ফলের রাজা আম

আম একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। কাঁচা আমে প্রচুর ভিটামিন-সি এবং পাকা আমে প্রচুর ভিটামিন-এ রয়েছে। ভিটামিন ছাড়াও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান ও খনিজ লবণে সমৃদ্ধ এ ফল। সুস্বাদু হওয়ার কারণে শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই আম পছন্দ করে। গবেষকরা মনে করেন আমের উৎপত্তিস্থল ভারতের পূর্বাঞ্চল ও মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চল।

আম গাছের বংশবিস্তার প্রধানত দু’ভাবে হয়ে থাকে। বীজের মাধ্যমে এবং অঙ্গজ পদ্ধতির মাধ্যমে। আম একটি পরপরাগায়িত ফল। এর স্ত্রী ফুল অন্য গাছের পরাগ রেণু দ্বারা নিষিক্ত হয়ে থাকে। ফলে যে ভ্রূণের সৃষ্টি হয় তাতে মাতৃগুণ বজায় থাকে না। তবে হাজার হাজার চারার ২-১ টিতে মাতৃগুণ বজায় থাকা অসম্ভব নয়। বীজের মাধ্যমে উৎপন্ন গাছের বৈশিষ্ট্য বড় বিচিত্র। এগুলো সাধারণত অনুন্নত জাতের, এর ফলনও বেশ কম হয়। এ ছাড়া বাজারদর কম হওয়ায় এ থেকে আয়ের পরিমাণও অনেক কম। উন্নতমানের আম গাছ থেকে অঙ্গজ পদ্ধতিতে চারা উৎপন্ন করা হয় যাতে মাতৃগুণ বজায় থাকে।

বাণিজ্যিকভাবে যেসব এলাকায় আমের চাষাবাদ হয়ে থাকে সেখানে কলমের গাছ লাগানো হয়। অপরদিকে দেশের অন্যান্য এলাকায় প্রায় সব আম গাছই আঁটি থেকে উৎপন্ন। এসব গাছের /জাতের কোনো নির্দিষ্ট নাম নেই। গাছের মালিক যে নামে ডাকেন সে নামেই পরিচিত হয়ে থাকে। যেমন -পুকুর পাড়ের গাছকে পুকুর পাড়, মধুর মতো মিষ্টি আমকে আম্র মধু, সিঁদুরে আমকে সিঁন্দুরী ইত্যাদি।

গুটি আমের প্রত্যেকটি গাছই এক একটি জাত, কারণ এর প্রত্যেকটি স্বতন্ত্র গুণাগুণ বা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। বাংলাদেশে হাজার হাজার গুটির গাছ থাকলেও এর কোনো নামকরণ করা হয়নি। কেবল বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদকৃত জাতগুলোর সুন্দর সুন্দর বাহারি নাম দেয়া হয়েছে। দেশের বাণিজ্যিক জাতের মধ্যে কয়েকটির নামকরণের ক্ষেত্রে কিছু ইতিহাস লোকমুখে প্রচলিত আছে তবে তা কতটুকু সঠিক তা নির্ণয় করা বড় কষ্টকর। যেমন বিহারে এক ল্যাংড়া ফকিরের বাড়ি থেকে উন্নতমানের যে আম গাছের চারা সংগ্রহ করা হয়েছিল তা ল্যাংড়া নামে পরিচিতি লাভ করে।



অনুরূপভাবে ভারতের মালদহ জেলার তৎকালীন সরকারি কর্মকর্তা মি. ফজল আলীর সরকারি বাসভবন থেকে সংগৃহীত নামে পরিচিতি লাভ করে। খিরসার মতো সুস্বাদু জাতটিকে খিরসাপাত নামে অভিহিত করা হয়। সবচেয়ে নাবি জাতটি আশ্বিন মাস পর্যন্ত গাছে থাকতে পারে বলে তাকে আশ্বিনা নাম দেয়া হয়েছে। লতা বোম্বাই জাতের গাছটি চারা অবস'ায় লতার মতো বিস্তৃত হয় বিধায় তাকে লতাবোম্বাই বলা হয়।

অনেক সময় দেখা যায় রানী একটি গাছের আম খুবই পছন্দ করেন, ব্যস সেই জাতের নাম হয়ে গেল রানী পছন্দ। রাজা যেটি পছন্দ করেন রাজা পছন্দ, নায়েব পছন্দ, অমুক পছন্দ ইত্যাদি। খেজুরের কাঁদির মতো থোকায় থোকায় আম ধরে সেজন্য নাম হলো খেজুর কাঁন্দ। আমের যে সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে সেগুলোর সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য বেশ কিছু জাতের আমের নাম নিচে উলেৱখ করা হলো।

অমৃত ভোগ, অনুপম, আব্দুল আজিজ, আজিজ পছন্দ, আলফানসো, আলী চৌরস, আম্রপালি, আমবাজান, আনারস, আমন দাশেহারী, আনানাস খাশ, আলমপুর, আওবেক, এনায়েত পসন্দ, কালা পাহাড়, কাইটুক, গোলাপখাস লাল, চাঁপা, চৌসা, চ্যাটার্জি, ছিদরালী, ছওসি, জনারধন পছন্দ, জাহাঙ্গীর, জামুরাদ, জারদালু, জামাদার, জাহানারা, জাওনিয়া, জাফরান, ঝুমকো ফজলি, ডক্টর পছন্দ, তৈমুরিয়া, তোতা পুরী, দউদি, দিল রোশন, দিল বাহার, দিল ওয়ালা, দিল পসন্দ, দুধ কুমার, দালুয়া, দাসেহারী, ধুপা, নীল উদ্দিন, নোড়া, নীলাম, নওয়াব পসন্দ, নিলাম্বরী, নিসার পসন্দ, বোম্বাই গ্রীণ, বনরাজ, পেয়ারা ফুলী, পীরের ফলী, রাজাপুরী, রওশান টাকী, ফজলি জাফরানি, বাঙ্গালোরা, বেগম ফুলি, বেনেসান (বাগানপলৱী), ভবানী বা ভবানী চৌরস, ভুলীয়া, ভাদুরিয়া, বাদামি, মহারাজ পছন্দ, মিঠা গাজীপুর, মালদাহ, মালগোবা, মালকুরাদ, মলিৱকা, মাদ্রাজী, মিঠুয়া পাটনা, র্বমানী, রাসপুরী, রাগ, রাসপুনিয়া, রত্না, লাল মালগোয়া, লাজুক পছন্দ, লাভ-ই-মশগুল, লিটল ফ্লাওয়ার, শাহ পছন্দ, সব দেরাজ, সরবতী, সামার বেহেস্ত, সুবর্ণরেখা, সামার বেহেস্ত চৌসা, স্বাদওয়ালা, সুকুর খন্দ, সরিখাস, সফদর পছন্দ, সুরখা কলকাতা, সেভেন-ইন-ওয়ান, সারেঙ্গী, সুগার কিং, হিমায় উদ্দিন, হিটলার পছন্দ, হুসনারা।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url