নিক্কো পার্ক - কলকাতার দর্শনীয় স্থান

নিক্কো পার্ককে প্রায়ই পশ্চিমবঙ্গের ডিজনিল্যান্ড নামে অভিহিত করা হয়। এটির ধারণা ও উদ্দীপনার জন্যই তাকে বিশ্ব বিখ্যাত থিম পার্ক হিসাবে পরিমাপ করার বাস্তব কারণ নয়, বরঞ্চ এর অনুপ্রেরণার আরোও বড় কারণ হল উদ্যানটি তৈরি করার পিছনে চিন্তাধারা। রাজীব কৌলের মস্তিষ্কপ্রসূত নিক্কো পার্কটি গড়ে তোলার পিছনে ছিল তাঁর অনুপ্রেরণার মুহুর্ত, একবার তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিজনিল্যান্ডের একটি সফরে গিয়েছিলেন এবং সেটির শ্রেষ্ঠ সৃজনশীল চিত্রকল্প দেখেন।

ফিরে আসার পর তিনি নিক্কো পার্ক তৈরির পরিকল্পনা করেন ও গড়ে তোলেন এবং আজকের দিনে এটি 40 একর জুড়ে বিস্তৃত এক উদ্যান এবং তার আকর্ষণ 2 কোটি 40 লক্ষেরও বেশি অতিথিদের দ্বারা পরিদর্শিত হয়েছে।

এই উদ্যানটি ভূমি, জল ও বায়ু রাইডের প্রস্তাব দেয় যা ভারতের শ্রেষ্ঠত্বের মধ্যে মর্যাদা পায়। সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সঞ্জিবনী রাইড হল ওয়্যাটার ছুট। জলের ছুট-এ স্লাইডিং-য়ের সময় আপনি আপনার চিৎকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না এবং পুনরায় দ্বিতীয় দফার জন্য সিঁড়িতে ওঠার অপেক্ষাও করতে পারবেন না। তারপর এখানে ট্যুইস্ট-আ্যন্ড-টার্ন রাইড রয়েছে যেখানে আপনার পুরো পরিবারকে একটি হতবুদ্ধিকর আবর্তিত গাড়ীর মধ্যে ঢোকানো হয়।

যারা উপর থেকে রাইডগুলিকে নিরীক্ষণ করতে চান, তার জন্য সেখানে কেবেল কার রয়েছে, যা 5 মিনিটের একটি অন্তরীক্ষ দৃশ্য প্রদর্শন করায়। ভীরুদের জন্য সেখানে খাড়াই অবনমনগুলি বাদ দিয়ে মুন-বেকার নামে একটি ছোট বেলনাকার বাহন রয়েছে। একটি বাস্তবিক ভিক্টোরিয়া যুগের আনন্দ উপভোগের অনুভূতির জন্য আপনার ক্যারৌসোল-এ খেলনা ঘোড়ার পিঠে বসে লাফানোর প্রয়োজন। আপনার সমগ্র দল তাদের পছন্দমত একটি ঘোড়া নিতে পারেন এবং চমৎকারভাবে লাফাতে লাফাতে উপরে যেতে পারেন। দ্য সাইক্লোন - ভারতের সবচেয়ে বড় কাঠের বেলনাকার যান – এখানকার জ্যোর্তিময় আকর্ষণ।

এই যানটির চলার সময় কর্কশ শব্দ শুনে আপনার গলা শুকিয়ে যাবে, তখন কি করবেন তা আন্দাজ করতে পারবেন না। সাইক্লোনের ট্র্যাক ধরে নীচে নামার সময় গর্জনে দীর্ঘ কয়েক মুহুর্ত নিছক “পাগল”-এর ন্যায় চিৎকার করে। তার উপর সেখানে আবার ছোট শিশুদের জন্য ওয়াটার- মেরী- গো-রাউণ্ড আছে এবং প্রকৃত আইফেল টাওয়ারের প্রতিকৃতিতে নির্মিত আইফেল টাওয়ার রয়েছে যা সমগ্র ধারণাটির মধ্যে আলতো ফরাসি ছোঁয়া এনেছে।

নিক্কো পার্কে ওয়েট-ও-ওয়াইল্ড পার্ক নামে অভিহিত একটি উদ্যানও রয়েছে যা একান্তভাবে জলজ আকর্ষণের কেন্দ্রস্থল; যেমন – ওয়েভ পুল (তরঙ্গায়িতজলনিধি), জায়ান্ট ওয়াটারফল (দৈত্যাকার জলপ্রপাত) ও কিড’স পুল (শিশু জলনিধি)।

নিক্কো পার্কের জনপ্রিয়তা শুধুমাত্র তার রাইডগুলির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এই থিম উদ্যানটি ব্যাক্তিগত ও সংস্থাবদ্ধ বিনোদনের জন্যও প্রিয় স্থান। রাজ্যিক উৎসব, পণ্যের উদ্ঘাটন, শিল্পপতিদের রাত্রির খাবারের বিনোদন, জাতীয় সংবেদনশীল সঙ্গীতবিদদের দ্বারা পরিবেশিত সঙ্গীত রজনী – সমস্ত কিছুই উদ্যানে লক্ষ্য করা যায়।

উদ্যানটিতে অনেক স্থান রয়েছে; যেমন ওয়্যাটারসাইড হল, ওয়েট-ও-ওয়াইল্ড ওয়াটার পার্ক, অন্তরঙ্গন বিনোদন কেন্দ্র, প্লাজা এবং সভাগৃহ – এই সবগুলিই বিভিন্ন অতিথি বিভাগের পরিবেশন করার জন্য নকশায়িত করা আছে। রান্নাঘর, কার পার্কিং, শৌচালয়, গৃহস্থলীর কর্মী ও আপদকালীন জরুরী পদ্ধতির সমন্বয়ে সম্পূর্ণরূপে সুসজ্জিত – উদ্যানটি কার্যক্রমের আয়োজনের জন্য এক যথার্থ স্থান।

বোলিং আ্যল্যে-র কাছে অবস্থিত, দ্য বোলার’স ডেন রেস্তোঁরা, নিকো পার্কের পরের দরজাতেই বর্তমান রয়েছে। এখানে বিভিন্ন প্রকারের সু্স্বাদু চীনা, থাই, উত্তর ভারতীয় ও মহাদেশীয় খাবার পরিবেশিত হয়। যদিও নামটি অসার্থক কারণ নিক্কো পার্কে আর একটিও বোলিং আ্যল্যে উপলব্ধ নেই।



নিক্কো পার্কের স্তর বিশ্ব মানের মর্যাদা স্থির করেছে। নিক্কো পার্ক শুধুমাত্র তার রাইডগুলির জন্যই প্রসিদ্ধ নয়। এটি তার সাবলীল বিচক্ষণতার জন্যও সুপ্রসিদ্ধ রয়েছে যা উদ্যানটিকে চালনা করে চলেছে এবং উদ্যানটিকে কোথা থেকে আজকের দিনের এই উদ্যানে নিয়ে এসেছে। উদ্যানটির বিশ্বস্তরের মান ও অভ্যন্তরীণ রাইডগুলি বিদেশে ভালোভাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্ল্যাকপুল প্ল্যাজার বীচ, সেখানে তাদের দুটি রাইডের উন্নতির কাজের জন্য নিক্কো পার্ক থেকে ইঞ্জিনীয়ারদের ন্যস্ত করেছেন – তাদের অন্তর্দৃষ্টি চেনার জন্য এর চেয়ে ভালো উপায় আর কি হতে পারে? নিক্কো পার্ক দল প্রকল্প সংক্রান্ত পরামর্শ পরিষেবা প্রদান করে।

দলের জ্ঞান-চালিত কেন্দ্রবিন্দু হল রাইডগুলির সামনের চিত্রণ থেকে পর্যাপ্তভাবে ব্যাখ্যা করা যা রাইডগুলির পিছনে বৈজ্ঞানিক যুক্তির ব্যাখ্যা দেয়। নিক্কো পার্ক, 1991 সালের 13-ই অক্টোবর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়। উদ্যানটি প্রথমে কেবলমাত্র 13-টি রাইড ও একটি টয় ট্রেন নিয়ে চালু করা হয়েছিল। উদ্যানটি পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং নিক্কো কর্পোরেশনের মধ্যে একটি যৌথ উদ্যোগ। উদ্যানটি, 2012 সালে একটি দুর্ঘটনার পর সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়, এই দুর্ঘটনায় 17-টি শিশু আহত হয়।

নিক্কো পার্ক পরিদর্শনের সেরা শীতকালের সময়, নভেম্বর থেকে ফ্রেব্রুয়ারী নিক্কো পার্ক পরিদর্শনের সেরা সময় হিসাবে বিবেচিত হয়। নিক্কো পার্কে পৌঁছানোর নিকটবর্তী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হল নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বিমানবন্দর থেকে ক্যাবের মাধ্যমে ভায়া ভি.আই.পি. রোড হয়ে নিক্কো পার্কে পৌঁছাতে প্রায় 30 মিনিট সময় লাগে।

রেল মাধ্যমে শিয়ালদহ রেলওয়ে স্টেশন থেকে ক্যাবের মাধ্যমে ভায়া সাউথ ক্যানেল রোড ও সল্টলেক বাইপাস হয়ে নিক্কো পার্কে পৌঁছাতে প্রায় 15 মিনিট সময় লাগে। হাওড়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে ক্যাব ধরে নিক্কো পার্কে পৌঁছাতে প্রায় 30 মিনিট সময় লাগে।

নিক্কো পার্কের কাছাকাছি কিছু আকর্ষণ নলবন বোটিং কমপ্লেক্স, সল্টলেক স্টেডিয়াম, সুভাষ সরোবর।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url