দুর্গাপূজা প্রবর্তনের ইতিহাস

অনেকের ধারণা দূর্গা পূজা খুব পুরানো পূজা, কিন্তু তা মোটেই নয়। মুসলমান যুগেই এর প্রচলন হয় অর্থাৎ একেবারেই পুরানো নয়। বর্তমানে শরৎকালে বাঙালী হিন্দুরা যে দূর্গা পূজা করেন তার ভিত্তি হচ্ছে কৃত্তিবাস ঠাকুরের বাংলা রামায়ণ। কৃত্তিবাসী বাংলা রামায়ণে আছে যে রামচন্দ্র শরৎকালে দূর্গা পূজা করেছিলেন ১০৮টা কমল দিয়ে। কিন্তু বাল্মীকি রচিত সংস্কৃত রামায়ণে এ কাহিনী নেই। তুলশী দাসের রাম চরিত মানসেও এসব কথা নেই। রামচন্দ্র যদি দূর্গা পূজা করতেন তাহলে তা অবশ্যই বাল্মীকি রামায়ণে থাকত।

তাহলে প্রশ্ন জাগে কৃত্তিবাস ঠাকুর এ কাহিনী পেলেন কোথায়? আসলে বাংলায় প্রথম দূর্গা পূজা করেছিলেন রাজশাহী জেলার তাহেরপুরের রাজা কংস নারায়ণ রায়। কংস নারায়ণের প্রচুর টাকা ছিল। তিনি পণ্ডিতদের বললেন- আমার এত টাকা আছে, আমিও রাজসূয় যজ্ঞ করবো। তখন পণ্ডিতেরা বললেন- দেখ, কলিকালে তো রাজসূয় যজ্ঞের বিধি নেই। তা’ তুমি মার্কণ্ডেয় পুরাণে যে দূর্গা পূজার উল্লেখ আছে, খুব টাকা খরচ করে তা-ই করো। কংস নারায়্ণ তখন সেকালের সাত লাখ টাকা খরচ করে দূর্গা পূজা করলেন। তা দেখে পরের বছর রাজা জগদ্বল্লভ মতান্তরে জগৎ নারায়ণ সাড়ে আট লাখ টাকা খরচ করে দূর্গা পূজা করলেন।



তার পরে জমিদারে জমিদারে রেষারেষি, প্রতিযোগিতা লেগে গেল। জমিদারের ঘরের পূজা হয়ে দাঁড়াল দুর্গা পূজা। আসলে উদ্দেশ্য ছিল কার কত টাকা তাই দেখানো। প্রচুর লোক খাইয়ে দেব, প্রচুর সাজগোজ করাব। প্রতিযোগিতা চললো জমিদারে জমিদারে। ছোট হোক, বড় হোক, মেঝো হোক সব জমিদারই দূর্গা পূজা শুরু করলেন। এখন যেমন কলিকাতার ক্লাবগুলোতে দূর্গাপূজা নিয়ে প্রতিযোগিতা চলে। এ হচ্ছে পাঠান যুগের কথা।

সেই সময়ে হুগলী জেলার বলাগড় থানার গুপ্তিপাড়ার বারজন বন্ধু ভাবলেন যে আমরা একক ভাবে না হয় পারব না, কিন্তু বার জনে মিলে তো পূজার আয়োজন করতে পারি। উর্দু ভাষায় বন্ধুকে বলে ‘ইয়ার’। তাই বার জন ইয়ারে মিলে যে দূর্গা পূজা করলেন সেটা হলো ‘বার ইয়ারী’ পূজা- বারোয়ারী পূজা। কিন্তু বারোয়ারী পূজায় যেহেতু ‘অন্তজ’ লোকেদের অঞ্জলি দেবার অধিকার থাকে না, সেই জন্যে অতি আধুনিক কালে বারোয়ারী পূজা বিবর্ত্তিত হয়ে হ’ল সার্বজনীন দূর্গা পূজা। এতে সবাইকার সমান অধিকার থাকে। বর্তমানে এই সার্বজনীন দূর্গা পূজা হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘সার্বজনীন দূর্গোৎসব’।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url