জুরাসিক পার্ক

জুরাসিক ওয়ার্ল্ড ছবির দৃশ্যহলিউডের জগৎ পুরোটুকুই যেন একটা রূপকথার রাজত্ব। এখানে এলিয়নরা চকিতে আক্রমণ করে বসে পৃথিবীতে, দৈত্য-দানোরা আচমকা দেখা দেয় মহানগরে, ভূত-প্রেতরা শ্যাওড়াগাছের আশ্রয় ফেলে রেখে হঠাৎ করেই আসন গাড়ে ইট-কাঠের বাড়িতে! এখানে হাসতে হাসতে ভয় পায় আবার ভয় পেতে পেতে পিক করে হেসে দেয় দর্শক।

তাই বলে হলিউডি ছবিতে যখন দেখা যায় বিশাল বিশাল ডাইনোসররা ফসিল নয়, জীবন্তই দাপড়ে বেড়াচ্ছে পর্দাজুড়ে, তখন তা দেখে অবাক হওয়ার পাশাপাশি একটু চমকেও উঠতে হয় বৈকি। যতই হোক, হাজার হাজার বছর আগেই বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ডাইনোসরদের রুপালি পর্দায় তুলে আনা, চাট্টিখানি কথা তো নয়! সেই ডাইনোসরকেই পর্দায় তুলে এনেছিলেন স্টিভেন স্পিলবার্গ, তাও আবার প্রায় দুই যুগ আগে। পাঠক নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন এতক্ষণে, বলছি জুরাসিক পার্ক ছবির কথা। কিছুদিন আগেই মুক্তি পেয়েছে এই সিরিজের চতুর্থ ছবি, জুরাসিক ওয়ার্ল্ড।

কোটিপতি এক ব্যবসায়ীর অদ্ভুত খেয়ালে জনশূন্য এক দ্বীপে গড়ে ওঠে ডাইনোসরের রাজত্ব, যার নাম ‘জুরাসিক পার্ক’। তারপর হঠাৎ একদিন দুর্ঘটনায় পার্কের ডাইনোসররা সব খাঁচা ফেলে ছড়িয়ে পড়ে পুরো দ্বীপে। এই নিয়েই এগিয়েছে সিরিজের প্রথম তিনটি ছবির গল্প। তাই চতুর্থ কিস্তি নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ ছিল সবার মনে। ছবির পরিচালক কলিন ট্রেভারোও হতাশ করেননি দর্শকদের। ছবির নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে ছিলেন স্টিভেন স্পিলবার্গ, যাঁকে বলা যায় জুরাসিক পার্ক-এর জনক। তিনি নিজেই পরিচালনা করেছিলেন সিরিজের প্রথম দুটি ছবি।

চতুর্থ ছবির গল্পটা স্পিলবার্গের মাথায় এসেছিল সেই তৃতীয় ছবি করার সময়ই, সেই ২০০১ সালে, মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল ২০০৫ সালে। কিন্তু যে গল্পই লেখা হয়, মন আর ভরে না। তাই বেশ কয়েক দফা চিত্রনাট্য আর গল্প পরিবর্তন করে ছবি মুক্তির সময় পিছিয়েছে পাক্কা দশ বছর!

ছবির গল্প শুরু হয় প্রথম জুরাসিক পার্ক ছবির ঠিক ২২ বছর পর। ইসলা ন্যুবলার দ্বীপে অবশেষে চালু হয় ডাইনোসর নিয়ে থিম পার্ক, ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড’ নাম দিয়ে। পার্কে দর্শকদের আরও বেশি আকর্ষণ করার জন্য তৈরি করা হয় নতুন একধরনের হাইব্রিড ডাইনোসর, ‘ইনডোমিনাস রেক্স’। আগের ছবিগুলোতে আমরা টেরাইনোসরাস রেক্স নামের সেই ভয়ংকর দানোটাকে দেখেছি।



এবার দেখব সম্পূর্ণ নতুন এই হাইব্রিড ‘ইনডোমিনাস রেক্স’। ল্যাটিন ভাষায় যার মানে ভয়ংকর, অশান্ত সম্রাট। আসলেও ভয়ংকর খুনি এই ডাইনোসর দর্শকদের জন্য পার্কটি খুলে দেওয়ার আগেই পালিয়ে যায়। আর তাকে ধরার প্রাণান্ত চেষ্টার গল্প নিয়েই এগোতে থাকে ছবিটি! কী অদ্ভুত বিষয় তাই না, মানুষের প্রযুক্তির হাত থেকে রেহাই পেল না হাজার হাজার বছর আগের ডাইনোসররাও। কল্পনার ডাইনোসরকেও ধরে এবার নতুন জাত বানানো হয়েছে। ডাইনোসররা যে আবার কখন গান শুরু করবে, ‘জাত গেল জাত গেল’ বলে।

আগের ছবির মূল তারকাদের কাউকেই দেখা যায়নি জুরাসিক ওয়ার্ল্ড ছবিতে। গুঞ্জন উঠেছিল থাকবেন ছবিতে হ্যারিসন ফোর্ড, কেইরা নাইটলি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গিয়েছে গার্ডিয়ান অব দ্য গ্যালাক্সি ছবির তারকা ক্রিস প্র্যাট ও ব্রেইস ডালাস হাওয়ার্ডকে।

ছবিতে দর্শক আকর্ষণ করার জন্য মালমসলার অভাব নেই। তবু সমালোচকদের মন জোগাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে জুরাসিক ওয়ার্ল্ডকে। কারণ ওই যে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির সুবাদে বিজ্ঞানকেই মোটামুটি অস্বীকার করে বসেছে এই ছবি! মানে, সাধারণভাবে ডাইনোসর যেমন হওয়ার কথা, তার প্রায় সবকিছুই বদলে ফেলেছে ছবির বানানো ডাইনোসরগুলো। তবে, এসবে দর্শকেরা কিন্তু হতাশ নন। বরং ছবিটি দেখার জন্য ভিড় লেগে গেছে সিনেমা হলগুলোতে! আর যাঁরা বাস্তবেও ডাইনোসর দেখতে চান, তাঁদের জন্যও কিন্তু একটা মজার খবর আছে।

জুরাসিক পার্ক সিরিজের চারটি ছবিতেই পরামর্শক হিসেবে কাজ করা ড. জ্যাক হর্নারের মতে, প্রযুক্তিগতভাবে আর পাঁচ বছর পরই নাকি ডাইনোসর তৈরি করা যাবে। কী ভয়ংকর কথা! সেই ডাইনোসরগুলোও যদি ছবির মতো ল্যাব থেকে পালিয়ে ঘুরে বেড়ায় রাস্তায়, তখন কী হবে? যা হওয়ার হবে। আমাদের এদিকে না এলেই হলো। ছবিতে যা দেখানো হয়েছে, তাতে ডাইনোসর সিনেমার পর্দাতেই ভালো। যাহোক, সে যখন হবে দেখা যাবে, সেই পর্যন্ত নাহয় পর্দার ডাইনোসরদের নিয়েই আশ আর আশা দুটোই মেটানো যাক!
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url