কফি হাউজের সেই আড্ডাটা

মান্না দে’র সেই সুবিখ্যাত গান কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই - কোথায় হারিয়ে গেলো সোনালী বিকেলগুলো সেই - আজ আর নেই। ইন্ডিয়ান কফি হাউজ যার আদি নাম এ্যালবার্ট হল। এ্যালবার্ট হলেন রাণী ভিক্টেরিয়ার স্বামী। গত ৮ মার্চ কলকাতায় ইন্ডিয়ান কফি হাউজে ঢু মারি ঠিক রাত সোয়া আটটায়। টানা পঁয়তাল্লিশ মিনিট কফি হাউজের আড্ডারুদের পর্যবেক্ষণ করি। দেওয়ালে বিশ্বকবির প্রতিকৃতি টাঙানো। উপরের ব্যালকুনি জুড়ে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা অবধি চলে কফি, স্যান্ডউইচ, কোল্ড কফি, চিকেন ফ্রাইড, টোস্ট, ডিমের অমলেট সহ সস্তাদরের সব নাস্তাখাবার।

৪ টাকা থেকে ৫২ টাকার মধ্যে সবকিছুরদাম। আড্ডাটা বিকেল থেকে জমজমাট হয়। কলকাতার বইপাড়া হলো কলেজস্ট্রিট। নামিদামি প্রকাশনী থেকে শুরু করে অনেক বইয়ের দোকান এখানে। কফি হাউস, ইন্ডিয়ান কফি হাউস বা এ্যালবার্ট হল উত্তর কলকাতার কলেজ স্ট্রিট চত্বরে অবস্থিত বাঙালির-আড্ডাস্থল, কলকাতার কফি হাউসগুলির মধ্যে সেন্ট্রাল এ্যাভিনিউ এবং কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউজ- দুটিই প্রাচীনতম।

কফি হাউজের সেই আড্ডাটা

ইন্ডিয়ান কফি বোর্ডের উদ্যোগে বাঙালি কফি সেবীদের জন্য সেন্ট্রাল এ্যাভিনিউর কফি হাউজ খোলা হয় ১৯৪১-৪২ সাল নাগাদ আর তার কিছুদিন পরেই ১৯৪৫ সালে চালু হয় কলেজ স্ট্রিটের কফি-হাউজটি। পরে ১৯৫৭-৫৮ সাল নাগাদ কফি-হাউজ (অ্যালবার্ট হল) ইন্ডিয়ান কফি বোর্ডের আওতা থেকে বেরিয়ে এসে শ্রমিক সমব্যয়ের আওতায় আসে।

দুটি কফি-হাউজই ছিল এককালের বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের প্রধান আড্ডাস্থল। নিকটতম বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ছাত্রছাত্রীদের ভিড় করা ছাড়াও নামিদামী বুদ্ধিজীবী-লেখক, সাহিত্যিক, গায়ক, অভিনেতা, চিত্রপরিচালক, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও বিদেশি পর্যটকদের আড্ডা দেওয়ার অবারিত জায়গা হিসাবে এটি খ্যাত ছিল। বিশ্বের সবচেয়ে বড় পুরোনো বইয়ের বাজার ও নতুন বইয়ের বাজার সামনে আছে বলে হাউসটিতে সব সময়ই ভিড় থাকে।

চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়, লেখক শক্তি চট্টোপাধায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, জয় গোস্বামীদের মতো কবিরা, বাঙালি অভিনেতা রূদপ্রসাদ সেনগুপ্তর মত প্রমুখ ব্যক্তিরাও এই কফি হাউসটিতে আড্ডা দিয়ে গেছেন। কফি হাউসটি কলেজ স্ট্রিটের মর্মস্থলে অবস্থিত যেখানে প্রখ্যাত সব বুদ্ধিজীবিরা ঘন্টার পর ঘন্টা এক কাপ কফি নিয়ে আড্ডা জমান। পূর্বে অ্যালবার্ট হল নামে পরিচিত এই হলঘর বহু ঐতিহাসিক সভা বা জমায়তেরও সাী। কফি হাউজের নীচতলায় ৪২ খানা টেবিল ও ২১ খানা বৈদ্যুতিক পাখা ঝুলছে।



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url