোর চেষ্টা করতেন রানীকে। কিন্তু প্রিন্স আলবার্ট ছিলেন তার বিপরীত। ইংল্যান্ডে শিশুশ্রম বন্ধের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। ইংল্যান্ডের পরবর্তী দুই প্রধানমন্ত্রী স্যার রবার্ট পিল এবং লর্ড জন রাসেলের সঙ্গে রানীর বেশ সুসম্পর্ক ছিল। রানীও ছিলেন জনগণের হৃদয়ের কাছাকাছি।
কিন্তু রাজকর্মচারী লেডি ফ্লোরা হেস্টিংসকে ব্রিবত করতে গিয়ে একবার মহাবিপাকে পড়েছিলেন রানী। স্যার জন কনরির সঙ্গে লেডি ফ্লোরার অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে এবং ফ্লোরাকে চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা বলে ঘোষণা দেন রানী। এ অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেন ফ্লোরা। তিনি নিজেকে বারবার কুমারী বলেই দাবি করেছিলেন। কিন্তু রানী সেটা বিশ্বাস করেননি। মেডিকেল টেস্ট করার পর জানা গেল ফ্লোরা অন্তঃসত্ত্বা নন, লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত।
লিভারে টিউমার থাকার কারণেই বাইরে থেকে অন্তঃসত্ত্বা মনে হতো ফ্লোরাকে। লেডি ফ্লোরার মৃত্যুর পর ব্রিটেনের বিভিন্ন পত্রিকায় তাকে এভাবে অপমানিত করার এ ঘটনা ফাঁস হয়ে গেলে রানীর বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের জনগণের মধ্যে দেখা দেয় অসন্তোষ। শূন্যের কোটায় নেমে আসে রানীর জনপ্রিয়তা। এ ঘটনার পর লন্ডনের রাস্তায় প্রথমবারের মতো আততায়ী হামলার শিকার হন তিনি।
এদিকে ১৮৫৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পুরো ভারতীয় উপমহাদেশ দখল করে নেয়ার পর ১৮৭৭ সালে ভারতবর্ষ সরাসরি ইংল্যান্ডের অধীনে চলে আসে। আর ‘ভারতসম্রাজ্ঞী’ উপাধি দেয়া হয় ভিক্টোরিয়াকে। যে কারণে গোটা উপমহাদেশে রানী ভিক্টোরিয়া হয়ে উঠেছিলেন সুপরিচিত। শুধু ভারতবর্ষই নয়, ইংল্যান্ডের ঔপনিবেশিক আগ্রাসী শাসনের কারণে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও আফ্রিকা মহাদেশের বিশাল অংশ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।
এ বিশাল সাম্রাজ্যের শাসনভার তার হাতে থাকায় ভিক্টোরিয়া রানী থেকে হয়ে পড়েন মহারানী। তখন ইউরোপের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে একেবারেই মাথা ঘামায়নি ইংল্যান্ড। একের পর এক ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বৃদ্ধি করে চলছিল সাম্রাজ্যের সীমানা। রানী ভিক্টোরিয়ার শাসনামলেই শিল্প বিপ্লবের বিশাল প্রসার ঘটেছিল ইংল্যান্ডের ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়া দেশগুলোতে।
১৮৬১ সালের ডিসেম্বরে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যান রানী ভিক্টোরিয়ার স্বামী প্রিন্স আলবার্ট। স্বামীর মৃত্যুর কিছুদিন পর জন ব্রাউন নামের এক স্কটিশ ভৃত্যের সঙ্গে বেশ অন্তরঙ্গ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি।
১৮৬৮ সালে ইংল্যান্ডের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী উইলিয়াম গ্লাডস্টোনের সঙ্গে ভিক্টোরিয়ার ক্ষমতার দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছিল। রানীর তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও ১৮৭২ সালে সিক্রেট ব্যালট অ্যাক্ট এবং ১৮৮৪ সালে রিফর্ম অ্যাক্ট পাস হয়েছিল ইংল্যান্ডে। দেশের পররাষ্ট্রনীতি নিয়েও প্রধানমন্ত্রী গ্লাডস্টোনের সঙ্গে রানী জড়িয়ে পড়েছিলেন বিরোধে। এত কিছুর পরও ১৮৮৭ সালে তার শাসনক্ষমতার ৫০ বছর পূর্তি এবং ১৮৯৭ সালে ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল ইংল্যান্ডজুড়ে। রানীর প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদা থেকে তাকে বঞ্চিত হতে হয়নি কখনো।
১৯০১ সালের ২২ জানুয়ারি তিনি অসবর্ন হাউসে পরলোকগমন করেন।
কাকা চতুর্থ উইলিয়াম মারা যাওয়ার পর ১৮৩৭ সালে ভিক্টোরিয়া ইংল্যান্ডের রানী নির্বাচিত হন। অল্পবয়স্ক রানী ভিক্টোরিয়াকে সহায়তা করতে এগিয়ে এলেন ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী লর্ড মেলবোর্ন। ৫৮ বছর বয়সী বিপত্নীক মেলবোর্ন তখন দিনের ছয় ঘণ্টা রানী ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে উইন্সডোর ক্যাসেলে একান্তে সময় কাটাতেন। ১৮৩৭ সালের বসন্তে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল ভিক্টোরিয়া বিয়ে করছেন মেলবোর্নকে কিন্তু ভিক্টোরিয়া ব্যক্তিগত জার্নালে লিখেছেন মেলবোর্ন সৎ, বিশাল হৃদয়ের অধিকারী একজন মানুষ এবং খুব ভালো বন্ধুত্ব রয়েছে তাদের। তবে তাদের এই বন্ধুত্বে ফাটল ধরে যায় ১৮৩৯ সালে জার্মানি থেকে রানীর খুড়তুতো ভাই প্রিন্স আলবার্ট ইংল্যান্ডে বেড়াতে আসার পর। অল্প সময়েই রানী প্রেমে পড়ে যান জার্মান প্রিন্সের। ১৮৪০ সালের ফেব্র“য়ারিতে বিয়ে হয় দু’জনার।
১৮৩৯ সালে ইংল্যান্ডের হাউস অব কমন্সের সঙ্গে গোলমাল পাকিয়ে ১৮৪১ সালে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান লর্ড মেলবোর্ন। মেলবোর্ন ছিলেন গোঁড়াপন্থি। দেশের সামাজিক সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামানো রানীর কাজ নয়, এ কথাই সব সময় তিনি বোঝানোর চেষ্টা করতেন রানীকে। কিন্তু প্রিন্স আলবার্ট ছিলেন তার বিপরীত। ইংল্যান্ডে শিশুশ্রম বন্ধের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। ইংল্যান্ডের পরবর্তী দুই প্রধানমন্ত্রী স্যার রবার্ট পিল এবং লর্ড জন রাসেলের সঙ্গে রানীর বেশ সুসম্পর্ক ছিল। রানীও ছিলেন জনগণের হৃদয়ের কাছাকাছি।
কিন্তু রাজকর্মচারী লেডি ফ্লোরা হেস্টিংসকে ব্রিবত করতে গিয়ে একবার মহাবিপাকে পড়েছিলেন রানী। স্যার জন কনরির সঙ্গে লেডি ফ্লোরার অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে এবং ফ্লোরাকে চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা বলে ঘোষণা দেন রানী। এ অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেন ফ্লোরা। তিনি নিজেকে বারবার কুমারী বলেই দাবি করেছিলেন। কিন্তু রানী সেটা বিশ্বাস করেননি। মেডিকেল টেস্ট করার পর জানা গেল ফ্লোরা অন্তঃসত্ত্বা নন, লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত।
লিভারে টিউমার থাকার কারণেই বাইরে থেকে অন্তঃসত্ত্বা মনে হতো ফ্লোরাকে। লেডি ফ্লোরার মৃত্যুর পর ব্রিটেনের বিভিন্ন পত্রিকায় তাকে এভাবে অপমানিত করার এ ঘটনা ফাঁস হয়ে গেলে রানীর বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের জনগণের মধ্যে দেখা দেয় অসন্তোষ। শূন্যের কোটায় নেমে আসে রানীর জনপ্রিয়তা। এ ঘটনার পর লন্ডনের রাস্তায় প্রথমবারের মতো আততায়ী হামলার শিকার হন তিনি।
এদিকে ১৮৫৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পুরো ভারতীয় উপমহাদেশ দখল করে নেয়ার পর ১৮৭৭ সালে ভারতবর্ষ সরাসরি ইংল্যান্ডের অধীনে চলে আসে। আর ‘ভারতসম্রাজ্ঞী’ উপাধি দেয়া হয় ভিক্টোরিয়াকে। যে কারণে গোটা উপমহাদেশে রানী ভিক্টোরিয়া হয়ে উঠেছিলেন সুপরিচিত। শুধু ভারতবর্ষই নয়, ইংল্যান্ডের ঔপনিবেশিক আগ্রাসী শাসনের কারণে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও আফ্রিকা মহাদেশের বিশাল অংশ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।
এ বিশাল সাম্রাজ্যের শাসনভার তার হাতে থাকায় ভিক্টোরিয়া রানী থেকে হয়ে পড়েন মহারানী। তখন ইউরোপের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে একেবারেই মাথা ঘামায়নি ইংল্যান্ড। একের পর এক ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বৃদ্ধি করে চলছিল সাম্রাজ্যের সীমানা। রানী ভিক্টোরিয়ার শাসনামলেই শিল্প বিপ্লবের বিশাল প্রসার ঘটেছিল ইংল্যান্ডের ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়া দেশগুলোতে।
১৮৬১ সালের ডিসেম্বরে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যান রানী ভিক্টোরিয়ার স্বামী প্রিন্স আলবার্ট। স্বামীর মৃত্যুর কিছুদিন পর জন ব্রাউন নামের এক স্কটিশ ভৃত্যের সঙ্গে বেশ অন্তরঙ্গ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি।
১৮৬৮ সালে ইংল্যান্ডের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী উইলিয়াম গ্লাডস্টোনের সঙ্গে ভিক্টোরিয়ার ক্ষমতার দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছিল। রানীর তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও ১৮৭২ সালে সিক্রেট ব্যালট অ্যাক্ট এবং ১৮৮৪ সালে রিফর্ম অ্যাক্ট পাস হয়েছিল ইংল্যান্ডে। দেশের পররাষ্ট্রনীতি নিয়েও প্রধানমন্ত্রী গ্লাডস্টোনের সঙ্গে রানী জড়িয়ে পড়েছিলেন বিরোধে। এত কিছুর পরও ১৮৮৭ সালে তার শাসনক্ষমতার ৫০ বছর পূর্তি এবং ১৮৯৭ সালে ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল ইংল্যান্ডজুড়ে। রানীর প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদা থেকে তাকে বঞ্চিত হতে হয়নি কখনো।
১৯০১ সালের ২২ জানুয়ারি তিনি অসবর্ন হাউসে পরলোকগমন করেন।