শান্তিনিকেতন - ভ্রমন, ইতিহাস, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়

দেশজুড়ে পর্যটনের তালিকায় বহুদিন আগেই পাকাপাকি ঠাঁই করে নিয়েছে রবি ঠাকুরের শান্তিনিকেতন। রবীন্দ্রনাথ ১৯০১ সালের ডিসেম্বরে প্রাচ্যের প্রথম নব্য বিদ্যালয়ের স্থাপনকর্তাও বটে। তাঁর পিতৃদেব ১৮৬৩ সালে কলকাতা থেকে ১৬০ কিলোমিটার দূরে একটি জমি কেনেন–রবীন্দ্রনাথের বয়স তখন মাত্র দুই্, পরে এখানেই ১৯০১ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পালিয়ে আসা, গৃহশিক্ষকদের দ্বারা শিক্ষিত রবীন্দ্রনাথ তৈরী করলেন এমন এক বিদ্যালয় যেখানে শিশুদের তাঁর মত শোচনীয় শিক্ষাপ্রণালীর যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে না।

সুন্দর ও তাৎপর্যপূর্ণ শান্তিনিকেতন নামে আজও এই বিদ্যালয়ের ক্লাস বসে মুক্ত হাওয়ায়, একশ বছরের পুরনো গাছের তলায়, পাখীয় গান শুনতে শুনতে আর রঙ বেরঙের ফুলের সুগন্ধে মাতোয়ারা হয়ে। এই বিদ্যাস্থলটি এক পরম আশ্চর্য এবং ইউনেস্কো যদি একে মানবজাতির সম্পদ বলে ঘোষণা করে তবে তা যোগ্য সম্মান হবে। এখানে ২৫ বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি জায়গা জুড়ে আছে অসংখ্য শিশু শিক্ষালয় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বৃত্তিমূলক শিক্ষাকেন্দ্র, হস্তকলাশিক্ষাকেন্দ্র ও বিশ্বভারতী নামে এক আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় যাতে চৌদ্দটিরও বেশি শিক্ষাবিভাগ আছে। এই চৌদ্দটি বিভাগের মধ্যে চারুকলা, সংগীত, নৃত্য ও নাট্য বিভাগ সব থেকে প্রাচীন ও ঐতিহ্যমণ্ডিত।



এই স্বর্গস্বরূপ শিক্ষাক্ষেত্রের সব থেকে সুন্দর হল এর পরিবেশ। এটা সম্ভব কারণ রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং এর সম্বন্ধে বলেছেন যে এই বিদ্যালয় একটি নীড়, কোনো পিঞ্জর নয়। এখানে রবীন্দ্রনাথের হৃদয়বৃত্তি, সত্য ও সুন্দর সম্পর্কিত সব নীতি কাজে পরিণত করা হয় আর ছাত্রদের শিক্ষা দেওয়া হয় ঔদার্যের, সত্যকথনের, শান্তির, একে অপরকে ভালোবাসতে, প্রকৃতিকে ভালোবাসতে, অন্য ধর্মকে, অন্য সভ্যতাকে, অন্য জাতিকে, অন্য দর্শনকে (যা জীবন হরণের শিক্ষা দেয় না) শ্রদ্ধা করতে। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা, শান্তিভাবনা ও দর্শনচিন্তা আলোকিত করতে পারে আমাদের আজকের এই বিশ্বকে–যেখানে মানবিকতা অনুপস্থিত।

পশ্চিমবঙ্গে পর্যটনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ অবশ্যই শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক পরিবেশ তথা বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়াও শান্তিনিকেতনের গ্রামাঞ্চল এবং পার্শ্ববর্তী জঙ্গলগুলি সহ কোপাই-খোয়াই শহুরে পর্যটকদের বিশেষ পছন্দের তালিকায় রয়েছে। সপ্তাহান্তে দুটি ছুটির দিনে হাট বসে সোনাঝুরি জঙ্গলে। পৌষ মেলা বা বসন্ত উৎসব ছাড়াও তাই বছরভর শহুরে পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে। তবে শনি-রবিবার অর্থাৎ উইকএন্ডে ভিড়টা থাকে চোখ পড়ার মতো।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url