tag:blogger.com,1999:blog-60514421967833699042024-03-16T12:37:47.962+05:30কলকাতা রঙ্গKalyan Panjahttp://www.blogger.com/profile/00806730473428069202noreply@blogger.comBlogger324125tag:blogger.com,1999:blog-6051442196783369904.post-92047147426899641392024-03-09T20:09:00.000+05:302024-03-09T20:09:53.982+05:30মহা শিবরাত্রির ব্রত ও ইতিহাস প্রতি বছর ফাল্গুন এর রাতে মহা শিবরাত্রি পালন করা হয়। শিব চুতদর্শীর এ রাত্রিতে উপমহাদেশের লক্ষ লক্ষ নারী পুরুষ শিবের মাথায় দুধ, ডাবের জল ঢেলে এবং ফুল ও বেলপাতা দিয়ে শিবের পূজা করেন। মেয়েদের বিশ্বাস এই পূজা করলে ভাল বর পাওয়া যায়। তাই তারা ভাল বর পাওয়ার আশায় এই পূজা টা মহা ধূম ধামে করে। <br />
<br />
শিবলিঙ্গ হচ্ছে শিবের প্রতীক। শিব হলো হিন্দু সমাজের প্রধান এবং আদি দেবতা। এজন্যই বলা হয় দেবাদিদেব মহাদেব। রামায়ন যুগেরও আগে, বিভিন্ন কারণে যেখানে শিবের জটিল মূর্তি তৈরি করে পূজা করা সম্ভব হয় নি, সেখানে, অপেক্ষাকৃত নির্মান পদ্ধতি সহজ বলে শিবের প্রতীক হিসেবে শিবলিঙ্গের পূজার প্রচলন হয়।<br />
<br />
শিবলিঙ্গ বলে যেটাকে আমরা জানি বা দেখি, সেটা আসলে পুরুষ ও স্ত্রী লিঙ্গের সমষ্টি; পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীকূলের সৃষ্টির জন্য যাদের ভূমিকা অপরিহার্য। এই সৃষ্টিকার্য বর্তমানে প্রকাশ্যে লজ্জাকর ব্যাপার হলেও, প্রকৃতপক্ষে এটা অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও সম্মানের বিষয়। <br />
<br />
<img alt="শিবরাত্রি শিবলিঙ্গ" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjQu9151lZZP0SrU0N82LisyvX5b4sQwRStAnALGmhv99vRdORU4K4Q9pAf3DGL-Hu4aaXZ2_OaqOAGWTmuAgXLPe9DWfbuIKLzFB_hNLB36N9J6hgXb-FRyRTWxU5YLHLAU01_WJw1wkg/s640/Lord+shiva+Images+wallpapers+free+download+%25284%2529-733678.jpg" /><br />
<br />
মহাদেব বা শিব বলতেই আমাদের চিত্তজগৎ একটি মুর্তির উদয় হয় যিনি যোগাসনে উপবিষ্ট, বাঘের ছাল পরিহিত, ত্রিশুল ও ডমরুধারী, গলায় তার সাপ ইত্যাদি। কিন্তু এমন একটি মানুষ আমরা ছবির পাতায় এবং পাথর বা মাটির প্রতিমার মধ্যে ছাড়া তো বাস্তবে দেখতে পাই না। অথচ বহুকাল থেকেই দেশে সাড়ম্বরে শিবপূজা চলে আসছে। শিব উপাখ্যান নানাভাবে ছড়িয়ে আছে পুরাণে, গাথায়, কাব্যে, শিল্পকলায়। ভারতে এক সুবিপুল জনসমাজ শৈবকৃষ্টির অনুশীলন নিয়ে চলেছে।<br />
<br />
Kalyan Panjahttp://www.blogger.com/profile/00806730473428069202noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-6051442196783369904.post-21905243815935329622024-02-14T08:25:00.001+05:302024-02-14T08:25:54.567+05:30কিভাবে ভ্যালেন্টাইনস ডে পালন করবেনভ্যালেন্টাইন ডে'র আর বেশি বাকি নাই। প্রিয় মানুষকে খুশি রাখা কিন্তু কিভাবে? দেখে নিন কিছু ভ্যালেন্টাইন টিপস। কিভাবে প্রিয় মানুষকে খুশি রাখা যায়? বা রাখব? প্রেমিক বা প্রেমিকা এর মনের একটি প্রশ্ন। তাই নয় কি? মাঝে মাঝে উভয় পক্ষ থেকেই নার্ভাস হয়ে যায় আমি কি করব, কোনটা করব, কি ওর ভালো লাগবে, কি ওর খারাপ লাগবে, অনেক সময় ভাবতে ভাবতেই জীবন চলে যায় কিন্তু সম্পর্কটিকে আর ইনজয় করা যায়না। কেউ কেউ তো প্রপোজ করার ভয়েই আর আগাতে পারেন না পরের কেয়ারিং, খুনশুটি, মান অভিমান তো দূরের কথা। আবার কেউ কেউ দেখবেন ৫-৭ বছর কাটিয়ে দেয় অনায়েষেই। <br />
<br />
চলুন দেখা যাক ইন্টারনেটের বিভিন্ন লাভ রিলেটেড ব্লগ ঘুরে কি আনতে পারলাম আপনাদের জন্য? কিভাবে প্রিয় মানুষকে খুশি রাখা যায়? কিভাবে জীবনকে উপভোগ করা যায়? আর কিভাবেই বা তার হাতটি ধরে স্বর্গের শান্তি অনুভব করা যায়।<br />
<br />
<b>প্রপোজ করার ব্যাপারটা</b><br />
<br />
এখানে মেয়েদেরকে কনভিন্স করার একটা ব্যাপার থাকে। মেয়েরা রিলেশন করার সময় একটা নির্ভরযোগ্য মানুষকেই খোঁজে। যাকে সে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারবে। যে তার হাতটা সারা জীবনের জন্য ধরবে। তাই পছন্দের মানুষকে হুটহাট করে প্রপোজ করার চাইতে তাকে নিজের সম্পর্কে জানতে দিন। আপনার পরের স্টেপটা এমনিতেই ইজি হয়ে যায়। সেটা আপনি তার সাথে কথা বলে অথবা তার ফ্রেন্ড সার্কেলের মাধ্যমেও হতে পারে।<br />
<br />
<b>একটা ফুল হয়ে যাক</b><br />
<br />
আপনার প্রিয় মানুষটিকে যে সবসময় আপনার এক গুচ্ছ গোলাপ, অর্কিড অথবা দামি ফুলের তোড়া সাথে নিয়েই দেখা করতে হবে এমন কোন কথা নেই। পড়াশুনা বা কাজের প্রেশারে আপনি ভুলে যেতেই পারেন। কিন্তু এসময় যদি আপনি একটা ছোট ঘাসফুল বা গাছ থেকে অন্য কোন ছোট্ট ফুল ছিঁড়ে এনে তাকে দিয়ে স্যরি বলেন আপনার তাতে কোন ক্ষতি তো নেই কিন্তু এতে আপনার প্রিয় মানুষকে খুশি রাখা অনেকটা সহজ হয়ে যাবে বৈকি।<br />
<br />
<b>তাকে উৎসাহ দিন</b><br />
<br />
আপনার প্রিয় মানুষটি যখন ভালো রান্না না জানা সত্ত্বেও অনেক চেষ্টা করে আপনার জন্য কিছু রান্না করে নিয়ে আসবে তখন আপনার উচিত রান্না ভালো না হলেও তাকে একটুখানি উৎসাহ দেয়া কারণ আপনার উৎসাহই তাকে আরো অনুপ্রেরণা যোগাবে এবং ভবিষ্যতে সেটা আরো ভালো হয়ে যাবে।<br />
<br />
<b>ঝগড়ার সময় একটু কষ্ট করে হলেও মাথা ঠান্ডা রাখা</b><br />
<br />
একটা গুরুত্বপূর্ণ পার্ট হলো যখন ঝগড়া হয়। এই সময়টা খুবই বিপজ্জনক সময় মনে হয়েছে আমার কাছে। কারণ, ঝগড়াটা মিটমাট নাহলেই তো ফলফল ব্রেক আপ। ঝগড়ার সময় ২ জনই যদি রেগে যান তাহলেই বিপদ। তাই যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করবেন মাথা ঠান্ডা রাখতে। কারণ, আপনি রাগের মাথায় উল্টাপাল্টা কিছু বলে ফেলেছেন কি মরেছেন। কারন, ঝগড়া তো একসময় শেষ হবেই, কিন্তু ঝগড়ার সময় যদি তাকে কষ্ট দিয়ে কিছু বলে থাকেন সেটা সে অনেক দিন পর্যন্ত মনে রাখে এবং এটার প্রভাব কিছুটা হলেও আপনাদের রিলেশনে পড়বে।<br />
<br />
<b>একটু এগিয়ে যান</b><br />
<br />
এরপর আসে মান-অভিমানের পালা। যারই দোষ থাকুক না কেন, মেয়েদের একটা এক্সপেক্টেশন থাকে যে ফোনটা আগে ছেলেই দিবে। তার রাগটা যত্ন করে ভাঙাবে। তাকে বুঝতে চেষ্টা করবে। এরপর মেয়ের দোষ থাকলে সে নিজেই তখন ১০০ বার স্যরি বলে।<br />
<br />
<b>স্পেশাল মোমেন্টে পাশে থাকার চেষ্টা করুন</b><br />
<br />
স্পেশাল ডে যেমন বার্থ ডে, রিলেশনের অ্যানিভার্সারী, ভ্যালেনটাইন ডে অন্য দিকে দিলেও এসব ক্ষেত্রে মেয়েরা ছাড় দিতে চায় না কখনোই। এসব দিন গুলোতে তাদের কে সময় দিতেই হবে। যদি অনেক কাজ থাকে তাহলে কাজের মধ্যে কিছুটা সময় বাঁচিয়ে হলেও একটু সময় বের করে নিতে হয়। আর যদি তাও সম্ভব না হয় তাহলে অন্ততঃ তাকে আগে থেকেই ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলতে হবে যাতে যখন অন্যদের কে ঘুরতে দেখে তখন তার খারাপ না লাগে।<br />
<br />
<img alt="ভ্যালেন্টাইনস ডে" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiRc2uXk1TF5HGY652CwkCDoJIVTwXMhWgXagqZNKm66tDcYm5C8j2CqliMC1Tx0BF6nF52z-kOhRBBbcM3WF8SIyNVqyPPirUpgoB-uV9v6_IaCNjqeTqQ2hWa-yZtUpo0NzH52cl-VqNA/s1600/DSC09706.JPG" /><br />
<br />
<b>হাত না ছাড়ার মানসিকতা রাখুন</b><br />
<br />
মেয়েদের একটা কমন প্রবলেম হলো বাসা থেকে বিয়ের জন্য প্রেশার দেয়া। ঐ সময় তারা অনেক মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত থাকে। চুটিয়ে প্রেম করলেও অনেক ছেলেই ঐ সময়ে মেয়েটার দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করে। আপনি এসময় তাকে আশ্বস্ত করুন যে আপনি সবসময় তার সাথে আছেন। প্রয়োজনে তার ফ্যামিলির সাথে কথা বলে রাখতে পারেন।<br />
<br />
<b>এক মেয়ের সামনে আরেক মেয়ের প্রশংসা</b><br />
<br />
আর একটা জিনিস নিতান্তই ছেলেমানুষি লাগলেও এটা একটু মাথায় রাখলে ভালো যে আপনার গার্লফ্রেন্ডের সামনে অন্য মেয়ের প্রশংসা কম করুন।<br />
<br />
<b>গোপনীয়তা রাখুন</b><br />
<br />
অনেক ছেলেকে বা মেয়েকেই দেখি যে তাদের রিলেশনের অনেক ব্যাপার ফ্রেন্ডদের সাথে শেয়ার করে। যত ক্লোজ ফেন্ডই হোক সে আপনার। তারপরও, নিজের রিলেশনের গোপনীয়তা বজায় রাখতে চেষ্টা করুন।<br />
<br />
<b>বাড়াবাড়ি কিছুই ভালো নয়</b><br />
<br />
কখনও মেয়ের পরিবার কিংবা মেয়েটাকে নিয়ে বাজে কোন কথা মানে গালিগালাজ করা যাবে না। এমনকি গায়ে হাত তোলাও যাবে না। এটা অনেক প্রভাব ফেলে মেয়েটার মনে।Kalyan Panjahttp://www.blogger.com/profile/00806730473428069202noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-6051442196783369904.post-22267005610118928662024-02-14T08:25:00.000+05:302024-02-14T08:25:32.578+05:30১৪ ফেব্রুয়ারী ভ্যালেন্টাইন ডে - ভালবাসা দিবসের ইতিহাসষোড়শ শতাব্দী থেকে শুরু হয় আধুনিক ভ্যালেন্টাইন ডে রীতি। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের একটি নাম ভ্যালেনটাইনেস ডে। ভালোবাসা দিবসের উৎপত্তি নিয়ে অনেকের মধ্যে বিরোধ আছে। যে কাহিনীই শুনি, সেইটাকেই সত্য বলে মনে হয়। তরুণ-তরুণীরা মনের মানুষের কাছে চিঠি, এসএমএস, ভিডিও বার্তায় ভালোবাসার নিমন্ত্রণ পাঠায়। ১৯৩৬ সালের পূর্বে কাগজের কার্ডের পরিবর্তে তামার পাত বা কাঠের ফলকে খোদাই করে মনের কথা পাঠানো হতো। ইউরোপে ১৪ ফেব্রুয়ারি আসার এক সপ্তাহ পূর্ব থেকেই উৎসব শুরু হয়ে যায়।<br />
<br />
পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে এ দিবস ঘটা করেই পালন করা হয়। শিশুরা স্কুলে ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ সঙ্গীত পরিবেশন করে। বিশেষ খাবারের আয়োজন করে ইতালির অধিবাসীরা। আর কাগজের তৈরি লাল ফুল বিনিময় করে ডেনমার্কবাসী। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। রয়েছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উদযাপন পরিষদ, ‘যৌতুক নয় ভালোবাসায় জীবন গড়ি’ স্লোগান নিয়ে ১৯৯৮ সালে এ দেশে তাদের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।<br />
<br />
গত কয়েক বছর ধরে অনেক দেশে এই দিবস পালনের রীতি চালু হয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন হোক বা না হোক দিবস পালনের নিষেধাজ্ঞা চোখে পড়ে না। বরং কিছু কিছু মিডিয়া এমনভাবে অনুষ্ঠান প্রচার ও লেখালেখি করে যাতে অর্ধ-মৃত মানুষেরও ঘুম ভেঙে যায় এই দিবস পালনের তাড়নায়। কারো কারো কাছে এ দিবস যেন অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার। তারা নানাভাবে উপার্জনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।<br />
<br />
এ শুরুর ইতিহাস হিসেবে একাধিক ঘটনা জানা যায়। কোনটি সঠিক বলা মুশকিল। প্রত্যেকেই তার নিজের মতো করে ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেন। প্রাচীন রোমবাসী কুমারী মেয়েরা ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনে ভালোবাসার কাব্য লিখে মাটির পাত্রে জমা করত আর যুবকরা পাত্র থেকে একটি লেখা তুলে নিতো। যুবকের হাতে যার লেখা উঠে আসতো সেই মেয়েটিকেই সে ভালোবাসতো। (বিশ্ব দিবস)।<br />
<br />
<img alt="ভ্যালেন্টাইন ডে" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhwPTyuwTRoTX8aklm-c_KN1xtwTOZjHXBlokNkwNJnashyphenhyphen00xlnew49KMifuDxKFW6YraDYh7Mz6ZtBgbv0thz4VElKW8uLOTzDaNf5kLXM_sQq4XtPuDLVwwj01_zgYsi1v9Y6GGLg2F2/s640/Image393.jpg" /><br />
<br />
অপর একটি বর্ণনায় পাওয়া যায়, রোমান সা¤্রাজ্যে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ হওয়ার পর ধর্ম প্রচারের অভিযোগে ইতালির সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামক একজন চিকিৎসক খ্রিস্টান পাদ্রিকে তৎকালীন রোমান স¤্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস বন্দি করেন। বন্দি অবস্থায় কারারক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলার ফলে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। মেয়েটির সঙ্গে ভ্যালেন্টাইন ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। কারাবন্দি অবস্থায় সে ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়লে রাজা তাকে মৃত্যুদ- দেন (১৪ ফেব্রুয়ারি)। এরপর থেকেই খ্রিস্টান সম্প্রদায় ভ্যালেন্টাইনের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে এ দিবসটি নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালন করতে থাকে।<br />
<br />
ভ্যালেন্টাই দিবসের মতো খ্রিস্টানরা আরো অনেক দিবস পালন করে থাকে। যেমন- সেন্ট এন্ডু ডে (৩০ নভেম্বর), সেন্ট মার্টিন ডে (১১ নভেম্বর), সেন্ট বার্থেলোমিজম ডে (২৪ আগস্ট), সেন্ট জর্জ ডে (২৩ এপ্রিল), সেন্ট পথাট্রিক ডে (১৭ মার্চ)। কিন্তু উৎসবের প্রকাশভঙ্গি গির্জার চেতনাবিরোধী হয়ে পড়ায় ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ভ্যালেন্টাইন উৎসব নিষিদ্ধ হয়।<br />
<br />
আজকাল ১৪ ফেব্রুয়ারি এলেই এক শ্রেণীর প্রেমিক-প্রেমিক দু’জন দু’জনকে একান্তে পাওয়ার ইচ্ছায় নানা কিছু করে। কার্ড, ফুল, চকলেট, লটারি, বিনোদন, ডেটিং, বৈশিষ্ট্যের পার্টিতে যোগদান, নানা কিছু উপহার দেয়া, মন বিনিময়, মত বিনিময় এ দিবসের মূল লক্ষ্য। উপহারকে যে যত বেশি আকর্ষণীয় করতে পারে তার ভালোবাসা যেন ততই পূর্ণতা লাভ করে। কেউবা তার প্রেমিকাকে এভাবে বলে, পৃথিবীর সকল উপহারই তোমার কাছে তুচ্ছ। তাই তোমার জন্য আমি নিজেই জীবন্ত উপহারের উপকরণ। <br />
<br />
Kalyan Panjahttp://www.blogger.com/profile/00806730473428069202noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-6051442196783369904.post-40529755640657447072024-02-14T08:24:00.000+05:302024-02-14T08:24:31.931+05:30সরস্বতী পূজা - বিদ্যা ও সংগীতের দেবীর পূজা কেন করা হয়? বাগ্দেবী সরস্বতী হলেন জ্ঞান, সংগীত, শিল্পকলা, বুদ্ধি ও বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী হিন্দু দেবী। তিনি সরস্বতী-লক্ষ্মী-পার্বতী এই ত্রিদেবীর অন্যতম। দেবী সরস্বতীর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ঋগ্বেদে। বৈদিক যুগ থেকে আধুনিক যুগ পযন্ত তিনি হিন্দুধর্মের একজন গুরুত্বপূর্ণ দেবী। হিন্দুরা বসন্তপঞ্চমী (মাঘ মাসের শুক্লাপঞ্চমী তিথি) তিথিতে সরস্বতী পূজা করে। এই দিন ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের হাতেখড়ি হয়। বৌদ্ধ এবং পশ্চিম ও মধ্য ভারতে জৈনরাও সরস্বতীর পূজা করেন। জ্ঞান, সংগীত ও শিল্পকলার দেবী হিসেবে ভারতের বাইরে জাপান, ভিয়েতনাম, বালি (ইন্দোনেশিয়া) ও মায়ানমারেও সরস্বতী পূজার চল আছে।<br />
<br />
ধ্যানমন্ত্রে বর্ণিত মূর্তিকল্পটিতে দেবী সরস্বতীকে শ্বেতবর্ণা, শ্বেত পদ্মে আসীনা, মুক্তার হারে ভুষিতা,পদ্মলোচনা ও বীণাপুস্তকধারিণী এক দিব্য নারীমূর্তিরূপে কল্পনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে,ওঁ তরুণশকলমিন্দোর্বিভ্রতী শুভ্রকান্তিঃ কুচভরনমিতাঙ্গী সন্নিষণ্ণা সিতাব্জে। নিজকরকমলোদ্যল্লেখনীপুস্তকশ্রীঃ সকলবিভবসিদ্ধৈ পাতু বাগ্দেবতা নঃ। অর্থাৎ, “চন্দ্রের নূতন কলাধারিণী, শুভ্রকান্তি, কুচভরনমিতাঙ্গী, শ্বেত পদ্মাসনে (উত্তমরূপে) আসীনা, হস্তে ধৃত লেখনী ও পুস্তকের দ্বারা শোভমানা বাগ্দেবী সকল বিভবপ্রাপ্তির জন্য আমাদিগকে রক্ষা করুন। <br />
<br />
আবার পদ্মপুরাণ-এ উল্লিখিত সরস্বতীস্তোত্রম্-এ বর্ণিত হয়েছে, শ্বেতপদ্মাসনা দেবী শ্বেতপুষ্পোপশোভিতা।শ্বেতাম্বরধরা নিত্যা শ্বেতগন্ধানুলেপনা। শ্বেতাক্ষসূত্রহস্তা চ শ্বেতচন্দনচর্চিতা। শ্বেতবীণাধরা শুভ্রা শ্বেতালঙ্কারভূষিতা। অর্থাৎ দেবী সরস্বতী আদ্যন্তবিহীনা, শ্বেতপদ্মে আসীনা, শ্বেতপুষ্পে শোভিতা, শ্বেতবস্ত্র-পরিহিতা এবং শ্বেতগন্ধে অনুলিপ্তা। অধিকন্ত তাঁহার হস্তে শ্বেত রুদ্রাক্ষের মালা; তিনি শ্বেতচন্দনে চর্চিতা, শ্বেতবীণাধারিণী, শুভ্রবর্ণা এবং শ্বেত অলঙ্কারে ভূষিতা। ধ্যান বা স্তোত্রবন্দনায় উল্লেখ না থাকলেও সরস্বতী ক্ষেত্রভেদে দ্বিভূজা অথবা চতুর্ভূজা এবং মরালবাহনা অথবা ময়ূরবাহনা। উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে সাধারণত ময়ূরবাহনা চতুর্ভূজা সরস্বতী পূজিত হন। ইনি অক্ষমালা, কমণ্ডলু, বীণা ও বেদপুস্তকধারিণী।বাংলা তথা পূর্বভারতে সরস্বতী দ্বিভূজা ও রাজহংসের পৃষ্ঠে আসীনা।<br />
<br />
<img alt="সরস্বতী পূজা" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiwY80UqwYjUZ_n8rIJEZnEJRL7ny3rutf68X3nz44Z-Sj2I2bEehmBdtHrMUNgU6XOVWI4LF4pkXYw_AkktmRvJoZTYlrmdmfaesG1_GcZe1MxOgkHYB6WG-Df5OvnPTRiPIaB-L9QOrM/s1600/DSC_2440-772102.jpg" /><br />
<br />
অপরদিকে বিভিন্ন শাস্ত্রগন্থ অনুসারে মা সরস্বতী দেবী সাদা বসনে সজ্জ্বিত, মনের সকল মলিনতা দূর করে পুজো করতে হয়। পুজোর দিন ছাত্রছাত্রীরা সকালে পুজোর অঞ্জলি দেওয়ার জন্য সববেত হন। পুজোর পরদিন পুনরায় পুজোর পর চিড়ে ও দই মিশ্রিত করে দধিকরম্ব বা দধিকর্মা নিবেদন করা হয়। সন্ধ্যায় আরাধনা ও প্রসাদ বিতরণের মাধ্যমে মায়ের পুজো সম্পন্ন করেন। সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। এ তো গেল ভক্তিরসের দিক, এবার যাব উৎসের সন্ধানে। <br />
<br />
সরস্বতী কি দেবী? তিনি কি নদী? ভৌগোলিক দিক থেকে নিশ্চিতভাবেই বলা যাবে কি সরস্বতী নদী শতদ্রু ও যমুনা নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত ছিল ? অনুমান করা যায় যে বৈদিক সরস্বতী (আঞ্চলিক নাম সরসুতী) হরিয়ানার থানেশ্বর অঞ্চলে প্রবাহিত। ঋগ্বেদে বলা হয়েছে সপ্তথি সরস্বতী নদীগুলির মাতা (সিন্ধুমাতা) একসাথে দুগ্ধ ও স্রোতস্বিনীদের নিয়ে বিপুল গর্জনে তীব্র স্রোতে প্রভূত জলধারায় স্ফীত হয়ে প্রবাহিত। ঋগ্বেদে দুই ধরনের সরস্বতীর উল্লেখ আছে। একটি ত্রিলোক্য ব্যাপিনী সূর্যাগ্নি, অন্যটি নদী। সরস্ ধাতু তদুত্তরে অস্থর্থে বতু এবং স্ত্রী লিঙ্গে ঈপ্ প্রত্যয় যোগে নিষ্পন্ন হয়েছে সরস্বতী-এ মত স্বামী নির্মলানন্দের। আলোকময়ী বলে সর্বশুক্লা।<br />
<br />
সরস+বতী=সরস্বতী অর্থ জ্যোতিময়ী। ঋগ্বেদে এবং যর্জুবেদে অনেকবার ইড়া,ভারতী, সরস্বতীকে একসঙ্গে দেখা যায়। বেদের মন্ত্রগুলো পর্যালোচনায় প্রতীতী জন্মে যে, সরস্বতী মূলত সূর্যাগ্নি। দেবীভাগবতে সরস্বতী জ্যোতিরূপা। ভৃগুপনিষদে জ্যোতির্ময়ী সরস্বতী ও জলময়ী সরস্বতীর সমীকরণ করা হয়েছে। এই উপনিষদে জলে জ্যোতি প্রতিষ্ঠিত, জ্যোতিতে জল প্রতিষ্ঠিত। ঋগ্বেদে ইন্দ্রের সঙ্গে সরস্বতীর সম্পর্ক যেমন ঘনিষ্ঠ তেমনি ঘনিষ্ঠ মরুদ ও অশ্বিনীদ্বয়ের সঙ্গে। সরস্বতী কখনো ইন্দ্রের পত্নী আবার কখনো শত্রু,কখনো-বা ইন্দ্রের চিকিৎসক। শুক্ল যজুর্বেদে তিনি চিকিৎসক রুপে রুদ্র অশ্বিদ্বয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ততা। সরস্বতীর রোগ নিরাময় শক্তির কথা প্রবর্তী সময়েও জনশ্রুতিতে ঋগ্বেদে সরস্বতী সিন্দু ও তার পাঁচটি উপনদী নিয়ে সপ্তসিন্ধুর বারংবার উল্লেখ আর্যভূমিতে এদের অপরিসীম গুরুত্ব প্রমাণ করে।<br />
<br />
অম্বিতমে নদীতমে দেবীতমে সরস্বতী নদী হিসাবে সরস্বতীকে। সম্ভবত সরস্বতী নদীর তীরেই বৈদিক এবং ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির উদ্ভব। তাই হয়তো শিক্ষার সঙ্গে সরস্বতীর অচ্ছেদ্য বন্ধন এবং এর জন্যই পৌরাণিক যুগে সরস্বতী বিদ্যার দেবী হয়ে উঠেছেন। সরস্বতীর আর-এক নাম ভারতী। তিনি ব্রাহ্মণ বাক্ নামে পরিচিতা। দেবী সরস্বতীর সঙ্গে নদী সরস্বতীর এই একাত্মতা সম্পর্কে নানা মুনির নানা মত থাকলেও সরস্বতীকে ব্রহ্মার মানসকন্যা হিসাবে কল্পনা করা হয়। <br />
<br />
সরস্বতীর বাহন হাঁস ছাড়াও মেষ আর বরাহকে পাওয়া যায়। প্রত্নতাত্ত্বিক এন এস ভট্টসারি একটি লেখায় বলেছেন, একসময় ইন্দ্রের শরীরের শক্তি চলে যাওয়ার ফলে তিনি মেষ আকৃতি গ্রহণ করেন। সেসময় ইন্দ্রের চিকিৎসার দায়িত্ব ছিল স্বর্গের অশ্বিনীদ্বয়ের উপর এবং সেবা-শুশ্রুষার ভার ছিল সরস্বতীর হাতে। সংগীত ও নৃত্যপ্রেমী ইন্দ্র সরস্বতীর গানবাজনা ও সেবায় সুস্থ হওয়ার পর তাকে মেষটি দান করেন।<br />
<br />
উত্তর ভারত, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, নেপাল ও বাংলাদেশে সরস্বতী পূজা উপলক্ষ্যে বিশেষ উৎসাহ উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হয়। শ্রীপঞ্চমীর দিন অতি প্রত্যুষে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ছাত্রছাত্রীদের গৃহ ও সর্বজনীন পূজামণ্ডপে দেবী সরস্বতীর পূজা করা হয়। ধর্মপ্রাণ হিন্দু পরিবারে এই দিন শিশুদের হাতেখড়ি, ব্রাহ্মণভোজন ও পিতৃতরপণের প্রথাও প্রচলিত। পূজার দিন সন্ধ্যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সর্বজনীন পূজামণ্ডপগুলিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও আয়োজিত হয়। <br />
<br />
পূজার পরের দিনটি শীতলষষ্ঠী নামে পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গে কোনো কোনো হিন্দু পরিবারে সরস্বতী পূজার পরদিন অরন্ধন পালনের প্রথা রয়েছে। সরস্বতী পূজা, উভয়লোকের দেবতা, গন্ধর্ কিন্নর, ঋষি, মহর্ষি, রাজা-প্রজা সবাই শ্রদ্ধার সাথে করে আসছে। Kalyan Panjahttp://www.blogger.com/profile/00806730473428069202noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-6051442196783369904.post-36077453845596663752023-11-27T10:56:00.000+05:302023-11-27T10:56:13.357+05:30কার্তিক পুজার নির্ঘণ্টদেব সেনাপতি সুদর্শন কার্তিক একজন পৌরণিক দেবতা। তিনি শিব, মা দূর্গার পুত্র। ছয় জন মাতৃকা দেবী কৃত্তিকা তাঁকে ধাত্রীরূপে স্তন্যপান করিয়েছিলেন বলে তাঁর নাম হয় কার্তিকেয়। আমরা সংক্ষেপে বলি কার্তিক। তাঁর ভাইয়ের নাম গণেশ। দেবতা কার্তিক অত্যন্ত সুন্দর, সুঠাম দেহ এবং অসীম শক্তির অধিকারী। পুরাণে আছে তরকাসুরের আধিপত্য থেকে স্বর্গরাজ্য উদ্ধার করার জন্য স্বর্গের দেবতারা তাকে সেনাপতিরূপে বরণ করেছেন। তাঁর দেহাবরণ উত্তপ্ত স্বর্ণের মতো। এ কারণে তাঁকে ষড়ানন বলা হয়।<br />
<br />
<img src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhal1ysXIQXMtNPaSNutcZwhzf_GatF-p4TQttwKM2Ivix_o9BREagn2Bb5hajjUJMMQh8qkHXAcbu_eJKkri7ys3Bn2XONENVZQA6kkl-t7RO4YiF2eNeX7QZ3BRq4Dgtj5qAFRbh885Y/s1600/puja+2010+226-709258.jpg" /><br />
<br />
কার্তিকের ছয়টি আনন। আনন মানে মুখ। তবে তাঁর একটি মুখযুক্ত রূপই প্রচলিত। সে রূপেই তাঁকে পূজা করা হয়। যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে কার্তিকের হাতে তীর, ধনুক ও বল্লম দেখা যায়। তার বাহন সুদৃশ্য পাখি ময়ূর। কার্তিক বিভিন্ন অসুরের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। এ সকল যুদ্ধে তিনি জয় লাভ করেছিলেন। পুরাণ অনুসারে তারকাসুরকে বধ করার জন্য কার্তিকের জন্ম হয়েছিল। তিনি বলির পুত্র বাণাসুরকেও পরাজিত করেছিলেন। কার্তিকের আরেক নাম স্কন্দ, মহাসেন, কুমার গুহ ইত্যাদি। স্কন্দ পুরাণ কার্তিককে নিয়ে রচনা করা হয়েছে। আজ কার্ত্তিক পূজা।<br />
<br />
সকলকে জানাই কার্ত্তিক পূজার শুভেচ্ছা।<br />
Kalyan Panjahttp://www.blogger.com/profile/00806730473428069202noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-6051442196783369904.post-8383098636287696322023-10-24T10:38:00.000+05:302023-10-24T10:38:52.671+05:30দুর্গাপুজোর বিজয়া দশমী মাত্র কয়েক দিন আগে যেখানে ছিল আলোর রোশনাই, ঢাকের শব্দ, আড্ডার মাদকতা আর অনাবিল আনন্দ সেখানেই এখন নীরবতা আর শূন্যতা। ঠাকুরদালানে জ্বলতে থাকা প্রদীপের মৃদু আলোয় তখন শুধুই খেলে বেড়ায় আলো-আঁধারির স্মৃতিকথা। প্রতি বছর পুজো শেষে এটাই পুজো প্রাঙ্গণের পরিচিত ছবি। নিজের অজান্তেই ছলছল করে চোখ দু’টি। ঠিক যেন আপনজনের দূরে চলে যাওয়া বেদনা গ্রাস করে অবুঝ, সরল মনকে।<br />
<br />
নবমী নিশি পেরোতেই বিষাদের করুণ সুর বেজে ওঠে মনে। ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ, ঠাকুর যাবে বিসর্জন তখন ঘোর বাস্তব। পাঁচ দিনের উৎসবের রেশ রয়ে যায় বছর ভর। এমনই এই উৎসবের মহিমা। তবু পুজোর ক’টা দিনের উষ্ণ মুহুর্ত যেন হয়ে ওঠে সারা বছরের আনন্দের উৎসবিন্দু।<br />
<br />
<img alt="বিজয়া দশমী" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhI9cQlNX4HJY5LzaKExX2y0JJz6taN48lmxrHGzXGgAUyluocz9XKoNQeEZJ5dcy0ibzgOP3_QoZNSXJPHOlnESPtDSaq4Cj5QsGlwtOkRhwW5tIFnK8_pwhqcpewSPeupAKmzpwH9YZcZ/s1600/sidur2.jpg" /><br />
<br />
রথযাত্রা কিংবা জন্মাষ্টমীতে যার প্রস্তুতির সূচনা তারই সমাপ্তি ঘটে নবমী নিশিতে। এমনটাই তো চলছে যুগ যুগ ধরে। তবু মন মানে না। পুজোয় রঙিন মুহূর্তগুলো যেন ঘুরে ফিরে আসে কর্মব্যস্ত একঘেয়ে জীবনের আনাচে কানাচে। হয়তো এই কারণেই কখনও একঘেঁয়ে লাগে না পুজোটাকে।<br />
<br />
ঠাকুর থাকবে কতক্ষন, ঠাকুর যাবে বিসর্জন! দশমীর সকাল থেকেই ঢাকের কাঠি, তাই বলে যাচ্ছে। পুজো, পুজো, পুজো, পুজো শেষ। কাল থেকেই স্কুল, কলেজ, পড়াশোনা, দৈনন্দিন জীবনযাপন। বিসর্জনের পরও, নিরাকার দেবী সারা বছর থেকে যাবেন আমাদের কাজের মধ্যে, আমাদের অধ্যবসায়। বিদায়কালে, এই চেতনাই আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে।<br />
<br />
দশমীর সন্ধ্যা থেকেই আবারও শুরু হয় এক বছরের নীরব প্রতীক্ষা। মাটির বেদীর উপরে তখন প্রতিমার পরিবর্তে শোভা পায় শুধুই প্রাণহীণ প্রতিমার পাটা। এ যেন বছর পেরিয়ে আপন মেয়ের ঘরের ঘরে ফেরা। তাইতো মিশে আছে এত আনন্দ, এত আন্তরিকতা। আর বিজয়া মানেই মেয়ের ঘরে ফেরার জন্য আবার এক বছর প্রতীক্ষার সূচনা। তাই মন খারাপ হয়। আজও দশমী এলেই মনে পড়ে যায় মেয়ের বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার কথা।<br />
<br />
দুর্গা পূজার অন্ত চিহ্নিত হয় বিজয়া দশমীর মাধ্যমে। পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, এই দিনেই পিতৃ-আবাস ছেড়ে দেবী পাড়ি দেন স্বামীগৃহ কৈলাসের দিকে। এই দিনেই তাই দেবীর প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়। ভারত ও নেপালের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে দিনটি নানাভাবে পালিত হয়ে থাকে। কিন্তু প্রশ্ন হল, এই দিনটিকে ‘বিজয়া দশমী’ বলা হয় কেন? কোন ‘বিজয়’-কেই বা চিহ্নিত করে দিনটি?
<br />
<br />
‘দশমী’ কথাটির প্রাসঙ্গিক তাৎপর্য সহজবোধ্য। আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের দশমী তিথিতে দেবী কৈলাস পাড়ি দেন। সেই কারণেই ‘বিজয়া দশমী’ নাম। কিন্তু এই দশমীকে ‘বিজয়া’ বলা হয় কেন, তার পৌরাণিক ব্যাখ্যা খুঁজতে গেলে একাধিক কাহিনি সামনে আসে। পুরাণে মহিষাসুর-বধ সংক্রান্ত কাহিনিতে বলা হয়েছে, মহিষাসুরের সঙ্গে ৯ দিন ৯ রাত্রি যুদ্ধ করার পরে দশম দিনে তার বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করেন দেবী। শ্রীশ্রীচণ্ডীর কাহিনি অনুসারে, আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশীতে দেবী আবির্ভূতা হন, এবং শুক্লা দশমীতে মহিষাসুর-বধ করেন। বিজয়া দশমী সেই বিজয়কেই চিহ্নিত করে।
<br />
<br />
তবে উত্তর ও মধ্য ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এই দিনে যে দশেরা উদযাপিত হয়, তার তাৎপর্য অন্য। ‘দশেরা’ শব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত ‘দশহর’ থেকে, যা দশানন রাবণের মৃত্যুকে সূচিত করে। বাল্মীকি রামায়ণে কথিত আছে যে, আশ্বিন মাসের শুক্লা দশমী তিথিতেই রাবণ-বধ করেছিলেন রাম। কালিদাসের রঘুবংশ, তুলসীদাসের রামচরিতমানস, কিংবা কেশবদাসের রামচন্দ্রিকা-য় এই সূত্রের সঙ্গে সংযোগ রেখেই বলা হয়েছে, রাবণ-বধের পরে আশ্বিন মাসের ৩০ তম দিনে অযোধ্যা প্রত্যাবর্তন করেন রাম, সীতা ও লক্ষ্মণ। রাবণ-বধ ও রামচন্দ্রের এই প্রত্যাবর্তন উপলক্ষেই যথাক্রমে দশেরা ও দীপাবলি পালন করা হয়ে থাকে।
<br />
<br />
আবার মহাভারতে কথিত হয়েছে, দ্বাদশ বৎসর অজ্ঞাতবাসের শেষে আশ্বিন মাসের শুক্লা দশমীতেই পাণ্ডবরা শমীবৃক্ষে লুক্কায়িত তাঁদের অস্ত্র পুনরুদ্ধার করেন এবং ছদ্মবেশ-মুক্ত হয়ে নিজেদের প্রকৃত পরিচয় ঘোষণা করেন। এই উল্লেখও বিজয়া দশমীর তাৎপর্য বৃদ্ধি করে।
Kalyan Panjahttp://www.blogger.com/profile/00806730473428069202noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-6051442196783369904.post-59982725129406820352023-10-20T18:40:00.000+05:302023-10-20T18:40:43.358+05:30নবপত্রিকা এবং কলা বৌ স্নান মার্কণ্ডেয় পুরানের যুগ থেকে আনুমানিক ১২০০/১৩০০ বছর আগে রামায়নে বর্ণিত না থাকলেও সেকালে নবপত্রিকার নবরাত্রি উৎসব ছিল। নয়টা বিশেষ ঔষধীয় গুন্সম্পন্ন গাছের মানুষ পুজা করত। এই নয়টা গাছ হল কদলী, কচু, হরিদ্রা, জয়ন্তী, অশোক, বিল্ব, দাড়িম্ব, মান, ধান্য।<br />
<br />
কদলী যেমন খাদ্যমূল্য আছে তেমনি অনেক রগেরও ঔষধ। সর্বাংশ কাজে লাগে। তাই ধরা হয় কদলীতে যে প্রাশক্তির অধিষ্ঠান তার নাম ব্রহ্মাণী। সে কালে আলু ছিল না, লকে কচু খেত। এর বিভিন্ন ধরনের গুন। কচুর মধ্য অনেক গুন থাকায় এর শক্তির যে শক্তির অধিষ্ঠান তাকে বলা হয় কালিকা।<br />
<br />
কাচা হলুদ চর্মরোগের ঔষধ। হলুদের হলুদেরগুন থাকায় একে মানুষ পুজা করত। এর পরাশক্তির তার নাম দুর্গা। জয়ন্তী লতা শ্বেতী রোগে ব্যবহার হয়। এতে যে শক্তি আছে তার নাম কার্ত্তিকী। অশোক ফুল নানা রগের ঔষধ। স্ত্রীরোগের ঔষধ অশোকারিষ্ট। এর দেবীর নাম হল শোকরোহিতা।<br />
<br />
কাঁচা বেল বহু গুন সম্পন্ন। এর অধিষ্ঠাত্রী দেবীর নাম শিবা। দাড়িম্ব বা ডালিম । খাদ্য হিসাবে ঔষধীয় গুন সম্পন্ন । এতে যে দেবীর কল্পনা করা হয় তার নাম রক্তদন্তিকা মান কচুতে যে দেবীর অধিষ্ঠান কল্পনা করা হয় তার নাম চামুণ্ডা।<br />
<br />
আর ধানে যে দেবীর অধিষ্ঠান তার নাম মহালক্ষ্মী । নব পত্রিকা বলতে নটা দেবীর কল্পনা করা হত- এগুলো পৌরানিক কল্পনা। এদের জন্য নটা পৃথক রাত্রি হয়েছিল দেবী পক্ষে। পিতৃপক্ষ শেষে প্রতিপদ থেকে নবমী তিথি পর্যন্ত। দেবী দুর্গা প্রবেশ করার আগে ওই নয়টা ঔষধিকে স্নান করিয়ে স্থাপন করা হয়- এক বলে নবপত্রিকার প্রবেশ। যাকে বলে কলা বৌ।<br />
<br />
লোকের ধারনা কলা বৌ বুঝি গণেশের বৌ। কলা বৌ গণেশের বৌ নয় বরং মা। দেবতাদের বা দিকে থাকে দেবী। কিন্তু গণেশের দান দিকে আছে কলা বৌ । নবপত্রিকা উৎসবকে উত্তর ভারতের লোকারা নব রাত্রি উৎসব বলে। বাঙলায় নবাব হোসেন সাহের সময় রামের জয় কে কেন্দ্র করে কংসনারায়ণ রায় এর প্রবর্তন করেন।<br />
<br />
<img src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgYozsX7Exmofn3qsR9wx1dtaNgKoCBx4LcwqJISEhMNLNocvVEcaLPi0Gq7ZOtlnne0IbDO4sq9PpLtBtLiDQXQ2Qohliub1KLlzxB5XUXTCanjmJ5EW7bprSsa-n5475_xjn0FB8WPm1m/s640/plantain-durga.jpg" /><br />
<br />
Kalyan Panjahttp://www.blogger.com/profile/00806730473428069202noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-6051442196783369904.post-4807696723291669822023-10-17T20:55:00.000+05:302023-10-17T20:55:59.068+05:30কলকাতার কুমোরটুলির অজানা তথ্যউমার সাজ প্রায় সম্পূর্ণ। শেষবেলার রং-তুলির আঁচড় দিতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা। উমার সাজঘরের কুশীলবেরা এখন দিন-রাত এক করে মৃণ্ময়ীকে সাজাতে ব্যস্ত। কুমোরটুলি সারাটা বছর থাকে প্রচারের আড়ালে। কিন্তু, এই দুর্গাপুজোর সময়টায় সেই বিশ্বকর্মা'রা আসেন যেন অন্য রূপে! জীবন আর মাটির স্বর্গ যেন একাকার হয়ে যায় প্রতিমা বেরিয়ে পড়ছে সাজঘর ছেড়ে যাচ্ছে মণ্ডপ আলো করে মানুষের মনের আলো জ্বালাতে উৎসবের কাল এল।কুমোরপাড়ার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গেল সেই কাল, গভীর রাতে শিল্পী আর কারিগরদের আড্ডা, সাত-সকালের ঘুমভাঙা জীবন, মাটির টান আর সে জীবনের পরতে পরতে ভেসে আসে বন্দনার সুর। মা আসছেন।<br />
<br />
<img alt="kumartuli durga puja" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiVeZeryjJ4Zdh9m4eyMuwV-mv385wtrB16mVBqIoMaAcz-k2ZFNFcmjPiAsNBaIjUJTSPTiGrFfoan_yNYTzMf_y_vR_Gs2vzVOe_xn7bwrG7tL_gmSne7HvEm_0yJQJKwsH_miB3D8IE/s1600/god_model1.jpg" /><br />
<br />
উত্তর কলকাতার গঙ্গার ধারে কুমোরটুলি। বছরের এই সময়টা পুজোর গন্ধ গায়ে মাখতে হাজির হন অনেকেই। উৎসাহী চোখ, কিংবা ক্যামেরার ক্লিক কিংবা শিল্পীর ব্যস্ত হাতের নিঁখুত টান এই সবের কোলাজে মন্দ লাগে না। যদিও শুধু এই সময়টা নয়, সারা বছর ধরে খড়ের গায়ে মাটি লাগিয়ে চলে দেব দেবীদের মূর্তি গড়ার কাজ। এ পাড়ায় অনেক বছর আগে থেকেই বহু লোকের বাস। উৎসাহী ছেলে ছোকরার দল আজ থেকে অনেক বছর আগেই ভেবেছিলো পাড়ার মাঝখানে একটা দুর্গাপুজো করবে। সেই পুজোর নাম কুমোরটুলি সার্বজনীন দুর্গাপুজো।<br />
<br />
এ পাড়ারই বিশিষ্ট জনদের অন্যতম ছিলেন দুর্গাদাস মুখোপাধ্যায় । সেই বাড়িতে একসময় মাঝে মাঝে আসতেন সুভাষ বোস। দেশের হাল হকিকত নিয়ে জব্বর আড্ডা হত। তেমনই এক সময় পাড়ার তরুণ তুর্কিরা সুভাষবাবুর কাছে এক নতুন আবদার নিয়ে হাজির। তাদের পুজোর সভাপতি হতে হবে সুভাষবাবুকে। সাল ১৯৩৮।শোনা যায় সুভাষ বোস প্রথমটায় রাজি হতে চাননি। তার বক্তব্য ছিল স্পষ্ট - পুজোয় ব্রিটিশ এর তাবেদার আছে। <br />
<br />
ওদিকে তরুণবাহিনীও নাছোরবান্দা। দেশনায়ককেই তারা নিজেদের পুজোর সভাপতি দেখতে চায়। ওদিকে আবার বেঁকে বসলেন পাড়ার অনেক মান্যগণ্যেরা। বিতর্কিত সুভাষ বোসকে সভাপতি করলে ব্রিটিশ রেগে যেতে পারে। সেটাও কি ঠিক হবে! শেষমেশ এ বিতর্ক জিইয়ে রেখেই কুমোরটুলিতে সে বছর দু দুটি পুজো হয়েছিল।একটি পুজোর দায়িত্বে তীব্র দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ তরুণদল। আর সে পুজোর সভাপতি নেতাজী সুভাষ বোস।<br />
<br />
দেখতে দেখতে পুজোর দিন হাজির। কিন্তু শেষ বেলাতে ঘটল এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা। পঞ্চমীতে আগুন লেগে নষ্ট হলো প্রতিমা।এবার কি হবে? মাথায় হাত সবার! কিন্তু দমবার পাত্র নয় তারা।বুকের মধ্যে গুমরে মরছে দেশাত্মবোধের আগুন।হয়তো সেই সন্ধ্যায় এসেছিলেন সুভাষবাবু স্বয়ং।<br />
<br />
সামান্য দূরে গঙ্গা।গঙ্গাপারের হাওয়ায় হয়তো সে রাতে শপথ নিয়েছিলো ওরা কজন। পুড়ে যাওয়া মাতৃপ্রতিমা যেন প্রতীকি।দেশমায়ের ও তো একই দশা। কিন্তু কি হবে। পুজো কি তবে বন্ধ? তবে সে যুগের বাঙালি আজকের মতো ছিল না। মেরুদন্ড ছিল শক্ত। আসলে সময়টাই তো অন্যরকম। পাড়াতেই থাকতেন শিল্পী গোপেশ্বর পাল। বিদেশে গিয়ে পরখ করেছিলেন সে দেশের শিল্পভাবনা, শিল্প কৌশল। মন তা কিন্তু ভীষণ ভাবে স্বদেশী। নিজের হাতে তুলে নিলেন দায়িত্ব। তখন আজকের মতো মাটি শুকোবার যন্ত্র আসেনি। তাছাড়া এক রাতে মাতৃপ্রতিমা বানানো - সেও কি সম্ভব? সে রাতে ঘুম আসেনি অনেকেরই।<br />
<br />
সকাল হল। মায়ের বোধন হয় সে সকালে। দেবীপক্ষ। অপরূপ মাতৃপ্রতিমা প্রস্তুত। কিন্তু সময়াভাবে একচালা নয়। পাঁচ দেব - দেবী ছিলেন পৃথক ভাবেই। প্রথমে বেঁকে বসলেন পুরোহিতরা। বলেছিলেন এ প্রতিমা শাস্ত্রসম্মত নয়। শেষমেশ সবাই রাজি হলেন।কলকাতা শহর একদিকে দেখলো - নতুন আদলে দূর্গা ঠাকুর, অন্যদিকে প্রতিষ্ঠিত হল বাঙালির আত্মসম্মান। এক রাতে তৈরী হলো নয়া ইতিহাস। যদিও এই ঘটনা ইতিহাসে ঠাঁই পায়নি। মুখে মুখে ফেরে কুমোরটুলি তে। এমনটাই জানালেন সেই পুজোর বর্তমান আহ্বায়ক দেবাশিস ভট্টাচার্য। যদিও সবচেয়ে খারাপ লাগার কারণ বোধ হয় এটাই যে আমরা ভুলে গেছি সেই অসামান্য বাঙালি শিল্পী কে। যার নাম গোপেশ্বর পাল।<br />
<br />
জি পালের ষ্টুডিও আজও আছে সেই কুমোরটুলিতে। রক্ষনাবেক্ষন করেন সেই পরিবার এর সদস্য ব্যোমকেশ পাল। ষ্টুডিও জুড়ে আজও ইতিহাসের ধূসর চ্যাপ্টার। কথা শরৎচন্দ্র থেকে শুরু করে বহু মনীষীর মূর্তি নিজের হাতে গড়েছিলেন গোপেশ্বর। স্টুডিওর গড়নও কিছুটা বিদেশী ঢং-এ। এমনটা কলকাতা শহরে কমই আছে। এ ষ্টুডিওটা একটা দারুন মিউসিয়াম হতে পারত। হতে পারতো হেরিটেজ ও। কিন্তু বাঙালি ঐতিহ্যে উদাসীন। তাই বছরের এই সময়টা যখন কুমোরটুলির আকাশ বাতাস মানুষের কলকাকলিতে ভোরে যায়, একদম পাশেই নীরবে থাকে পরাধীন ভারতের এই অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পীর বানানো মূর্তিরা। আর তার পাশে বড্ড চুপ ইতিহাস। Kalyan Panjahttp://www.blogger.com/profile/00806730473428069202noreply@blogger.com1tag:blogger.com,1999:blog-6051442196783369904.post-70950483846186999812023-10-15T20:22:00.000+05:302023-10-15T20:22:46.490+05:30মহালয়া কী? জেনে নিন এই তথ্যগুলিআজ শুভ মহালয়া । আজকের এই দিনে দেবীপক্ষের সূচনার মধ্য দিয়ে জগতের সকল অসুর ও আসুরীক শক্তি নিধধের জন্য সর্বশক্তির অধীকারি জগৎজননী মহামায়া শ্রী শ্রী দূর্গা মায়ের আহবানের মধ্য দিয়ে মাকে জাগ্রত করা হয় । মা মহামায়া দূর্গা এই পৃথিবী জগতে মহালয়ার দিনে ১০ দিনের জন্য এসে, জগতের সকল অশুভ শক্তি ধংস করে, জগৎকে তার মায়াই আবদ্ধ করে আবার দশমিতে চলে যায় । তাই জাগ্রতিক কল্যানের জন্য আসুন আমরা সবাই শ্রী শ্রী মহামায়া দূর্গার আহবান করি এবং তাকে পূনরায় জাগ্রত করি । <br />
<br />
আশ্বিনের শারদ প্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জিত ধরনীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা, প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত । জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমন বার্তা, আনন্দময়ী মহামায়ার পদধ্বনি, অসীম ছন্দে বেজেউঠে, রূপলোক ও রসলোকে আনে নবভাবনা ধূলির সঞ্জীবন, তাই আনন্দিতা শ্যামলী মাতৃকার চিন্ময়ীকে মৃন্ময়ীতে আবাহন । সাথে সাথে শেষ হবে পিতৃপক্ষ ও সূচনা হবে দেবীপক্ষের । <br />
<br />
<img alt="মহালয়া" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjEDU8sGX1OqF4jxdQeN6agtvq7XncWCDj6GitXJypL5ob53ywG9MvJ0x0Cxp4w1t8zjyOP6OgbnPeWQx0KW-yenVr7Y18P30S_8uFFtMWOBcCIKsr43CbO37TUV1Yt52_tW1jti4sorQg/s1600-rw/mahalaya+2010.jpg" /><br />
<br />
মহালয়া উপলক্ষেশুনতে পাবেন বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠে সেই সুমধুর মহালয়া । শরতে আজ কোন্ অতিথি এল প্রাণের দ্বারে । আনন্দগান গা রে হৃদয়, আনন্দগান গা রে ।। নীল আকাশের নীরব কথা শিশির-ভেজা ব্যাকুলতা বেজে উঠুক আজি তোমার বীণার তারে তারে । শস্যক্ষেতের সোনার গানে যোগ দে রে আজ সমান তানে, ভাসিয়ে দে সুর ভরা নদীর অমল জলধারে । যে এসেছে তাহার মুখে দেখ্ রে চেয়ে গভীর সুখে, দুয়ার খুলে তাহার সাথে বাহির হয়ে যা রে ।<br />
<br />
সবাই নিশ্চিত মহালয়া মানে দূর্গাপূজার দিন গোনা, মহালয়ার ৬ দিন পর মহাসপ্তমি, তাই দেবিকে আমত্রন ইত্যাদি। মহালয়ার তার চেয়ে বড় গুরুত্ব আছে । ত্রেতা যুগে ভগবান শ্রীরামচন্দ্র অকালে দেবিকে আরাধনা করেছিলেন লঙ্কা জয় করে সীতাকে উদ্ধারের জন্য আসল দূর্গা
পূজা হলো বসন্তে, সেটাকে বাসন্তি পূজা বলা হয় । শ্রীরামচন্দ্র অকালে-অসময়ে পূজা করেছিলেন বলে এই শরতের পূজাকে দেবির
অকাল-বোধন বলা হয় ।
<br />
<br />
সনাতন ধর্মে কোন শুভ কাজ করতে গেলে, বিবাহ করতে গেলে প্র্রয়াত পূর্বরা, যাদের পিতা-মাতা তাদের পিতা-মাতার জন্য, সাথে সমগ্র জীব-জগতের জন্য তর্পণ করতে হয়, কার্যাদি-অঞ্জলি প্রদান করতে হয় । তর্পণ মানে খুশি করা । ভগবান শ্রীরাম লঙ্কা বিজয়ের
আগে এদিনে এমনই করেছিলেন ।
<br />
<br />
সেই অনুসারে এই মহালয়া তিথিতে যারা পিতৃ-মাতৃহীন তারা তাদের পূর্বপূরূষের স্মরন করে, পূর্বপূরুষের আত্নার শান্তি কামনা করে
অঞ্জলি প্রদান করেন । সনাতন ধর্ম অনুসারে এই দিনে প্রয়াত আত্নাদের মত্যে পাঠিয়ে দেয়া হয়, প্রয়াত আত্নার যে সমাবেশ হয় তাহাকে মহালয় বলা হয়। মহালয় থেকে মহালয়া । পিতৃপক্ষের ও শেষদিন এটি ।
<br />
<br />
সনাতন ধর্ম অনুসারে বছরে একবার পিতা-মাতার উদ্দেশ্যে পিন্ড দান করতে হয়, সেই তিথিতে করতে হয় যে তিথিতে উনারা প্রয়াত
হয়েছেন । সনাতন ধর্মের কার্যাদি কোন তারিখ অনুসারে করা হয় না । তিথি অনুসারে হয় ।
<br />
<br />
মহালয়াতে যারা গঙ্গায় অঞ্জলি প্রদান করেন পূর্বদের আত্নার শান্তির জন্য, তাহারা শুধু পূর্বদের নয়, পৃথিবীর সমগ্র কিছুর জন্য প্রার্থনা ও অঞ্জলি প্রদান করেন । যে-অবান্ধবা বান্ধবা বা যেন্যজন্মনি বান্ধবা - অর্থাৎ যারা বন্ধু নন, অথবা আমার বন্ধু ও, যারা জন্ম জন্মাত্নরে আমার আত্নীয় বন্ধু ছিলেন, তারা সকলেই আজ আমার অঞ্জলি গ্রহন করুন যাদের পুত্র নেই, যাদের কেউ নেই আজ স্মরন করার তাদের জন্য ও অঞ্জলী প্রদান করতে হয়।
<br />
<br />
যেযাং, ন মাতা, ন পিতা, ন বন্ধু - অর্থাৎ যাদের মাতা-পিতা-বন্ধু কেউ নেই আজ স্মরন করার তাদেরকে ও স্মরন করছি ও প্রার্থনা করছি
তাদের আত্না তৃপ্তিলাভ করুক। এ দিন তর্পন করলে পিতৃপুরুষেরা আমাদের আশীর্বাদ করেন। এ ছাড়াও এদিনে দেবী দুর্গার বোধন করা হয়, বোধন অর্থ জাগরণ। তাই মহালয়ার পর দেবীপক্ষের (শুক্লপক্ষের) প্রতিপদে ঘট বসিয়ে শারদীয়া দুর্গা পুজার সূচনা করা হয়।
<br />
<br />
প্রসঙ্গতঃ যে শ্রাবণ থেকে পৌষ ছয় মাস দক্ষিণায়ন, দক্ষিণায়ন দেবতাদের ঘুমের কাল। তাই বোধন অবশ্যই প্রয়োজন, আরও বলা দরকার যে মহালয়ার পর প্রতিপদে যে বোধন হয় সে সময়ও সংকল্প করে দুর্গা পূজা করা যায়। একে বলে প্রতিপদ কল্পরম্ভা, তবে সাধারণত আমরা ষষ্ঠি থেকে পূজার প্রধান কার্যক্রম শুরু হতে দেখি যাকে বলা হয় ষষ্ঠাদিকল্পরম্ভা।
<br />
<br />
কিছু প্রাচীন বনেদী বাড়ি এবং কিছু মঠ মন্দিরে প্রতিপদ কল্পরম্ভা থেকে পুজো হয়। যদিও প্রতিপদ কল্পরম্ভা থেকে শুরু পুজোতেও মূল আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয় ষষ্ঠি থেকেই এবং সপ্তমী থেকে বিগ্রহতে। প্রতিপদ থেকে শুধু ঘটে পূজো ও চণ্ডী পাঠ চলে। >Kalyan Panjahttp://www.blogger.com/profile/00806730473428069202noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-6051442196783369904.post-85357680704767580252022-06-04T13:18:00.000+05:302022-06-04T13:18:29.492+05:30জামাইষষ্ঠী কেন পালন করা হয়? ক’দিন আগেই ক্যালেন্ডারে কেটে গেছে বঙ্গজীবনের অঙ্গ এক বিশেষ দিন। বিবাহিতা কন্যা তথা জামাই বাবাজীবনদের জন্য বাঙালি সমাজে দারুণ এক পার্বণ — জামাইষষ্ঠী! আনকোরা নতুন জামাই থেকে পুরনো জামাই বাবাজিদের জন্য বাংলা পঞ্জিকার এক বিশেষ দিন: জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠ দিনটি। বাংলার জামাইদের জন্য উৎসর্গীকৃত নির্দিষ্ট দিনটিতে জামাইয়ের মঙ্গল কামনায় শাশুড়িরা প্রতি বছর পালন করেন। এটি মূলত লোকায়ত এক প্রথা ও ষষ্ঠীদেবীর পার্বণ। পরবর্তীতে এই পুজো ধর্মীয় সংস্কারের চেয়ে সামাজিকতায় স্থান পেয়েছে বেশি।<br />
<br />
আধুনিকতার দিক থেকে আমরা যতই সমকালীন হই না কেন, কিছু কিছু প্রথা-পার্বণ আজও বাঙালি ঘরে থেকে গেছে। তাই বিশ্বায়নের যুগে বাঙালি জীবন থেকে আচার-অনুষ্ঠান সবই যে এক-এক করে উঠে যাচ্ছে, তা বোধহয় বলা যাবে না। কখনও পুরনো লোকাচার হাজির হচ্ছে নতুন আঙ্গিকে, যেমন নয়া মোড়কে জামাই আদর। গ্রামবাংলার পাশাপাশি শহুরে পরিমণ্ডলেও জামাইষষ্ঠী পালনের রীতি-রেওয়াজ খুব একটা ফিকে হয়ে যায়নি। <br />
<br />
মনোলোভা নানান পদ রেঁধে-বেড়ে জমিয়ে জামাইকে খাওয়ানোর আহ্লাদ আগেও যেমন ছিল, এখনও তেমনই আছে। আদরের জামাইকে খাতির-আপ্যায়নের ধরনটা যদিও বদলে বদলে যাচ্ছে। যেমন বদলে যাচ্ছে আয়োজনের রকমও। সারা দিন ধরে ঘেমে নেয়ে রান্নার জোগাড় করা থেকে শুরু করে জামাইয়ের জন্য ভুরিভোজ বানানোর ব্যাপার বদলে দিয়েছিল কিছু বাঙালি রেস্তোরাঁর ‘ষষ্ঠী স্পেশাল’ বা ‘স্পেশাল থালি’।<br />
<br />
ইদানীং মিডিয়া ফেসবুক অথবা বাণিজ্যিক পত্রিকার কল্যাণে অনেক আগেভাগেই জানা হয়ে যায়, কোন অনুষ্ঠানের জন্য কবে কী ব্যবস্থা থাকছে। পত্রিকা, ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ ইত্যাদিতে সেই বিশেষ দিন ক’টি নিয়ে বিজ্ঞাপনী প্রচার, তামাশা, রঙ্গ, কেনাকাটার হাতছানি। এ বছর ‘প্যান্টালুনস’ সংস্থার জামাইষষ্ঠীর বিজ্ঞাপনটি এই প্রতিবেদকের বেশ নজর কেড়েছে। <br />
<br />
সেখানে রয়েছে ৩৪ প্রকার জামাইয়ের চরিত্রের ফিরিস্তি। ঘরজামাই, প্রবাসী জামাই, দায়িত্বশীল জামাই, উদাসীন জামাই, পেন্নামঠোকা জামাই, ইংলিশ-মিডিয়াম জামাই, ডাকসাইটে জামাই, প্রভাবশালী জামাই, সুবিধাবাদী জামাই, মিষ্টিমুখ জামাই, শুগার-ফ্রি জামাই, শৌখিন জামাই, আপনভোলা জামাই, টি-টোয়েন্টি ভক্ত জামাই—এমনই ৩৪ প্রকার জামাইয়ের মজাদার ফিরিস্তি। <br />
<br />
তো মাদারস ডে, ফাদারস ডে, অমুক দিবস, তমুক দিবসের ফাঁক-ফোকরে আমাদের বাঙালিদের যুগ যুগ ধরে পালিত হয়ে আসা সাবেকি প্রথাসিদ্ধ ‘জামাইবরণ’ দিবসটিও একটু নতুন আন্তর্জাতিক মোড়কে ‘সন-ইন-ল’স ডে’ হিসেবে জুড়ে দেওয়া যায় না? যদিও বাংলা পত্রিকায় জামাইষষ্ঠী দিনটি কিন্তু বেশ তুখোড় ভাবেই নিজের স্থান অধিকার করে আছে সেই কবে থেকেই।<br />
<br />
জামাইষষ্ঠী পার্বণটি লোকায়ত ও সামাজিক প্রথা হলেও মূলত ষষ্ঠী দেবীর পুজো। সন্তানের মঙ্গলকামনায় মা ষষ্ঠীর ব্রত পাঠ করা হয়। জামাইষষ্ঠীর নির্ধারিত দিনটিতে অনেক পরিবারেই মা ষষ্ঠীর পুজোর আয়োজন করা হত। কোথাও প্রতিমার ছবিতে, কোথাও বা ঘটে। মা ষষ্ঠী মাতৃত্বের প্রতীক। বিড়াল তাঁর বাহন। <br />
<br />
ষষ্ঠীপুজোর থালায় পান সুপুরি ধান দুব্বো, ফলফলাদি অর্থাৎ গ্রীষ্মের জোগান যা যা রয়েছে সেই আম জাম কাঁঠাল তরমুজ লিচু ইত্যাদি এবং অবশ্যই তালপাতার একটি নতুন পাখা রাখা হয়। এ ছাড়াও ঘরের বাইরে কোনও দালান বা খোলা জায়গায় বট ও করমচা গাছের ডাল পুঁতে প্রতীকী অর্থে অরণ্য রচনা করে পুজো-আর্চা করা হয়। সে জন্যই এই ষষ্ঠীকে অন্য অর্থে ‘অরণ্যষষ্ঠী’ও বলা হয়।<br />
<br />
মেয়ে-জামাইকে আপ্যায়ন করে ঘরে এনে, প্রথমে জামাইয়ের কপালে পুজোর নৈবেদ্যস্বরূপ পাঁচ রকম ফল, পান, সুপুরি, ১০৮টি দুব্বো-বাঁধা আঁটি, ধানের ছড়া, হলুদ তাগা, মাঙ্গলিক হলুদ ও দই, তালপাতার নতুন পাখার উপর আম্রপল্লব—সব একটি থালায় সাজিয়ে ছোঁয়ানো হয়। এর পর জামাইয়ের ডান হাতের কব্জিতে হলুদ সুতো ও দুব্বোর তাগা বেঁধে দেওয়ার রীতি। শাঁখ ও উলুধ্বনি দিয়ে জামাইকে বরণ করে নেওয়া এবং তাঁকে সামনে আসন পেতে বসিয়ে চর্বচোষ্য ভূরিভোজের এলাহি ব্যবস্থা। জামাইকে নতুন তালপাতার পাখার বাতাসও এ দিনের সনাতনী রীতি।<br />
<br />
তবে শুধুই কি আর জামাই আদর? পেছনে লুকোনো একটা অর্থ তো থেকেই যায়। বাড়ির আদরের দুলালীকে তার হাতে সঁপে দিয়েই তো নিশ্চিন্ত হতে চায় বাবা-মায়ের স্নেহাবেগে ভারাক্রান্ত মন। তবু যেন পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারা যায় না। চিন্তা থেকেই যায়। নতুন রাজ্যপাট নিয়ে কেমন আছে সে? স্বামীর কাছে, নতুন শ্বশুরবাড়ির কাছে কতটা মান্যতা পাচ্ছে? <br />
<br />
<img alt="Jamai Sasthi images" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjYCep4XtqZk35dlwXpgr7TRXa0wlMyCNHoV0YDrDx6zA1GGdcbJqk9HcgwaWqAhSsau6GYO02fU0ULMB-_9cJjHowvBooMFNmnTfXQaMTPAXwdT8JcKoiQfcm0klwqQID134TJknDHEoYF/s640/food+064.jpg" /> <br />
<br />
বাড়ির বউয়ের যথাযথ সম্মানটুকু কড়ায়-গণ্ডায় আদায় করে নিতে কোনও বাড়তি বেগ পেতে হচ্ছে না তো? ওই বাড়িতে তাদের আদরের কন্যাটির ঠিকমত যত্নআত্তি করা হয় তো? সত্যিই সুখী হতে পারবে তো আমাদের মেয়ে? কত রকম সাতপাঁচ দুশ্চিন্তা থেকেই যায় অভিভাবকের মনে। কবেকার সেই এক প্রবচন ছিল:<br />
<br />
পুড়বে মেয়ে, উড়বে ছাই<br />
তবেই মেয়ের গুণ গাই!’<br />
<br />
আদ্যিকালের ওই প্রবচনটি শুনতে হয়তো এখন প্রচণ্ড বোকা বোকা লাগবে। গা জ্বলে যাবে। আগেকার সেই বস্তাপচা মানসিকতা তো এখন আর নেই। যথার্থ আধুনিক সমাজে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিও এখন অনেক বেশি স্বচ্ছ ও প্রগতিশীল। আর এ কথাও ঠিক যে, শ্বশুরবাড়িগুলো আজ অনেক বেশি লিবারাল এবং সহৃদয় মুক্তবুদ্ধি শিক্ষিত স্বামীরা আজ শুধু মাত্র ‘স্বামী’ পদবাচ্য নয়। তারাও আজ স্ত্রীদের প্রতি অনেক উদার ও বন্ধুবৎসল। অবশ্য স্ত্রী যাতে সংস্কারে স্বাধিকার ভোগ করতে পারে, সে বিষয়ে স্বামীকেও দায়িত্ববান হতেই হয়। সেটাই দস্তুর। আজকের জামাইরা বউয়ের ব্যাপারে যথেষ্ট কেয়ারিং।<br />
<br />
শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার কথা শুনলে আজকের সপ্রতিভ পুরুষদের আর পেট গুড়গুড় মথা ভনভন হয় না। কাছেপিঠে শ্বশুরবাড়ি হলে তো কথাই নেই। সপ্তাহখানেক আগে থেকেই বউদের তাই এখন আর ‘হ্যাঁ গো, কী গো, যাবে তো?’ এই সব বলেকয়ে স্বামীদের কানের কাছে ঘ্যানর ঘ্যানর করতে হয় না। বরের সঙ্গে বাপের বাড়ি যাওয়ার জন্য কথায় কথায় ‘মাখন মারতেও’ হয় না। জামাইবাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ি কিঞ্চিৎ দূরে হলে অবশ্য অন্য কথা। অফিসে ছুটি পাওয়ার হ্যাপা, ট্রেনের রিজার্ভেশনের ঝক্কি এই সব। <br />
<br />
বাকি শুধু বিমানযাত্রা। তা, পকেটে কিছু রেস্ত থাকলেও জামাইষষ্ঠী খেতে বউকে নিয়ে বউয়ের বাপের বাড়ি ফ্লাইটে যাওয়াটা বেশ বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যায়। তাই প্রবাসে বা একটু বেশি দূরে হলে ফি-বছর জামাইষষ্ঠীতে যাওয়া হয়ে ওঠে না। মাঝে মাঝে গ্যাপ দিতে হয়। কী আর করা তখন? সেলফোনে শ্বশুর-শাশুড়িকে প্রণাম জানিয়ে, আশীর্বাদ রিসিভ করেই কাটিয়ে দেওয়া। <br />
<br />
কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া অবশ্য ‘ডিউ’ থেকেই যায়। কথায় বলে, ‘যম, জামাই, ভাগনা কেউ নয় আপনা!’ ওটা কথার কথা। যম যেহেতু মৃত্যুর দূত, আর জামাই ও ভাগনা পরের বাড়ির উত্তরাধিকারী—তাই তাদের কখনও নিজের বলে দাবি করা যায় না। তবু জামাই খুশি থাকলে শ্বশুরবাড়িতে মেয়েরও কদর থাকবে। তাই জামাইকে একরকম ঘুষ দিয়েই কন্যাসন্তানের সুখ কিনতে চাওয়া। এ কথা জামাই ও তার বাড়ির লোকও বিলক্ষণ বোঝেন।<br />
<br />
হ্যাংলা জামাই যদিও চক্ষুলজ্জার খাতিরে এমন নির্লিপ্ত ভাব করে খেতে বসে, যাতে সকলে তাকে আর একটু খাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করে! ওই যে একটা ঠাট্টার কথা আছে না? ‘একবার সাধিলেই খাইব’! তেমনই আর কী। তবে এখনকার শাশুড়িরা আসন পেতে, সুদৃশ্য হাতপাখা নেড়ে, কাঁসার থালা-বাটিতে বত্রিশ রকম পদ সাজিয়ে, প্রদীপ জ্বালিয়ে, শাঁখ বাজিয়ে, উলু দিয়ে ঘটা করে আর করেন না। কর্পোরেট অফিসে চাকরি করা জামাই এ সব সেকেলে রকম- সকম মোটেও পছন্দ করবে না।<br />
<br />
তবু মায়ের মন চায় নিজে রান্না করে মেয়ে-জামাইকে খাওয়াতে। গালভরা কিছু রেসিপি শিখে ডাইনিং টেবিলে গুছিয়ে খেতে দিলেন। জামাই যখন ওই নানান পদ দেখে ‘কোনটা খাব আর কোনটা রাখব’ করছে—তখন তাকে আরও একটু প্রশ্রয়ের হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে, গলায় খানিক আর্তি রেখে শাশুড়ি মা গর্ব করে হয়তো বলবেন, ‘আজ কিন্তু সব কিছু খেয়ে নেবে বাবা। আজ আর তোমার কোনও অজুহাতই ধোপে টিকবে না, বলে দিলাম! তোমার শ্বশুরমশাই দেখেশুনে পছন্দ করে সব বাজার করে এনেছেন। গলদা চিংড়িগুলো এত ফ্রেশ ছিল যে..এ দিকে রেওয়াজি খাসির মাংস কিনতেই পাক্কা চল্লিশ মিনিট লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে। তার ওপর গাঙ্গুরামের মিষ্টির দোকানেও আজ যা ভিড় ছিল!’<br />
<br />
দুপুরে না হয় একপ্রস্ত চর্ব-চোষ্য হল। দুপুরে হালকা ভাতঘুম দিয়েই বিকেলে মাল্টিপ্লেক্সে সবাইকে নিয়ে একটা ভাল মুভি দেখানোর ফিনান্সের দায়িত্ব কিন্তু জামাইয়ের। নামী রেস্তোরাঁয় আগে থেকেই ডিনার টেবিল বুক করে রাখা। সেও জামাইয়ের দায়িত্ব। মুড বুঝে বাঙালি খানা, নয় তো কন্টিনেন্টাল। ধোঁয়া ওঠা পুরোদস্তুর বাঙালি বনেদি মেনু। <br />
<br />
আহা, দু’পক্ষই আজ খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে অন্তত দরাজ। খেয়ে, খাইয়ে পরিতৃপ্তির সঙ্গে আলাদা একটা আদেখলেপনাও। দেখনদারি। একটা বিনিময়প্রথা। এখনও কি আর সেই দিনকাল আছে, যখন কোনও যৌথ পরিবারের এ-তরফ বা ও-তরফের কোনও জামাই হঠাৎ করে বিনা নেমন্তন্নেই শ্বশুরবাড়ি এসে পড়েছেন আর বাড়ির কোনও উদয়াস্ত রান্নাঘরে পড়ে-থাকা গিন্নি গাইছেন—<br />
<br />
‘বলি ও ননদি, আর দু’মুঠো<br />
চাল ফেলে দে হাঁড়িতে<br />
ঠাকুরজামাই এল বাড়িতে!’<br />
<br />
জামাইদের নিয়ে আস্ত একটা দিন সেলিব্রেট করার মধ্য থেকেই শাশুড়ি ও জামাইয়ের মধ্যেকার নির্মল একটা সাবেক পারিবারিক সম্পর্কের বন্ধন টের পাওয়া যায়। এলাহি খাতির সে দিন। জামাইকে কাছে বসিয়ে পাত পেড়ে খাওয়ানো!’ অবশ্য এখনকার একটু আধুনিক শাশুড়ি মা হলে মেয়ে-জামাইকে তিনি নিয়ে যেতেন আধুনিক কোনও রেস্তোরাঁয়। নিজেই মেনু কার্ডে চোখ বুলিয়ে আমিষ নিরামিষ নানান পদের অর্ডার করে দিতেন। ষষ্ঠীর দিনের জামাই আদর সেই পছন্দসই মেনুতেই দিব্যি হয়ে যায়। <br />
<br />
রেস্তোরাঁগুলোও অপেক্ষা করে থাকে, শাশুড়ি-জামাইয়ের পাতে ভেটকি পাতুরি, কষা মাংস, চিতল, ইলিশ, ডাব চিংড়ি অথবা চিংড়ি মালাইকারি, মোচার ঘণ্ট, লুচি, বেগুনভাজা, কাতলা মাছের মাথা দেওয়া মুগডাল, আমপানা থেকে ভাপা দই আর বেকড রসগোল্লা তুলে দেওয়ার জন্য—যা খেয়ে সুখ যেমন, খাইয়েও সুখ! গতিশীল যুগেও সে নব্যই হোক বা পুরনো, জামাইরাও এখন দিব্যি অনলাইনের বাজারে ফ্লিপকার্ড বা অ্যামাজন বা স্ন্যাপডিলেই শ্বশুর-শাশুড়ির উপহারটাও চুপিচুপি বুক করে দিচ্ছেন। <br />
<br />
আসলে শ্বশুরবাড়ির মানুষগুলোর চাওয়া-পাওয়ারও তো কদর দিতে হয়। ওঁরাও তো এই বিশেষ দিনটায় জামাইকে নানা আদর-যত্ন ও উপহারে ভরিয়ে দিতে ত্রুটি রাখেন না। অনলাইনে বুক করা উপহার সামগ্রীও এখন জামাই নিজে শ্বশুরবাড়ি পৌঁছনোরও ঢের আগেই পৌঁছে যায় শ্বশুরবাড়িতে। নিন্দুকেরা হয়তো মুখ বাঁকাবেন। <br />
<br />
তাঁরা বলবেন, এই নব্যযুগে যথেষ্ট আন্তরিকতার অভাব। এককালে জামাই বাবাজিরা সস্ত্রীক এই জামাইষষ্ঠীর দিনটায় শ্বশুরবাড়ি যেতেন রীতিমত মাঞ্জা দিয়ে। কখনও সোনার চেন আঁটা সোনার বোতাম-সহ সিল্কের পাঞ্জাবি, কিংবা গিলে করা আদ্দির পাঞ্জাবি। আর খানিকটা অবধারিত ভাবেই হাতে থাকত পেল্লায় সাইজের মিষ্টি দইয়ের হাঁড়ি, বড় বাক্স ভর্তি নকুড়ের সন্দেশ, আড়াই-তিন কেজির ইলিশ, না হয় কাতলা বা রুই। আর তামাম শ্বশুরকুলের প্রণম্যদের জন্য শাড়ি-জামাকাপড়-সহ অন্যান্য উপহার।<br />
<br />
কিন্তু দিনকাল বদলেছে। এখন জামাইবাবুরা একটা কিছু জমকালো অথচ বেশ এথনিক গিফট দিতে চান শাশুড়ি মা ও শ্বশুর মশাইকে। ওই প্যানপ্যানানি সন্দেশ-মিষ্টি, দইয়ের হাঁড়ি আর মাছ এখনকার দিনে ফেড আউট। কেমন এক ভেতো বাঙালি টাইপ আদিখ্যেতা হয়ে যায়। তা ছাড়া এখন নাগালে প্রচুর সুবিধা-সুযোগ, মোবাইলের কি-প্যাডে আঙুলের কারসাজিতে চটজলদি অনলাইনে কেনাকাটার হরেক অফার। তার চেয়ে স্ত্রীকে খানিক উসকে দিয়ে তার মায়ের জন্য নামী দোকানের হালকা <br />
<br />
সোনার দুল বা পেনডেন্ট। দারুণ ফ্যাশনেবল হবে ব্যাপারটা। তবে এও জামাই বাবাজি ঠারেঠোরে জানে যে, মেয়ে মাকে ওই গয়না বেশি দিন পরতেই দেবে না! কিছু দিন বাদেই নিজের বিয়েতে উপহার পাওয়া একটা অপছন্দের ডিজাইনের দুলের সঙ্গে বদলে নেবে। দিলদার জামাইরা তো আজকাল শ্বশুরবাড়িতে উপহার দিতে বিশেষ হিসেবনিকেশও করেন না। <br />
<br />
কখনও শৌখিন ব্যাগ, কিচেন গ্যাজেট, ডিনার সেট, বসার ঘরের পুরনো কুশন বা পর্দা পাল্টে একদম নতুন সেট, শ্বশুরমশাইকে বিদেশি শ্যাম্পেন, অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল, আইপ়ড, ডিভিডি—কত কিছুই তো দেওয়া যায়। কিছু শৌখিন জামাই আবার উপহার দেওয়ার ব্যাপারে আরও দড়। হয়তো শ্বশুর-শাশুড়িকে চার দিন তিন রাত ট্র্যাভেল প্যাকেজে পাঠিয়ে দিলেন বনভয়েজ-এ। জামাইকেও তো একটু ঠাটবাট, একটু ‘হাটকে পসন্দ’ দেখাতে হবে। তাই না? ছিদ্রান্বেষী নিন্দুকেরা চোখ টাটাল তো ভারী বয়েই গেল! উপহার বিনিময়ে জামাই খুশ। মেয়েও আহ্লাদে গদগদ। শ্বশুর-শাশুড়িরও অপার তৃপ্তি ও ভাল লাগা।<br />
<br />
দিন বদলেছে। দু’পক্ষই এখন দু’পক্ষকে দিতে কী বৈভবে, কী দেখনদারিতে টেক্কা দিতে চায়। জামাইষষ্ঠী উপলক্ষে শপিং মল, দোকানপাট, রেস্তোরাঁয় আহ্লাদের রমরমা। কেনাকাটা, গিফট, রিটার্ন গিফট—কত দেদার আয়োজন! বাড়ির মেয়েটা যেন একটু সুখে-আহ্লাদে থাকে, আরামে থাকে, আনন্দে থাকে, তাই তার ‘কেয়ার অব’ হাজব্যান্ডকে তোয়াজে রাখা আর কী। বচ্ছরকার এই দিনটিতে আমাদের গেরস্তপোষ মননে জামাইদের কিছুটা খাতিরদারি করে, সারা বছরের জন্য মেয়ের ভাল থাকাটা ফের ‘রিনিউ’ করে নেও।Kalyan Panjahttp://www.blogger.com/profile/00806730473428069202noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-6051442196783369904.post-90608080915078341852021-11-12T21:53:00.000+05:302021-11-12T21:53:55.903+05:30জগদ্ধাত্রী পূজার ইতিহাস জগদ্ধাত্রী হলেন দেবী দুর্গার আর এক রূপ। উপনিষদে এঁনারই নাম উমা হৈমবতী। বিভিন্ন তন্ত্র ও পুরাণ গ্রন্থেও এঁর উল্লেখ রয়েছে । তবে এই দেবীর আরাধনা মূলত বঙ্গদেশেই প্রচলিত। তবে কলকাতার তুলনায় হুগলির চন্দননগর ও নদিয়ার কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজো বেশি জনপ্রিয় । জগদ্ধাত্রী শব্দের আভিধানিক অর্থ জগৎ+ধাত্রী। অর্থাৎ জগতের (ত্রিভুবনের) ধাত্রী (ধারণকর্ত্রী, পালিকা)। ব্যাপ্ত অর্থে দুর্গা, কালী সহ অন্যান্য শক্তিদেবীগণও জগদ্ধাত্রী। <br />
<br />
তবে শাস্ত্রনির্দিষ্ট জগদ্ধাত্রী রূপের নামকরণের পিছনে রয়েছে সূক্ষ্মতর ধর্মীয় দর্শন। সাধারণত কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে দেবী জগদ্ধাত্রীর পুজো হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে নবমীর দিনই তিন বার পুজোর আয়োজন করে সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী পূজা সম্পন্ন করা হয়। অন্যদিকে কেউ কেউ সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত দুর্গাপুজোর ধাঁচে জগদ্ধাত্রী পুজো করে থাকেন। কোথাও বা প্রথম বা দ্বিতীয় পুজোর পর কুমারী পুজোর আয়োজন করা হয়। দুর্গাপুজোর ন্যায় জগদ্ধাত্রী পুজোতেও বিসর্জনকৃত্য বিজয়াকৃত্য নামে পরিচিত। এমনকি এই পুজোয় পুষ্পাঞ্জলি ও প্রণামে মন্ত্রের সঙ্গে দুর্গাপুজোর মিল রয়েছে৷<br />
<br />
উপনিষদে একটি উপাখ্যানে বলা হয়েছে – একবার দেবাসুর যুদ্ধে দেবগণ অসুরদের পরাস্ত করলেন। কিন্তু সেই সময় তাঁরা ভুলে গেলেন নিজ শক্তিতে নয়, বরং ব্রহ্মের বলে বলীয়ান হয়েই তাঁদের এই জয়। ফলত তাঁরা হয়ে উঠলেন অহংকারী। তখন ব্রহ্ম যক্ষের বেশ ধারণ করে তাঁদের সামনে আসেন। তিনি একটি তৃণখণ্ড দেবতাদের সামনে পরীক্ষার জন্য রাখলেন। কিন্তু অগ্নি ও বায়ু কেউই তাঁদের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করেও এই তৃণখণ্ডটিকে পোড়াতে বা সরাতে পারলেন না। তখন দেবগণ ইন্দ্রকে যক্ষের পরিচয় জানবার জন্য পাঠালেন । ইন্দ্র অবশ্য অহংকার-প্রমত্ত হয়ে যক্ষের কাছে না এসে, এসেছিলেন জিজ্ঞাসু হয়ে। <br />
<br />
তাই ব্রহ্মরূপী যক্ষ তাঁর সামনে থেকে সরে গিয়ে আকাশে দিব্য স্ত্রীমূর্তিতে আবির্ভূত হলেন হৈমবতী উমা। আর উমা ব্রহ্মের স্বরূপ ব্যাখ্যা করে ইন্দ্রের জ্ঞানপিপাসা মিটিয়েছিলেন বলেই কথিত। সেই জগদ্ধাত্রী দেবী ত্রিনয়না, চতুর্ভূজা ও সিংহবাহিনী। তাঁর চার হাতে শঙ্খ, চক্র, ধনুক ও বাণ রয়েছে আর গলায় দেখা যায় নাগযজ্ঞোপবীত। বাহন সিংহ করীন্দ্রাসুর অর্থাৎ হস্তীরূপী অসুরের পিঠের উপর দাড়িয়ে রয়েছেন৷। দেবীর গায়ের রঙ উদিয়মান সূর্যের মতো। উপনিষদে অবশ্য উমার রূপবর্ণনা নেই। সেখানে কেবলমাত্র তাঁকে হৈমবতী অর্থাৎ স্বর্ণালঙ্কারভূষিতা বলা হয়েছে। <br />
<br />
তবে এই হৈমবতী উমাই যে দেবী জগদ্ধাত্রী সে প্রত্যয় জন্মে কাত্যায়ণী তন্ত্রের ৭৬ তম অধ্যায় উল্লিখিত এক কাহিনিতে রয়েছে । সেই কাহিনি অনুসারে : ইন্দ্র, অগ্নি, বায়ু ও চন্দ্র – এই চার দেবতা এমন অহংকারে মত্ত হয়ে ভুলে যান যে তাঁরা দেবতা হলেও তাঁদের স্বতন্ত্র কোনও শক্তি নেই – মহাশক্তির শক্তিতেই তাঁরা বলীয়ান। এই দেবগণের ভ্রান্তি দূর করতে দেবী জগদ্ধাত্রী কোটি সূর্যের তেজ ও কোটি চন্দ্রের প্রভাযুক্ত এক দিব্য মূর্তিতে তাঁদের সম্মুখে উপস্থিত হলেন। <br />
<br />
এই অ্যাখ্যানের পরের অংশ অবশ্য উপনিষদে দেওয়া তৃণখণ্ডের কাহিনির অনুরূপ। দেবী প্রত্যেকের সম্মুখে একটি করে তৃণখণ্ড রাখলেন; কিন্তু চার দেবতার কেউই তাকে স্থানচ্যুত বা ভষ্মীভূত করতে পারলেন না। তখন দেবগণ নিজেদের ভুল বুঝতে পারলেন। তখন দেবী তাঁর তেজোরাশি স্তিমিত করে এই অনিন্দ্য মূর্তি ধারণ করলেন। সেই মূর্তি ত্রিনয়না, চতুর্ভূজা, রক্তাম্বরা, সালংকারা, নাগযজ্ঞোপবীতধারিনী ও দেব-ঋষিগণ কর্তৃক অভিবন্দিতা এই মঙ্গলময়ী মহাদেবীর মূর্তিকে দেখে দেবগণও তাঁর স্তবে বসেন ৷<br />
<br />
জগদ্ধাত্রী পুজো বাঙালি হিন্দু সমাজের একটি বিশিষ্ট উৎসব হলেও তা দুর্গা বা কালী পুজোর তুলনায় অপেক্ষাকৃত আধুনিক । অষ্টাদশ শতকে নদিয়ারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায় তাঁর রাজধানী কৃষ্ণনগরে এই পূজার প্রচলন করার পর এই পুজোর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। যদিও তার আগে, শূলপাণি খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতকে কালবিবেক গ্রন্থে কার্তিক মাসে জগদ্ধাত্রী পুজোর উল্লেখ করেছেন। তাছাড়া পূর্ববঙ্গের বরিশালে খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে নির্মিত জগদ্ধাত্রীর একটি প্রস্তরমূর্তি পাওয়া যায়। <br />
<br />
আবার কৃষ্ণচন্দ্রের রাজত্বকালের আগে নির্মিত নদিয়ার শান্তিপুরের জলেশ্বর শিবমন্দির ও কোতোয়ালি থানার রাঘবেশ্বর শিবমন্দিরের ভাস্কর্যে জগদ্ধাত্রীর মূর্তি লক্ষ্য করা যায়। এই গুলি থাকলেও মনে করা হয়, বাংলার জনসমাজে কৃষ্ণচন্দ্রে পূর্বে জগদ্ধাত্রী পূজা বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেনি কেবলমাত্র কিছু ব্রাহ্মণের ঘরে দুর্গাপুজোর পাশাপাশি জগদ্ধাত্রী পুজো হত।<br />
<br />
কৃষ্ণনগরে এই পুজো শুরুর ঘিরে নানা মত রয়েছে ৷ কিংবদন্তী অনুসারে নবাব আলিবর্দির রাজত্বকালে মহাবদজঙ্গ রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের কাছ থেকে বারো লক্ষ টাকা নজরানা দাবি করেছিলেন। সেই নজরানা দিতে না পারায় রাজাকে বন্দী করে মুর্শিদাবাদে (মতান্তরে মুঙ্গেরে) নিয়ে যাওয়া হয়৷। এরপর মুক্তির পর নদীপথে কৃষ্ণনগরে ফেরার সময় ঘাটে বিজয়াদশমীর বিসর্জনের বাজনা শুনে তিনি বুঝতে পারেন সেই বছর দুর্গাপুজোর সময় পেরিয়ে গিয়েছে। তাই দুর্গাপূজার আয়োজন করতে না পেরে রাজা অত্যন্ত দুঃখিত হন। সেই রাতেই দুর্গা জগদ্ধাত্রীর রূপে রাজাকে পরবর্তী শুক্লানবমী তিথিতে জগদ্ধাত্রী দুর্গার পূজা করার আদেশ দেন। <br />
<br />
কেউ কেউ আবার কৃষ্ণচন্দ্রের প্রপৌত্র গিরিশচন্দ্রকে কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রবর্তক মনে করেন। কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির দরজা জগদ্ধাত্রী পুজোর সময় এখনও খোলা রাখা হয়। আবার ১৭৭২ সালে রাজবাড়ির দেখাদেখি কৃষ্ণনগরের চাষাপাড়ায় রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের প্রজারা জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেন। যা বুড়িমার পুজো নামে পরিচিত, এই পুজো শুরু হয়েছিল ঘটে ও পটে। প্রথম দিকে স্থানীয় গোয়ালারা দুধ বিক্রি করে এই পুজোর আয়োজন করতেন। <br />
<br />
১৭৯০ সাল নাগাদ গোবিন্দ ঘোষ ঘটপটের পরিবর্তে প্রতিমায় জগদ্ধাত্রী পূজার সূচনা করেন। এছাড়া কৃষ্ণনগরের বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বারোয়ারি জগদ্ধাত্রী পুজো রয়েছে যাদের সংখ্যা ২০০ বেশি, যা জগদ্ধাত্রী পুজোর জন্য বিখ্যাত চন্দননগর মহানগরের চেয়েও বেশি।<br />
<br />
<img alt="Jagadhatri Puja" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgKROpnLhfxLODiLuj_SWBw8PuNuQekxuB8jSAZ9o_IvIHWB_bhhEQ4QOU377ooxG9IwwjprkJB7nAviZ_OSiPU4utM7ReI9AdaIWhhfkN7Lf6g6HI1g9ZPbK1ahW3l0ESA0Yo5svhkI1We/s640/Jagadhatri+Maa2.JPG" /><br />
<br />
কথিত আছে চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রবর্তক ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের ঘনিষ্ঠ এই ইন্দ্রনারায়ণ ছিলেন চন্দননগরের ফরাসি সরকারের দেওয়ান। প্রায় আড়াইশো বছর আগে, কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির পুজো দেখে মুগ্ধ হয়ে ইন্দ্রনারায়ণ চন্দননগরের লক্ষ্মীগঞ্জ চাউলপট্টির নিচুপাটিতে জগদ্ধাত্রী পুজো সূচনা করেন। এটিও চন্দননগরে আদি পুজো বলে পরিচিত। এখনও পর্যন্ত পুরুষানুক্রমে দেওয়ান চৌধুরীদের উত্তরপুরুষের নামে এই পুজোর সংকল্প হয়। <br />
<br />
লক্ষ্মীগঞ্জ কাপড়পট্টির জগদ্ধাত্রীই হল চন্দননগরে দ্বিতীয় প্রাচীনতম পুজো। ১৭৬৮ সালে চাউলপট্টির চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতান্তর হওয়ায় কাপড় ব্যবসায়ী শ্রীধর বন্দ্যোপাধ্যায় (মতান্তরে শশধর) রীতিমতো চাঁদা তুলে এই পুজোর প্রবর্তন করেছিলেন। এই অঞ্চলের অপর দুটি পূজা হল লক্ষ্মীগঞ্জ চৌমাথা (স্থাপিত ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দ) ও লক্ষ্মীগঞ্জ বাজারের (স্থাপিত ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দ) পূজা। এখানকার পুজো শুধু নবমীর বদলে সপ্তমী অষ্টমী নবমীতেই হতে দেখা যায়৷ <br />
<br />
চন্দননগরের জগদ্ধাত্রীপুজো ঘিরে আলোর রোশনাই জাঁকজমক খুবই বিখ্যাত ৷ আর তা দেখতে নানা স্থান থেকে এসে এই সময় লোকেরা চন্দননগরে ও তার আশপাশে ভিড় করে যার জন্য বিশেষ ট্রেনেরও ব্যবস্থা করা হয় ৷ এদিকে বাঁকুড়া জেলার জয়রামবাটী গ্রামে মা সারদা দেবীর জন্মভিটায় জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজন করে রামকৃষ্ণ মিশন। ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে (১২৮৪ বঙ্গাব্দ) সারদা দেবীর বাপের বাড়িতে প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজন করেছিলেন তাঁর মা শ্যামাসুন্দরী দেবী। <br />
<br />
কথিত আছে প্রতি বছর শ্যামাসুন্দরী দেবী প্রতিবেশী নব মুখুয্যের বাড়ির কালীপূজা উপলক্ষ্যে নৈবেদ্যের চাল পাঠাতেন কিন্তু ওইবছর কোনও কারণে নব মুখুজ্যে চাল নিতে অস্বীকার করেন। নৈবেদ্যদানে অসমর্থ হয়ে শ্যামাসুন্দরী দেবী অত্যন্ত মর্মাহত হন। সেই রাতেই তিনি দেবী জগদ্ধাত্রীকে স্বপ্নে দেখেন এবং তাঁর স্বপ্নাদেশে ওই চালে জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজন করেন। জীবদ্দশায় প্রতি বছরই জগদ্ধাত্রী পূজায় উপস্থিত থাকতেন সারদা দেবী। <br />
<br />
পূজা পরিচালনার জন্য তিনি সাড়ে দশ বিঘার কিছু বেশি জমি দেবোত্তর সম্পত্তিরূপে দিয়ে যান। ১৯১৯ সালে সারদা দেবী এই পূজায় শেষবার উপস্থিত ছিলেন। পরের বছর তিনি প্রয়াত হন। প্রথম পুজোর ঐতিহ্য অনুযায়ী এখনও শুক্লা নবমীতে মূল পুজোর পরও দুদিন প্রতিমা রেখে দিয়ে বিশেষ পুজার আয়োজন করা হয়। পুজোর সঙ্কল্প হয় সারদা দেবীর নামে।Kalyan Panjahttp://www.blogger.com/profile/00806730473428069202noreply@blogger.com1tag:blogger.com,1999:blog-6051442196783369904.post-39054718525528990192021-11-05T21:49:00.000+05:302021-11-05T21:49:44.949+05:30ভাইফোঁটা, জেনে নিন ফোঁটা দেওয়ার তিথি ও নিয়মভাইয়ের কপালে দিলাম ফোটা - যমের দুয়ারে পড়লো কাটা ভাই ফোটার দিন বোনেরা এই প্রার্থনা করেন ভাইয়ের জন্য। ভাইয়ের দীর্ঘায়ু ও মঙ্গলের জন্য বোনেরা এদিন উপবাসী থেকে ভাইদের ফোটা দেন। ভাই ফোটা কার্ত্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় । এদিন ভাইরাও বোনের ফোটা নিয়ে বোনের বাড়ীতে রান্না করা খাবার খান। নিয়ম এমনটাই।<br />
<br />
ভাই ফোটার সাথে জড়িয়ে আছে যমরাজ ও যমুনা দেবীর ঘটনা । যম আর যমুনা সূর্য দেবতার পুত্র। পুরান শাস্ত্র এমটাই বলে। পুরানের ঘটনা শোনা যাক। সূর্য দেবতার প্রথম স্ত্রী হলেন সংজ্ঞা । সংজ্ঞার সন্তান সন্ততি হলেন যম ও যমুনা। সূর্যের প্রবল তেজ সহ্য করতে না পেরে একদিন সংজ্ঞা তারই মতোন দেখতে এক নারীকে সৃষ্টি করে সূর্য লোক থেকে পৃথিবীতে চলে আসেন। সেই সৃষ্ট নারী সংজ্ঞার ছায়া মূর্তি ছিল । তাঁর নামা ছায়া। ছায়ার সন্তান হলেন শনি দেবতা। <br />
<br />
একদিন যম আর যমুনা জানতে পারেন এটি তাঁদের গর্ভ ধারিনী মা নন, বরং তার মতোন দেখতে অন্য নারী। যমুনা তখন মাকে খুঁজতে পৃথিবীতে আসেন ও নদী রূপে প্রবাহিতা হলেন । সেই শোকে যম রাজাও বোনকে খুঁজতে বের হলেন। যমুনা সূর্য লোকে ফিরতে নারাজ। কিন্তু যম রাজা শোকাকুল। দেবর্ষি নারদের পরামর্শে যমুনা দেবী, যমরাজ কে ভাই ফোটা দিলেন। <br />
<br />
ললাটে দিলেন চন্দনের তিলক । সেই থেকে ভাইফোটা মর্তে প্রচলন হল। ভাইফোঁটা যমের প্রিয় অনুষ্ঠান। বলা হয় ভাইফোঁটা উৎসব যে ভাই বোনেরা পালন করেন, তাঁদের ওপর যমের কোপ দৃষ্টি পড়ে না। তারা দীর্ঘায়ু হন।<br />
<br />
<img alt='Bhai Phota images' src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhJkNJWQLyAC4Mabr6wjq6WLiykXD_gIl2d6Qt-28jZ0yYqbhKnqSDqYxoEyfsr-BNfkA5Kc7OZAij-zADh9XjkNDoXdmT_EqoEnpJnumfR4XQeBL7BCnf28cduG1WOHmpyQNiDq8PDHZ-x/s1600/bhai-dooj-jhbjh.jpg" /><br />
<br />
আজও এই প্রথা নিষ্ঠা সহকারে পালিত হয়। বোনেরা উপবাসী থেকে ভাইয়ের কপালে চন্দনের ফোটা দেন। ধান, দূর্বা, পান, প্রদীপ দিয়ে ভাইয়ের মঙ্গল কামনা করেন। ভাইকে মিষ্টি মুখ করান, বস্ত্র উপহার দেন। ভাইরাও এদিন বোনকে মিষ্টি, শাড়ী উপহার দিয়ে বোনের হাতে রন্ধন ভোজন করেন। এই অনুষ্ঠান ভাই বোনের মধুর সম্পর্ককে আরও উজ্জ্বল করে। দ্বিতীয়া তিথিতে হয় বলে এই অনুষ্ঠানের নাম ভাতৃ দ্বিতীয়া। <br />
<br />
পারিবারিক এই অনুষ্ঠানটি সকল ভাই এর প্রতি বোনদের যে মমতা তুলে ধরে তা অনন্য । ভাইফোঁটা তাই সকল ভাইয়ের, সকল বোনের অনুষ্ঠান । ভাইদের<br />
মঙ্গল কামনায় উন্মুখ বোনের হৃদয় মাঙ্গলিক নানা অনুষ্ঠানে ধরা দেয় ভাইফোঁটায়। পারিবারিক নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে এই আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হয় । সাধারনত ভাইরা বোনেদের কাছে এসে চন্দন চর্চিত ফোটা নেয় । বোন ছোট হলে দাদা আর্শীবাদ করে থাকেন । সেই সাথে দাদার পক্ষে বোনদের জন্য স্পেশাল কোনো গিফট তো থাকছেই।<br />
<br />
বোন বড় হলে আদরের ভাইকে ফোঁটার সাথে ভাইকে উপহার দেয়া হয়ে থাকে । ভাই ফোটা অনুষ্ঠানের কোনো ধর্মীয় মন্ত্র নেই । বিষয়টি কোনো ধর্মীয় গন্ডীর অনুষ্ঠানও নয় । সাধারণত প্রদীপ জালিয়ে, উলুধ্বনি দিয়ে মাঙ্গলিক পরিবেশে অনুষ্ঠানটি হয়ে থাকে । সবশেষে ভাইকে মিষ্টি খাইয়ে, প্রণাম ও আর্শীবাদ দেয়া নেয়ার মধ্যে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।<br />
<br />
ভাই বোনের সম্পর্কটা যে কতটা আন্তরিক, মধুর ও স্নেহের পরশ মাখানো তা এই ভাই ফোঁটার দিনটা আসলে আরো গভীর ভাবে অনুভব করা যায়।<br />
<br />
আগামী কাল ভাইফোঁটা। সকলকে শুভেচ্ছা জানাই।Kalyan Panjahttp://www.blogger.com/profile/00806730473428069202noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-6051442196783369904.post-3517804046369362642021-11-04T20:03:00.000+05:302021-11-04T20:03:52.789+05:30কালী পুজোর ইতিহাস, রূপের বর্ণনা <p>মা কালী হলেন শক্তির দেবী। তার অন্য নাম শ্যামা বা আদ্যাশক্তি। সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু তথা বাঙালিদের কাছে এই দেবী বিশেষভাবে পূজিত হন। তন্ত্র মতে পূজিত প্রধান ১০ জন দেবীরর মধ্যে তিনি অন্যতম পূজিত দেবী। যারা সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করতে চান যারা তন্ত্র এবং মন্ত্র ক্ষমতায় যারা বিশ্বাস করেন, যারা মানুষরূপী হয়েও ঐশ্বরিক ক্ষমতার অধিকারী হতে চান তারা মা কালী পূজা অত্যন্ত ভক্তি সহকারে করে থাকেন। সাধারণত কালী মায়ের উ রূপগ্র আমাদের মনে ভয়ের উদ্রেক করে। </p><p>কিন্তু কালী মায়ের এরকম উগ্র রূপ সৃষ্টির পেছনে আছে পৌরাণিক কারণ। ভারতে কালীপুজোর উৎপত্তি বিকাশ এবং প্রচলন প্রথা সম্পর্কে নানা তথ্য চারিদিকে ছড়িয়ে আছে। সেই সকল তথ্য কোনটা সত্য আর কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা তা কিন্তু বলা খুব মুশকিল। বর্তমানে সারা ভারত জুড়ে কালী মায়ের ভক্তি সহকারে যে পূজার প্রচলন আমরা দেখতে পা,য় অতীত ঘাঁটলে তার উৎপত্তি সম্পর্কে নানান তথ্য আমরা পেয়ে থাকি। আজকের প্রতিবেদনে আমরা সেসব তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করব আপনাদের সামনে।</p><p>
<b>কালী মায়ের রূপের বর্ণনা</b>:-</p><p>
আমরা সাধারণত কালী মাতার যে রূপের দর্শন পায় তা হলো তিনি চতুর্ভূজা অর্থাৎ তার চারটি হাত যুক্ত মূর্তি আমরা দেখতে পাই ।এই হাতে মধ্যে আছে একটিতে খড়গ, অন্যটিতে অসুর মুণ্ড অন্য হাতগুলিতে তিনি বর এবং অভয় প্রদান করেন। গলায় নরমুণ্ডের মালা, প্রতিকৃতি ঘন কালো বর্ণের এবং জীভ মুখ থেকে বাইরের দিকে বেরিয়ে আছে । এছাড়াও তিনি এলোকেশী। মা কালীকে দেখা যায় শিবের বুকের উপর পা দিয়ে জিভ বার করে দাঁড়িয়ে আছেন।</p><p>
<b>কালী পূজার বাংলায় উৎপত্</b>তি:-</p><p>
কালী শব্দটি কাল শব্দের স্ত্রীর রূপ, যার অর্থ হলো কৃষ্ণ বর্ণ বা গুরু বর্ণ। বিভিন্ন পুরাণ থেকে থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী মা কালী মহামায়া মা দুর্গার অন্য একটি রূপ। মা আবার প্রাচীন গ্রন্থে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী কালী একটি দানবীর রূপ। মহাভারতে একটি দেবীর উল্লেখ আছে যিনি হত যোদ্ধা এবং পশুদের আত্মা বহন করে যার নাম কাল রাত্রি বা কালি। নবদ্বীপের এক তান্ত্রিক যার নাম কৃষ্ণানন্দ তিনি বাংলায় প্রথম কালীমূর্তি বা প্রতিমা পূজার প্রচলন করেন। </p><p>তার আগে মা কালীর উপাসকরা তাম্র পটে বা খোদাই করে কালীর মূর্তি এঁকে মা কালী সাধনা করতেন। পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন কৃষ্ণনন্দ বাবু কালী মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পূজা করতেন। অষ্টাদশ শতাব্দীতে নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় কালী পূজাকে জনপ্রিয় করে তোলেন এবং এইভাবে মা কালীর প্রতিমা পূজার প্রচলন শুরু। উনবিংশ শতাব্দীতে বাংলার বিভিন্ন ধনী জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় কালীপুজোর ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়।</p><p>
<b>মা কালীর বিভিন্ন রূপের বর্ণনা</b>:-</p><p>
তন্ত্র এবং পুরাণে দেবী কালীর একাধিক রূপের বর্ণনা পাওয়া যায় যেমন দক্ষিণা কালী, শ্মশান কালী, ভদ্রকালী, রক্ষাকালী ,গ্রহ কালী, চামুণ্ডা, ছিন্নমস্তা ইত্যাদি। মহাকাল সংহিতা অনুসারে মা কালীর আবার নব রূপের পরিচয় পাওয়া যায়।যেমন কাল কালী কঙ্কাল কালী, চিকা কালী এমন সব রূপের রূপের পরিচয় পাওয়া যায়। এছাড়াও বিভিন্ন মন্দিরে ব্রহ্মময়ী আনন্দময়ী ভবতারিণী আনন্দময়ী ইত্যাদি নামেও মা কালীর পূজা বা উপাসনা করতে দেখা যায়।</p><p>
<b>কালী পূজার সময়কাল</b>:-</p><p>
দুর্গাপূজার পরবর্তী অমাবস্যাতে দীপান্বিতা কালী পূজা করা হয়। এছাড়াও মাঘ মাসে রটন্তী কালীপূজা এবং জ্যৈষ্ঠ মাসে ফলহারিণী কালীপূজা কালীপূজা ফলহারিণী কালীপূজা কালীপূজা মাসে ফলহারিণী কালীপূজা কালীপূজা ফলহারিণী কালীপূজা কালীপূজা মাসে ফলহারিণী কালীপূজা কালীপূজা ফলহারিণী কালীপূজা কালীপূজা ধুমধাম সরকারে অনুষ্ঠিত করা হয়। অনেক জায়গায় প্রতি অমাবস্যায় এছাড়াও বিভিন্ন সিদ্ধ অমাবস্যায় এছাড়াও বিভিন্ন সিদ্ধ পিঠে প্রতিদিন এবং প্রতি শনি ও মঙ্গলবার মা কালী পূজার প্রচলন দেখা যায়।</p><p>
<b>মা কালীর উৎপত্তির পৌরাণিক ব্যাখ্</b>যা:-</p><p>
সনাতন ধর্মীয় শাস্ত্র অনুযায়ী মা কালীর আবির্ভাব সম্পর্কে যে তথ্য পাওয়া যায় তা হল পুরাকালে শুম্ভ এবং নিশুম্ভ নামক দুই দৈত্য সারা পৃথিবী জুড়ে তাদের ভয়ঙ্কর ত্রাসের সৃষ্টি করেছিল ।দেবতারাও এই দুই দৈত্যের কাছে যুদ্ধে আত্মসমর্পণ করে। ফলে দেব লোক তাদের হাতছাড়া হয়ে যায় তখন দেবরাজ ইন্দ্র দেভ লোক ফিরে পাওয়ার জন্য আদ্যশক্তি মা মহামায়ার তপস্যা করতে থাকেন তখন দেবী সন্তুষ্ট হয়ে তাদের কাছে আবির্ভূত হন এবং দেবীর তাদের কাছে আবির্ভূত হন এবং দেবীর হয়ে তাদের কাছে আবির্ভূত হন এবং দেবীর তাদের কাছে আবির্ভূত হন এবং দেবীর শরীর কোষ থেকে অন্য এক দেবী সৃষ্টি হয় যা কৌশিকী নামে ভক্তদের কাছে পরিচিত দেবী কৌশিকী মা মহামায়া দেহ থেকে নিঃসৃত হলে মামা মামা কাল বর্ণ ধারণ করে যা দেবী কালীর আদিরূপ বলে ধরা হয়।</p><p>
<b>কালী পূজার বিভিন্ন পদ্ধতি</b>:-</p><p>
তান্ত্রিক পদ্ধতিতে মধ্যরাত্রে অর্থাৎ অমাবস্যার রাত্রে মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে কালী পূজা করা হয়। এক্ষেত্রে মা করা হয়। এক্ষেত্রে মা কালীকে পশু রক্ত বা পশু বলি করে উৎসর্গ করা হয়। এছাড়াও লুচি প্রসাদ এবং নানা ফল ভোগ হিসাবে দেওয়া হয়ে থাকে। গৃহস্থ বাড়িতে সাধারণত সাধারণত অতান্ত্রিক ব্রাহ্মণ মতে মা কালীর পুজা দেখা যায় । এক্ষেত্রে অনেক সময় জমিদার বাড়িতে ছাগ বা মহিষ ছাগ বা মহিষ বা মহিষ বলি দেওয়া হতো এবং বর্তমানেও অনেক জায়গায় পশু বলির মাধ্যমে পূজার প্রচলন দেখা যায় । পুরাকালে বা প্রাচীন সময়ে বিভিন্ন ডাকাতের দল নরবলির মাধ্যমে কালী পূজা করত করত বলে শোনা যায়।</p><p>
<b>কালীপুজোর পদ্ধতি ও উপকরণ</b>:-</p><p>
সাধারণত যে কোন পূজায় ভক্তি সহকারে সহকারে করলে আরাধ্য দেবতা বা দেবী আশীর্বাদ দিয়ে থাকেন। যেহেতু মা কালী আদ্যা শক্তির দেবী অর্থাৎ শক্তি এবং সাহস অর্জন করার জন্য এই দেবীর পূজা করা হয় তাই কালী পূজার ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিশেষ নিয়ম অবশ্যই মেনে চলতে হয়। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় কালির দোয়াত কালী পূজার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পুজোর শুরু হওয়ার পূর্বে অনামিকা অঙ্গুলি দ্বারা কালির দোয়াত বা লিখনী দোয়াত দিয়ে স্বস্তিক চিহ্ন অঙ্কন করা হয়। স্বস্তিক অঙ্কন সম্পন্ন সম্পন্ন হলে দেবীর পূজা শুরু হয় ।বহুল আয়োজন বা ঘনঘটা করে অনুষ্ঠান করলে দেবী যে প্রসন্ন লাভ করেন তা কিন্তু নয় ।কালীপুজোর অন্যতম প্রধান উপাদান হলো জবাব জবাব জবাব ফুল তাই কালীপুজোর ক্ষেত্রে মা জবা ফুল খুবই পছন্দ করেন অন্যতম প্রধান উপকরণ হিসেবে অবশ্যই রাখতে হয় জবা ফুল। </p><p>এছাড়াও আস্থা ভক্তি এবং শ্রদ্ধা সহকারে পূজা করা হলে মায়ের আশীর্বাদ অবশ্যই লাভ করা যায় কালীপুজোয় অন্যতম প্রধান ভোগ হিসাবে সোম রস রস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সাধারণত মধ্য রাতে এই পূজা শুরু হয় এবং ভোররাতে এ পূজা সম্পন্ন হয়ে থাকে। সাধারণত আরতি ,আহ্বান এবং পুষ্পাঞ্জলির দ্বারা এই পূজা সম্পন্ন করা হয় এছাড়াও অনেক সময় ধ্যান করতেও দেখা যায় এই পূজার ক্ষেত্রে। অনেক সময় ধ্যানের মাধ্যমে দেবী কালীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং পরবর্তী সময়ে আবাহন ও পুষ্পাঞ্জলির মাধ্যমে দেবী কালীর পূজা পদ্ধতি সম্পন্ন হয়ে সম্পন্ন হয়ে থাকে। জবা ফুল, চন্দন ,পুষ্প, ধূপ, দীপ ইত্যাদি কালী পূজার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
</p><p>কালীর বিভিন্ন রূপভেদ আছে। যেমন দক্ষিণাকালী, শ্মশানকালী,ভদ্রকালী, রক্ষাকালী, গুহ্যকালী,মহাকালী, চামুণ্ডা ইত্যাদি।মুলত এগুলো গাহস্থ্য ও সাধন অধিষ্ঠাত্রী নাম মিশ্রিত। তবে ধারাক্রমে বিভিন্ন তন্ত্র শাস্ত্র ও পুরানমতে ক্রমানুক্রমে কালীরগাহস্থ্য (সমাজে প্রচলিত রুপ) রুপধারা গুলো হলো</p><p>১) দক্ষিনাকালীঃ (সর্বকালে সর্বদেশের সমাজে পুজিতা) মুলত দেবীর প্রধান রুপ।তার পুজাবিধির মধ্যে কয়েকটি লাইন পরিবর্তন করে অন্যদেবীর পুজা হয়, ভৈরব, বটুক এবং শবরুপি শিব একই থাকে, শুধু নামের পরিবর্তন হয়।ইনিই কালীর প্রধান রুপ।</p><p>২) ভদ্রাকালীঃ (পাতালের দেবী, তবে বিশেষ বিশেষ অঞ্চলে ইনি পুজিতা হন, তবে ভদ্রাকালী যেহেতু পাতাল কালি, তিনি নিজ থেকে পাতাল থেকে উঠে না এলে মানুষের পক্ষে তার পুজা করা সম্ভব নয়, যেমন, চট্টগ্রামের নলুয়া কালীবাড়ি, ইনি ভদ্রাকালী স্থান ভেদে এই কালী মহাকালী নামেও পরিচিত। তবে ভদ্রাকালী ও মহাকালী এক, কারন উভয়ের পুজা ধ্যানমন্ত্র এক</p><p>৩) রক্ষাকালীঃ রক্ষাকালী দক্ষিনাকালীর একটি নাগরিক রুপ।প্রাচীন কালে নগর বা লোকালয়ের রক্ষার জন্য এই দেবীর পুজা করা হতো। এই দেবীর পুজা মন্ত্র ভিন্ন এবং ইনার বাহন স্থানভেদে সিংহ</p><p>৪) রটন্তিকালীঃ পুত্র সন্তান কামনায় বিশেষ ভাবে এই দেবীর পুজা করা হয়, এছাড়া ধন বৃদ্ধির জন্যও ইনি বছরের একটি বিশেষ অমাবস্যায় পুজিত হন।শাস্ত্রানুযায়ী মাঘ মাসের কৃষ্ণাচতুর্দশী তিথির নামই হলো রটন্তি, এইদিন সন্ধায় তার পুজা করতে হয়।</p><p><img alt="কালী পূজা" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgjmmWxKXuivRRvqzIOXB6bNtUUuhIf3gaLxp9mZU9RzPZFr90quptwQLiyA442nLwJm4MdU-JR25Ue8z6AsIDiHIgBdwYUpgHfPa13h8HR4HNMSaTTy_8blAZ8-HV3525FUAoI9HBa07KC/s1600/Kali+026.jpg" /></p><p>৫) ফলহারিনী কালীঃ গৃহ ধর্মকে সুন্দর করতে এই দেবীর আবির্ভাব, নামে ফলহারিনী হলেও অভিষ্ট সিদ্ধ দায়িনি,জানা যায় রামপ্রসাদ নিজ স্ত্রীকে এই দিন দেবীরুপে পুজা করে নারী জাতীর সম্মানের জন্য এর ফল উৎসর্গ করেন।এটিও বাৎসরিক একটি পুজা।</p><p>৬) নিশাকালীঃ নিশাকালী নিয়ে মতভেদ আছেবলা হয়ে থাকে ইনি জেলেদের রক্ষাকারী, দুর্যোগময় রাতে জেলেরা সমুদ্রে গেলে তার পুজা করে যেতেন, অবিশ্বাস্য হলেও সত্য তার চরন ছোয়া ফুল যে নৌকায় থাকতো সেই নৌকা কদাচিৎ ডুবতোই না। এছাড়া আধিভৌতিক ভীতি কাটানোর জন্যওএই দেবী প্রসিদ্ধ। আবার অন্যমতভেদও আছেকোন এক সময় এক গ্রামের কয়েকটি জেলে পুরুষ নৌকা নিয়ে বের হয়ে যাবার পর প্রচণ্ড ঝড় শুরু হয়।সেই সময় সকল জেলে পত্নী তাদের স্বামীর জন্য দেবী মন্দিরে উপস্থিত হয়ে প্রার্থনা করতে থাকে, সেই সময় একজন বৃদ্ধা</p><p>এসে তাদের নিশাকালীর মাহাত্ম্য কথা বলে তাদের বলেন, যে কুলে স্বয়ং দেবী জন্ম নিয়েছিলেন, সেই কুলের রুক্ষাকর্ত্রী দেবী নিজেই, তাই তার রুপ নিশাকালীর ব্রত করো, তিনিই দুর্যোগময় রাতে তোমাদের পতিদের রক্ষা করবেন, সেই থেকে জেলেকুলে ধুমধামের সাথে দেবীর স্থান হলেও কালক্রমে নিশাকালীর পুজা প্রথা বিলীন হয়ে যায়, কিন্তু স্থানভেদে কিছু জায়গায় এখনো তার পুজা বিদ্যমান।</p><p>৭) কাম্যকালীঃআমাদের বিশেষ কামনায় বা বিশেষ প্রার্থনায় যে কালীপুজা আয়োজন করা হয়, তাকেই কাম্যকালী পুজা বলা হয়, পুজা বিধি দক্ষিনাকালীর মতই।সাধারনত অষ্টমী, চতুর্দ্দশী অমাবস্যা পুর্ণিমা ও সংক্রান্তিকে পর্বদিন বলে।পর্বসমুহের মধ্যে অমাবস্যাকে বলা হয় মহাপর্ব। বিশেষ কামনায় এই সকল তিথিতে যে পুজা করা হয় তাকেই কাম্যকালী পুজা বলা হয়।</p><p>৮) শ্মশান কালীঃ শ্মশানের অধিষ্ঠাত্রী দেবীই হলেন শ্মশানকালী।তার পুজাবিধি একটু অন্যপ্রকার। সাধারনত বলা হয়ে থাকে যে গৃহীদের জন্য এই দেবীর পুজা নিষিদ্ধ।সেই সকল গৃহীই তার পুজা করতে পারে, যে শশ্বানে তাদের পরিবারের দেহ রাখা হয়েছে এবং শুধুমাত্র সেই শ্মশানকালীর পুজা তারা করতে পারেন। কিন্তু সব শ্মশানেই শ্মশানকালী থাকে না।ছোট ছোট শ্বশান মিলে একটি মহাশ্বশান হয়, আর কয়েকটি মহাশ্বশান নিয়েই শ্বশানপীঠ হয়, এই পীঠেই দেবী অবস্থান করেন।</p>Kalyan Panjahttp://www.blogger.com/profile/00806730473428069202noreply@blogger.com1tag:blogger.com,1999:blog-6051442196783369904.post-81933106268328720422021-10-14T08:36:00.000+05:302021-10-14T08:36:43.142+05:30মহানবমী, শারদীয়া দুর্গাপূজার শেষ রজনী যেও না নবমী নিশি লয়ে তারা দলে, তুমি গেলে দয়াময়ী এ পরাণ যাবে। নবমীর নিশি পোহালেই মার যাবার পালা। মন সবারই ভারাক্রান্ত, একটা অদ্ভুত বিষণ্ণতা। মন খারাপের রঙ জামকে নিয়েই আমাদের নবমীর রাতের সোনামুখী সিল্ক। <br />
<br />
তবুও যেন এ রঙ পরিতৃপ্তির, চারদিনের উৎসবের টুকরো টুকরো সোনালী স্মৃতি ছিটিয়ে আছে মীনা কাজের মধুবনী আঁকা আঁচলে, আমরা গেঁথে রাখছি মঙ্গলসূত্রে। ভোগের বেগুনভাজার ব্যঞ্জনবর্ণ, পঞ্চকশাইয়ের জাম ফল, খুঁজে পাওয়া জারুল ফুল, আবার নবমী পুজোর ব্যবহৃত খাল, বিলে ফুটে থাকা বেগুনী কুমুদ ফুলকে পেয়েছি আমরা কুরশের কাজের রুমালে। <br />
<br />
এই রঙ ছড়িয়ে পড়ছে দেশের পশ্চিম প্রান্তে, আরব সাগরের পারে। সব্বাই মেতে উঠেছে নবরাত্রির গরবা, ডান্ডিয়ার রাসে। নৃত্যবিলাসীরাও সেজে উঠছে এই একই নির্দিষ্ট রঙে। <br />
<br />
নবমীর সকাল হলেই যেন মনটা কেমন খারাপ হতে থাকে। বেলা গড়িয়ে যতই বিকেল হতে থাকে ততই গভীর হতে থাকে মন খারাপ। আর সন্ধের পর থেকে ঢাকের আওয়াজেও যেন বিষাদের সুর। নবমীর রাতটা এলেই মনে হতে থাকে আজই পুজো শেষ। কাল ভাসান হলেই আবার সেই একঘেয়ে জীবনে ফেরা। আর মাত্র এক দিন ছুটি। তারপরই অফিস। আবার অফিস যেতে হবে ভাবলেই মুড অফ হয়ে যায়। আর নবমীর রাতে না চাইতেও মনে আসে এই চিন্তা। <br />
<br />
সবচেয়ে কাছের মানুষদের সঙ্গে কাটান, নিজের সবচেয়ে পছন্দের রেস্তোরাঁয় খেতে যান, সবচেয়ে পছন্দের পোশাকটা পরুন। যাতে এর পরেও এই বছরের নবমী নিশির কথা ভাবলে আপনার মনটা খুশিতে ভরে ওঠে। নবমী নিশিটা তাই রাখুন এক্সক্লুসিভলি পরিবারের সঙ্গে কাটানোর জন্য। শেষবেলাটা পরিবারের সঙ্গে কাটালে দেখবেন পুজো চলে গেলেও মন খারাপ হবে না।<br />
<br />
<img alt="Dhunuchi Naach" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhY8NApehgsWS41uvS4tDRvCy4OPt1xkekYXKyRrZFHzPc1-6Am2qp4Hlf52kpgGiKM4-j4XH3pSWrkoA8oNTvTftgc63eZtf1zpmf3JnpORkMet05E47MBwd8VqPfyoLBpCr5KA2rG17I/s1600/258870487_2633283760.jpg" /><br />
মহানবমী পুজোর তাৎপর্য সম্পর্কে রয়েছে নানা মুনির নানা মত। তবে হিন্দু পুরাণ মতে মা দুর্গা মহিষাসুরকে দশমীতে বধ করছিলেন, তাই সেই দিক থেকে দেখতে গেলে যুদ্ধের শেষ দিন নবমী। অষ্টমী আর নবমীর সন্ধিক্ষণের সন্ধি পুজোর সময় মা দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন। শাস্ত্র মতে, এই দিন দেবীর পূর্ণাঙ্গ পুজো করা হয়।
<br />
<br />
অষ্টমীর পূজার্চনার মতোই নবমীর দিনও জাঁকজমকভাবে মায়ের কাছে পুজো করা হয়। শাস্ত্র মতে, নবমীর দিন মায়ের পূর্ণাঙ্গ পুজো হয় বলে, এই তিথিতে বলি, হোম এবং ষোড়শ উপাচারের বিধান রয়েছে। এই বলিদান মহা নবমীর একটি গুরুত্বপূর্ণ রীতি। মূলত মা দুর্গাকে সন্তুষ্ট করতে এবং তাঁর আশীর্বাদ পেতে করা হয়। অনেকেই ভাবেন বলি সাধারণত অষ্টমীতেই হয়। কিন্তু না, বলিদানের রীতিটি কেবল নবমীতেই সঞ্চালিত হয়। শাস্ত্র মতে, সন্ধি পুজোর প্রথম দণ্ড অর্থাৎ ২৪ মিনিট পার হওয়ার পরেই হয় বলি। সহজ করে বলতে গেলে, নবমী তিথি শুরু হওয়ার প্রথম ২৪ মিনিটের মধ্যে হয়।
<br />
<br />
প্রাচীন যুগে এই দিনে মায়ের কাছে পশু বলি হলেও, বর্তমান দিনে পশু বলি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তাই এখন কুমড়ো, লাউ, আখ, শসা বা কলা ইত্যাদি বলিতে ব্যবহার করা হয়।
<br />
<br />
কোথাও কোথাও এই দিনে কুমারী পুজোও হয়ে থাকে। হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমান কুমারী পুজো দেখার জন্য। ঘরের মায়েরা পরিবারের মঙ্গল কামনায় উপোস থেকে অঞ্জলি দিয়ে থাকেন। এই দিন বহু মণ্ডপে চলে পঙক্তি ভোজন। পুজো উদ্যোক্তারা লুচি, খিচুড়ি ও ফল, প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করেন সকলের মধ্যে। নবমীর সর্বশেষ আকর্ষণ হল সন্ধ্যা আরতি ও ধুনুচি নাচ।
Kalyan Panjahttp://www.blogger.com/profile/00806730473428069202noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-6051442196783369904.post-79040265818443566842021-10-12T08:33:00.000+05:302021-10-12T08:33:37.885+05:30 শুভ মহাসপ্তমী - নবপত্রিকা স্নান দুর্গাপুজোর অন্যতম আচার নবপত্রিকা স্নান। সপ্তমীর সকালে হয় স্নান। নবপত্রিকার আক্ষরিক অর্থ 'নয়টি পাতা'। এগুলি হল কলা, কচু, হলুদ, জয়ন্তী, বেল, দাড়িম্ব, অশোক, মান ও ধান। একটি কলাগাছের সঙ্গে অপর আটটি গাছের পাতা বা ডাল বেঁধে দেওয়া হয়। অপরাজিতা লতা দিয়ে বাঁধা হয়। তার পরে লাল পাড়ওয়ালা সাদা শাড়ি জড়িয়ে তাকে ঘোমটাপরা বধূর রূপ দেওয়া হয়। সিঁদুর পরানো হয়। নবপত্রিকার প্রচলিত নাম 'কলাবউ' হলেও তিনি কারও বউ নন।<br />
<br />
শাস্ত্র মতে নবপত্রিকা ন'জন দেবীর প্রতীক। কলা রূপে ব্রহ্মাণী, কচু রূপে কালিকা, হলুদ রূপে উমা, জয়ন্তী রূপে কার্তিকী, বেল রূপে শিবানী, দাড়িম রূপে রক্তদন্তিকা, অশোক রূপে শোকরহিতা, মান রূপে চামুণ্ডা এবং ধান রূপে লক্ষ্মী। শাস্ত্রানুসারে নবপত্রিকা হল নয় পাতায় বাস করা নবদুর্গা। দুর্গার ডানদিকে তথা গণেশের পাশে রাখা হয় নবপত্রিকাকে। কলাবউকে অনেকে গণেশ ঠাকুরের বউ মনে করলেও সেটা একেবারেই ভুল।<br />
<br />
স্বপ্নে এমনটাই আদেশ ছিল বোধহয় তাঁর। সেই থেকেই কৃষ্ণনগরের চট্টোপাধ্যায় পরিবারে অপরাজিতা রঙের দেবী পুজোর প্রচলন। ভক্তের কাছে তিনি নীল দুর্গা। বনেদি বাড়ির আনাচে, কানাচের অভিজাত বৈভব, তাঁর রাজকীয় নীল রঙের গায়ে। এই দিনই তো দৃঢ়চরিত্রা এই বীরাঙ্গনা দেবী যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন মহিষাসুরের সঙ্গে। আসুরিক শক্তিকে নির্মূল করে, পৃথিবীকে দুর্গতি থেকে রক্ষা করেই তিনি হয়েছেন দুর্গতিনাশিনী দুর্গা। মর্তে তাঁর পুজো আরম্ভ করেন নীলকলেবর শ্রীকৃষ্ণ আবার অকালবোধনে ১০৮ টি নীল পদ্ম অর্পণ করেন শ্রীরামচন্দ্র। সর্বশক্তিময়ীর শক্তির রঙকে উপেক্ষা না করেই, লাল রঙ থাকলো আঁচলে আর কুঁচিতে। <br />
<br />
<img alt='মহাসপ্তমী' src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEh2Pk1XDHruoiXPGeFj9BJZB_dP0xy10I3HHk-yqbPB6SrSaVjVTFVj5ulxTZWh4i98x0IPvUMoPJEhk5bGD6BU1GB2qyRKpayQkfY-faW9clrdXY30Jy8OEteVgTAJyJJHByyIQyL3t3Hr/s1600/puja.jpg" />
<br />
<br />
সপ্তমী তিথিতে মূলত নবপত্রিকা স্থাপন ও প্রতিষ্ঠা, মহাসপ্তমীবিহিত পূজা ও দেবী মহালক্ষ্মীর পূজা করা হয়। তবে সপ্তমী তিথির মূল পর্ব হল নবপত্রিকা স্থাপন ও প্রতিষ্ঠা।
<br />
<br />
নবপত্রিকা শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল নয়টি পাতার সমাহার। তবে মূলত নয়টি উদ্ভিদের সমাহারকে নবপত্রিকা বলে। বিল্ব (বেল), কদলী, কদম্ব(কচু), মানক(মানকচু), অশোক, জয়ন্তী, হরিদ্রা(হলুদ), ধান্য(ধান), দাড়িম্ব(ডালিম) এই নয়টি গাছকে একত্রে নবপত্রিকা বলা হয়। নবপত্রিকাকে মূলত দেবী মহালক্ষ্মী হিসেবে পূজা করা হয়। নবপত্রিকাকে গণেশের ডানপাশে স্থাপন করা হয়। তাই অনেকে মনে করে যে, কলা বউ হল গণেশের পত্নী। কিন্তু বাস্তবে এরুপ কিছুই নয়।
<br />
<br />
একটি সপত্র কলাগাছের সাথে বাকি আটটি গাছ একত্রিত করে বেলসহ শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে লাল কাপড় দ্বারা আচ্ছাদিত করে এক বধূর আকার দেওয়া হয়। যা মূলত দেবী দূর্গার এক বিশেষ অংশ মহালক্ষ্মীরুপে পূজিত হন। মহাসপ্তমীর দিন সকালে পুরোহিত নিজেই নবপত্রিকা নিয়ে নিকটস্থ কোনো জলাশয়ে গিয়ে শাস্ত্রবিধি অনুসারে নবপত্রিকার স্নান করান। এরপর মণ্ডপে এনে নবপত্রিকা প্রতিষ্ঠা ও স্থাপন করেন। নবপত্রিকা প্রবেশের পূর্বে পত্রিকার সম্মুখে দেবী চামুণ্ডার পূজা ও আবাহন করা হয়। এরপর নবপত্রিকার প্রবেশ ঘটে মণ্ডপে।
<br />
<br />
নবপত্রিকা প্রবেশের পর দর্পণে দেবীকে মহাস্নান করানো হয়। নবপত্রিকার নয় উদ্ভিদ আসলে দেবী দূর্গার নয়টি রুপের সমাহার। ধানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী লক্ষ্মী, কলাগাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী ব্রক্ষ্মাণী, কচুগাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী কালিকা, হরিদ্রার অধিষ্ঠাত্রী দেবী উমা, মানকের অধিষ্ঠাত্রী দেবী চামুণ্ডা, বিল্বের অধিষ্ঠাত্রী দেবী শিবা, অশোকের অধিষ্ঠাত্রী দেবী শোকরহিতা, দাড়িম্বের অধিষ্ঠাত্রী দেবী রক্তদন্তিকা, জয়ন্তীর অধিষ্ঠাত্রী দেবী কার্ত্তিকী।
Kalyan Panjahttp://www.blogger.com/profile/00806730473428069202noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-6051442196783369904.post-45236331301037858152021-10-11T21:39:00.000+05:302021-10-11T21:39:34.489+05:30শুভ মহা ষষ্ঠী - দেবীবোধন দিয়ে শুরু দুর্গোৎসবআমরা সারা বছর ব্যাকুল অপেক্ষায় বসে থাকি কখন, শহরের মাটির পুতুলের গ্রাম-কুমারটুলি, পটুয়াপাড়ার সেই পছন্দ করা মাটির মূর্তিরা আমাদের পাড়ার প্যান্ডেলে আসবে। <br />
<br />
ব্রহ্মার মানসপুত্র মনু, ক্ষীরোদসাগরের তীরে মৃন্ময়ী মূর্তি নির্মান করেছিলেন, বাঙালি পন্ডিত ভবদেব ভট্টও বিধান দিয়েছিলেন মাটির দুর্গামূর্তির পুজোর। আবার দেবী মৃন্ময়ীর স্বপ্নাদেশেই তো বাংলার প্রাচীন দুর্গাপুজো, বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের মল্লরাজবংশের কুলদেবীকে গঙ্গামাটি দিয়ে নির্মাণ করা হয়। <br />
<br />
দেবী মহাস্নানে ব্যবহার করেন বৃষশৃঙ্গমৃত্তিকা, গজদন্তমৃত্তিকা, নদীতীরের, রাজদ্বারের, চৌমাথার, বেশ্যাদ্বারের মাটি, সর্বতীর্থের ভূমি। মহাষষ্ঠীর সন্ধ্যায় দেবী দুর্গার অকালবোধনে আমরা চাষাবাদের উর্বর জমিই যেন গায়ে দি। <br />
<br />
মেটে রঙের খাদির উপর কাঁথা কাজের শাড়ি পরে, শিশিরভেজা সোঁদামাটির গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে উঠি। বিষ্ণুপুরের পোড়ামাটির গনেশ গলায় ঝুলিয়ে আমরা গনেশজননীর উদ্দেশে বলে উঠি- জাগো যোগমায়া, জাগো মৃন্ময়ী, চিন্ময়ী রূপে তুমি জাগো...<br />
<br />
<img alt="maha sasthi durga puja" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEijbnEGsq_orAOtRICqPEPtpriQRMfhJ6xARr_BAJa52j-t6DTbrlZyg-l0RW3fuUAxZirlf0axLE-vtQYeR_S7hGH0MGugbL6K3XXM_CJR_H6SBGMzvyRiSW8dcFz-HvKTmpeUJY3Xeg/s1600/sasthi+2008+023.jpg" /><br />
নবরাত্রি ও দূর্গা পূজা উৎসব আমরা পর পর পালন করে থাকি| দুর্গাপূজা নবরাত্রির ষষ্ঠ দিনে শুরু হয় এবং এই দিনটিকে দুর্গা ষষ্ঠী বা মহাষষ্ঠী বলা হয়| এই দিনে দেবী দুর্গা কৈলাশের যাত্রা শেষ করে মর্তে আগমন করেন| ষষ্ঠী পূজার কিছু আকর্ষণীয় ধর্মীয় আচার রয়েছে|অনেক নারী দুর্গা ষষ্ঠীর দিনে একটি বিশেষ পূজা করে থাকেন|
<br />
<br />
ষষ্ঠী হল কোনো চান্দ্র মাসের ষষ্ঠ দিন|এই দিন বংশধরদের কল্যাণে কামনায় নিবেদিত করা হয়|মায়েরা দুর্গা পূজার সময় তাদের সন্তানদের জন্য ষষ্ঠী পুজো করে থাকেন| যদিও ষষ্ঠী প্রতি মাসে একবার আসে, তবুও কোনো কোনো ষষ্ঠী বেশ গুরুত্বপূর্ণ| উদাহরণস্বরূপ, নীল ষষ্ঠীর দিনে সন্তানের কল্যাণের জন্য শিব ঠাকুর কে পুজো করা হয়ে থাকে| জামাই ষষ্ঠী জামাতার কল্যাণে নিবেদিত|
<br />
<br />
একইভাবে,দূর্গা ষষ্ঠী মায়েদের কাছে একটি বিশেষ দিন যেদিন তারা সন্তানের কল্যাণের জন্য প্রার্থনা করে থাকেন| দেবী দুর্গাকে যেহেতু মহাবিশ্বের মাতা বলে ধারণা করা হয়, তাই দূর্গা ষষ্ঠী মায়েদের জন্য একটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে|এই দিনে, মায়েরা উপোষ করেন বা নির্দিষ্ট সীমিত খাবার খেয়ে থাকেন| তারা 'অঞ্জলি' দিয়ে থাকেন এবং তাদের সন্তানের সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করে থাকেন|
<br />
<br />
দিন শুরু হয় দেবীর মুখ উন্মোচন করে|তারপর দুর্গাপূজার বোধন প্রক্রিয়া শুরু হয়|এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে দুর্গাপূজা পূর্ণ আড়ম্বর ও জাঁকজমকের সঙ্গে শুরু হয়| মহিলারা যাদের সন্তান আছে উপোষ করে থাকেন এবং পরে নতুন শাড়ী পরে 'অঞ্জলি' দিয়ে থাকেন|এই বিশেষ দিনে আমিষ খাদ্য ও চাল খাওয়া থেকে তারা বিরত থাকেন।
<br />
<br />
দেবী দুর্গা শ্বশুরবাড়ি কৈলাস থেকে কন্যারূপে মর্ত্যলোকে আসছেন বাপের বাড়ি বেড়াতে। সঙ্গে আসছেন জ্ঞানের প্রতীক দেবী সরস্বতী; ধন, ঐশ্বর্যের প্রতীক দেবী লক্ষ্মী, সিদ্ধিদাতা গণেশ এবং বলবীর্য ও পৌরুষের প্রতীক কার্তিক। এঁরা মায়ের চার সন্তান। দেবী মেনকার তাই ফুরসত ফেলার সময় নেই। বছর বাদে মেয়ে আসছেন বাপের বাড়ি, মেয়েকে বরণ করতে তাই তাঁর এত আয়োজন।
<br />
<br />
ওদিকে দেবী দুর্গাকে বরণ করতে ভক্তরাও সমানভাবে উদগ্রীব। তাদের আয়োজনও কম নয়। ঘরের বউ-ঝিরা কেউ খই-গুড়ে পাক দিচ্ছেন, কেউ বানাচ্ছেন নারিকেলের নাড়ু, মুড়ির মোয়া। স্কুল বন্ধ। পূজার ছুটি। নতুন জামা-কাপড়। ছোটদের আনন্দ আরো বেশি। ওদিকে পালমশায় ব্যস্ত প্রতিমা গড়া নিয়ে। মায়ের চোখে সন্তানের জন্য স্নেহ, মুখে মমতাময়ী হাসি_এসব ফুটিয়ে তোলা তো আর চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। পুরোহিত ব্যস্ত পূজার আয়োজন নিয়ে। মেনকার মতো সব দিকেই তাঁর দৃষ্টি। কারণ তিনি যে দুর্গতিনাশিনী, জগজ্জননী।
<br />
<br />
দশমীর মাধ্যমে দেবী পিতৃগৃহ থেকে কৈলাসে ফিরে যাবেন স্বামী শিবের কাছে। বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই সত্যকে অবলম্বন করেই গড়ে উঠেছে শারদীয় দুর্গোৎসব।
<br />
<br />
কবি কৃত্তিবাস পনেরো শতকের মাঝামাঝি তদানীন্তন গৌরেশ্বর রাজা গণেশের অনুরোধে বাংলা-রামায়ণ রচনা করেন। সেখানে শ্রীরামচন্দ্র কর্তৃক দুর্গাপূজার কথা উল্লেখ রয়েছে। পিতা দশরথের কথা রক্ষায় শ্রীরামচন্দ্র স্ত্রী সীতা এবং অনুগত ছোট ভাই লক্ষ্মণকে নিয়ে বনবাসের উদ্দেশে পঞ্চবটী বনে এলে রাবণ সীতাকে হরণ করে অশোক বনে আটকে রাখে। শ্রীরামচন্দ্র স্বয়ং অবতার হয়েও রাবণকে বধ করে সীতা উদ্ধারে দেবী দুর্গার পূজা করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন।
<br />
<br />
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব আয়োজন সম্পন্ন করে পূজা করতে বসে রামচন্দ্র অঞ্জলি দেওয়ার সময় ১০৮টি নীলপদ্মের জায়গায় ১০৭টি নীলপদ্ম পান। অথচ ওই একটি নীলপদ্ম না হলে যে পূজা সম্পূর্ণ হবে না! এখন উপায়? তখন রামচন্দ্র ধনুর্বাণ দিয়ে নিজের চোখ উৎপাটনে উদ্যত হন। যাতে হারিয়ে যাওয়া সেই একটি নীলপদ্মের বদলে চোখ দিয়ে মায়ের পূজায় অঞ্জলি দেওয়া যায়।
<br />
<br />
কারণ রামের আরেক নাম ছিল পদ্মলোচন। রামচন্দ্রের ভক্তি দেখে দেবী দুর্গা অভিভূত হন। তিনি তখন সহাস্যে স্বরূপে আবির্ভূত হয়ে রামচন্দ্রকে চোখ উৎপাটনে বাধা দিয়ে সেই নীলপদ্মটি ফিরিয়ে দেন। কেননা ভক্তের ভক্তি পরীক্ষা করতে ওই নীলপদ্মটি ছলনা করে মা নিজেই লুকিয়ে রেখেছিলেন। দেবী দুর্গার আশীর্বাদে রামচন্দ্র পরবর্তী সময়ে রাবণকে পরাজিত করে সীতাকে উদ্ধার করেন। এর পর থেকেই শরৎকালে দুর্গাপূজা হয়ে আসছে।
<br />
<br />
আদিতে বসন্তকালেই দুর্গাপূজা হতো। পুরাণ অনুসারে সত্য যুগে রাজা সুরথ রাজ্যচ্যুত হয়ে বনে আশ্রয় নেন। এই মহাসংকট থেকে উদ্ধার পেতে সত্যদ্রষ্টা মেধস মুনি রাজা সুরথকে দুর্গাপূজার পরামর্শ দেন। তখন তিনি ভক্তি সহকারে দুর্গাপূজার উদ্যোগ নেন। এ পূজা বসন্তে হয় বলে একে বাসন্তী পূজা বলা হয়।
<br />
<br />
পূজা যে সময়ই হোক না কেন উদ্দেশ্য কিন্তু এক। সনাতন ধর্মের প্রাচীন আর্য ঋষিরা সর্বশক্তিমান পরমেশ্বরের প্রতীক হিসেবে দেবী দুর্গার প্রসন্নতা ও আশীর্বাদ লাভের জন্য আরাধনা করতেন। এ যুগেও সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্তরা হৃদয়ের অর্ঘ্য সাজিয়ে আনন্দময়ী দুর্গার অর্চনা করেন। কারণ তিনি সর্বশক্তির আধার। মাতৃরূপে তিনি সর্বজীবে বিরাজ করে জীবের দুর্গতি নাশ করেন বলেই তাঁর নাম দুর্গা। শত্রু নাশে এ কারণেই তাঁর ১০ হাতে ৯ অথবা ১০ রকম অস্ত্র শোভা পায়। ডান হাতে ত্রিশূল, খৰ ও চক্র। বাম হাতে শঙ্খ, ঢাল, কুঠার, ঘণ্টা।
<br />
<br />
এর প্রতীকী তাৎপর্য আছে বৈকি! সত্য প্রতিষ্ঠা, ভক্তের দুর্দশা লাঘবে শত্রুকে তিনি ছাড় দিতে রাজি নন। সব শক্তি একত্রিত করে তিনি সমূলে শত্রু নাশ করতে চান। দুর্গাপূজা এক অর্থে তাই মহাশক্তির প্রতীকী রূপও বটে। পৃথিবীতে অন্যায়-অত্যাচারী, পাপিষ্ঠদের রুখে দিয়ে শোষকের হাত থেকে শোষিতদের উদ্ধার করতে, সত্যকে স্বরূপে প্রতিষ্ঠা করতে আজ এই মহাশক্তির আরাধনা বড় বেশি প্রয়োজন।
Kalyan Panjahttp://www.blogger.com/profile/00806730473428069202noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-6051442196783369904.post-91094909489371920312021-10-10T09:51:00.000+05:302021-10-10T09:51:33.299+05:30 শিশির ভেজা শিউলি ফুল ঘাসের আগায় শিশিরের রেখা পড়ছে। আশ্বিনের ডাক মানেই পুজোর ডাক! বাড়ির কাছের নদীর জলে উপুড় হয়ে চুম্বন করল কি পুজো এল-পুজো এল আকাশ?ভোরের মাটিতে শিউলি ঝরে পড়ছে। আজও সকালে হিমেল হাওয়ায় শিউলির সুবাস খুঁজে বেড়াই, এই সময় শিউলিতলা কেমন আলো করে থাকত, ভোরের শিশির মেখে সূর্যের কিরণ যখন তার উপর এসে পড়ত শিউলির তখন নববধূর বেশ। শিউলি গুলো চৌকো ফ্রেমে ধরা দিয়েছে বাড়ির জানলায়। <br />
<br />
জানালার ধারে একটা শিউলি গাছ ছিল। ভোরের রাতে শিউলি ফুলের গন্ধে ভরে যেত সারাটা ঘর। ঝরে পড়া শিউলি ফুলের হালকা টুপটাপ শব্দ শোনা যেত সারাটা রাত ধরে। সেই টুপটাপ শব্দ শুনতে শুনতে এক সময় ষষ্ঠীর সকাল এসে পড়ত। ঠিক তখনই সারা ঘরে একটা মায়াবী আলো ছড়িয়ে পড়ত। <br />
<br />
<img alt="শিউলি ফুল" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjH8qv7jKke6G1P6QOC08z0lQObOdSG6yLvKN1BmC0umJxIRr0xvdciDAQD7x4au9hKknp4IiVbjJVSgNj19cRT7ApuSsJAtRCb6ZFU1m20S73wCz58jT6-b1uq7-y-L6qyt56-Df_YfHwg/s1600-rw/shuli+ful.bmp" /><br />
<br />
শিউলি ফুল দক্ষিণ এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব থাইল্যান্ড থেকে পশ্চিমে বাংলাদেশ, ভারত, উত্তরে নেপাল, ও পূর্বে পাকিস্তান পর্যন্ত এলাকা জুড়ে দেখতে পাওয়া যায়। এটি শেফালী নামেও পরিচিত। এই ফুল পশ্চিমবঙ্গের ও থাইল্যান্ডের কাঞ্চনাবুরি প্রদেশের রাষ্ট্রীয় ফুল। শিউলি গাছ নরম ধূসর ছাল বা বাকল বিশিষ্ট হয় এবং ১০ মিটারের মত লম্বা হয়। <br />
<br />
গাছের পাতা গুলো ৬-৭ সেন্টিমিটার লম্বা ও সমান্তরাল প্রান্তের বিপরীতমুখী থাকে। সুগন্ধি জাতীয় এই ফুলে রয়েছে পাঁচ থেকে সাতটি সাদা বৃতি ও মাঝে লালচে-কমলা টিউবের মত বৃন্ত। এর ফল চ্যাপ্টা ও বাদামী হৃদপিণ্ডাকৃতির। ফলের ব্যাস ২ সেন্টিমিটার এবং এটি দুই ভাগে বিভক্ত। প্রতিটি ভাগে একটি করে বীজ থাকে।এই ফুল শরৎকালে ফোটে। এর ফুলগুলি রাতে ফোটে এবং সকালে ঝরে যায়। শরৎ ও হেমন্ত কালের শিশির ভেজা সকালে ঝরে থাকা শিউলি অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য তৈরি করে।<br />
<br />
শিউলির আরেক নাম পারিজাত! হিন্দু পৌরাণিক কাহিনীতে অনেক বার এসেছে শিউলি ফুল বা পারিজাত এর কথা। বাংলা ভাষায় এই শিউলি ফুল নিয়ে অনেক কবিতা, কাব্য রয়েছে। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন শিউলি ফুল, শিউলি ফুল, কেমন ভুল, এমন ভুল। রাতের বায় কোন্ মায়ায় আনিল হায় বনছায়ায়, ভোরবেলায় বারে বারেই ফিরিবারে হলি ব্যাকুল। কেন রে তুই উন্মনা! নয়নে তোর হিমকণা। কোন্ ভাষায় চাস বিদায়, গন্ধ তোর কী জানায়<br />
সঙ্গে হায় পলে পলেই দলে দলে যায় বকুল। শিউলি-কানন সাজায় তোমার শুভ্র ছুটির সাজি। শিশির-হাওয়া শিরশিরিয়ে কখন রাতারাতি। <br />
<br />
আবার আমাদের জাতীয় কবি নজরুলও কম পছন্দ করেননা ফুলটিকে, তাইতো তিনি লিখেছেন আবার যেদিন শিউলি ফুটে ভ’রবে তোমার অঙ্গন, তুলতে সে-ফুল গাঁথতে মালা কাঁপবে তোমার কঙ্কণ কাঁদবে কুটীর-অঙ্গন! শিউলি ঢাকা মোর সমাধি প’ড়বে মনে, উঠবে কাঁদি! বুকের মালা ক’রবে জ্বালা চোখের জলে সেদিন বালা মুখের হাসি ঘুচবে বুঝবে সেদিন বুঝবে!<br />
<br />
এছাড়াও আছে অনেক নাম না জানা, অজানা, বিখ্যাত, অখ্যাত কবির কবিতা। যা দেখে মনে হয় কবিরা শিউলি ফুলকে অন্য ফুলের চেয়ে আলাদা ভাবেই দেখেন ভোরের শিউলি ফুল সিক্ত দেহে ঝরে পড়ে ভোরের আলোয়ে লজ্জা পেয়ে? রজনীগন্ধার মদিরতা তার নেই, নেই গোলাপের বর্ণছটা । শতদলের শত পাপড়ির আভিজাত্য সে তো তার স্বপ্নের কল্পলোকেও অধরা । সুন্দর পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা হঠাৎ কি খেয়ালে একবিন্দু সৌন্দর্য ছুড়ে দিয়েছিল তার দিকে হয়েত বা তাচ্ছিল্য, অবহেলায় । বর্ণময় জগতের চাকচিক্যে তা লক্ষ করেনি কেউ তাই পূজার থালিতেও সে ব্রাত্য ।<br />
<br />
ঈশান কোণে, নেই কালো মেঘ শাদা মেঘের ভেলা! সাদা বসন, শিউলি গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে! ভোরের আগে, কে যায়রে? শিউলি কুড়াতে! আঁচল ভরা, শিউলি ফুলে গাঁথবে মালা বসে!<br />
<br />
শিউলি ফুটেছে আজ আমার আঙিনায় স্নিগ্ধ বাতাসে তার সৌরভ ছড়ায় শিশিরে ভেজা স্নিগ্ধ সকাল আনন্দরসে মনটা মাতাল। শিউলির মালা গাঁথব বলে<br />
ভালবাসার ফুল যতনে রেখেছি তুলে আমার নয়ন-ভুলানো এলে, আমি কী হেরিলাম হূদয় মেলে শিউলিতলার পাশে পাশে ঝরা ফুলের রাশে রাশে শিশির-ভেজা ঘাসে ঘাসে অরুণরাঙা চরণ ফেলে নয়ন-ভুলানো এলে। <br />
<br />
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘আশ্বিনে’ কবিতায় হৃদয়ের কথাই প্রকাশ করেন আকাশ আজিকে নির্মলতম নীল, উজ্জ্বল আজি চাঁপার বরণ আলো; সবুজে সোনায় ভূলোকে দ্যুলোকে মিল দূরে-চাওয়া মোর নয়নে লেগেছে ভালো। ঘাসে ঝ'রে-পড়া শিউলির সৌরভে মন-কেমনের বেদনা বাতাসে লাগে। মালতী বিতানে শালিকের কলরবে কাছ-ছাড়া পাওয়া ছুটির আভাস আগে। Kalyan Panjahttp://www.blogger.com/profile/00806730473428069202noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-6051442196783369904.post-83079357657996792072021-10-07T20:23:00.000+05:302021-10-07T20:23:28.846+05:30ছেলেবেলার পুজোছেলেবেলার পুজোর একটা অদ্ভুত গন্ধ থাকত। ওই যে সলিল চৌধুরির ওই গানটা…‘আয়রে ছুটে আয় পুজোর গন্ধ এসেছে’। সেটা তখন পেতাম। কিন্তু এখন আর পাই না। এখন ব্যপারটা অনেকটা উত্সবের মতো। গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। বছরের চারটে দিন তো একটা উত্সব হবেই, ব্যাপারটা অনেকটা এমন।<br />
<br />
<img alt="Dhaaki bengal durga puja dhak" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgXDEI9NIiHKIEyJy4qamjCHxuxemPQPrNXwwGymz-HE50ZHoDjRP2KD2lf44r49STroqi4yvHS_kZJg_aDOADi3chY_3GrzG00upa34rvp_5_kYetRDqrYM_QiFnQj9xjV5s6NixvcqVn1/s1600/dhaki.jpg" /><br />
<br />
এখনকার জেনারেশন এ সব তো পায়ই না। কই আমার বন্ধুদের তো শুনি না মহালয়ার ভোরে ছেলেমেয়েদের জোর করে ঘুম থেকে তুলে মহালয়া শোনাচ্ছে। কোথাও সেই সংস্কৃতিটা হয়তো হারিয়ে যাচ্ছে। আমার পুজো চিরকালই পাড়াময়।
<br />
<br />
আমাদের ছোটবেলায় দুর্গাপুজো বাংলা রচনার বর্ণনা অনুযায়ী আসত। নদীর ওপারে কাশফুলের মাথা দোলানো আর সুনীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, শিশির সিক্ত শিউলিফুল আর সোনালী রোদের ম্যাজিক। পুজোর আগে আগে তেড়েফুঁড়ে জ্বর আসত। সত্যডাক্তার দেখে যেতেন, দুটাকা ভিজিট ছিল। দাগকাটা শিশিতে মিক্সচার। এক ডোজে অনেকটা মিক্সচার হত। ছোট্ট একটা কাঁচের গ্লাসে ঢেলে দিত মা, ঢক করে গিলে নিতাম। অনেক জ্বরের মধ্যে হঠাৎ জল পড়ার শব্দে চোখ খুলে দেখতাম হ্যারিকেনের আলোয় কতগুলি উৎকণ্ঠিত মুখ।
<br />
<br />
মা মাথা ধুয়ে দিচ্ছে, টুকুনদা থার্মোমিটারে জ্বর দেখছে।, কপালে জলপটি। হঠাৎ একদিন দর দর করে ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ত। মাথার কাছের খোলা জানলা দিয়ে দেখতাম চারিদিকে পুজো পুজো ভাব। মা মেশিনে জামা সেলাই করছে। হিসাব করতাম কটা জামা হবে পুজোয়। বড়দা কাগজের বাক্সে করে কলকাতা থেকে হালফ্যাশনের ফ্রক নিয়ে আসবে, জুতো কেনা হবে। রিকশা করে ঠাকুর দেখতে যাবো রাজবাড়ী, রায়পাড়া, জয়ন্তী সংঘ।
<br />
<br />
রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের বাড়ী অর্থাৎ রাজবাড়িতে পুজোর কোন আড়ম্বরই চোখে পড়ত না। দেবীমূর্তির বিশেষত্ব ছিল ঘোড়া সিংহ আর সবুজ রঙের অসুর। রাজা নাকি স্বপ্নে এই মূর্তিই পেয়েছিলেন। রাজবাড়ির পুজো বলতে চোখে ভাসে বিশাল ঠাকুর দালানের এক কোণে মা রাজ রাজেশ্বরী। বিশাল ঠাকুর দালানে অসংখ্য পায়রার বাসা। কিন্তু ঠাকুর তৈরী হত গঙ্গামাটি দিয়ে। বেয়ারারা অতিকষ্টে বহন করতো সেই প্রতিমা। রাজবাড়ির ঠাকুর বিসর্জন না হলে আর কোন ঠাকুর বিসর্জন হতে পারতো না।
<br />
<br />
ভাসান হত জলঙ্গী নদীতে। ভাসানের ঘাটে ধূমায়িত কুপির আলোয় নানরকম রসনা তৃপ্তিকর খাদ্য বিক্রী হত। লেবুর রস দেওয়া ছোলাসেদ্ধর স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে। কদমতলায় আমাদের দোতলার বারান্দা থেকে ঠাকুরভাসানের শোভাযাত্রা দেখা যেত। মনে হত ১১ হাত মা কালীর মূর্তি হাত বাড়িয়ে ছোঁওয়া যাবে। বেহারাদের কাঁধে মা, কার্বাইডের বাতি জ্বেলে শোভাযাত্রা করে নিয়ে যাওয়া হত, তার সঙ্গে ছেলেছোকরার উদ্দাম নাচ, মাইকে বাজত গীতা দত্তের গান….কাঁচের চুড়ির ছটা….এদিক ওদিক কিছু ধূমায়িত মশাল ……বাজির শব্দ।
<br />
<br />
পুজোর সময় দেবসাহিত্য কুটীর কাঠমলাটের পূজাবার্ষিকী বের করত- বেণুবীণা, উদয়াচল- কি সুন্দর সুন্দর নাম। বিধায়ক ভট্টাচার্যের অমরেশ, শিবরাম চক্রবর্তীর গল্প আর শৈল চক্রবর্তীর ছবি,সুধীন্দ্রনাথ রাহার বিদেশী গল্পের ভাবানুবাদ, আশাপূর্ণা দেবীর অপূর্ব ছোটগল্প থাকত এইসব বইগুলিতে। আমাদের কিছুই ছিল না, তবুও এখন মনে হয় যেন অনেক কিছুই ছিল।
<br />
<br />
কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিন আমাদের চিলেকোঠার ছোট্ট ঠাকুরঘরে লক্ষ্মীপুজো হত। পেতলের গামলায় মা সিন্নি মাখতো। বাদকুল্লা থেকে পুরুতমশাই আসতেন। সকাল থেকে সাজ সাজ রব। দিদি কতরকম আলপনা দিত, শঙ্খলতা, খুন্তিলতা পদ্মলতা। মা লক্ষ্মীর জোড়া পায়ের চিহ্ন। পাশের বাঙাল বাড়িতে বাঁ পা, ডান পা, করে মা লক্ষ্মীর পায়ের চিহ্ন আঁকা হত। ওরা আমাদের ঠেস দিত-“তোদের ঠাকুর কি জোড় পায়ে লাফাতে লাফাতে ঘরে ঢুকবে”? আমরা এসব তুচ্ছ কথায় কান দিতাম না। মার কালিপড়া খইভাজা হাঁড়ি, বেড়ি সব তোলা থাকত।
<br />
<br />
কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিন মা নিজের হাতে খই ভাজত, মুড়কি নাড়ু তৈরী করত। আমাদের কাজ ছিল খই থেকে ধান বাছা। টুকুনদা দা দিয়ে তালের ফোঁপর কাটত। মোটা কালো খালি-গা ঠাকুরমশাই আসতেন বাদকুল্লা থেকে। আমরা ওর নাম দিয়েছিলাম হ্যাড্ডা-ব্যাড্ডা-দড়াম-দড়াম। কারণ উনি এসেই বাথরুমে ঢুকে যেতেন আর তারপর নানা রহস্যজনক গোলাগুলির মত শব্দ ভেসে আসত।
<br />
<br />
ভাইফোঁটার সকালে মা ডাকত-‘ওরে ওঠ, শিশির শুকিয়ে যাবে, দুব্বো তুলতে হবে’।
<br />
<br />
একটুকরো ছেঁড়া কাপড় আর ছোট্ট একটা পিতলের গেলাস নিয়ে মাঠে চলে যেতাম। ঘাসের ওপর কাপড়ের টুকরোটা বিছিয়ে দিলে সেটা শিশিরের জলে ভিজে যেত। তারপর ভেজা কাপড় নিংড়িয়ে শিশিরের জল গ্লাসে ধরতে হত। তারপর স্নান করে কাচা জামা পরে সেই শিশিরের জল দিয়ে চন্দন বেটে ঝকঝকে করে মাজা পিতলের থালার এক পাশে রেখে দিতে হত, আরো থাকত বাটা হলুদ, ছোট বাটিতে সুগন্ধি কেয়োকার্পিন তেল, চিরুণি, দই, চন্দন, ধান-দুব্বো আর একগোছা পান-সুপুরি। চার ভাইয়ের জন্য চারটে লাল ভেলভেটের আসন।
<br />
<br />
পেটে প্রচণ্ড খিদে, মায়ের আলুদমের পাগল করা সুগন্ধ। মা লুচি ভাজতে ভাজতে শাঁক বাজাচ্ছে। প্রথমে মাথায় তেল দিয়ে চিরুণী দিয়ে চুল আঁচড়ানো তারপর মন্ত্র বলে কপালে দই-চন্দনের ফোঁটা দিয়ে হাতে পানসুপুরি দিয়ে দাদাদের পায়ে প্রণাম। ছোটদা বলত “দেখিস বাবা, যমের দুয়ারে পড়লো কাঁটার বদলে উঠলো কাঁটা বলিস না।।বড়দা তখন আমার হাতে দিত ভাইফোঁটার উপহার- বুদ্ধদেব গুহ-র লেখা জঙ্গল মহল, কিরীটি অমনিবাস।
<br />
<br />
এখনো আছে বড়দার হাতে লেখা “নান্নুমাঈকে ভাইফোঁটায় –বড়দা”- ব্যোমকেশ প্রথম খণ্ড,কিন্তু বড়দা নেই।
<br />
<br />
লুচি খেয়ে আমরা চরতে বেরোতাম, হাঁটতে হাঁটতে মোমিন পার্ক। মায়ের একটা আগুন রঙের নকল সিল্কের শাড়ি ছিল। আমি ভাইফোঁটার দিন ওটা পরে ফোঁটা দিতাম। পার্কের সবুজ ঘাসে আমি আর দিদি বসে আছি, দিদির মেয়ে পরীর মত প্রজাপতির পিছনে ছোটাছুটি করছে, ছেলে মাটির বেহালা থেকে সুর বার করার চেষ্টা করছে। দাদার বন্ধুর মন্তব্য-এখানে কি সিনেমার শুটিং হচ্ছে ।
<br />
<br />
এখন মনে হয় মা যেন দশভুজা ছিল। খুন্তি, চাকি-বেলুন, হাতা-বেড়ি জাঁতা ইত্যাদি ছাড়াও কাঁচি, সূচ সুতো-অনর্গল সেলাই কলের ঘরঘর-উলকাঁটা, সোয়েটারের বগলের ঘর ফেলা- গায়ে ফেলে মাপ নেওয়া, এমনকি লেস বোনা পর্যন্ত।
<br />
<br />
জগদ্ধাত্রী পুজোও কৃষ্ণনগরে খুব ধূমধাম করে হতো, এখন অবশ্য আরো জাঁকজমক হয়। আমাদের সময়ে বিসর্জনের সকালে ঘট বিসর্জন আর লরী করে ট্যাবলো- এসব কিছু ছিল না। কিন্তু মনে পড়ে আধা অন্ধকারে ধূমায়িত মশাল নিয়ে রে রে কে একদল লোক ছুটছে। বাহকদের কাঁধে মা চলেছেন দুলতে দুলতে, কে আগে যাবে তাই নিয়ে রেষারেষি হত আর মাঝে মাঝে এক আধটা লাশ পড়ে যেত।
<br />
<br />
সরস্বতী পুজো মানেই শাড়ি পরে স্কুলে যাওয়া। মায়ের শাড়ি ছাড়া গতি নেই কিন্তু দুঃখের বিষয় মার ভালো শাড়ি একেবারেই ছিল না । একবার সরস্বতী পুজোর দিন মার একটা পুরনো বিষ্ণুপুরী সিল্কের পরে বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছি, ওখান থেকে স্কুলে যাবো, একটু যেতে না যেতেই বিশ্বাসঘাতকতা করে শাড়ি গেল খুলে।
<br />
<br />
মা শাড়িটা ফ্রকের ওপরই একটা গিঁট বেঁধে পরিয়ে দিয়েছিল। যাইহোক বন্ধুর বাড়িটা কাছে ছিল এই যা রক্ষে। সরস্বতী পুজোর আগে থেকেই আমাদের স্কুলে প্রস্তুতি পর্ব শুরু হয়ে যেত। ব্যাচ ব্যাচ করে আমাদের হলঘরে নিয়ে যাওয়া হত।সেখানে একদল ঝুরিতে ঘষে নতুন আলুর খোসা ছাড়াতো, আরেক দল কড়াইশুঁটির খোলা ছাড়াতো- খিচুড়ি-বাঁধাকপির তরকারি-আলুভাজা-চাটনি-রসগোল্লা-পান্তুয়া। ক্লাস ইলেভেনে আমাদের ওপর পুজোর ভার ছিল। পুজো খুব ভালো হয়েছিল তাই হেডমিস্ট্রেস আমাদের আলাদা করে মিষ্টি খাইয়েছিলেন।
<br />
<br />
সাজানো খুব ভালো হতো, মেয়েরা কাগজের মালা, খইএর মালা গাঁথতো, দিদিমনিরা দেখিয়ে দিতেন, ম্যাম নয়। একবার নাটক হল ‘বিন্দুর ছেলে’। আমি হয়েছিলাম এলোকেশী। ফার্স্ট গার্ল লাল পাড় সাদা শাড়ি পরে কপালে লাল আবিরের টিপ আর সিঁথিতে লাল আবির দিয়ে বড় বৌ অন্নপূর্ণা হয়েছিল। অমূল্যকে নিয়ে যখন যাদব আর অন্নপূর্ণা বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে তখন বড়বৌ-র অভিনয় ফাটাফাটি হয়েছিল।
<br />
<br />
আমি এক বন্ধুর বাড়ি থেকে আনা পুরনো ঢাকাই শাড়ি-সিঁদুর বা লাল আবিরে গিন্নি হয়েছিলাম। তারপর যখন একটু ঘোমটা টানলাম আর আঁচলে বাঁধা চাবির গোছা পিছনে ছুঁড়ে ডায়ালগ বলতে শুরু করলাম তখন অডিয়েন্সে হাসির ছোঁয়া লাগল। এরপর থেকে আমি একজন পাকাপাকি মহিলা ভিলেনে পরিণত হলাম। টিচার্স ডে র জন্য রবীন্দ্রনাথের ‘ছুটি’র নাট্যরূপ দিল ফার্স্ট গার্ল অপরাজিতা আর আমাকে অফার করল ফটিকের মামীর রোল! ভাবা যায়!
<br />
<br />
আমাদের কাছে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো ছিল বিরাট এক উৎসবের দিন। ছোটদার ভাষায় বড় লক্ষ্মীপুজো। আধখানা কদমাতেই আমরা খুশী ছিলাম। গুড়ের বাতাসা পেলে নিজেদের ধন্য মনে করতাম। কারণ উৎসবটা তো ছিল আমাদের মনে। আমাদের ঘুঁটেওয়ালি মেহেরুন্নিসা যেমন নাচতো-“আজ আমার লাচন উঠিছে”- শুধু একমুঠো গরম ভাত পেলে।
Kalyan Panjahttp://www.blogger.com/profile/00806730473428069202noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-6051442196783369904.post-858166666051550112021-10-06T21:51:00.000+05:302021-10-06T21:51:01.217+05:30শরতের কাশ ফুল ঘাসের আগায় শিশিরের রেখা পড়ছে কি? ভাদ্র কেটে আশ্বিন এল বলে! বাড়ির কাছের নদীর জলে উপুড় হয়ে চুম্বন করল কি পুজো এল-পুজো এল আকাশ? ভোরের মাটিতে শিউলি ঝরে পড়ল বলে পদ্মেরা মাথা তুলছে, কাশ দল দোল দিচ্ছে মনের বনের আনাচ-কানাচ। স্কুলফেরত খুদেদের দাপাদাপি কাশের বনে। কাশফুল মাথায় দিয়ে গ্রামের সেই কিশোরী যেন এই পৃথিবীর সবথেকে সুখী মানবী! অচিন নদীতে নৌকো ভাসিয়ে দু’পারের কাশের জঙ্গল পেরিয়ে অজানা পথ পাড়ি দেয় যে মাঝি।<br />
<br />
<img alt="Kash Flower" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgRGcPeSHbf6o_8zGUGoj0fzluK_h4pCj-mgq_P5UXs40cxd38caomKzxndkVNqyeolxOdJKoreMfSwuku0K4w0IHXgIbTQkD4spCVy_26DT3MEj3qJa9LC4syfxKmbSBlJkVc60NP4564/s1600-rw/DSC01573.JPG" /><br />
<br />
শরৎ এলেই সাদা কাশফুলে ছেয়ে যায় গ্রামবাংলার প্রান্তর। তবে এই কাশফুল দেখতে নগরবাসীকে দূরে যেতে হয় না। শরতে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকেই এখন ছুটছেন এসব কাশবনে। বিকেল ঘনাতেই জমজমাট হয়ে উঠছে ফাঁকা এলাকাগুলো।<br />
<br />
কাশফুলের জন্মস্থান বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্থান, শ্রীলংকা, নেপাল, ভূটান, মালদ্বীপে। ঘাসজাতীয়, আখ বা ইক্ষুর আত্মীয়। আমাদের দেশে শরৎ মানেই কাশ আর শিউলি ফুল। নদী তীরবর্তী স্থান কাশ জন্মানোর আদর্শ স্থান হলেও এখন প্রায় সব জায়গাতেই জন্মাতে দেখা যায়।
বর্ষার বৃষ্টি বা বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর কাশের ঘাস জন্মে আর শরতে ফোঁটে শুভ্র, সাদা ফুল। কাশ খুব দ্রুত জন্মে নিজেদের একটা কলোনী তৈরি করে, যা কাশবন নামেই আমাদের কাছে পরিচিত। ঢাকায় আফতাব নগর, দিয়াবাড়িতে আছে কাশবন।<br />
<br />
কাশ যেহেতু আখ এর আত্মীয় সেহেতু আখের কিছুটা গুণ এর মধ্যেও আছে। কাশ ঘাসের গোড়ার দিকের অংশ মিষ্টি স্বাদের। ফিলিপাইনে এর মূলের রস ডাইইউরেটিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মূলের রস বা জ্যুস জ্বর সারাতে পারে। এছাড়া মূলের রসের সংকোচক, উপশমকারী, শীতলকারক, বিরেচক, সবলকারক গুণ রয়েছে। ব্যথা কমাতে কান্ডের শাঁসের গরম সেঁক উপকারী।<br />
<br />
পাশ্চাত্যে কাশফুল নেই। সেখানে কাশের মতো দেখতে আছে। এই ঘাসগুলো হঠাৎ দেখে মনে হবে আমাদের দেশি কাশফুল। আসলে তা নয়। এরা অন্য গণের বাসিন্দা। এদের স্বভাব বৈশিষ্ট্য ও ভিন্ন। কাশের তুলনায় এই ফুলগুলো বেশ ঘন। ফুল সাদা বা ক্রিম কালার। হাইব্রিড জাত আছে গোলাপি, নীল ফুলের।
Kalyan Panjahttp://www.blogger.com/profile/00806730473428069202noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-6051442196783369904.post-79147214701816651562020-11-12T22:00:00.002+05:302020-11-12T22:00:52.227+05:30ধনতেরাস কী এবং কেন পালিত হয়?আলোর উৎসবে মাততে চলেছে চরাচর। দীপাবলির আলোয় ভেসে যাওয়ার প্রতীক্ষায় এ শহরও। চলছে মণ্ডপের কাজ, সাজছে মহানগর, তৈরি হচ্ছে আতসবাজি। তারই মধ্যে ধনতেরাসের প্রস্তুতি। এটি অবাঙ্গালী উৎসব হলেও বর্তমানে বাঙ্গালী সম্প্রদায়ে এর প্রবেশ হয়েছে। সোনাদানা অলঙ্কার কে সৌভাগ্যের প্রতীক ধরা হয় । সোনা অলঙ্কারে ঐশ্বর্যের দেবী মাতা লক্ষ্মী নিবাস করেন । তাই সোনা অলঙ্কারকে অবহেলা করলে দুর্ভাগ্যের আগমন হয়। সেজন্য বলে সোনা অলঙ্কার মাটিতে রাখা নিষেধ । ধনতেরাস উৎসবের নাম ধন্বন্তরি ত্রয়োদশী। <br />
<br />
এই তিথিকে ধন্বন্তরি ত্রয়োদশী বলে। দীপাবলি তে মাতা লক্ষ্মীর আরাধনা হয়। এর পূর্বে সোনা অলঙ্কারাদি কেনাকে অত্যন্ত শুভ মানা হয়। তাই এই ধনতেরাস উৎসবে সোনা আদি অলঙ্কার কেনার ধূম দেখা যায় । ধনতেরাস উৎসবের পরদিন থাকে নরক চতুর্দশী বা ভূত চতুর্দশী। এই দিন নরকাসুর বধ হয়েছিলো । <br />
<br />
<img alt="Dhanteras gold silver lakshmi puja jewellery" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhye97FgxwWwVASZy_Q21I1XSrrsNV1T0lTJsM0uBT9zWs5Eev71cxAitYNJUV3EJNjIWeScRkcljafy-ip025nRc8r2-uqamCxfeDMe0qwIvmUaVLJdd_3bl4IuZ7SAsttBQ2Sm0-eqAUZ/s1600/gold-export-corruption.jpg" /><p>
ধন্বন্তরী-ত্রয়োদশী বা ধনত্রয়োদশীকে ধনতেরাস বলা হয়। ধনতেরাস পালন করা হয় বিশেষত কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে। এই দিনে কিছু নতুন জিনিস কেনার রেওয়াজ রয়েছে। বিশেষ করে রুপা এবং সোনা কেনার প্রচলন রয়েছে। কারণ বিশ্বাস করা হয় এই দিনে নতুন নতুন জিনিস কিনলে ধন সম্পদ বৃদ্ধি পায়।</p>
<p>
ধনতেরাসের দিন লক্ষ্মী ঠাকুর পূজা করা হয়। ধন্বন্তরী এই দিনে অবতার হয়েছিলেন এই কারনে এটিকে ধনতেরাস বলা হয়। সমুদ্র মন্থনের সময় সমস্ত দেবতা এবং অসুরদের দ্বারা যৌথভাবে প্রাপ্ত সম্পাদিত চৌদ্দ রত্নগুলির মধ্যে ধন্বন্তরী এবং মাতা লক্ষ্মী অন্যতম। তাই এই তারিখটি ধনত্রয়োদশী নামেও পরিচিত।</p><p>
এই দিনে লক্ষ্মীর সাথে ধন্বন্তরী পূজা করা হয়। দীপাবলি ভারতের অন্যতম একটি উৎসব। দীপাবলি শুরু করা হয় ধনতেরাসের মাধ্যমে। দীপাবলির এক বা দুই দিন আগে ধনতেরাস পালিত হয়। এই দিনে লক্ষ্মী- গণেশ ও কুবের পূজা করা হয়। ধনতেরাসের দিন সোনা কেনা শুভ বলে বিবেচিত করা হয়। এই দিনে ধাতু কেনাও অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়।
</p><p>
ধনতেরাসের দিন অনেকে নতুন গহনা কিনে থাকেন। তবে ধনতেরাসের দিন কেন মানুষ সোনা কেনেন জানেন কি? এই দিনে সোনার কেনার পিছনে অনেকে ভিন্ন ধরণের কারণ বলে থাকে। তবে এই দিনে সোনা কেনার মূল কারণ হল প্রাচীন কালের রাজা হিমের ছেলের ভাগ্য লেখা ছিল বিয়ের চতুর্থ দিনে তার সাপের কামড়ে মৃত্যু হবে। তাই সে যখন বিয়ে করেন তার বিবাহিত স্ত্রী নিজের স্বামীকে বাঁচানোর জন্য তার সমস্ত অলংকার ঘরের দরজার সামনে স্তূপ করে রেখে দেন এবং দরজার সামনে প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখে দেন। যম যখন ঘরে প্রবেশ করে তখন সোনার ছটায় এবং প্রদীপের আলোর ছটায় চোখ ধাঁধিয়ে যায়। এই প্রথা অনুযায়ী ধনতেরাসের দিন নতুন সোনা কেনায় হয় এবং ঘরে প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখা হয়।
</p><p>
কথায় আছে এই দিন নতুন গহনা কিনলে মা লক্ষ্মী নিজে বাড়িতে প্রবেশ করেন এবং ধনসম্পদ বৃদ্ধি হয়। এর জন্যই সবাই ধনতেরাসের দিন নতুন সোনা কিনে থাকেন।
</p><p>
ধন্বন্তরী- কার্তিক কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশীর দিন সমুদ্র মন্থনের মধ্য দিয়ে উপস্থিত হয়েছিল। ধন্বন্তরী যখন উপস্থিত হলেন, তখন তাঁর হাতে অমৃত পূর্ণ কলস ছিল। ভগবান ধন্বন্তরী এই কলস নিয়ে হাজির হয়েছিলেন, তাই এই দিনটিতে পাত্রগুলি কেনার হয়। বিশেষত পিতল এবং সিলভার কেনা উচিত,। কারণ পিতল হ’ল মহর্ষি ধন্বন্তরীর ধাতু। এটি বাড়িতে স্বাস্থ্য, সৌভাগ্য এবং স্বাস্থ্য সুবিধা নিয়ে আসে।
</p><p>
ধনতেরাসের দিন বাড়ির দক্ষিণ দিকে প্রদীপ জ্বালানো হয়। এর পিছনে একটি ইতিহাস রয়েছে। একদিন দূত যমরাজকে প্রশ্ন করেন হিমের ছেলের অকাল মৃত্যুর এড়ানোর কোনও উপায় আছে কিনা? এই প্রশ্নের উত্তরে যমদেব বলেন ধনতেরাসের সন্ধ্যায় যমের নামে দক্ষিণ দিকে প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখলে অকাল মৃত্যু হয় না। এই বিশ্বাস অনুসারেই ধনতেরাসের দিন সন্ধ্যাবেলায় বাড়ি দক্ষিণ দিকে যমের নামে প্রদীপ জ্বালান। যাতে তার পরিবার যমের হাত থেকে সুরক্ষা পান।
</p><p>
ধনতেরাসের দিন সোনার দোকান এবং বাড়িতে লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয়। পাশাপাশি গণেশ এবং কুবের পূজা করা হয়। সন্ধ্যাবেলা বাড়ির চারপাশে প্রদীপ জ্বালানো হয় এবং রঙ্গোলী দেওয়া হয়।
</p><p>
সন্ধ্যে থেকেই মানুষ সোনার দোকানে গিয়ে নতুন সোনা কেনেন এবং ধাতুর জিনিস ক্রয় করেন। সোনার দোকানে এই দিনে ধূমধাম করে পালিত হয়। কারণ এই দিনটি তাদের শ্রীবৃদ্ধির দিন। সোনার উপর চলে ছাড়। এইভাবেই চলে ধনতেরাস উদযাপন।
</p><p>
মূলত ধনতেরাস পূজা করা হয় সন্ধ্যেবেলা। পূজা স্থলে, উত্তর দিকে ভগবান কুবের এবং ধন্বন্তরী প্রতিমার পূজা করা উচিত। এর সাথে সাথে দেবী লক্ষ্মী এবং ভগবান শ্রীগনেশের পূজা করা হয়। এটা বিশ্বাস করা হয় যে ভগবান কুবেরের সাদা মিষ্টি দেওয়া উচিত, ধন্বন্তরীর হলুদ মিষ্টি দেওয়া উচিত। কারণ ধন্বন্তরী হলুদ জিনিস পছন্দ করেন।</p>Kalyan Panjahttp://www.blogger.com/profile/00806730473428069202noreply@blogger.com1tag:blogger.com,1999:blog-6051442196783369904.post-4719899849629192422020-10-31T22:46:00.001+05:302020-10-31T22:46:59.707+05:30কোজাগরী পূর্ণিমায় লক্ষ্মী পূজা কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো নিয়ে অনেক প্রচলিত গল্প আছে। লক্ষ্মী দেবী ছিলেন ভৃগুর কন্যা, মায়ের নাম খ্যাতি। বৈদিক লক্ষ্মী কিন্তু শস্য-সম্পদের দেবী ছিলেন না। বরং নদীরূপিনী সরস্বতী শস্যদাত্রী হিসেবে গণ্য হতেন। কেন? নদী পলি মাটি ভরাট করে উর্বর করত ভূ-তট। এর পরে তো বৈদিক আর্যরা চাষাবাদ শিখল নিম্নবর্গ এর কাছে। সম্পদ এলো আর্যদের হাতে। শাসক বা শোষক হলেন তারা। আবার লক্ষ্মীর স্বামী একটা কাঁচা কাজ করে ফেললেন। কেমন কাঁচা? বেদম কাঁচা। <br />
<br />
দুর্বাসা মুনি, যিনি শুধু অভিশাপ দেওয়ার জন্যই বিখ্যাত, তার অন্য কোনও গুণের কথা বিশেষ জানা যায় না, তিনি এক দিন একটা পারিজাত ফুলের মালা উপহার দিলেন ইন্দ্রকে। এরপর ইন্দ্র যখন রম্ভা-সম্ভোগে মত্ত, ওই মালা নিজের বাহন ঐরাবতের গলায় ছুড়ে দেন। বিষ্ণু মাথা ঝাঁকিয়ে সেটা ফেলে দিল মাটিতে। <br />
<br />
তারপর পা দিয়ে চেপ্টে দিল। ব্যস! রগচটা স্বভাবের ঋষি অমনি জ্বলে উঠে উচ্চারণ করলেন অভিশাপ। অদ্ভুত সেই অভিশাপ। তিনি বললেন, কী! আমার দেওয়া মালা মাটিতে ফেলে দিলে, তাই তোমার ত্রিলোক এখন লক্ষ্মী ছাড়া হবে। অর্থাৎ লক্ষ্মীর নির্বাসন। অভিশাপে ইন্দ্রের ইন্দ্রপুরী হলো শ্রীহীন। তার রূপে-গুণে আকৃষ্ট হয়ে শেষ পর্যন্ত ছলে বলে বিষ্ণু তাকে পত্নীরূপে গ্রহণ করেন। <br />
<br />
আসলে লক্ষ্মী হলো লৈকিক দেবী। আগে আমাদের সমাজে বিশেষ করে গ্রামে দুর্গাপূজা নিয়ে এত মাতামাতি ছিল না। বরং কোজাগরী লক্ষ্মীপূজাই ছিল বড় উৎসব। কোজাগরীর রকমফের ছিল দেখার মতো। ছড়া কেটেই মা লক্ষ্মীকে আবাহন করত গৃহস্থ। করজোড়ে বাড়ির নারীরা একসঙ্গে বলতেন, ‘আঁকিলাম পদ দু’টি, তাই মাগো নিই লুটি। দিবারাত পা দু’টি ধরি, বন্দনা করি। আঁকি মাগো আল্পনা, এই পূজা এই বন্দনা।’ সব ছড়ার মধ্যেই থাকে বাসনা, অভিমান এবং আকাঙ্ক্ষা। পেঁচা, কড়ি, ধানের গোলা আঁকার সঙ্গে সঙ্গে তাই ছড়া কাটা হতো।<br />
<br />
এই বাংলায় কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর চল কেন হয়েছিল, তার একটি গল্প একটু বলা যাক। অনেক বছর আগে, বাংলার এক রাজা নাকি ঘোষণা করে ছিলেনযে, লক্ষ্মী পুজোর সময়েকোনও শিল্পীর তৈরি মুর্তি অবিক্রিত থাকলেরাজা স্বয়ং সেগুলি কিনে নেবেন। তখন লক্ষ্মী পুজো হত অমাবস্যায়।আর সে দিনই নাকি দেওয়ালি পালন করা হত। সেই সময়, এক শিল্পী, দারিদ্রের প্রতীক, অলক্ষ্মীর একটি প্রতিমা তৈরি করলেন। <br />
<br />
সেটিই একমাত্র বিক্রি হল না। রাজা সেই প্রতিমাটি কথামতো কিনে নিয়ে এলেন। লক্ষ্মীর পাশে মন্দিরে সেটিকে প্রতিষ্ঠা করেন। যে ঘরে অলক্ষ্মী থাকেন, সেখানে লক্ষ্মী থাকেন না। রাজা নিজে যখন অলক্ষ্মীকে নিয়ে এসেছেন, লক্ষ্মী চলে গেলেন রাজ্য ছেড়ে। রাজার রাজ্যপাট যেতে বসল। <br />
<br />
রাজা তখন ধর্মের শরণাপন্ন হলেন। ধর্ম রাজাকে বললেন, আশ্বিনের পুর্ণিমায় কোজাগরী পুর্ণিমা লক্ষ্মী ব্রত পালন করে লক্ষ্মীকে ফিরিয়ে আনতে।রাজা সেই মতো ব্রত পালন করে লক্ষ্মীকে ফিরিয়ে আনলেন।আর অলক্ষ্মীকে ভেঙে রাজ্যের বাইরে ফেলে দিয়ে এলেন। রাজ্য আবার সুজলা, সুফলা, শস্য শ্যামলা হয়ে উঠল। আর কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর চল ঘরে ঘরে শুরু হল।<br />
<br />
লক্ষ্মী পুজোর সময় সরায় আঁকা লক্ষ্মী প্রতিমা আর মা লক্ষ্মীর একটি মৃন্ময়ী মুর্তি কে যেমন ঘরে আনা হয়, তেমনি আনা হয় নানা প্রতীক। কলা গাছের ছাল দিয়ে তৈরি নৌকা, পুরো কলাগাছ দিয়ে তৈরি একটি নারী, ধানের ছড়া, বেতের কুনকে ভর্তি ধান,আরও অনেক কিছু।<br />
<br />
লোক সংস্কৃতির গবেষকও গুরুসদয় মিউজিয়ামের কিউরেটর বিজন কুমার মণ্ডল বলেন, “কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর সময় কলাগাছকে উর্বরতার প্রতীক ও নারী হিসাবে ভাবা হয়।ধান আমাদের প্রধান শস্য,তাই ধানকে শস্য শ্যামলার প্রতীক মনে করা হয়। আর সরাকে পৃথিবী হিসাবে কল্পনা করে তাতে নৌকার মত বাঁকা একটি রেখার ওপর ছয় রকমের লক্ষ্মী পট আঁকা হয়। এটা সারা পৃথিবীতে বাণিজ্যের প্রতীক হিসাবে লক্ষী পুজোর সময় ব্যবহার করা হয়, আবার কলা গাছের ছাল দিয়ে তৈরি নৌকাকেও ভাবা হয় বাণিজ্যের প্রতীক।<br />
<br />
<img alt="Kojagari Lakshmi Puja lokkhi" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjsJbh-_eJPe1xs4515pkG3Hp9qm2qlZT_oO3faZ98GJZOB7mpmHWc9y4_bc9l8dZaSHJ8FVxJXn7ttGCnQkyct84pCA6YP5RaYxd7-KRzR2cD7JzB0rro4NBcJhJMzWK0b59f0lU-j9qw/s1600/diwali-lakshmi-puja-card.jpg" /><br />
<br />
আমাদের রাজ্যের অন্যতম বড় লক্ষ্মী মুর্তি বিক্রির বাজার বসে বেহালায়। গত বছর প্রায় আঠাশ হাজার মুর্তি বিক্রি হয়েছে এখান থেকে। বেহালার পাঠক পাড়ার কাছ থেকে ট্রাম ডিপোর মোড় পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে বিক্রেতার সংখ্যা ৬০০ থেকে ৭০০ জন। এ বারে বিক্রেতাদের আশা ঠাকুর বিক্রি ত্রিশ হাজার ছাড়াবে। ব্যবসায়ি সমিতির সম্পাদক অরুন ঘোষ বলেন, “মুর্তির বাজার দর খুব একটা না বাড়লেওতৈরির খরচ বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ।”<br />
<br />
ঠাকুরের দাম শুরু ৭৫ টাকা থেকে। ছোট থেকে যত বড়র দিকে যাবেন দাম ততই বাড়বে। ছাঁচের ঠাকুরের সর্ব নিম্ন দাম ৭৫ টাকা (৫ ইঞ্চি সাধারণ সাজ), সর্বোচ্চ ৮৫০ টাকা (কৃষ্ণ নগরের দেড় ফুট মুর্তি)। যদি পিতলের ঠাকুর কিনতে চান, দাম শুরু ২৫০ টাকা থেকে।সর্বোচ্চ দাম সাড়ে আট হাজার টাকা। নতুন ধানের শীষ ও ছড়া শুরু ৬ টাকা থেকে। ডিজাইন অনুযায়ী দামের পরিবর্তন হয়। কলার ছালের নৌকা ১০১ টাকা থেকে শুরু। কলাগাছের বউশুরু ৭৫ টাকা থেকে। পটে আঁকা লক্ষ্মীসরার দাম ১৫০ থেকে শুরু। তবে লক্ষ্মীর আল্পনার পাতার দাম কিন্তু এবার যথেষ্টই বেশি।<br />
<br />
মুর্তির দাম কম থেকে বেশি হয় জায়গা বিশেষের তৈরি প্রতিমায়। কম থেকে বেশি- টালিগঞ্জ, কালীঘাট, বেলেঘাটা, বারাসাত, কুমারটুলিও কৃষ্ণনগরের প্রতিমা। সবচেয়ে বেশি চাহিদা কৃষ্ণনগরের ঠাকুরের।এরপর কুমোরটুলিরএবংকালীঘাটের। ঠাকুর নেওয়ার সময় ঠাকুরের চোখটা শুধু দেখুন। এটাই ঠাকুর কেনার মোক্ষম টিপস। খড় মাটির তৈরি প্রতিমা স্থানীয় ভাবে তৈরি হয়। তবে দাম এবারে একটু বেড়েছে। বড় ঠাকুর ৩০০ টাকা।<br />
<br />
নাড়ু বা মোয়ার দাম তেমন বাড়েনি, কিন্তু মাপে কমেছে। বাকি সব কিছুতে গড়ে ১০ থেকে ২০ শতাংশ দাম বেড়েছে। অনেকের এই পুজোতে ইলিশের দরকার হয়। ৫০০ গ্রামের একটু বড় সাইজের ইলিশের দাম ৫৫০ টাকা প্রতি কেজি।<br />
<br />
সবজির দাম বেশ চড়া। একটা ছোট ফুল কপি ৩০ টাকা, জলপাই ৭০ টাকা, নতুন আলু ৫০ টাকা থেকে শুরু। ফলের ও ফুলের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। সব শেষে আসি পুরোহিতের কথায়। এবছর থেকে কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় চালু হয়েছে পুরোহিতদের প্যাকেজ। তবে ব্রাহ্মণ নিয়ে আর চিন্তা নেই। <br />
<br />
লক্ষ্মী পুজোর ইভেন্টের পুরো দায়িত্ব নিয়ে নিচ্ছেন ওনারা। ঠাকুর থেকে আল্পনা সব প্যাকেজে। আগের দিন সব পৌঁছে যাবে। আর সঠিক সময়ে পুরোহিত হাজির।<br />
মা লক্ষ্মীর আরাধনা করতেই হবে। তাই অত কিছু না ভেবে বাজারে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেই হল। ধান দিয়েছেন যিনি, ধনও দেবেন তিনি। তিনি যে মা ধন লক্ষ্মীও।Kalyan Panjahttp://www.blogger.com/profile/00806730473428069202noreply@blogger.com1tag:blogger.com,1999:blog-6051442196783369904.post-48150347267761713902020-10-24T11:40:00.000+05:302020-10-24T11:40:05.384+05:30দুর্গা মহা অষ্টমী পালিত হয় যে ভাবেশারদীয় দুর্গাপূজার আজ মহাষ্টমী। মহাষ্টমীর মূল আকর্ষণ কুমারী পূজা ও সন্ধি পূজা পালন। গতকাল ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, আনন্দ উদ্দীপনা ও জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে মহাসপ্তমী। ভোরে নবপত্রিকা স্নান দিয়ে শুরু হয় শারদীয় দুর্গোৎসবের সপ্তমীর দিন। এরপর ছিল স্থাপন ও সপ্তাদি কল্পারম্ভ, ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান, চন্ডি ও মন্ত্র পাঠ, দেবীর পায়ে ভক্তদের পুস্পাঞ্জলী প্রদানসহ নানা আয়োজন। <br />
<br />
মহাসপ্তমী শেষে শারদীয় দুর্গাপুজার সবচেয়ে আকর্ষনীয় এবং জাঁকজমকপূর্ণ দিন আজ। দেবীর সন্ধিপূজা আর কুমারী পূজার মধ্য দিয়ে পালান হবে দিনটি। কুমারী বালিকার মধ্যে শুদ্ধ নারীর রূপ চিন্তা করে তাকে দেবী জ্ঞানে পূজা করবেন ভক্তরা। শাস্ত্রে ১ থেকে ১৬ বছরের অজাতপুস্প সুলক্ষণা কুমারীকে পূজার উল্লেখ রয়েছে। ব্রাহ্মন অবিবাহিত কন্যা অথবা অন্য গোত্রের অবিবাহিত কন্যাকেও পূজা করার বিধান রয়েছে।<br />
<br />
<img alt="Chandelier jhar bati puja" src="https://lh5.ggpht.com/-pxgYGnoPBW4/SOyOV54ZWcI/AAAAAAAAAN0/NtLghfq59zo/s1600/DSC01901.JPG" /><br />
<br />
বাঙালির ঘরের মেয়ে উমা এসেছে বাপের বাড়িতে। তারই নাকি আবার পুজো। প্রকাণ্ড প্রতিমার সামনে বসেছে আমাদের ছোট্ট চিন্ময়ী দেবী, মহাশক্তি রূপে। গঙ্গাস্নানের পরে সে পরেছে রক্ত-লাল বেশ, চন্দন, কুমকুমে চর্চিত, পুষ্পে শোভিত, আলতা, সিন্দুরে অর্চিত সে। শুরু হয়েছে কুমারী পুজো। কুমারী রক্তবর্ণাভা শক্তিহস্তা ভয়ানকি” দেবীদুর্গা যেন রক্তজিহ্বা, রক্তচক্ষু দিয়ে রাঙিয়ে দিয়েছেন এই নিষ্পাপ শিশুকে, উদ্রেক করছেন ভয় এই রক্তাক্ত পৃথিবীতে। <br />
<br />
কুমারীর কপালের বড় লাল টিপ সূচনা করছে জাগতিক মিলনের। গাঢ় পরিনয়ের আভা মিশেছে সিন্দুরের সঙ্গে, তারই রেশ টেনে তৈরি হয়েছে প্রতিস্তুতির রক্তিম মালা। একটা ছোট্ট মেয়ে উল-ফুলের মুকুট মাথায় পরে সূচনা করছে সৃষ্টির আর শুভ সঞ্চারের।<br />
<br />
নবরাত্রির অষ্টম দিন বা ‘অষ্টমী’ হল দুর্গাপূজার পবিত্রতম দিন। আশ্বিন মাসের শুক্লাষ্টমী তিথির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা দিনটিকে আমরা ‘দুর্গাষ্টমী’, ‘মহাষ্টমী’ বলে থাকি। আশ্বিন মাসের এই অষ্টমী তিথি হল অশুভ শক্তি বিনাশ করার জন্য শুভশক্তির আবির্ভাব তিথি। তাই দুর্গাপূজায় অষ্টমী দিনটির গুরুত্ব অসীম। সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাস্ত্রগ্রন্থে তাই এই দিনটির মাহাত্ম্য সুবিস্তারে বর্ণনা করা হয়েছে। মনে প্রশ্ন জাগে, কেন অষ্টমী দুর্গাপূজার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। তাই একে একে জেনে নেব মহাষ্টমীর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে থাকা ঘটনাবলি।
অষ্টমীতে অস্ত্র পূজা
এই দিনে দেবী দুর্গার অস্ত্রসমূহকে দেবজ্ঞানে পূজা করা হয়। কারণ দেবতারা নানা অস্ত্র প্রদানের মাধ্যমে দেবীকে রণসাজে সাজিয়ে তুলেছিলেন এই মহাষ্টমী তিথিতেই। তাই দিনটিকে বীরাষ্টমী বলে থাকেন অনেকে। আবার ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এই দিনকে বলা হয় ‘অস্ত্র পূজা’।
অষ্টমীতে বিশেষ পূজা পান দেবী মহাগৌরী
নবরাত্রির অষ্টম দিনে বা অষ্টমীতে পুজো করা হয় দেবী মহাগৌরীকে। পুরাণ থেকে জানা যায়, হিমালয়দুহিতা পার্বতী ছিলেন গৌরবর্ণা। কিন্তু শিবকে পতি হিসেবে পাওয়ার জন্য প্রখর রৌদ্রে তপস্যা করায় তিনি কৃষ্ণবর্ণা হয়ে গিয়েছিলেন। দেবাদিদেব মহাদেব তখন পার্বতীকে গঙ্গাজলে স্নান করিয়ে দেওয়ার ফলে ফের গৌরবর্ণ ফিরে পেয়েছিলেন পার্বতী। তাই দেবী পার্বতীর এই রূপের নাম মহাগৌরী। শ্বেত বস্ত্রে সুশোভিতা দেবী মহাগৌরীর বাহন হল সাদা ষাঁড়। চতুর্ভুজা দেবীর এক হাত থাকে বরাভয় মুদ্রায়, বাকি তিন হাতে দেবী ধারণ করেন পদ্ম, ত্রিশূল ও ডম্বরু। নবরাত্রির অষ্টম রাতে দেবী মহাগৌরীর পূজা করলে সব পাপের স্খালন ঘটে।
অষ্টমীতে অষ্ট-মাতৃকার আবির্ভাব
দুর্গাডামর ও যোগিনীতন্ত্রে বলা বর্ণিত হয়েছে চৌষট্টি যোগিনীর কথা। এই যোগিনীরা মহাশক্তিরূপিণী মহাদেবীর অংশ। এই চৌষট্টি যোগিনী বিশ্বব্রহ্মাণ্ড পরিচালনায় মহাশক্তিকে সাহায্য করেন। এই চৌষট্টি যোগিনীর আটজন করে একই দেহে সম্মিলিত হয়ে মহাষ্টমীর দিন আবির্ভূতা হয়েছিলেন আট জন ভয়ঙ্কর দেবী। অশুভ শক্তির বিনাশে ধরাধামে অবতীর্ণ হয়েছিলেন দানবদলনী অষ্ট-মাতৃকা বা অষ্ট-শক্তি। এঁরা হলেন ব্ৰহ্মাণী, মাহেশ্বরী, কৌমারী, বৈষ্ণবী, বরাহী, নরসিংহী, ইন্দ্রানী ও চামুণ্ডা। অশুভশক্তিকে বিনাশ করার পর যাঁরা বিলীন হয়ে গিয়েছিলেন দেবীর দুর্গার অঙ্গে। তাই মহাষ্টমীর দিন পুজো করা হয় অসুরবিনাশিনী অষ্ট-মাতৃকাকেও।
অষ্টমীতে কুমারী পূজা
সনাতন হিন্দু দর্শন বলে, মহাবিশ্বের সৃষ্টি, স্থিতি ও লয় নামক ত্রিবিধ শক্তি আবদ্ধ থাকে কুমারীর মধ্যে। ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলের দশম অনুবাকের ১২৫তম সূক্ত বা দেবী সূক্তে বলা হয়েছে, কুমারীর মাধ্যমেই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে বলা হয়েছে বসুন্ধরার বুকে জন্ম নেওয়া সকল কুমারীই প্রকৃতিদেবীর অংশ। দেবী দুর্গা এই কুমারী রূপ ধারণ করেই অশুভ শক্তির প্রতীক কোলাসুরের বিনাশ করেছিলেন। তাই দেবী দুর্গার মধ্যে মিশে আছে তাঁর কুমারী রূপ। প্রাচীন যুগের বেদজ্ঞ ঋষিরা মর্ত্যে দেবী দুর্গার কুমারী রূপের আরাধনার প্রচলন করেছিলেন।
কুমারী পূজার কুমারী হিসেবে সাধারণত ব্রাহ্মণ কন্যাকেই নির্বাচন করেন দুর্গাপূজার আয়োজকেরা। কিন্তু দেবীপুরাণ, তন্ত্রসার, কুলার্ণব-তন্ত্র ও অনান্য শাস্ত্রে কুমারী পুজার ক্ষেত্রে কোন জাতি বা বর্ণভেদ করা হয়নি। যে কোনও জাত বা বর্ণের অরজঃস্বলা কুমারীকেই দেবীরূপে পূজা করা যেতে পারে। এমনকি পতিতা নারীর কন্যারও দেবী রূপে পূজিতা হতে বাধা নেই। অরজঃস্বলা বালিকাটিকে নববস্ত্র, ফুলের মালা, আলতা, সিঁদুর, তিলক ও মুকুট পরিয়ে মহাষ্টমীর দিন দেবী দুর্গা রূপে তন্ত্রমতে পূজা করা হয়। কুমারী পূজার কুমারীদের বয়স অনুসারে দেবী দুর্গার আলাদা আলাদা রূপ হিসেবে পূজা করা হয়।
কুমারী পূজা করলে মহাফল লাভ করা যায়। ভারত, বাংলাদেশ ও নেপালের সামান্য কিছু অংশে আজও দুর্গাপূজার অঙ্গ হিসেবে কুমারী পূজা করার রীতি আছে। দুর্গা অষ্টমীতে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় পাঁচ বা সাত অবিবাহিত কন্যাকে ভোজন করানোর প্রথা আছে। বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে কুমারী কন্যাদের পা ধুইয়ে দেওয়া হয়। তাঁদের আরতি ও পূজা করা হয়। মিষ্টি, ফল ও উপহার দেওয়া হয়।
মহাষ্টমীর অঞ্জলি
অষ্টমীর ভোরটা যেন একেবারে অন্যরকম ভোর। খুব ভোরে উঠে, স্নান করে পরিষ্কার বা নতুন জামাকাপড় পরে, নির্দিষ্ট সময় মণ্ডপে উপস্থিত হন। অষ্টমী পুজোর শেষে শুরু হয় অঞ্জলি। বেশিরভাগ বাঙালি এই শুভক্ষণটার জন্য সারাবছর অপেক্ষা করে থাকেন। পুজোর তিনদিনই পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া গেলেও, দিনটির মাহাত্ম্যের কথা বিচার করে সবাই অষ্টমী তিথিতেই অঞ্জলি দিতে চান। এক সময় অপেক্ষার প্রহর সাঙ্গ হয়।
পুরোহিত মশাই ভক্তদের মাথায় মন্ত্রপূত গঙ্গাজল ছিটিয়ে দেন। ভক্তদের হাতে ফুল ও বেলপাতা তুলে দেওয়ার পর, পুরোহিত যখন পুষ্পাঞ্জলির মন্ত্র উচ্চারণ করতে থাকেন তখন চরম নাস্তিক মানুষও ভাবাবেগে বিহ্বল হয়ে পড়েন। সনাতন ধর্ম বলে, অষ্টমীতে অঞ্জলি দিলে সর্বকর্মে সিদ্ধি লাভ হয়। সর্বপ্রকার বাধাবিঘ্ন দূর হয়। সন্তান ও অর্থ লাভ হয়। দুঃখ, শোক, রোগ দূরীভূত হয়। দারিদ্র নাশ ও শত্রু-ক্ষয় হয়। ভক্তরা গ্রহ-শান্তি লাভ করেন।
অন্তরের পাশবিক কামনা বাসনা দূরীভূত হয়। এ বছর সকাল ১০টা ৫৮ মিনিট ৪১ সেকেন্ডের আগে অঞ্জলি সেরে ফেলতে হবে। কারণ এর পর সন্ধিপুজো শুরু হবে।
অষ্টমীতে সন্ধিপূজার শুরু
অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট এবং নবমী তিথি শুরুর প্রথম ২৪ মিনিটকে বলা হয় সন্ধিক্ষণ। এই সন্ধিক্ষণে বা ৪৮ মিনিটের মধ্যে তন্ত্রমতে করা হয় ‘সন্ধিপূজা’। তন্ত্রমতে সন্ধিপূজা করা হয় বলে স্মার্ত রঘুনন্দন তাঁর ‘দুর্গোৎসব তত্ত্ব’ গ্রন্থে সন্ধিপুজোর জন্য পৃথক সঙ্কল্পের কথা বলেছেন। তবে চান্দ্রমাস ক্যালেন্ডার অনুসারে মাহেন্দ্রক্ষণটি নির্ধারিত হয় বলে প্রতিবছরই সন্ধিক্ষণটি পরিবর্তিত হয়। সন্ধিপুজো আসলে অসুরনাশিনী দেবী দুর্গার আর এক অসুরদলনী রূপের পূজা। সেই দেবীর নাম ‘চামুণ্ডা’। পুরাণে বলে, মহাষ্টমীর দিনে দেবী চামুণ্ডা এই দিনে মা দুর্গার ললাট থেকে আবির্ভুতা হয়েছিলেন। অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে চণ্ড ও মুণ্ড নামে দুই অসুরকে নিধন করেছিলেন দেবী চামুণ্ডা। তাই অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে দেবী চামুণ্ডার পূজা করা হয়। এবছর সকাল ১০ টা ৫৮ মিনিট ৪১ সেকেন্ডে সন্ধিপুজো শুরু হবে। শেষ হবে সকাল ১১টা ৪৬ মিনিট ৪১ সেকেন্ডে।
অষ্টমীতে ‘দুর্গাষ্টমী ব্রত’ পালন
শাস্ত্র মতে প্রতি মাসের শুক্লাষ্টমী তিথিকে দুর্গাষ্টমী হিসাবে পালন করা হলেও, নবরাত্রির দুর্গাষ্টমীতে বিশেষ ভাবে এই ব্রত পালন করার প্রথা আছে ভারতের বিভিন্ন স্থানে। ‘দুর্গাষ্টমী ব্রত’ পালন করলে সর্বসংকট দূর হয়। ব্রতীরা খুব ভোরে উঠে স্নান সেরে নতুন পোশাক পরে ঠাকুরের আসন পরিষ্কার করে নেন। তারপর উপবাসরত অবস্থায় নৈবিদ্য সাজিয়ে এবং ধূপ ও প্রদীপ জ্বালিয়ে দেবী দুর্গার উপাসনা করেন।
উপরোক্ত কারণের জন্যেই দুর্গাপূজায় অষ্টমীর গুরুত্ব অসীম। তাই অষ্টমীর দিনটির আনুসঙ্গিক আচারগুলি নিষ্ঠাভরে পালন করেন বাঙালিরা। অনেক সাত্ত্বিক ভক্ত দিনটা নির্জলা উপবাসে কাটান। আবার বাংলার ঘরে ঘরে সেদিন নিরামিষ আহার বা ফলাহারের আয়োজন করা হয়। মধ্যাহ্নে ঘিয়ে ভাজা লুচি, ছোলার ডাল, বেগুনভাজা আর মিষ্টি ছাড়া অষ্টমী যেন কল্পনাতেই আনতে পারে না বাঙালি।
Kalyan Panjahttp://www.blogger.com/profile/00806730473428069202noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-6051442196783369904.post-20372594556643936552020-09-05T09:41:00.000+05:302020-09-05T09:41:59.050+05:30শিক্ষক দিবসের ইতিহাস: কেন পালিত হয় এই দিনটি?শিক্ষক দিবস বা গুরু পূর্নিমা সাধারণত হিন্দু এবং বৌদ্ধরা পালন করে থাকে। গুরু শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ‘গু’ যার অর্থ অন্ধকার এবং ‘রু’ যার অর্থ যিনি অন্ধকার দূর করেন। গুরু হচ্ছেন তিনি যিনি আমাদের মধ্যে থেকে অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করেন। আষাঢ় মাসের পূর্নিমা তিথিতে এই অনুষ্ঠান পালিত হয়। এইদিনে ভক্তরা পুজার্চনার মাধ্যমে গুরুকে সম্মান প্রদর্শন করেন। <br />
<br />
বৌদ্ধরা ভগবান বুদ্ধের সম্মানে এই দিনটি পালন করেন, কারন এই দিনে তিনি প্রথম ধর্ম-উপদেশ দিয়েছিলেন। হিন্দুরা এই দিনটি পালন করেন মহান ঋষি বেদব্যাস কে স্মরণ করে। বেদব্যাস শুধু জন্মগ্রহন করেন নি, এইদিনে তিনি ব্রহ্ম সুত্র লেখা শেষ করেন। এটাকে ব্যাস পূর্নিমাও বলা হয়। এইদিনে হিন্দুরা তাদের শিক্ষকদের সম্মান প্রদর্শন করেন। হিন্দু যোগী এবং তপস্বীরা তাঁদের গুরুর পূজা করেন।<br />
<br />
<img alt="শিক্ষক দিবস" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEinh5kfoj3pQB_HfVYkvf2W12IHf7MrEC__Zto1YBYpIPoq0FEsbLudRZ5h_JliEIZivujZEenlVZo8v2EYKfGHqxdz2IPoKuz2l-Z1Y9rmVO-WvAHhjeYag9WAySFmreRQI4txZj-_DCw/s1600/3.png" /><br />
<br />
গুরু আর শিষ্যর সম্পর্কে থাকে এক অদৃশ্য বন্ধন - যাকে এক কথায় বলা যায় মুক্তির বন্ধন। প্রতিটি শিষ্যের জন্যে একজন গুরু নির্দিষ্ট থাকেন আর সেই শিষ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয় গুরুকেই। শিষ্যকে যে গুরু দীক্ষা দেন তার নেপথ্যে গুরুর নিজস্ব কোন স্বার্থ থাকেনা। থাকে একটাই লক্ষ্য - শিষ্যকে তার ঠিকানায় পৌছে দেয়া। আর সেখানে শিষ্য পৌছতে পারাই হচ্ছে গুরুর একমাত্র গুরুদক্ষিনা। <br />
<br />
গুরু যখন শিষ্যকে দীক্ষা দেন তখন আপন সাধনশক্তি দিয়ে সৃষ্ট উর্জাশক্তিকে তিনি মন্ত্রের সাথে শিষ্যের ভিতরে প্রতিষ্ঠা করে দেন। এজন্যে কম শক্তি ব্যয় হয় না। এর ফলে দীক্ষার পর শিষ্যের একটা প্রারব্ধের অংশ গুরুকে টেনে নিতে হয়। জগতের অন্য কোন সম্পর্ক কিন্তু কারোর প্রারব্ধ নেয় না কোন কারণেই। <br />
<br />
একমাত্র গুরুই এই প্রারব্ধ টানেন। শুধু তাই নয়। এরপর শিষ্য অনেকসময়েই নানা ভুল করে,অন্যায় করে আর তার শাস্তির একটা বড় অংশ গিয়ে পরে গুরুর উপরে।দোষ করে শিষ্য আর প্রারব্ধ ভোগেন গুরু। তাই দীক্ষার পর প্রতিটি শিষ্যের উচিত - কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে গুরুর থেকে মত নেয়া। গুরুর প্রতি কখনোই অসম্মান প্রদর্শন করতে নেই। তাতে ইষ্ট রুষ্ট হয়ে যান। আর গুরু যদি কখনো শিষ্যের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে তার মন্ত্র তুলে নিতে বাধ্য হন তখন শিষ্যের প্রতি যে ঘর বিপত্তি নেমে আসে তা সামাল দেয়ার শক্তি কিন্তু জগতে কারোরই থাকেনা। এমনকি ইষ্ট নিজেও সেই শিষ্যকে বাচাতে যান না।<br />
<br />
সাধারনত শিষ্য যখন অসুস্থ হয়ে পরে তখন গুরু তাঁর জপ বাড়িয়ে দেন যাতে শিষ্য তার জপের শক্তিতে তাড়়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠে। একইভাবে শিধ্যের কর্তব্য - গুরু অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের জপের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়া যাতে গুরু সুস্থ হয়ে ওঠেন।কারণ গুরুর অধিকাংস ভোগ আসে শিষ্যের দুর্ভোগ থেকে। তাই শিষ্যের কর্তব্য - সেটি যথাসম্ভব কম গুরুর উপর চাপানো। উত্তম শিষ্যরা এটাই করে থাকেন। যেমন কুলদানন্দ ব্রহ্মচারী করে দেখিয়েছিলেন বিজয়্কৃশ্ন গোস্বামীর জন্যে।<br />
<br />
আসলে শিষ্য এবং গুরুর মধ্যে একটা জ্যোতির সংযোগ সৃষ্টি হয়ে যায় যা গুরুর সাথে শিষ্যকে এগিয়ে নিয়ে চলে আলোর দিকে। তাই এই যাত্রায় দুজনের সাধনশক্তিরই প্রয়োজন পড়ে। যেখানে একইসাথে দ্রোনের মত গুরু আর অর্জুনের মত শিষ্য থাকে সেখানে অগ্রগতি হয় দ্রুত দুজনের মিলিত শক্তিতে কিন্তু যেখানে "গুরু আছেন,তিনি দেখবেন,আমি যা করার করি"ভাবনা নিয়ে শিষ্য চলে সেখানে বুঝতে হবে গুরু দিকপাল হলেও শিষ্যের জন্যে তার ফাটা কপাল। <br />
<br />
অর্থাত সেখানে দুজনেই পিছিয়ে পড়বে। তাই শিষ্যের সবসময়ে উচিত -গুরুর প্রতি যথাযথ সম্মান রেখে অত্র দেখানো প্রণালীতে ঠিকমত জপ ধ্যান এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। তবেই সার্থক হয় গুরু শিষ্যের অমৃতের পথে যাত্রা।Kalyan Panjahttp://www.blogger.com/profile/00806730473428069202noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-6051442196783369904.post-62373572313628615452020-08-26T22:17:00.000+05:302020-08-26T22:18:28.130+05:30মাদার টেরিজার বাণী, উক্তি ও ছবিমাদার তেরেসার বিখ্যাত উক্তি সমূহ<br />
<br />
১। ছোট বিষয়ে বিশ্বস্ত হও কারন এর উপরেই তোমার শক্তি নির্ভর করে। <br />
<br />
২। আমি ঈশ্বরের হাতের একটি ছোট পেন্সিল যা দ্বারা ঈশ্বর পৃথিবীতে ভালোবাসার চিঠি লিকছেন।<br />
<br />
৩। আসুন, আমরা সবাই মিলে প্রার্থনা করি। প্রভু, আমাদের যোগ্য করো, যেন আমরা সারা পৃথিবীতে যেসব মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে ক্ষুধার মধ্যে জীবন যাপন করেন, মৃত্যুমুখে পতিত হন, তাদের সেবা করতে পারি।<br />
<br />
৪। কেবল সেবা নয়, মানুষকে দাও তোমার হৃদয়। হৃদয়হীন সেবা নয়, তারা চায় তোমার অন্তরের স্পর্শ।<br />
<br />
৫। আনন্দই প্রার্থনা, আনন্দই শক্তি, আনন্দই ভালোবাসা।<br />
<br />
৬। হৃদয়কে স্পর্শ করতে চায় নীরবতা। কলরবের আড়ালে নীরবেই পৌঁছাতে হয় আর্তের কাছে।<br />
<br />
৭। তুমি যখন কারো সঙ্গে দেখা করো তখন হাসিমুখ নিয়েই তার সামনে যাও। কেননা হাস্যোজ্জ্বল মুখ হলো ভালোবাসার শুরু।<br />
<br />
৮। আমার শরীরজুড়ে প্রবাহিত আলবেনিয়ান রক্ত, নাগরিকত্বে একজন ভারতীয় আর ধর্মীয় পরিচয়ে আমি একজন ক্যাথলিক নান। তবে নিজের অন্তর্নিহিত অনুভূতি দিয়ে আমি অবগাহন করি বিশ্বময় এবং মনে-প্রাণে আমার অবস্থান যিশুর হৃদয়ে।<br />
<br />
৯। ভালবাসার কথাগুলো হয়তো খুব সংক্ষিপ্ত ও সহজ হতে পারে কিন্তু এর প্রতিধ্বনী কখনো শেষ হয় না।<br />
<br />
১০। তুমি যদি মানুষকে বিচার করতে যাও তাহলে ভালোবাসার সময় পাবে না।<br />
<br />
১১। শান্তির জন্য কাজ করলে তাতেই যুদ্ধ কমে যায়। কিন্তু রাজনীতির মধ্যে আমি যাব না। রাজনীতি থেকেই যুদ্ধের উদ্ভব হয়। সেজন্য রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে আমি চাই না। রাজনীতির মধ্যে যদি আমি বাঁধা পড়ে যাই, তাহলে আর ভালোবাসতে পারব না। কেননা, তখন সকলের পক্ষে আর নয়, আমাকে দাঁড়াতে হবে একজনের পক্ষে।<br />
<br />
১২। ঈশ্বর পৃথিবীকে ভালোবাসেন এবং তিনি আপনাকে, আমাকে পাঠিয়েছেন তার ভালোবাসা এবং সহায়তা দরিদ্রদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য।<br />
<br />
১৩। তুমি কী করলে তার চাইতে তুমি কতটা ভালোবাসা দিয়ে করলে তা-ই মুখ্য।<br />
<br />
১৪। তুমি দৃশ্যমান মানুষকে ভালোবাসতে না পারো তবে অদৃশ্য ঈশ্বরকে কি করে ভালোবাসবে?<br />
<br />
১৫। আমাদের মধ্যে সবাই সব বড় কাজগুলো করতে পারে না, কিন্তু আমরা অনেক ছোট ছোট কাজ করতে পারি আমাদের ভালোবাসা দিয়ে।<br />
<br />
১৬। নেতার জন্য বসে থেকো না, একাই ব্যাক্তি থেকে ব্যাক্তি শুরু করে দেও।<br />
<br />
১৭। সত্যিকারের ভালোবাসার অর্থ হলো যতক্ষন তা কষ্ট না দেয় ততক্ষন দেওয়া।<br />
<br />
১৮। তুমি যদি শতশত লোকের খুধা মিটাতে না পারো তাহলে শুধুমাত্র একজনকে খাওয়াও।<br />
<br />
১৯। শান্তির শুরুই হয় হাসির মাধ্যমে।<br />
<br />
২০। গতকাল চলে গেছে, আগামিকাল এখনো আসেনি, আমাদের জন্য আছে আজকের দিন, এখনই শুরু করা যাক।<br />
<br />
২১। কিছু লোক তোমার জীবনে আশির্বাদ হয়ে আসে, কিছু লোক আসে শিক্ষা হয়ে।<br />
<br />
২২। আশা করো না যে তোমার বন্ধু নির্ভুল ব্যাক্তি হবে বরং তোমার বন্ধুকে নির্ভুল হতে সহায়তা করো এটাই প্রকৃত বন্ধুত্ব।<br />
<br />
২৩। ঈশ্বর আমাদের সফলতা চায় না, তিনি চান আমরা যেন চেষ্টা করি।<br />
<br />
<img alt="Mother Teresa wallpaper" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgGgn03AQ-YhfjXiH4TYF7eOpazN66gt972xavQFNVZhWDMSWGAH4cyJEVZ4j3JjihNtS123tBwODOc64iE5DcqjvdUkTVsJP3nMzw30-wOwOioYnzakb6BfnaAtrqcBztZl_zpphnNwQpq/s640/motherteresa1.jpg" />Kalyan Panjahttp://www.blogger.com/profile/00806730473428069202noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-6051442196783369904.post-49288929995040700172020-08-22T09:57:00.000+05:302020-08-22T09:57:43.549+05:30সিদ্ধিলাভে সিদ্ধিদাতার খোঁজে গণেশ চতুর্থী হিন্দু পৌরাণিক অনুযায়ী গণেশ চতুর্থী বা গণেশ উৎসব হিন্দু দেবতা গণেশের বাৎসরিক পূজা-উৎসব। শিব ওঁ পার্বতী পুত্র গনপতি, নিজে মর্তে নেমে সমস্ত ভক্তদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন এই বিশেষ দিনে। হিন্দু পঞ্জিকা মতে ভাদ্র মাসের শুক্লা চতুর্থী তিথিতে গনেশ বা গজানন এই মর্তে পূজিত হন। <br />
<br />
শ্রী গণেশ কে মঙ্গল মূর্তি, বিঘ্নহর্তা নামে ডাকা হয় । বলা হয় সমস্ত শুভ কাজের শুরু শ্রী গণেশের নাম নিয়ে করলে তা সফল হয় । দেবতাদের মধ্যে তাঁকে প্রথম পূজ্য বলা হয় । ঋক বেদে গণনাং ত্বা গণপতিং হবামহে মন্ত্রে গণপতির আহ্বান দেখা যায় । যজু বেদের মন্ত্রে গণেশ কে দেব গনের মধ্যে গণপতি, প্রিয় গনের মধ্যে প্রিয়পতি এবং নিধি গনের মধ্যে নিধিপতি বলা হয়েছে । <br />
<br />
গনপতয়ে স্বাহা মন্ত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়- কৃষ্ণ যজু বেদের কাণ্বসংহিতা এবং ঐ বেদের মৈত্রায়নী সংহিতা তে । মৈত্রায়নী সংহিতা ও তৈত্তিরীয় আরণ্যকের গণপতির গায়ত্রী উল্লেখ সহকারে তাঁর বর্ণনা আছে । গণেশ পুরানে গণেশ কেই ওঁঙ্কার রূপী ভগবান বলা হয় । পুরান মতে গণেশ ভগবান শিব ও মাতা পার্বতীর পুত্র – তথা কুমার কার্ত্তিকের অনুজ । <br />
<br />
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান মতে গণেশ ভগবান বিষ্ণুর কৃপায় উৎপন্ন হন এবং ইনি ভগবান বিষ্ণুর মতো চক্র, শঙ্খ, গদা, পদ্ম ধারন করেন । বামন পুরান মতে ভগবতী মাতা পার্বতী স্বীয় দেহ থেকে ভগবান গণেশ কে প্রকট করেন । আবার বরাহ পুরান মতে গণেশের সৃষ্টি হয়েছিল ভগবান শিবের মুখ থেকে। গণেশের মুখ কিভাবে গজানন হল – তা নিয়ে পুরানে একাধিক কাহানী দেখা যায় । <br />
<br />
<img alt='গণেশ চতুর্থী' src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiybH5LBy0wUvm1yQKjEAeyulAjG4hJerZRhLxcYPfyYua6ev_fDh580uI79PGWyn9JYyPieRse-KffExZy2nzdyqFQtwnr7PdzLS0V9PJQ9BLtZTUKFznwEqAFSV7J6mpYrIAi9JRdTEA/s1600/DSCN2196.jpg" /><br />
<br />
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান মতে গ্রহরাজ শণি দেব গণেশ কে দর্শন করলে গণেশের মুণ্ড পাত হয় । পুরানে শনি দেবতার দৃষ্টিকে হানিকারক বলা হয় । আবার শিব পুরান মতে গণেশের মুণ্ডচ্ছেদ করেন স্বয়ং তাঁর পিতা মহাদেব । বরাহ পুরানেও শিব দ্বারা গণেশের মুণ্ডপাতের ঘটনা দেখা যায় । এতে মহাদেবী গৌরী ভীষনা রুষ্টা হলে শাপযুক্ত ঐরাবতের মস্তক কেটে গণেশের ধড়ে লাগিয়ে তাঁকে পুনর্জীবন দিয়ে দেবতাদের মধ্যে সর্ব অগ্রে পূজ্য ঘোষোনা করা হয় । গণ+ ঈশ= গণেশ । গণ অর্থে সমষ্টি যিনি ঈশ্বর বা নায়ক। তিনিই গণেশ । <br />
<br />
গণ শব্দটির মধ্যে আর একটি অর্থ আছে। এর অর্থ সেনাবাহিনী । গনেদের দের অগ্র দেখে তাঁর এক নাম গনণায়ক । গণেশ কে একদন্ত নামে ডাকা হয়। বলা হয় গণেশের একটি দাঁত কেটেছিলেন পরশুরাম । মহাভারত স্বহস্তে লিখেছিলেন গণেশ । ব্যাস ঋষি বলতেন আর গণেশ লেখতেন । গণেশ হল ‘গন শক্তি’ এর প্রতীক । <br />
<br />
মূষিককে শ্রী গণেশের বাহন বলা হয় । এই অপকারী প্রানীটি কিভাবে বাহন হল – এর মধ্যেও তত্ত্ব কথা আছে । মূষিক তাঁর দন্ত দিয়ে জিনিষপত্র কেটে তছনছ করে। ভালো মতো দেখলে দেখা যায় মূষিক অত্যন্ত ধৈর্য নিষ্ঠা সহকারে একস্থানে বসে এগুলো কাটে । যা আমদের ধৈর্যপরায়ন ধীর স্থির হবার শিক্ষা দেয় । তাছারা জীব অষ্টপাশে বদ্ধ । ঘৃনা, অপমান, লজ্জা, মান, মোহ, দম্ভ, দ্বেষ, বৈগুণ্য ইত্যাদি অষ্ট পাশ । শ্রী গণেশের বাহন এই অষ্টপাশ ছিন্ন করবার শক্তি দেয় । শ্রী গণেশের চরণে প্রনাম জানিয়ে বলুন-<br />
<br />
ওঁ দেবেন্দ্র- মৌলি- মন্দার মকরন্দ কণারুণাঃ ।<br />
বিঘ্নং হরন্তু হেরম্বচরণাম্বুজরেণবঃ ।Kalyan Panjahttp://www.blogger.com/profile/00806730473428069202noreply@blogger.com1