বিশ্বের সেরা কয়েকটি শপিং মল

কেনাকাটার জন্য অনেকেই ছুটে যাচ্ছেন শপিং মলে। বর্তমানে যে-কোনও বড় শহরের গর্বের বিষয় হল অত্যাধুনিক আর আকর্ষণীয় শপিং মলগুলো। আধুনিক শপিংমলের ধারণা আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি শপিংমল রয়েছে এশিয়ায়। এমনকী বিশ্বের সর্ববৃহৎ শপিংমলগুলোও রয়েছে এই মহাদেশে। এসব নিয়ে লিখেছেন শামস্ বিশ্বাস



* নিউ সাউথ চায়না মল

বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই শপিংমলের অবস্থান চীনের দক্ষিণের প্রদেশ গুয়াংডংয়ের দনগ্গুয়ান শহরে। আয়তন ৬ লাখ ৫৯ হাজার ৬১২ বর্গমিটার বা ৭১ লাখ বর্গফুট। এতে দোকানের সংখ্যা ২ হাজার ৩৫০টি। ২০০৫ সালে যখন নিউ সাউথ চায়না মলের উদ্বোধন করা হয়, তখন মাত্র ৪৭টি দোকান চালু হয়েছিল। প্রথম বছরে এই শপিংমল মাত্র ২ শতাংশ দোকান চালু করতে পেরেছিল। গেল বছরও দেখা গেছে এই শপিংমলের ৩৬ শতাংশ দোকান খালি আছে। এত দোকান খালি পড়ে থাকার জন্য এটিকে ‘মৃত শপিংমল’ বলা হয়। এমন হওয়ার কারণ, দনগ্গুয়ান শহরের অধিবাসীর সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে গেলেও শপিংমলটি তৈরি করা হয়েছে শহরের শেষ প্রান্তে কৃষিজমির ওপরে। যাতায়াতের সমস্যা থাকার কারণে নানা সুবিধা থাকলেও দনগ্গুয়ানবাসী খুব একটা আগ্রহী নয় এখানে যেতে।

* এসএম মেগামল

প্রায় ১০ হেক্টর জমির ওপর ১৯৯১ সালে গড়ে উঠেছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এ শপিংমল। আয়তন ৫৪ লাখ ৫১ হাজার ২২০ বর্গফুট বা ৫ লাখ ৬ হাজার ৪৩৫ বর্গমিটার। একই সময় এ শপিংমলে সর্বোচ্চ ৪০ লাখ লোক থাকতে পারবে। এর অবস্থান ফিলিপাইনের মান্দালুয়ং শহরের ওটিগ্যান বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট বা মেট্রো মানিলতে। এর নির্মাতা ও পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের নাম এসএম প্রাইম হোল্ডিংস। এসএম মেগামলের দোকানের সংখ্যা ১২২০টি। সুবিশাল এ মলের পার্কিংটাও বিশাল। এখানে ৫টি বেজমেন্টে ৪ হাজার ২০০টি গাড়ি পার্ক করা যায়। প্রতিদিন এখানে প্রায় ৮ লাখ এবং বছরে প্রায় ২৯ কোটি ২০ লাখ ক্রেতা আসে। এ মলের প্রধান আকর্ষণ হল এমএস সুপার মার্কেট, এমএম স্টোর, সিনেমা মেগামল, আইম্যাক্স থিয়েটার, স্কেটিং রিইনক, ইভেন্ট সেন্টার, ট্রান্সপোর্ট টার্মিনাল, ফুডকোর্ট, মেগাট্রেড হল, টয় কিংডম ও সাইবার জোন।

* উতম

এ শপিংমলের প্রথম ফেজ (পুরনো উইং) চালু হয় ১৯৯৫ এবং পরবর্তীকালে ২০০৩ সালে নবনির্মিত দ্বিতীয় ফেজ (নতুন উইং)-এর উদ্বোধন করা হয়। বর্তমানে দুই অংশ মিলিয়ে ৭ তলা উচ্চতার ‘১ উতম’-এর আয়তন ৫০ লাখ বর্গফুট বা ৪ লাখ ৬৫ হাজার বর্গমিটার। এ মলের নির্মাতা, পরিচালনা এবং স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান হল ‘বান্দার উতম সিটি সেন্টারে সদন ভদ’। এখানে ৭০০টির অধিক দোকান ছাড়াও আছে ৪টি বৃহৎ ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, দুটি সুপার মার্কেট এবং দুটি সিনেমা হল। ‘১ উতম’ শপিংমলের কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী সপ্তাহের কাজের দিনগুলোতে দর্শনার্থীর সংখ্যা ৬০-৯০ হাজারের মধ্যে থাকে এবং ছুটির দিনগুলোতে তা ১ লাখ ২০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। সুনিপুণ ব্যবস্থাপনার জন্য এ শপিংমল অনেকগুলো আন্তর্জাতিক পুরস্কার এবং সম্মাননা পেয়েছে। ‘১ উতম’ শপিংমল মালয়েশিয়া সেলাঙ্গর রাজ্যের পিতালিং জয়া শহরের উত্তরের উপশহর বান্দার উতমায় অবস্থিত।

* সেন্ট্রাল ওয়ার্ল্ড

কেনাকাটা করতে পছন্দ করেন? শুধু তার জন্যই চলে আসতে পারেন থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে। এখানে আছে বিশ্বের জনপ্রিয় সব শপিংমল। এখানকার ‘সেন্ট্রাল ওয়ার্ল্ড’ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শপিংমল, যা দেশ-বিদেশের পর্যটকদের খুব টানে। দুইটা স্কাইস্ক্রাপারস নিয়ে মোট আয়তন ১ কোটি ১০ লাখ ২০ হাজার বর্গফুট। ৭ তলা এ মলে দোকান রয়েছে ৬০০টি। উদ্বোধন করা হয় ১৯৯০ সালে। পার্কিংয়ে ৭ হাজার গাড়ি পার্ক করা যায়। শপিংয়ের সময় প্রয়োজনে ইংরেজি, চাইনিজ এবং জাপানিজ দোভাষীর সাহায্য নেওয়া যায়। শপিং করার পর জিনিসপত্রের ব্যাগ কর্তৃপক্ষের কাছে রেখে ঘোরাঘুরির ব্যবস্থা আছে। পর্যটকদের জন্য আছে বিশেষ তথ্যকেন্দ্র। দর্শনার্থীদের জন্য আরও আছে, অফিস জোন, রেস্তোরাঁ, এটিএম বুথ, ব্যাংকের শাখা, শিশুদের খেলার জায়গা, লন্ড্রি, মানি চেঞ্জার। ২০১০ সালে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় বিক্ষোভকারীরা এখানে আগুন ধরিয়ে দিলে সেন্ট্রাল ওয়ার্ল্ডের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

* গোল্ডেন রিসোর্সেস মাল

‘গ্রেট মল অব চায়না’খ্যাত এই শপিংমল চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের ১৪ রিং রোডে অবস্থিত। ৭ তলার এই শপিংমল শুধু চীনেরই দ্বিতীয় বৃহৎ শপিংমল নয়, বিশ্বেরও দ্বিতীয় বৃহৎ শপিংমল। এর আরেক নাম ‘জিন ইউয়ান’। আয়তন ৬০ লাখ বর্গফুট বা ৫ লাখ ৫৭ হাজার ৪১৯ বর্গমিটার। ২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করে সহস্রাধিক দোকানসমৃদ্ধ এই মল। এখানে ক্রেতাদের ভিড় তেমন লক্ষ করা যায় না। যখন এটি নির্মাণ করা হয় তখন পরিকল্পনা করা হয়েছিল প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার ক্রেতা এখানে আসবে; কিন্তু বর্তমানে দেখা যায় ঘণ্টায় প্রায় ২০ জন আসে এখানে। জিনিসপত্রের মূল্য এখানে অত্যধিক হওয়ার কারণে সাধারণ চীনারা এখানে তেমন আসতে চায় না। শহরের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বলে বিদেশি ক্রেতাদের এখানে তুলনামূলক বেশি দেখা যায়।


* এসএম সিটি নর্থ ইডিএসএ

ফিলিপাইনের কুয়েজোন সিটির নর্থ এভিনিউ এবং এপিফানিয় দে লস সান্তোস এভিনিউয়ের (ইডিএসএ) মাঝামাঝি অবস্থিত। এটা আসলে অনেক শপিংমলের গুচ্ছ। বর্তমানে এর আয়তন ৪ লাখ ৮২ হাজার ৮৭৮ বর্গমিটার বা ৫২ লাখ ফুট। এসএম মেগামলের মতো এটিরও নির্মাতা ও পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান এসএম প্রাইম হোল্ডিংস। ১৯৮৫ সালের এ শপিং সেন্টারের উদ্বোধন হলেও পরবর্তীকালে এর বিভিন্ন বর্ধিত অংশ নির্মিত হয়েছে। ১ হাজার ১০০টির অধিক দোকান আছে এখানে। এখানে যে এত ধরনের পণ্য পাওয়া যায় তাতে অনেকে একে বলে ‘ওয়ান স্টপ’ শপিং সল্যুশন। এখানে আরও আছে সিটি সেন্টার, ইন্টেরিওর জোন, ব্লক, ওয়ারহাউস কাব, স্কাই গার্ডেন, নর্থলিঙ্ক এবং গ্রাস রেসিডেন্স। এ মলের ৫ তলা বেজমেন্টে ১০ হাজার গাড়ি পার্ক করা যায়। এখানে এত ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে যে অনেকে একে বলা হয় শহরের মধ্যের শহর।

* এসফাহন সিটি সেন্টার

প্রাচীন পারস্যের রাজধানী এবং ইরানের তৃতীয় বৃহত্তম নগরী হল এসফাহন। বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর তিনটি শহরের একটি এটি। অনন্য ইসলামি স্থাপত্য, ছাদঢাকা সেতু, মসজিদ ও মিনারের অসাধারণ সৌন্দর্য শহরটিকে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করে রেখেছে। ইরানে প্রবাদ আছে ‘এসফাহন পৃথিবীর অর্ধেক’। বিখ্যাত ভ্রমণপ্রিয় ফরাসি লেখক অঁদ্রে মালরো লিখেছিলেন, ‘কে দাবি করতে পারে সে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর শহর দেখেছে, যে এখনও এসফাহনে যায়নি?’ আধুনিকতা এবং ঐতিহ্যের অপূর্ব সংমিশ্রণের এ শহরকে আরও সমৃদ্ধ করতে ২০১২ সালে উদ্বোধন করা হয় এসফাহন সিটি সেন্টারের। আয়তন ৪২ লাখ ৫০ হাজার বর্গমিটার বা ৪ কোটি ৫৭ লাখ বর্গফুট। বহুমুখী ব্যবহারের জন্য তৈরি করা এ শপিংমল কমপ্লেক্সে ৭৫০টির অধিক দোকান ছাড়াও আছে ৫ তারকা মানের হোটেল, সিনেমা হল, অমুসমেন্ট পার্ক, রেস্তোরাঁ, আন্তর্জাতিক অর্থ বিনিময় কেন্দ্র, অফিস টাওয়ার, প্রদর্শনী কেন্দ্র এবং হোটেল অ্যাপার্টমেন্ট।

* পার্সিয়ান গল্ফ কমপ্লেক্স

ইরানের অন্যতম প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক শহর সিরাজ। এ শহরে বিশ্ববিখ্যাত কবি হাফিজ এবং শেখ সাদির জন্ম। শেখ সাদির নানা ঐতিহাসিক ঘটনার শহরও এই সিরাজ শহর। এখানকার প্রতিটি অংশ শোনায় ইতিহাস আর ঐতিহ্যের গল্প। ২০১২ সালে এখানে উদ্বোধন করা হয় বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শপিংমল ‘পার্সিয়ান গল্ফ কমপ্লেক্স’-এর। ২ হাজার ৫০০টি দোকান আছে এখানে। দোকানের সংখ্যা অনুযায়ী এটি পৃথিবীর বৃহত্তম শপিংমল। আয়তন ৪ লাখ ২০ হাজার বর্গমিটার বা ৪৬ লাখ বর্গফুট। কমপ্লেক্সে আরও আছে ২৬২ কামরার ৫ তারকা মানের হোটেল, ইনডোর এবং আউটডোর সুইমিং পুল, টেনিস কোর্ট, কনভেনশন সেন্টার, হেলিপ্যাড, ইনডোর ও আউটডোর অ্যামুজমেন্ট পার্ক, ভিডিওগেম জোন, বৌল খেলার পথ, ৩ তলা বিলিয়ার্ড হল, ৬টি ২৪০ আসনের সিনেমা হল এবং ক্যারিফোর্ড হাইপারমার্কেট। পার্সিয়ান গল্ফ কমপ্লেক্সের ৪ তলা পার্কিংয়ে ৫ হাজার ৫০০টি গাড়ি পার্ক করা যায়।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url