ইংরেজি নতুন বছর শুরুর ইতিহাস
জানুয়ারির ১ তারিখে নববর্ষ উদযাপন করার রীতিকে মোটামুটি নতুনই বলা চলে। কারণ বেশীদিন হয় নি যখন থেকে এই তারিখ সর্বজনীনভাবে নববর্ষ হিসেবে গৃহীত হয়ে আসছে। এই রীতিটি এসেছে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার হতে যেখানে বছরের শুরু হয় জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে। বিশ্বের যেসকল দেশ এই ক্যালেন্ডারকে সিভিল ক্যালেন্ডার হিসেবে গ্রহণ করেছে, তারা সবাই ইংরেজি নববর্ষ পালন করে থাকে।
ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ সালে জুলিয়াস সিজার সর্বপ্রথম ইংরেজী নববর্ষ উৎসবের প্রচলন করেন। সাধারণভাবে প্রাচীন পারস্যের পরাক্রমশালী সম্রাট জমশীদ খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ সালে এই নওরোজের প্রবর্তন করেছিল এবং এ ধারাবাহিকতা এখনো পারস্যে নওরোজ ঐতিহ্যগত নববর্ষের জাতীয় উৎসব পালিত হয়।পারস্য হতেই ইহা একটি সাধারণ সংস্কৃতির ধারা বহিয়া মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম দেশ এবং ভারত উপমহাদেশে প্রবেশ করে।
মেসোপটেমিয়ায় এই নববর্ষ শুরু হতো নতুন চাঁদের সঙ্গে। ব্যাবিলনিয়ায় নববর্ষ শুরু হতো মহাবিষুবের দিনে ২০ মার্চ। অ্যাসিরিয়ায় শুরু হতো জলবিষূবের দিনে ২১ সেপ্টেম্বর। মিসর, ফিনিসিয়া ও পারসিকদের নতুন বছর শুরু হতো ২১ সেপ্টেম্বর। গ্রীকদের নববর্ষ শুরু হতো খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দী পর্যন্ত ২১ ডিসেম্বর। রোমান প্রজাতন্ত্রের পঞ্জিকা অনুযায়ী নববর্ষ শুরু হতো ১ মার্চ। এবং খ্রিস্টপূর্ব ১৫৩-এর পরে ১লা জানুয়ারিতে। ইহুদীদের নববর্ষ বা রোশ হাসানা শুরু হয় তিসরি মাসের প্রথম দিন। গোঁড়া ইহুদীদের মতে সেই মাসের দ্বিতীয় দিন মোটামুটি ভাবে তিসরি মাস হচ্ছে ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর।
মধ্যযুগে ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে নববর্ষ শুরু হতো ২৫ মার্চ, তারা ধারণা করতো, এদিন দেবদূত গ্যাব্রিয়েল যিশুমাতা মেরির কাছে যিশু খ্রিস্টের জন্মবার্তা জ্ঞাপন করে। অ্যাংলো-স্যাকসন ইংল্যান্ডে নববর্ষের দিন ছিল ২৫ ডিসেম্বর। ১লা জানুয়ারি পাকাপোক্তভাবে নববর্ষের দিন হিসেবে নির্দিষ্ট হয় ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের পর। ধীরে ধীরে শুধু ইউরোপে নয় সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ পালন করা হচ্ছে।
ইংরেজি সাল গণনার বিষয়টা ইংরেজদের আবিষ্কার নয়। তাই এটি ইংরেজি নববর্ষ নয়। এটি খৃষ্টীয় বা গ্রেগরিয়ান নববর্ষ। ইংরেজরা ১৭৫২ সালে ১জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসাবে গ্রহণ করে। তার ২৩০ বছর আগে অর্থাৎ ১৫২২ সালে ভেনিসে ১ জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসেবে গ্রহণ করা হয়। স্পেন ও পর্তুগাল ইংরেজ তথা বৃটিশদের ১৯৬ বছর আগেই ১ জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসেবে গ্রহণ করে। সেই বিবেচনায় কোন মতেই ১ জানুয়ারি ইংরেজি নববর্ষ হতে পারে না। বরং আজকের ১জানুয়ারি খৃস্টানদের গ্রেগরিয়ান নববর্ষ।
তবে অনেক দেশই ক্যালেন্ডারটি গ্রহণ করার পূর্বে নববর্ষের রীতিটি গ্রহণ করেছে। যেমন, ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে স্কটল্যান্ড এবং ১৭৫২ সাল থেকে ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং ব্রিটিশ কলোনিগুলো নববর্ষের রীতি অনুসরণ করতে শুরু করে। কিন্তু তারা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সাথে পরিচিত হয় ঐ বছরের সেপ্টেম্বরে!
বুঝতেই পারছো বন্ধুরা নববর্ষ মানে নতুন বছর। সময়ের হিসাবে একটি বছর শেষ হয়ে নতুন বছর শুরু হতে যাচ্ছে। তো আমরা কেন নতুন বছর বলছি। সময় তো সময়ের মতোই গড়িয়ে যাচ্ছে। দিন যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। তাহলে বন্ধুরা জেনে নেয়া যাক কীভাবে কখন থেকে আমরা সময়ের হিসেব করে নতুন বছর শুরু হলো বুঝলাম। জেনে নেয়া যাক বর্ণিল উৎসাহে পালন করা ইংরেজি নববর্ষের ইতিহাস।
মানুষ সূর্য দেখে সময় হিসেব করতো । কিংবা বলা যায় তারও আগে মানুষ বুঝতই না সময় আসলে কী। ধারণাটা আসে চাঁদের হিসাব থেকে। অর্থাৎ চাঁদ ওঠা এবং ডুবে যাওয়ার হিসাব করে মাস এবং তারপর বছরের হিসাব। জানা যায়, প্রথম মিশরীয়রা সূর্য দেখে বছর হিসাব করতে শিখলো। যাকে তারা সৌরবর্ষ নাম দিল। কিন্তু সমস্যা হলো সূর্য দেখে হিসাব আর চন্দ্র দেখে হিসাবের অনেক পার্থক্য থাকতো। কিন্তু বছর গুনলে কী হবে তার হিসাব রাখা জরুরি। তাই সুমেরীয়রা বর্ষপঞ্জিকা আবিষ্কার করলো। যাকে ক্যালেন্ডার বলি।
এরপর গ্রিকদের কাছ থেকে বর্ষপঞ্জিকা পেয়েছিল রোমানরা। তারা কিন্তু ১২ মাসে বছর গুণতো না। তাদের বছরে ছিল ১০ মাস গোনা হতো। রোমানরা বছর হিসাব করতো তিনশো চার দিন। তারা মার্চের ১ তারিখে নববর্ষ উৎযাপনের রীতি চালু করে। পরবর্তীতে রোমের সম্রাট নুমা জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস দুটিকে ক্যালেন্ডারের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি ‘মারসিডানাস’ নামে আরও একটি মাস যুক্ত করেন রোমান বর্ষপঞ্জিকায়। তখন থেকে রোমানরা ১ জানুয়ারি নববর্ষ পালন করতে শুরু করে।
১৫৩ খ্রিস্টপূর্বে প্রথম রোমানরা ১ জানুয়ারি নববর্ষ পালন করেছিল। ঘটা করে ১ জানুয়ারি নববর্ষ পালন শুরু হয় সম্রাট জুলিয়াস সিজারের সময় থেকে। খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ অব্দে সম্রাট জুলিয়াস সিজার একটি নতুন বর্ষপঞ্জিকার প্রচলন ঘটান। রোমানদের আগের বর্ষপঞ্জিকা ছিল চন্দ্রবর্ষের, সম্রাট জুলিয়াসেরটা হলো সৌরবর্ষের।
রোমানদের দরজা ও ফটকের দেবতা ছিলেন জানুস। তার নামের সঙ্গে মিলিয়ে জানুয়ারি মাসের নাম হওয়ায় জুলিয়াস ভাবলেন নতুন বছরের ফটক হওয়া উচিত জানুয়ারি মাস। সেজন্য জানুয়ারির ১ তারিখে নববর্ষ পালন শুরু হলো। আর পরে জুলিয়াস সিজারের নামানুসারে প্রাচীন কুইন্টিলিস মাসের নাম পাল্টে রাখা হয় জুলাই। আরেক বিখ্যাত রোমান সম্রাট অগাস্টাসের নামানুসারে সেক্সটিনিস মাসের নাম হয় অগাস্ট।
যিশুখ্রিস্টের জন্ম বছর থেকে গণনা করে ডাইওনিসিয়াম এক্সিগুয়াস নামক এক খ্রিস্টান পাদ্রি ৫৩২ অব্দ থেকে সূচনা করেন খ্রিস্টাব্দের। ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দের কথা। রোমের পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি জ্যোতির্বিদদের পরামর্শ নিয়ে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার সংশোধন করেন। এরপর ওই সালেই অর্থাৎ ১৫৮২ তে গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডারে ১ জানুয়ারিকে আবার নতুন বছরের প্রথম দিন বানানো হয়।
বিভিন্ন সূত্রমতে, আধুনিক বিশ্বে নববর্ষ হিসেবে পহেলা জানুয়ারিকে প্রচলিত করার ব্যাপারে “রিপাবলিক অফ ভেনিস” (দেশটি ১৭৯৭ সালে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারণ তারা ১৫২২ সাল হতে এ দিনকে বছরের প্রথম দিন হিসেবে গণনা করতে শুরু করে। এরপর ১৫৫৬ সালে স্পেন, পর্তুগাল; ১৫৫৯ থেকে প্রুশিয়া, সুইডেন; ১৫৬৪ তে ফ্রান্স; ১৭০০ সাল হতে রাশিয়া এই রীতি অনুসরণ শুরু করে।
ব্যতিক্রম সব জায়গাতেই আছে। যেমনঃ ইসরায়েল। এই দেশটি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে থাকলেও ইংরেজি নববর্ষ পালন করে না। কারণ বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী অযিহুদী উৎস হতে উৎপন্ন এই রীতি পালনের বিরোধিতা করে থাকে। আবার কিছু কিছু দেশ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারকে গ্রহণ করে নি। যেমনঃ সৌদি আরব, নেপাল, ইরান, ইথিওপিয়া এবং আফগানিস্তান। এসব দেশও ইংরেজি নববর্ষ পালন করে না।
প্রথম রোমান ক্যালেন্ডারটি ছিলো চন্দ্রকেন্দ্রিক এবং এতে মাস ছিলো দশটি। এই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বছরের প্রথম মাসটি ছিলো মার্চ। তাই তখন মার্চের ১ তারিখকে বছর শুরুর দিন হিসেবে উদযাপন করা হতো। ৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমের রাজা নুমা পম্পিলিয়াস এই ক্যালেন্ডারে নতুন দুটি মাস যুক্ত করেন – জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি। এরপর বছরের প্রথম মাস মার্চ হতে জানুয়ারিতে পরিবর্তন করা হয়।
তবে জানুয়ারির ১ তারিখকে নববর্ষ হিসেবে চালু করতে বেশ সময় লাগে। এটি প্রথম চালু হয় ১৫৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, রোমে। তখন এটি অনিয়মিতভাবে পালিত হতো। কারণ তখনো বিভিন্ন স্থানে জনগণ মার্চের ১ তারিখকে নতুন বছরের প্রথম দিন হিসেবে ব্যবহার করতো। কিন্তু ৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমসম্রাট জুলিয়াস সিজার যখন সূর্যকেন্দ্রিক জুলিয়ান ক্যালেন্ডার চালু করেন, তখন জানুয়ারির ১ তারিখকেই নববর্ষের প্রথম দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। মূলত তখন থেকেই এই রীতি ছড়িয়ে পড়ে।
মধ্যযুগের ইউরোপে চার্চ কর্তৃক জানুয়ারির ১ তারিখ নিয়ে শুরু হয় হাঙ্গামা। এটি একটি প্যাগানীয় এবং অখ্রিস্টান কৃষ্টি বলে রব উঠে। জের হিসেবে ৫৬৭ খ্রিস্টাব্দে পহেলা জানুয়ারিকে নববর্ষের প্রথম দিন হিসেবে বর্জন করা হয়। মধ্যযুগীয় খ্রিস্টান অধ্যুষিত ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে যীশুখ্রিস্টের জন্মদিনের দিন (২৫ ডিসেম্বর) কিংবা পহেলা মার্চ বা ২৫ মার্চ (যেদিন স্বর্গদূত গ্যাব্রিয়েল কুমারী মেরীকে দর্শন দিয়ে বলেছিলেন, তিনি ঈশ্বরপুত্রের জন্ম দিতে যাচ্ছেন) অথবা ইস্টার সানডের দিনকেই বেছে নেওয়া হয়েছিলো বছর শুরুর দিন হিসেবে।
ইউরোপের কাহিনীর পরও ছাড়া ছাড়া ভাবে পহেলা জানুয়ারিতে উদযাপিত হচ্ছিলো নববর্ষ। তবে এই ছাড়া ছাড়া ভাব দূর করে স্থায়ীভাব আনার জন্য ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার জানুয়ারির ১ তারিখকে আবারো বছরের প্রথমদিন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। ১৫৮২ সালে পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী কর্তৃক সংশোধিত “জুলিয়ান ক্যালেন্ডার”ই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার হিসেবে পরিচিত। সাথে সাথেই অধিকাংশ ক্যাথলিক দেশ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারকে সিভিল ক্যালেন্ডার হিসেবে গ্রহণ করে নেয়। কিন্তু প্রোট্যাস্টান্ট দেশগুলো একে ধীরে ধীরে গ্রহণ করে।
নিউ ইয়ার রেজোল্যুশনঃ এই বিষয়টি পাশ্চাত্য বিশ্বে একটি প্রচলিত ব্যাপার হলেও ইদানীং প্রায় সব জায়গাতে পালন করতে দেখা যায়। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী প্রথা যেখানে ব্যক্তি আত্ম-উন্নয়নের জন্য নববর্ষের দিন বিভিন্ন প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করে।
ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ সালে জুলিয়াস সিজার সর্বপ্রথম ইংরেজী নববর্ষ উৎসবের প্রচলন করেন। সাধারণভাবে প্রাচীন পারস্যের পরাক্রমশালী সম্রাট জমশীদ খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ সালে এই নওরোজের প্রবর্তন করেছিল এবং এ ধারাবাহিকতা এখনো পারস্যে নওরোজ ঐতিহ্যগত নববর্ষের জাতীয় উৎসব পালিত হয়।পারস্য হতেই ইহা একটি সাধারণ সংস্কৃতির ধারা বহিয়া মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম দেশ এবং ভারত উপমহাদেশে প্রবেশ করে।
মেসোপটেমিয়ায় এই নববর্ষ শুরু হতো নতুন চাঁদের সঙ্গে। ব্যাবিলনিয়ায় নববর্ষ শুরু হতো মহাবিষুবের দিনে ২০ মার্চ। অ্যাসিরিয়ায় শুরু হতো জলবিষূবের দিনে ২১ সেপ্টেম্বর। মিসর, ফিনিসিয়া ও পারসিকদের নতুন বছর শুরু হতো ২১ সেপ্টেম্বর। গ্রীকদের নববর্ষ শুরু হতো খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দী পর্যন্ত ২১ ডিসেম্বর। রোমান প্রজাতন্ত্রের পঞ্জিকা অনুযায়ী নববর্ষ শুরু হতো ১ মার্চ। এবং খ্রিস্টপূর্ব ১৫৩-এর পরে ১লা জানুয়ারিতে। ইহুদীদের নববর্ষ বা রোশ হাসানা শুরু হয় তিসরি মাসের প্রথম দিন। গোঁড়া ইহুদীদের মতে সেই মাসের দ্বিতীয় দিন মোটামুটি ভাবে তিসরি মাস হচ্ছে ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর।
মধ্যযুগে ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে নববর্ষ শুরু হতো ২৫ মার্চ, তারা ধারণা করতো, এদিন দেবদূত গ্যাব্রিয়েল যিশুমাতা মেরির কাছে যিশু খ্রিস্টের জন্মবার্তা জ্ঞাপন করে। অ্যাংলো-স্যাকসন ইংল্যান্ডে নববর্ষের দিন ছিল ২৫ ডিসেম্বর। ১লা জানুয়ারি পাকাপোক্তভাবে নববর্ষের দিন হিসেবে নির্দিষ্ট হয় ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের পর। ধীরে ধীরে শুধু ইউরোপে নয় সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ পালন করা হচ্ছে।
ইংরেজি সাল গণনার বিষয়টা ইংরেজদের আবিষ্কার নয়। তাই এটি ইংরেজি নববর্ষ নয়। এটি খৃষ্টীয় বা গ্রেগরিয়ান নববর্ষ। ইংরেজরা ১৭৫২ সালে ১জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসাবে গ্রহণ করে। তার ২৩০ বছর আগে অর্থাৎ ১৫২২ সালে ভেনিসে ১ জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসেবে গ্রহণ করা হয়। স্পেন ও পর্তুগাল ইংরেজ তথা বৃটিশদের ১৯৬ বছর আগেই ১ জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসেবে গ্রহণ করে। সেই বিবেচনায় কোন মতেই ১ জানুয়ারি ইংরেজি নববর্ষ হতে পারে না। বরং আজকের ১জানুয়ারি খৃস্টানদের গ্রেগরিয়ান নববর্ষ।
তবে অনেক দেশই ক্যালেন্ডারটি গ্রহণ করার পূর্বে নববর্ষের রীতিটি গ্রহণ করেছে। যেমন, ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে স্কটল্যান্ড এবং ১৭৫২ সাল থেকে ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং ব্রিটিশ কলোনিগুলো নববর্ষের রীতি অনুসরণ করতে শুরু করে। কিন্তু তারা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সাথে পরিচিত হয় ঐ বছরের সেপ্টেম্বরে!
বুঝতেই পারছো বন্ধুরা নববর্ষ মানে নতুন বছর। সময়ের হিসাবে একটি বছর শেষ হয়ে নতুন বছর শুরু হতে যাচ্ছে। তো আমরা কেন নতুন বছর বলছি। সময় তো সময়ের মতোই গড়িয়ে যাচ্ছে। দিন যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। তাহলে বন্ধুরা জেনে নেয়া যাক কীভাবে কখন থেকে আমরা সময়ের হিসেব করে নতুন বছর শুরু হলো বুঝলাম। জেনে নেয়া যাক বর্ণিল উৎসাহে পালন করা ইংরেজি নববর্ষের ইতিহাস।
মানুষ সূর্য দেখে সময় হিসেব করতো । কিংবা বলা যায় তারও আগে মানুষ বুঝতই না সময় আসলে কী। ধারণাটা আসে চাঁদের হিসাব থেকে। অর্থাৎ চাঁদ ওঠা এবং ডুবে যাওয়ার হিসাব করে মাস এবং তারপর বছরের হিসাব। জানা যায়, প্রথম মিশরীয়রা সূর্য দেখে বছর হিসাব করতে শিখলো। যাকে তারা সৌরবর্ষ নাম দিল। কিন্তু সমস্যা হলো সূর্য দেখে হিসাব আর চন্দ্র দেখে হিসাবের অনেক পার্থক্য থাকতো। কিন্তু বছর গুনলে কী হবে তার হিসাব রাখা জরুরি। তাই সুমেরীয়রা বর্ষপঞ্জিকা আবিষ্কার করলো। যাকে ক্যালেন্ডার বলি।
এরপর গ্রিকদের কাছ থেকে বর্ষপঞ্জিকা পেয়েছিল রোমানরা। তারা কিন্তু ১২ মাসে বছর গুণতো না। তাদের বছরে ছিল ১০ মাস গোনা হতো। রোমানরা বছর হিসাব করতো তিনশো চার দিন। তারা মার্চের ১ তারিখে নববর্ষ উৎযাপনের রীতি চালু করে। পরবর্তীতে রোমের সম্রাট নুমা জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস দুটিকে ক্যালেন্ডারের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি ‘মারসিডানাস’ নামে আরও একটি মাস যুক্ত করেন রোমান বর্ষপঞ্জিকায়। তখন থেকে রোমানরা ১ জানুয়ারি নববর্ষ পালন করতে শুরু করে।
১৫৩ খ্রিস্টপূর্বে প্রথম রোমানরা ১ জানুয়ারি নববর্ষ পালন করেছিল। ঘটা করে ১ জানুয়ারি নববর্ষ পালন শুরু হয় সম্রাট জুলিয়াস সিজারের সময় থেকে। খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ অব্দে সম্রাট জুলিয়াস সিজার একটি নতুন বর্ষপঞ্জিকার প্রচলন ঘটান। রোমানদের আগের বর্ষপঞ্জিকা ছিল চন্দ্রবর্ষের, সম্রাট জুলিয়াসেরটা হলো সৌরবর্ষের।
রোমানদের দরজা ও ফটকের দেবতা ছিলেন জানুস। তার নামের সঙ্গে মিলিয়ে জানুয়ারি মাসের নাম হওয়ায় জুলিয়াস ভাবলেন নতুন বছরের ফটক হওয়া উচিত জানুয়ারি মাস। সেজন্য জানুয়ারির ১ তারিখে নববর্ষ পালন শুরু হলো। আর পরে জুলিয়াস সিজারের নামানুসারে প্রাচীন কুইন্টিলিস মাসের নাম পাল্টে রাখা হয় জুলাই। আরেক বিখ্যাত রোমান সম্রাট অগাস্টাসের নামানুসারে সেক্সটিনিস মাসের নাম হয় অগাস্ট।
যিশুখ্রিস্টের জন্ম বছর থেকে গণনা করে ডাইওনিসিয়াম এক্সিগুয়াস নামক এক খ্রিস্টান পাদ্রি ৫৩২ অব্দ থেকে সূচনা করেন খ্রিস্টাব্দের। ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দের কথা। রোমের পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি জ্যোতির্বিদদের পরামর্শ নিয়ে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার সংশোধন করেন। এরপর ওই সালেই অর্থাৎ ১৫৮২ তে গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডারে ১ জানুয়ারিকে আবার নতুন বছরের প্রথম দিন বানানো হয়।
বিভিন্ন সূত্রমতে, আধুনিক বিশ্বে নববর্ষ হিসেবে পহেলা জানুয়ারিকে প্রচলিত করার ব্যাপারে “রিপাবলিক অফ ভেনিস” (দেশটি ১৭৯৭ সালে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারণ তারা ১৫২২ সাল হতে এ দিনকে বছরের প্রথম দিন হিসেবে গণনা করতে শুরু করে। এরপর ১৫৫৬ সালে স্পেন, পর্তুগাল; ১৫৫৯ থেকে প্রুশিয়া, সুইডেন; ১৫৬৪ তে ফ্রান্স; ১৭০০ সাল হতে রাশিয়া এই রীতি অনুসরণ শুরু করে।
ব্যতিক্রম সব জায়গাতেই আছে। যেমনঃ ইসরায়েল। এই দেশটি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে থাকলেও ইংরেজি নববর্ষ পালন করে না। কারণ বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী অযিহুদী উৎস হতে উৎপন্ন এই রীতি পালনের বিরোধিতা করে থাকে। আবার কিছু কিছু দেশ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারকে গ্রহণ করে নি। যেমনঃ সৌদি আরব, নেপাল, ইরান, ইথিওপিয়া এবং আফগানিস্তান। এসব দেশও ইংরেজি নববর্ষ পালন করে না।
প্রথম রোমান ক্যালেন্ডারটি ছিলো চন্দ্রকেন্দ্রিক এবং এতে মাস ছিলো দশটি। এই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বছরের প্রথম মাসটি ছিলো মার্চ। তাই তখন মার্চের ১ তারিখকে বছর শুরুর দিন হিসেবে উদযাপন করা হতো। ৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমের রাজা নুমা পম্পিলিয়াস এই ক্যালেন্ডারে নতুন দুটি মাস যুক্ত করেন – জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি। এরপর বছরের প্রথম মাস মার্চ হতে জানুয়ারিতে পরিবর্তন করা হয়।
তবে জানুয়ারির ১ তারিখকে নববর্ষ হিসেবে চালু করতে বেশ সময় লাগে। এটি প্রথম চালু হয় ১৫৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, রোমে। তখন এটি অনিয়মিতভাবে পালিত হতো। কারণ তখনো বিভিন্ন স্থানে জনগণ মার্চের ১ তারিখকে নতুন বছরের প্রথম দিন হিসেবে ব্যবহার করতো। কিন্তু ৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমসম্রাট জুলিয়াস সিজার যখন সূর্যকেন্দ্রিক জুলিয়ান ক্যালেন্ডার চালু করেন, তখন জানুয়ারির ১ তারিখকেই নববর্ষের প্রথম দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। মূলত তখন থেকেই এই রীতি ছড়িয়ে পড়ে।
মধ্যযুগের ইউরোপে চার্চ কর্তৃক জানুয়ারির ১ তারিখ নিয়ে শুরু হয় হাঙ্গামা। এটি একটি প্যাগানীয় এবং অখ্রিস্টান কৃষ্টি বলে রব উঠে। জের হিসেবে ৫৬৭ খ্রিস্টাব্দে পহেলা জানুয়ারিকে নববর্ষের প্রথম দিন হিসেবে বর্জন করা হয়। মধ্যযুগীয় খ্রিস্টান অধ্যুষিত ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে যীশুখ্রিস্টের জন্মদিনের দিন (২৫ ডিসেম্বর) কিংবা পহেলা মার্চ বা ২৫ মার্চ (যেদিন স্বর্গদূত গ্যাব্রিয়েল কুমারী মেরীকে দর্শন দিয়ে বলেছিলেন, তিনি ঈশ্বরপুত্রের জন্ম দিতে যাচ্ছেন) অথবা ইস্টার সানডের দিনকেই বেছে নেওয়া হয়েছিলো বছর শুরুর দিন হিসেবে।
ইউরোপের কাহিনীর পরও ছাড়া ছাড়া ভাবে পহেলা জানুয়ারিতে উদযাপিত হচ্ছিলো নববর্ষ। তবে এই ছাড়া ছাড়া ভাব দূর করে স্থায়ীভাব আনার জন্য ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার জানুয়ারির ১ তারিখকে আবারো বছরের প্রথমদিন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। ১৫৮২ সালে পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী কর্তৃক সংশোধিত “জুলিয়ান ক্যালেন্ডার”ই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার হিসেবে পরিচিত। সাথে সাথেই অধিকাংশ ক্যাথলিক দেশ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারকে সিভিল ক্যালেন্ডার হিসেবে গ্রহণ করে নেয়। কিন্তু প্রোট্যাস্টান্ট দেশগুলো একে ধীরে ধীরে গ্রহণ করে।
নিউ ইয়ার রেজোল্যুশনঃ এই বিষয়টি পাশ্চাত্য বিশ্বে একটি প্রচলিত ব্যাপার হলেও ইদানীং প্রায় সব জায়গাতে পালন করতে দেখা যায়। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী প্রথা যেখানে ব্যক্তি আত্ম-উন্নয়নের জন্য নববর্ষের দিন বিভিন্ন প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করে।
Nice picture for the first post at the first day of 2012!
Good day!
Superb photograph! That sun star is perfection!
Thank you for stopping by Ocala DP and for your nice comment.
A very Happy New Year to you, also!
Happy 2012!
Amazing photo! Let the sun shining your way.
Wish you a very happy New Year. A very peaceful picture to start the year, I like that. great reflection, by the way.