সুন্দরবন ভ্রমন - রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছবি

আসছে পূজার ছুটিতে চলুন ঘুরে আসা যাক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন থেকে। গহীন বনের নীরবতা আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। দুপাশে গভীর বন, মাঝে কখনও নদী, কখনও সাগর। ভাঁটার সময় শ্বাসমূলের জেগে থাকা, হরিণের পানি খেতে খেতে চমকে দৌড়ে সরে যাওয়া । রাতের গভীরতাতে জোনাকির আলো আর নানা অচেনা পাখির ডাক। কখনও জেলেদের মাছ ধরার নৌকা কিংবা কখনও খালের পানিতে নৌকা ভাসিয়ে দুপাশ দেখতে দেখতে যাওয়া। এই হোল সুন্দরবন।



সুন্দরবনের গহীনে আকর্ষনীয় সব দর্শনীয় স্থান, এবং দেখতে পারেন বাঘ, হরিন, কুমির, ডলফিন, বানর সহ অসংখ্য বন্যপ্রানী ও অতিথি পাখি। বেঙ্গল টাইগার বা রয়েল বেঙ্গল টাইগার, বাঘের একটি উপপ্রজাতি। বেঙ্গল টাইগার সাধারণত দেখা যায় ভারত ও বাংলাদেশে। এছাড়াও নেপাল, ভুটান, মায়ানমার ও দক্ষিণ তিব্বতের কোনো কোনো অঞ্চলে এই প্রজাতির বাঘ দেখতে পাওয়া যায়। বাঘের উপপ্রজাতিগুলির মধ্যে বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যাই সর্বাধিক।

প্রথাগতভাবে মনে করা হয়, সাইবেরীয় বাঘের পর বেঙ্গল টাইগার দ্বিতীয় বৃহত্তম উপপ্রজাতি। বেঙ্গল টাইগার উপপ্রজাতি বাংলাদেশের জাতীয় পশু। অন্যদিকে প্রজাতি স্তরের ভারতের জাতীয় পশু।

ভারত ও বাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকায় যে সুদর্শন বাঘ দেখা যায় তা পৃখিবীব্যাপী রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার নামে পরিচিত। কয়েক দশক আগেও (পরিপ্রেক্ষিত ২০১০), বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের বিচরণ ছিলো। পঞ্চাশের দশকেও বর্তমান মধুপুর এবং ঢাকার গাজীপুর এলাকায় এই বাঘ দেখা যেতো; মধুপুরে সর্বশেষ দেখা গেছে ১৯৬২ এবং গাজীপুরে ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে।

বর্তমানে সারা পৃথিবীতে ৩০০০-এর মতো আছে, তন্মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ভারতীয় উপমহাদেশে। এই সংখ্যা হিসাব করা হয় বাঘের জীবিত দুটি উপপ্রজাতি বা সাবস্পিসীজের সংখ্যাসহ। ২০০৪ সালের বাঘ শুমারী অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় ৪৫০টি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা এর সংখ্যা ২০০-২৫০টির মতো। বাংলাদেশ ছাড়াও এদের বিচরণ রয়েছে ভারতের সুন্দরবন অংশে, নেপাল ও ভুটানে।

এর গায়ের রঙ হলুদ থেকে হালকা কমলা রঙের হয়, এবং ডোরার রঙ হয় গাঢ় ক্ষয়েরি থেকে কালো; পেটটি হচ্ছে সাদা, এবং লেজ কালো কালো আংটিযুক্ত সাদা। একটি বদলানো বাঘের জাতের (সাদা বাঘ) রয়েছে সাদা রঙের শরীরের উপর গাঢ় ক্ষয়েরি কিংবা উজ্জল গাঢ় রঙের ডোরা, এবং কিছু কিছু শুধুই সাদা। কালো বাঘের রয়েছে কমলা, হলুদ কিংবা সাদা রঙের ডোরা। স্মাগলারদের কাছ থেকে উদ্ধারিত হয় যে একটি কালো বাঘের ত্বকের মাপ হচ্ছে ২৫৯ সেঃমিঃ, ডোরাবিহীন কালো বাঘ রিপোর্ট করা হয়েছে তবে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার এর ক্ষেত্রে কোনো প্রমান এখনও পাওয়া যায়নি। যদিও জাগুয়ার বা লেপার্ড এর ৬ শতাংশ-ই কালো হয়ে থাকে।

উত্তর ভারতের পুরুষ বাঘেরা সাইজে সাইবেরিয়ান বাঘের মতোই। উত্তর ভারত ও নেপালে পুরুষদের গড় ওজন ২৩৫ কেজি আর মহিলাদের ১৪০ কেজি। বর্তমানে বিভিন্ন বাঘ জাতির ওজনের উপর পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে যে গড়ে বেঙ্গল টাইগারেরা সাইবেরিয়ান বাঘের চেয়ে বড়। একটি বেঙ্গল টাইগারের গর্জন ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত দুরে শোনা যায়।

বাংলাদেশে সুন্দরবনই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের শেষ আশ্রয়স্থল। মানুষের আগ্রাসনে গোলপাতার ঝোঁপ আর গাছ যেভাবে কমে যাচ্ছে, তাতে বাঘের বিচরণ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। খাদ্যঘাটতি দেখা দিচ্ছে জঙ্গলের ভিতরে। এভাবে ক্রমে রয়েল বেঙ্গল টাইগার বিলুপ্তির হুমকিতে অবস্থান করছে।
Next Post Previous Post
1 Comments
  • Hilda
    Hilda ২৬ মে, ২০১১ এ ৯:২৪ AM

    Handsome, magnificent animal!

    I wish our forests and wildlife were managed even half as well. :(

Add Comment
comment url